টেড হিউজ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Ted Hughes থেকে পুনর্নির্দেশিত)
টেড হিউজ
শেষ জীবনে টেড হিউজ
যুক্তরাজ্যের রাজকবি
কাজের মেয়াদ
২৮ ডিসেম্বর, ১৯৮৪ – ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৮
সার্বভৌম শাসকদ্বিতীয় এলিজাবেথ
পূর্বসূরীজন বেজেম্যান
উত্তরসূরীঅ্যান্ড্রু মোশন
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্মএডওয়ার্ড জেমস হিউজ
(১৯৩০-০৮-১৭)১৭ আগস্ট ১৯৩০
মিদমরয়েড, ইয়র্কশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু২৮ অক্টোবর ১৯৯৮(1998-10-28) (বয়স ৬৮)
লন্ডন, ইংল্যান্ড
মৃত্যুর কারণমায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কসন (হৃদযন্ত্রক্রীয়া বন্ধ)
জাতীয়তাইংরেজ
দাম্পত্য সঙ্গী
  • সিলভিয়া প্লাথ (বি. ১৯৫৬; তাঁর মৃত্যু ১৯৬৩)
  • ক্যারল অরচার্ড (বি. ১৯৭০; স্বীয় মৃত্যু ১৯৯৮)
ঘরোয়া সঙ্গীআসিয়া উইভিল (১৯৬২–১৯৬৯)
সন্তান
প্রাক্তন শিক্ষার্থীপেমব্রোক কলেজ
পেশাকবি, নাট্যকার, লেখক

এডওয়ার্ড জেমস টেড হিউজ, ওএম, ওবিই, এফআরএসএল (ইংরেজি: Ted Hughes; জন্ম: ১৭ আগস্ট, ১৯৩০ - মৃত্যু: ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৮) ইয়র্কশায়ারের মিথমরয়েড এলাকায় জন্মগ্রহণকারী বিখ্যাত ইংরেজ কবি, নাট্যকার ও শিশুতোষ লেখক ছিলেন। সমালোচকদের অভিমত, তিনি তার প্রজন্মের অন্যতম সেরা কবি ছিলেন[১] ও বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা লেখক ছিলেন তিনি।[২] ১৯৮৪ সাল থেকে মৃত্যু পূর্ব-পর্যন্ত পয়েট লরেটের দায়িত্ব পালন করে গেছেন। ২০০৮ সালে টাইমস সাময়িকী ১৯৪৫ থেকে ৫০ সেরা ব্রিটিশ লেখকের তালিকায় হিউজকে চতুর্দশ অবস্থানে রাখে।[৩]

বিখ্যাত মার্কিন কবি ও লেখিকা সিলভিয়া প্লাথের সাথে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন। ১৯৫৬ সালে বিয়ে করার পর মাত্র ৩০ বছর বয়সে ১৯৬৩ সালে প্লাথ আত্মহননের দিকে এগিয়ে যান।[৪] কিছু নারীবাদী ও কিছু মার্কিন শুভাকাঙ্খী প্লাথের মৃত্যুর জন্য হিউজকে দায়ী করে। ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ বার্থডে লেটার্সে তাদের মধ্যকার ভঙ্গুর সম্পর্কের কথা তুলে ধরা হয়। ঐ সকল কবিতায় প্লাথের আত্মহননের বিষয়ে তথ্যাদি তুলে ধরা হলেও কোনটিতেই সরাসরি তার মৃত্যুর কারণ উল্লেখ করা হয়নি। অক্টোবর, ২০১০ সালে একটি কবিতা লাস্ট লেটারে দেখা যায় যে, প্লাথের মৃত্যুর তিনদিন পূর্বেকার ঘটনার বিবরণ রয়েছে।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

ওয়েস্ট রাইডিং অব ইয়র্কশায়ারের মিথোলম্রোড এলাকার ১ অ্যাস্পিনল স্ট্রিটে হিউজের জন্ম। উইলিয়াম হেনরি ও এডিথ (বিবাহ-পূর্ব ফারার) হিউজ দম্পতির সন্তান তিনি।[৫] কল্ডর ভ্যালি ও পেনিন মুরল্যান্ডে তার শৈশবকাল অতিবাহিত হয়। হিউজের বোন অলউইন তার তুলনায় দুই বছরের বড় ও ভাই জেরাল্ড দশ বছরের বড় ছিলেন।[৬] তার মায়ের দিক থেকে তাদের পূর্বপুরুষ ছিলেন উইলিয়াম ডি ফেরিয়ার্স। ফেরিয়ার্স উইলিয়াম দ্য কনকুয়েরারের সাথে একাদশ শতকে ইংল্যান্ডে এসেছিলেন। ক্যামব্রিজশায়ারের লিটল গিডিংয়ে ধর্মীয় সম্প্রদায়ে এডিথের পূর্ব-পুরুষের সন্ধান মেলে।[৭] সাম্প্রতিক প্রজন্মের অধিকাংশ সদস্যই এ এলাকায় কাপড় ও কারখানা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। হিউজের বাবা উইলিয়াম আইরিশ বংশোদ্ভূত কাঠমিস্ত্রী ছিলেন।[৮][৯] তিনি ল্যাঙ্কাশায়ার ফাসিলিয়ার্সে তালিকাভূক্ত ছিলেন ও ওয়াইপ্রেসে যুদ্ধ করেছেন। সৌভাগ্যক্রমে বুকপকেটে থাকা বেতনবহির কারণে বুলেটবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করা থেকে বেঁচে যান উইলিয়াম। ১৯১৫-১৬ সময়কালে ডার্ডানেলেস অভিযানে মাত্র ১৭জনকে নিয়ে ফিরে আসা রেজিমেন্টের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি।[১০] হিউজের শৈশবের কল্পনায় স্থির হয়ে আসা ফ্লন্ডার্স ফিল্ডসের গল্পকথা পরবর্তীতে আউট শিরোনামীয় কবিতায় বর্ণিত হয়েছে। হিউজ উল্লেখ করেন যে, আমার প্রথম ছয় বছরের সবটুকুই আকৃতিযুক্ত ছিল।[১১]

শিকার করা, মাছ ধরা, সাঁতার কাটা ও নিজ পরিবারের সাথে বনভোজন করতে ভালোবাসতেন টেড হিউজ। সাত বছর বয়স পর্যন্ত বার্নলি রোড স্কুলে পড়াশোনা করেন। এরপর তার পরিবার মেক্সবোরায় স্থানান্তরিত হলে শোফিল্ড স্ট্রিট জুনিয়র স্কুলে ভর্তি হন তিনি। তার পিতামাতা সংবাদপত্র বিক্রয় ও তামাকজাতপণ্য বিক্রয়ের দোকান পরিচালনা করতো।

কাব্য রচনায় সহায়তা লাভ[সম্পাদনা]

মেক্সবোরা গ্রামার স্কুলে অধ্যয়ন করেন তিনি। সেখানে বেশ কয়েকজন শিক্ষক তাকে লেখায় উদ্বুদ্ধ করতেন। এভাবেই তার কবিতায় আগ্রহ জন্মায়। মিস ম্যাকলিওড ও পলিন মেইন হপকিন্স ও এলিয়টের কবিতাগুলো তার সামনে তুলে ধরেন। কবিতায় বেশ উঁচু মানের ধারণা থাকায় তার বোন অলউইন প্রধান মন্ত্রণাদাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়াও, জন ফিশার নামীয় শিক্ষকও তাকে সহায়তা করতেন।

বিখ্যাত কবি হ্যারল্ড ম্যাসিংহামও এ বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করতেন ও ফিশারের কাছ থেকে দীক্ষা নিতেন। ১৯৪৬ সালে হিউজের শুরুর দিকের কবিতাগুলোর মধ্যে ওয়াইল্ড ওয়েস্ট ও একটি ছোটোগল্প গ্রামার স্কুলের সাময়িকী দ্য ডন ও ডিয়ার্নে প্রকাশিত হয়। এরপর ১৯৪৮ সালে আরও কয়েকটি কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল। ১৬ বছর বয়সকালে অন্য কেউই ভাবতে পারেননি যে তিনি কবি হবেন।

একই বছরে ক্যামব্রিজের পেমব্রোক কলেজে ইংরেজিতে উন্মুক্ত প্রদর্শনীর সুযোগ লাভ করেন। তবে, জাতীয় সেবাকার্যকেই প্রাধান্য দেন তিনি।[১২] ১৯৪৯ থেকে ১৯৫১ সময়কালে দুই বছরের জন্য জাতীয় সেবাকার্যে তুলনামূলকভাবে খুব সহজেই উতরিয়ে যান। পূর্ব ইয়র্কশায়ারের তিনজন ব্যক্তির নির্জন অবস্থানে আরএএফের গ্রাউন্ড ওয়ারলেস মেকানিক হিসেবে নিয়োগ পান। এ সময়ে তার কোন কিছুই করার ছিল না। তিনি শুধু শেকসপিয়রের লেখাগুলো পড়তেন ও পুণঃপুণঃ পড়তেন এবং ঘাসের বৃদ্ধি পর্যবেক্ষণ করতেন। মনেপ্রাণে অনেক নাটক শিখতেন ও ডব্লিউ. বি. ইয়েটসের অনেক কবিতা মুখস্থ করতেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৫১ সালে এম.জে.সি হগার্টের তত্ত্বাবধানে পেমব্রোক কলেজে ইংরেজি বিষয়ে অধ্যয়ন করতে থাকেন। হগার্টের তত্ত্বাবধানে হিউজ বেশ অনুপ্রাণিত হন। তবে খুব কমই সভা অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতেন ও এ সময়ে কোন কবিতা লেখেননি তিনি।

তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নকালে নৃতত্ত্ব ও পুরাতত্ত্ব বিষয়ে স্থানান্তরিত হন যা তাকে কবিতা লিখতে সহায়তা করে। তবে, বৃত্তিধারী হিসেবে এ সুযোগ পাননি।[১৩] ড্যানিয়েল হিয়ারিং ছদ্মনামে গ্রান্টায় দ্য লিটল বয়েজ এন্ড দ্য সিজন্স শিরোনামীয় কবিতা লিখেন।[১৪]

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষে লন্ডন ও ক্যামব্রিজে বসবাস করেন টেড হিউজ। এ সময়ে তিনি বিভিন্ন ধরনের কাজ-কর্মে যোগ দেন। গোলাপ বাগানমালী, নৈশপ্রহরী ও জে. আর্থার র‌্যাঙ্ক নামীয় ব্রিটিশ চলচ্চিত্র প্রতিষ্ঠানের পাঠকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। লন্ডন চিড়িয়াখানা পরিষ্কারের কাজেও তিনি অংশ নেন।[১৫] এরফলে খুব কাছে থেকে প্রাণীজগৎকে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ হয় তার।

সিলভিয়ার সাথে সাক্ষাৎপর্ব[সম্পাদনা]

২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৬ তারিখে হিউজ ও তার বন্ধুমহল সেন্ট বোটলফের পর্যালোচনার উদ্বোধন উপলক্ষ্যে মিলনমেলার আয়োজন করে।[১৬] এতে হিউজের চারটি কবিতা অন্তর্ভুক্ত হয়। এখানেই ফুলব্রাইট বৃত্তিধারী ও ক্যামব্রিজে পড়াশোনার জন্য আসা মার্কিন কবি সিলভিয়া প্লাথের সাথে সাক্ষাৎ হয় তার।[১৭] ইতোমধ্যেই সিলভিয়া প্লাথ ব্যাপকভাবে প্রকাশ করে ফেলেছেন, অগণিত পুরস্কার লাভ করেছেন। মূলতঃ হিউজ ও হিউজের সতীর্থ কবি লুকাস মেয়ার্সের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যেই তিনি আসেন। সেখানে একে-অপরের প্রতি গভীর অনুরাগ জন্মায়। তবে, আরও একমাস পর প্যারিসে যাবার পথে লন্ডনে আবারও সাক্ষাৎ ঘটে তাদের। তিন সপ্তাহ পর পুনরায় প্লাথ ফিরে এসে সাক্ষাৎ করেন।

হিউজ ও প্লাথের মধ্যকার প্রণয়লীলা চলতে থাকে। প্রথম সাক্ষাতের চার মাস পর ১৬ জুন, ১৯৫৬ তারিখে মারটিয়ার হলবর্নের সেন্ট জর্জে তাদের বিবাহকার্য সম্পন্ন হয়। জেমস জয়েসের সম্মানার্থে ব্লুমসডে তারিখকে বিয়ের জন্য বেছে নেন তারা। প্লাথের মা-ই কেবলমাত্র বিবাহের অতিথি ছিলেন ও তিনি তাদের সাথে মধুচন্দ্রিমা স্পেনীয় উপকূলবর্তী এলাকা বেনিডর্মে যান।[১৮] হিউজের আত্মজীবনীকারকেরা মন্তব্য করেছেন যে, প্লাথের মানসিক অবসাদ ও আত্মহননের চেষ্টা আরও পরে হয়েছিল। বার্থডে লেটার্সে এর প্রতিফলন ঘটিয়ে হিউজ মন্তব্য করেন যে, প্লাথের সাথে তার কোন পার্থক্য দেখা যায়নি। প্রথমদিকের বছরগুলোয় তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক বেশ মধুর ছিল।

ক্যামব্রিজে ফিরে আসার পর তারা ৫৫ এলটিসলি অ্যাভিনিউতে বসবাস করতে থাকেন। ঐ বছরে তাদের সৃষ্ট কবিতাগুলো দ্য নেশন, পয়েট্রি ও দি আটলান্টিকে প্রকাশিত হয়েছিল।[১৯] প্লাথ হিউজের পাণ্ডুলিপি 'হক ইন দ্য রেইন' শিরোনামীয় কবিতাসমগ্রের জন্য টাইপ করেন। এ কবিতাসমগ্রটি ইয়ং মেন্স ও ইয়ং ওম্যান্স হিব্রু অ্যাসোসিয়েশন অব নিউইয়র্ক কর্তৃক কবিতা কেন্দ্র থেকে পরিচালিত কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয়েছিল। প্রথম পুরস্কারটি হার্পার থেকে প্রকাশিত হয়েছিল। সেপ্টেম্বর, ১৯৫৭ সালে হিউজের বিশ্বব্যাপী সমালোচনাকে ঘিরে গ্রন্থ প্রকাশিত হয়। এরফলে সমারসেট মম পুরস্কার জয় করেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্র গমন ও প্রত্যাবর্তন[সম্পাদনা]

এ দম্পতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যায়। এরফলে প্লাথ তার প্রাক্তন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্মিথ কলেজে শিক্ষকতা পেশায় মনোনিবেশ ঘটান। এ সময়ে হিউজ আমহার্স্টের ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াতেন। ১৯৫৮ সালে লিওনার্ড বাস্কিনের সাথে তারা সাক্ষাৎ করেন। পরবর্তীকালে বাস্কিন হিউজের অনেক গ্রন্থের প্রচ্ছদচিত্র এঁকে দিতেন। এরপর এ দম্পতি ইংল্যান্ডে ফিরে আসেন।

হেপ্টনস্টলে কিছুদিন অবস্থানের পর লন্ডনের প্রাইমরোজ হিলের একটি ছোট ফ্লাটে অবস্থান করেন। উভয়েই লেখার জগতে নিমগ্ন থাকতেন। বিবিসিতে অনুষ্ঠান পরিচালনার কাজ করাসহ হিউজ প্রবন্ধ, নিবন্ধ, সমালোচনা পর্যালোচনা ও মত বিনিময় কাজে সম্পৃক্ত হন।[২০] এ সময়ে তিনি কিছু কবিতা লিখেন যা হয়তো উডো (১৯৬৭) রেকলিংস (১৯৬৬) প্রকাশিত হয়ে থাকবে। মার্চ, ১৯৬০ সালে লাপারক্যাল প্রকাশিত হয় ও হথর্নডেন পুরস্কার জয় করে। একসময় তিনি লক্ষ্য করলেন যে, তিনি কেবলমাত্র প্রাণীজগৎকে ঘিরেই লিখে চলেছেন যা তাকে প্রাণীদের কবি হিসেবে পরিচিতি এনে দিয়েছে।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

হিউজ ও প্লাথ দম্পতির দুই সন্তান ছিল। ১৯৬০ সালে ফ্রেদা রেবেকা ও ১৯৬২ সালে নিকোলাস ফারার জন্মগ্রহণ করে। ১৯৬১ সালে ডেভনের নর্থ টটনের কোর্ট গ্রীন নিবাস ক্রয় করেন তারা। ১৯৬২-এর গ্রীষ্মকালে আসিয়া ওয়েভিল নাম্নী এক রমণীর সাথে মন দেয়া-নেয়ায় অগ্রসর হন টেড হিউজ। স্বামী নিয়ে প্রাইমরোজ হিলের ফ্লাটে অর্ধ-গৃহ ভাড়া নিয়ে থাকতেন ওয়েভিল। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে ১৯৬২ সালের শরতে হিউজ ও প্লাথ পৃথকভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। প্লাথ সন্তানদেরকে নিয়ে নতুন ফ্লাটে চলে যান।

২০১৭ সালে প্রকাশিত পূর্বেকার অপ্রকাশিত চিঠিপত্রগুলোয় দেখা যায় যে, ১৯৬১ সালে দ্বিতীয় সন্তান আগমনের পূর্বে হিউজ শারীরিকভাবে আঘাত করতেন বলে প্লাথ অভিযোগ করেন।[২১]

প্লাথের মৃত্যু[সম্পাদনা]

মানসিক অবসাদ ও আত্মহননের চেষ্টার অতীত ইতিহাসকে পাশ কাটিয়ে অবশেষে ১১ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে প্লাথ সফলতার মুখ দেখেন।[২২] কিছু ব্যক্তির অভিমত, হিউজ প্লাথকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দিয়েছেন।[২৩][২৪][২৫] অনেক নারীবাদী হিউজকে প্লাথের নাম উচ্চারণে হত্যার হুমকি দেয়।[২৬]

বিপত্নীক হিউজ প্লাথের ব্যক্তিগত ও সাহিত্যিক কর্মকান্ডের মালিকানাস্বত্ত্ব লাভ করেন। অ্যারিয়েলসহ (১৯৬৬) তার পাণ্ডুলিপি প্রকাশনার দেখাশোনার অধিকারী তিনি। কিছু নারীবাদী অভিযোগ করেন যে, তাকে আত্মহননের দিকে ঠেলে দেয়ার পর তার সাহিত্যকর্মের দায়িত্বভার গ্রহণের অধিকার নেই হিউজের। তিনি দাবী করেন যে, প্লাথের শেষ খণ্ডটিকে ধ্বংস করে ফেলেছেন যাতে তাদের মধ্যকার শেষদিকে কয়েকমাসের বিস্তারিত ঘটনার কথা উল্লেখ ছিল।

প্লাথের আত্মহত্যার পর তিনি দ্য হাউলিং অব ওল্ভস এবং সং অব এ র‌্যাট শিরোনামীয় দুইটি কবিতা লিখেন। এরপর পরবর্তী তিন বছর কোন কবিতা লেখেননি। সম্প্রচারকার্যে ব্যাপকভাবে জড়িয়ে পড়েন, সমালোচনাধর্মী প্রবন্ধ ও প্যাট্রিক গারল্যান্ড এবং চার্লস অসবর্নকে সাথে নিয়ে আনন্তর্জাতিক কবিতা উৎসবে সম্পৃক্ত থাকেন। তিনি আশাবাদী যে, বহিঃবিশ্বের সাথে ইংরেজ কবিতার সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

প্লাথের আত্মহত্যার ছয় বছর পর ২৩ মার্চ, ১৯৬৯ তারিখে একই পন্থায় আসিয়া ওয়েভিল গ্যাস স্টোভের আত্মহত্যা করেন। এছাড়াও ওয়েভিল হিউজের চারবছর বয়সী কন্যা আলকেজান্দ্রা তাতিয়ানা এলিসকে (ডাকনাম: শুরা) হত্যা করেন। তাদের মৃত্যুর ফলে হিউজকে প্লাথ ও ওয়েভিলের মৃত্যুর সাথে দায়ী করা হয়।[২৭][২৮] এ ঘটনায় হিউজ দারুণভাবে মর্মাহত হন। তিনি ক্রো’র ধারাবাহিকতা রক্ষা করেননি। ১৯৭৫ সালে কেভ বার্ডস প্রকাশের পূর্ব-পর্যন্ত অসমাপ্ত ছিল।

আগস্ট, ১৯৭০ সালে হিউজ ক্যারল অরচার্ড নাম্নী এক সেবিকাকে বিয়ে করেন। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তাদের সম্পর্ক বজায় ছিল। পশ্চিম ইয়র্কশায়ারের হেবডেন ব্রিজের কাছে লাম্ব ব্যাংক গৃহ খরিদ করেন ও কোর্ট গ্রিনের সম্পত্তি দেখাশোনা করতেন। তিনি ডেভনের উইঙ্কলেইয়ের কাছে ছোট খামারে চাষাবাদ করতেন। এটিকে তিনি তার কবিতাসমগ্রের শিরোনাম থেকে এনে মুরটাউন নামে ডাকতেন। এরপর তিনি ইডসলেইয়ের বন্ধু মাইকেল মরপার্গোর প্রতিষ্ঠিত ফার্মস ফর সিটি চিলড্রেন নামীয় দাতব্যসংস্থার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। অক্টোবর, ১৯৭০ সালে ক্রো প্রকাশিত হয়।

দেহাবসান[সম্পাদনা]

মৃত্যুর পূর্বে রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কর্তৃক অর্ডার অব মেরিট সম্মাননা লাভ করেন। ডেভনের গৃহে বসবাস করতে থাকেন। ২৮ অক্টোবর, ১৯৯৮ তারিখে হৃদযন্ত্রক্রীয়ায় আক্রান্ত হলে তার দেহাবসান ঘটে। লন্ডনের সাউদওয়ার্কে কোলন ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। ৩ নভেম্বর, ১৯৯৮ তারিখে তার শবযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। নর্থ টটন চার্চে এ শবানুষ্ঠানের পর এক্সটারে তাকে সমাহিত করা হয়।

হিউজ ও প্লাথ দম্পতির পুত্রসন্তান ছিলেন নিকোলাস হিউজ। ১৬ মার্চ, ২০০৯ তারিখে অবসাদজনিত কারণে আলাস্কায় নিজ গৃহে তিনিও আত্মহননের পথ বেছে নেন।[২৯] জানুয়ারি, ২০১৩ সালে ক্যারল হিউজ ঘোষণা করেন যে, তিনি তাদের বৈবাহিক সম্পর্ক নিয়ে স্মৃতিকথা লিখবেন।

২০১৭ সালে প্লাথের লিখিত চিঠিপত্রাদি খুঁজে পাওয়া যায়। ১৮ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬০ তারিখে থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৩ তারিখে পর্যন্ত এ লেখাগুলোয় দাবী করা হয় যে, হিউজ দুইদিন পূর্বে ১৯৬১ সালে প্লাথকে পিটান। হিউজ প্লাথকে মৃত দেখতে চান।[৩০] এ চিঠিগুলো ড. রুথ বার্নহাউজকে (তৎকালীন: ড. রুথ বেউসার) লেখা হয়েছিল।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Philip Hensher reviews Collected Works of Ted Hughes, plus other reviews"Daily Telegraph। এপ্রিল ২০০৪। ২২ ফেব্রুয়ারি ২০০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  2. Bate, Jonathan (২০১৫)। Ted Hughes: The Unauthorised Life। HarperCollins। আইএসবিএন 978-0-0081-182-28। ২৩ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  3. (5 January 2008). The 50 greatest British writers since 1945. The Times. Retrieved on 1 February 2010.(সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
  4. Joanny Moulin (2004). Ted Hughes: alternative horizons. p.17. Routledge, 2004
  5. "Ted Hughes Homepage"। ann.skea.com। সংগ্রহের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ২০০৮ 
  6. Bell (2002) p4
  7. Keith Sagar, "Hughes, Edward James (1930–1998)". Oxford Dictionary of National Biography, Oxford University Press, 2004
  8. Paul Bentley, "Ted Hughes, Class and Violence", 2014, pp 63 and 64
  9. Gerald Hughes, "Ted and I: A Brother's Memoir", 2014, p 4
  10. Sagar, Keith (১৯৮৩)। The Achievement of Ted Hughes। Manchester University Press। পৃষ্ঠা 9। আইএসবিএন 978-0-7190-0939-6 
  11. "Ted Hughes Timeline - publications, life-events etc."। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭ 
  12. Keith M. Sagar (1981). Ted Hughes p.9. University of Michigan
  13. Bell (2002), p. 5
  14. Sagar (1978), p. 9
  15. "Tobias Hill: Tales from decrypt"। ৯ আগস্ট ২০০৩। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০১৭ 
  16. Jonathan Bate (2015). Ted Hughes: the unauthorised life p. 98
  17. "Sylvia Plath and Ted Hughes talk about their relationship", Guardian, 15 April 2010. Excerpt taken from British Library's sound archive, published on the audio CD The Spoken Word: Sylvia Plath.
  18. Bell (2002), p. 6
  19. Sagar (1978), p. 11
  20. Bell, Charlie (2002) Ted Hughes Hodder and Stoughton, p. 7
  21. Kean, Danuta (১১ এপ্রিল ২০১৭)। "Unseen Sylvia Plath letters claim domestic abuse by Ted Hughes"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭ 
  22. Bell, Charlie (2002) Ted Hughes Hodder and Stoughton p8
  23. "Ted Hughes"। ১১ এপ্রিল ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০১৭ 
  24. Phegley, Jennifer; Badia, Janet (২০০৫)। Reading Women Literary Figures and Cultural Icons from the Victorian Age to the Present। পৃষ্ঠা 252। আইএসবিএন 978-0-8020-8928-1 
  25. "Unknown poem reveals Ted Hughes's torment over death of Sylvia Plath". The Guardian. 6 October 2010
  26. "Rhyme, reason and depression". (16 February 1993). The Guardian. Retrieved 9 July 2010.
  27. I failed her. I was 30 and stupid The Observer 19 March 2000 Retrieved 9 July 2010
  28. Yehuda Koren and Eilat Negev (১৯ অক্টোবর ২০০৬)। "''Written out of history'' Guardian article on Wevill and Hughes 19 October 2006"The Guardian। London। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০১০ 
  29. "Tragic poet Sylvia Plath's son kills himself"। CNN। ২৩ মার্চ ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ১৬ জুলাই ২০১০ 
  30. "Unseen Sylvia Plath letters claim domestic abuse by Ted Hughes | Books"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৭ 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

  • Bate, Jonathan. Ted Hughes: the unauthorised life (2015. William Collins)
  • Bell, Charlie. Ted Hughes (2002. Hodder and Stoughton)
  • Carter, Sebastian. 'The Rainbow Press', in Parenthesis, 12 (November 2006), pp. 32–35
  • Dirda, Michael. Bound to Please (pp. 17–21). (2005. W. W. Norton)
  • Feinstein, Elaine. Ted Hughes: the life of a poet. (2001. W. W. Norton)
  • Gammage, Nick (ed.) The Epic Poise: a celebration of Ted Hughes (1999. Faber and Faber)
  • Hadley, Edward. The Elegies of Ted Hughes (2010. Palgrave Macmillan)
  • Rees, Roger (ed.) Ted Hughes and the Classics (2009. Oxford University Press)
  • Roberts, Neil. Ted Hughes: a literary life (2006. Palgrave Macmillan)
  • Sagar, Keith. The Art of Ted Hughes (1978. Cambridge University Press)
  • Sagar, Keith. The Laughter of Foxes: A Study of Ted Hughes (2000. Liverpool U.P.)
  • Sagar, Keith. Ted Hughes and Nature: Terror and Exultation (2009. Fastprint)
  • Sagar, Keith (ed.) The Achievement of Ted Hughes (1983. Manchester U.P.)
  • Sagar, Keith (ed.) The Challenge of Ted Hughes (1994. Macmillan)
  • Sagar, Keith and Stephen Tabor. Ted Hughes: A Bibliography 1946–1995 (1998. Mansell)
  • Skea, Ann. Ted Hughes: The Poetic Quest (1994. University of New England Press)
  • Tennant, Emma. Burnt Diaries (1999. Canongate Books Ltd)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
জন বেজেম্যান
যুক্তরাজ্যের পয়েট লরেট
১৯৮৪–১৯৯৮
উত্তরসূরী
অ্যান্ড্রু মোশন