প্যারেডোলিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Pareidolia থেকে পুনর্নির্দেশিত)

প্যারেডোলিয়া হলো একটি সংবেদনশীল উদ্দীপনায় আপাতদৃষ্টিতে কোনো উল্লেখযোগ্য বা বিশেষ নিদর্শন খুঁজে পাওয়া যেখানে আসলে সেই উদ্দীপনাটি প্যাটার্নহীন ও এলোমেলো।[১][২]

প্যারেডোলিয়া সাধারণত দৃষ্টিমান উদ্দীপনার প্রাসঙ্গে উল্লেখ করা হয়, যেমন একটি দ্ব্যর্থক দৃশ্যে কোনো পরিচিত ব্যক্তির মুখ দেখতে পাওয়া, তবে এরূপ ঘটনা যেকোনো ধরনের উদ্দীপনার ক্ষেত্রেই উপস্থিত থাকতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, পরবর্তী মৌখিক উদ্দীপনার ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক শব্দের সাথে প্রাইমিং [en] এর কারণে সেই মৌখিক উদ্দীপনার অর্থ ভিন্নভাবে উপলব্ধি করা উল্লেখ্যযোগ্য।[৩]

মঙ্গলে সাইডোনিয়া এলাকার একটি চূড়ার চিত্র। মুখের মত দৃশ্যমান ছবিটি উপলব্ধি করা বা না করার সত্য নির্ভর করে দ্রষ্টার কোণের উপর, উল্লেখ্য কোণ থেকে এরূপ উপলব্ধি করা গেলেও অন্যান্য কোণ থেকে মুখটি উপলব্ধি করা যায় না। যেহেতু প্যাটার্নহীন দৃশ্যে অর্থাৎ একরূপ সংবেদনশীল উদ্দীপনায় একটি বিশেষ নিদর্শন উপলব্ধি করা যাচ্ছে, সেহেতু এ ঘটনাটি প্যারেডোলিয়ার একটি উদাহরণ। ছবিটি ১৯৭৬ সালে ভাইকিং-১ থেকে তোলা।

এটি সম্ভাব্য যে প্যারেডোলিয়া এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত একটি ধারণা, এফোফেনিয়া [en], প্রাচীন সভ্যতার রূপধারণে বিশেষ প্রভাব ফেলেছে। [৪][৫]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

প্যারেডোলিয়া শব্দটি para (παρά, “পাশে, পাশাপাশি, পরিবর্তে”, ত্রুটিপূর্ণ বা ভুল কিছু অর্থ এই প্রেক্ষাপটে) এবং বিশেষ্য eidōlon (εἴδωλον, “চিত্র, গড়ন, আকৃতি”) এ দুটি গ্রীক শব্দ থেকে এসেছে। এভাবে প্যারেডোলিয়া শব্দটি মানুষের দ্ব্যর্থক উদ্দীপনায় প্যাটার্ন, চিত্র বা অন্য অর্থশীল তথ্য হিসেবে উপলব্ধি করার প্রবণতাকে চিহ্নিত করে।[৬]

ব্যাখ্যা[সম্পাদনা]

প্যারেডোলিয়ার একটি বিশেষ ক্ষেত্র বিভিন্ন দৃষ্টিসংক্রান্ত উদ্দীপনাকে চেহারা হিসেবে বিবেচনা করা। মাগনেটএনসেফালোগ্রাফির [en] মাধ্যমে মস্তিশকের ক্রিয়া বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে যে, মুখের মত মনে হওয়া বস্তুগুলোকে আসল মুখ থেকে আলাদাভাবে বিবেচনা করার কর্মক্ষমতা সাধারণত সবচেয়ে বেশি হয় সেই বস্তু দৃষ্টিতে আসার প্রায় ১৬০ মিলিসেকেন্ড পর।[৭]

আরেকটি তথ্য উঠে এসেছে গবেষণায়, অন্যান্য সচরাচর বস্তু এতক্ষণ স্থায়ি বিভ্রম তৈরী করে না। মুখাবয়বকে খুব সহজে খুঁজে পায় আমাদের মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের চেতনা ও মনের আবেগীয় প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই এটি ঘটে যায়। একারণে স্টিকফিগারের এত সরলতা সত্ত্বেও আমরা খুব সহজে এর থেকে এর ভাব(mood) চিহ্নিত করে ফেলি। মন খারাপ নাকি হাসিখুশি ভাব এটা আঁকার জন্য কখনোই শিল্পীর পর্যায়ের অঙ্কন দরকার হয় না। এই বলিষ্ঠ ও সূক্ষ্ণ ক্ষমতা সহজেই দৃষ্টিগত উদ্দীপনা থেকে মানসিক অবস্থার ব্যাপারে জ্ঞাত হতে পারে এমন ব্যাক্তির পক্ষে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ফলাফল হিসেবে ধরা হয়।[৮]

শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]

The Jurist পেইন্টিং যেটিতে মুখের চিত্রটি আসলে নানান খাবার দাবারের সমষ্টির অঙ্কন। ১৫৬৬ সালে এটি করেন ইতালীর জিউসেপ্পে আরকিমবল্ডো

লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির মতে, প্যারেডোলিয়া হচ্ছে রঙশিল্পীদের কাছে একটি উপকরণের মত। “যদি অনেক দাগওয়ালা কোনো দেয়ালের দিকে তাকাও যেখানে আছে বিভিন্ন পাথরের মিশেল, যদি কোনো দৃশ্য আবিষ্কার করতে যাও পাহাড়, নদী, পাথর, গাছ, সমভূমি, প্রশস্ত উপত্যকা আর পাহাড়ে ছাওয়া প্রতিচ্ছবিতে পাবে সেই দৃশ্য।”[৯]

ধর্মীয়[সম্পাদনা]

ধর্মীয় অনুভূতির সাথে জড়িত অনেকগুলো ঘটনা রয়েছে ধর্মীয় চিত্র ও দৃশ্যপট কল্পনায়। বেশি ঘটে ধর্মীয় মুখচিত্রগুলিকে কল্পনা করতে দেখা। অনেক বেশি কমন যেগুলোঃ যিশুখ্রিস্ট[১০], কুমারী মাতা মেরীর ছবি[১১], ‘আল্লাহ’ শব্দটি[১২]

কম্পিউটার দর্শন[সম্পাদনা]

কম্পিউটার ভিশনেও প্যারেডোলিয়া পৌঁছে গেছে, বিশেষত 'চিত্র চিহ্নিতকরণ' (Image Recognition) প্রোগ্রামগুলোয়, যার মাধ্যমে কম্পিউটার দিয়ে কৃত্রিমভাবে বৈশিষ্ট্যগুলো চিহ্নিত করা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নেটওয়ার্ক গঠনে এই প্রোগ্রামটি কম্পিউটারকে দেখতে সাহায্য করে। একই সাথে আরেকটি কাজ হয়ে যায়, আমরা আমাদের চারপাশটা কেমন দেখি আর কম্পিউটার আত্র একটি দৃষ্টিক্ষমতা অর্জনের মাধ্যমে কীভাবে দেখে তা ধরে ফেলা। এমন একটি কম্পিউটার ভিশন প্রোগ্রামের নাম ডিপড্রিম(DeepDream)। গুগলের তৈরী। ডিপড্রিম এর লিংকে গিয়ে আপনি যেকোনো ছবি আপলোড দিলেই আপনাকে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে দেখিয়ে দিবে যন্ত্র সেটা কীভাবে দেখে।

প্রাসঙ্গিক ঘটনা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে কন্সটান্টিন রডিভ 'Breakthrough' নামে একটি বই লিখেন। বিষয়বস্তু ছিল বৈদ্যুতিক কণ্ঠের ঘটনা (electronic voice phenomenon বা EVP) সম্পর্কে তার বিশ্বাস। এই EVP কে শ্রাবণ প্যারেডোলিয়া বলা হয়।

উদাহরণ[সম্পাদনা]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Pareidolia | Definition of Pareidolia by Lexico"web.archive.org। ২০২০-০১-১৬। ২০২০-০১-১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০৯ 
  2. Rieth, Cory A.; Lee, Kang; Lui, Jiangang; Tian, Jie; Huber, David E. (২০১১-০৮-১৫)। "Faces in the mist: illusory face and letter detection"i-Perception2 (5): 458–476। আইএসএসএন 2041-6695ডিওআই:10.1068/i0421পিএমআইডি 23145238পিএমসি 3485785অবাধে প্রবেশযোগ্য 
  3. Nees, Michael A.; Phillips, Charlotte (২০১৪-০৮-২৯)। "Auditory Pareidolia: Effects of Contextual Priming on Perceptions of Purportedly Paranormal and Ambiguous Auditory Stimuli: Auditory pareidolia"Applied Cognitive Psychology (ইংরেজি ভাষায়)। 29 (1): 129–134। ডিওআই:10.1002/acp.3068। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৬-০৯ 
  4. Bustamante, Patricio; Yao, Daniela; Bustamante (২০১০), The Worship to the Mountains: A Study of the Creation Myths of the Chinese Culture, Rupestre Web .
  5. Bustamante, Patricio; Yao, Fay; Bustamante, Daniela (২০১০)। "Pleistocene Art: the archeological material and its anthropological meanings" (পিডিএফ)From Pleistocene Art to the Worship of the Mountains in China. Methodological tools for Mimesis in Paleoart, Congress IFRAO 2010 – 'Pleistocene Art of the World'. Symposium. Signs, Symbols, Myth, Ideology। ১৬ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুন ২০১৫ 
  6. Wang, Chen; Yu, Liangcheng; Mo, Yiyi; Wood, Lincoln C.; Goon, Carry (২০২২-০৪-২৪)। "Pareidolia in a Built Environment as a Complex Phenomenological Ambiguous Stimuli"International Journal of Environmental Research and Public Health19 (9): 5163। আইএসএসএন 1661-7827ডিওআই:10.3390/ijerph19095163পিএমআইডি 35564558 |pmid= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য)পিএমসি 9103170অবাধে প্রবেশযোগ্য |pmc= এর মান পরীক্ষা করুন (সাহায্য) 
  7. Wardle, Susan G.; Taubert, Jessica; Teichmann, Lina; Baker, Chris I. (২০২০-০৯-০৯)। "Rapid and dynamic processing of face pareidolia in the human brain"Nature Communications (ইংরেজি ভাষায়)। 11 (1): 4518। আইএসএসএন 2041-1723ডিওআই:10.1038/s41467-020-18325-8 
  8. Svoboda, Elizabeth (২০০৭-০২-১৩)। "Faces, Faces Everywhere"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৭-০৯ 
  9. Da Vinci, Leonardo (১৯২৩)। John, R; Don Read, J, সম্পাদকগণ। "Note-Books Arranged And Rendered Into English"। Empire State Book Co। 
  10. Zusne, Leonard; Jones, Warren H (১৯৮৯)। Anomalistic Psychology: A Study of Magical Thinking। Lawrence Erlbaum Associates। পৃষ্ঠা 77–79। আইএসবিএন 0-8058-0508-7। সংগ্রহের তারিখ ২০০৭-০৪-০৬ 
  11. "In New Jersey, a Knot in a Tree Trunk Draws the Faithful and the Skeptical", The New York Times, জুলাই ২৩, ২০১২ .
  12. Ibrahim, Yahaya (২০১১-০১-০২)। "In Maiduguri, a tree with engraved name of God turns spot to a Mecca of sorts"Sunday Trust। Media Trust Limited, Abuja। ২০১২-১১-০৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০৩-২১