ভেনেজুয়েলার তৈলশিল্পের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(History of the Venezuelan oil industry থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বার্ষিক তৈল রাজস্বের বিপরীতে ভেনেজুয়েলার ঐতিহাসিক মুদ্রাস্ফীতির তুলনামূলক লেখচিত্র।
উৎসসমূহ: EIA 1, EIA 2, International Monetary Fund: Data & Statistics (1980-2008, 2015), CIA: The World Factbook (2009–2014), Business Insider (2014, 2015)
১৮৬১ থেকে ২০১৫ সময়কালীন প্রকৃত ও সর্বনিম্ন তৈলমূল্যের লেখচিত্র।

ভেনেজুয়েলা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ তৈল রপ্তানীকারক দেশসমূহের মধ্য অন্যতম। এখানে বিশ্বের সর্ববৃহৎ অপরিশোধিত তৈল সংরক্ষিত অবস্থায় আছে। ২০১২ সালের তথ্য মোতাবেক আনুমানিক ২৯৬.৫ বিলিয়ন ব্যারেল তৈল রয়েছে যা বিশ্বের মোট তৈল মজুতের ২০%।

২০০৮ সালে অপরিশোধিত তৈল উৎপাদনে ভেনেজুয়েলা ধারাবাহিকভাবে বিশ্বের দশটি সর্বোচ্চ উৎপাদনকারী দেশের মর্যাদা পায়।[১] প্রতিদিন এখান থেকে ২,৩৯৪,০২০ ব্যারেল (৩৮০,৬১৯ কিউবিক মিটার/দিন) তেল উৎপাদন করে যা দেশটিকে বিশ্বের অষ্টম সর্বোচ্চ মোট তৈল রপ্তানীকারক দেশে পরিণত করে। পূর্ববর্তী বছরের সাথে তুলনান্তে ২০১০ সালে আরও ৪০.৪০% অপরিশোধিত তৈল মজুতের বিষয়টি যুক্ত হওয়ায় সৌদি আরবকে পাশ কাটিয়ে বিশ্বের সর্ববৃহৎ মজুত তেলের ভাণ্ডার গড়ে তুলেছে।[২] ভেনেজুয়েলা তেল রপ্তানীকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেকের প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

স্পেনের অধিগ্রহণের পূর্বে অনেক প্রাচীন সমাজের ন্যায় ভেনেজুয়েলার আদিবাসী জনগোষ্ঠী নির্গত পেট্রোলিয়ামজাত অপরিশোধিত তৈল ও আসফাল্ট ব্যবহারে সক্ষমতা দেখিয়েছে। ঘন কালো তরল পদার্থকে স্থানীয়রা ‘মিন’ নামে ডাকতেন। মূলতঃ চিকিৎসা কার্যে, দৃশ্য তৈরিতে এবং সরু নৌকায় মেখে ব্যবহার করা হতো।[৪]

ষোড়শ শতাব্দীর শুরুতে স্পেনীয় অধিগ্রহণকারীরা আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে প্রাকৃতিকভাবে বেরিয়ে আসা বিটুমেনকে তাদের জাহাজে ব্যবহারের পাশাপাশি অস্ত্রশস্ত্র রক্ষণাবেক্ষণেও ব্যবহার করতে শুরু করে। ১৫৩৯ সালে ভেনেজুয়েলা থেকে প্রথমবারের মতো পেট্রোলিয়াম জাহাজীকরণের কথা লিখিতভাবে জানা যায়। স্পেনের সম্রাট পঞ্চম চার্লসের পায়ের গোড়ায় ব্যথা নিবারণকল্পে এক ব্যারেল তেল প্রেরণ করা হয়েছিল।[৪]

দেশটির প্রধান জ্বালানী তৈলক্ষেত্র জুলিয়া রাজ্যের মারাকাইবো হ্রদ, ভেনেজুয়েলা উপসাগর ও ভেনেজুয়েলার পূর্বাংশে অরিনোকো নদী তীরবর্তী এলাকায় মজুত রয়েছে।

তৈলনীতি প্রণয়ন[সম্পাদনা]

২০শ শতাব্দীর প্রথমার্ধ্ব থেকে মার্কিন তৈল উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ভীষণভাবে ভেনেজুয়েলার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেছে। মূলতঃ তারা কেবলমাত্র খরিদ করার শর্তাবলীতে আগ্রহ প্রকাশ করে। [৫] ১৯৪৩ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে মুনাফা ৫০/৫০ নীতি ব্যবস্থার প্রবর্তন ঘটায়। ১৯৬০ সালে নতুন গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় আসে। হাইড্রোকার্বন মন্ত্রী জুয়ান পাবলো পেরেজ আলফন্সো ওপেক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্ব দেন। এরফলে তৈল উৎপাদনকারী দেশগুলো তৈলের মূল্য নির্ধারণে একমত হয়।[৬]

১৯৭৩ সালে ভোটের মাধ্যমে ভেনেজুয়েলা তৈলশিল্পকে জাতীয়করণ করে যা ১ জানুয়ারি, ১৯৭৬ তারিখ থেকে কার্যকর হয়। পেত্রোলিওস দে ভেনেজুয়েলা (পিডিভিএসএ) এ শিল্পের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করে ও অনেকগুলো হোল্ডিং কোম্পানি এর ছত্রচ্ছায়ায় গড়ে উঠে। পরবর্তী বছরগুলোয় ভেনেজুয়েলা ব্যাপকভাবে অপরিশোধিত কারখানা গড়ে তোলে ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপেবাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতে অগ্রসর হয়।[৭] ১৯৯০-এর দশকে পিডিভিএসএ সরকারের কাছ থেকে আরও সুবিধা পেয়ে স্বাধীনভাবে চালাতে থাকে ও উন্মুক্ত বাণিজ্যের মাধ্যমে বিদেশী বিনিয়োগের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। তবে, ২০০১ সালে হুগো চাভেজ সরকার আইন প্রবর্তন করে বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে শর্তাদি আরোপ করে।

ধর্মঘট[সম্পাদনা]

রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তৈল প্রতিষ্ঠান পিডিভিএসএ ডিসেম্বর, ২০০২ থেকে ফেব্রুয়ারি, ২০০৩ সাল পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে ধর্মঘট আহ্বান করে। তারা রাষ্ট্রপতি চাভেজের পদত্যাগ দাবী করেছিল। পিডিভিএসএ’র ব্যবস্থাপক ও উচ্চ বেতনের অধিকারী দক্ষ কারিগরেরা তৈলক্ষেত্র বন্ধ করে দেয় ও তারা পদত্যাগ করে। পিডিভিএসএ’র যন্ত্রপাতি ও পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য উৎপাদন এবং পরিশোধন কাজগুলোও বন্ধ করে দেয়ার কথা কিছু প্রতিবেদনে প্রকাশ পায়। এরপর ধীরে ধীরে এ উত্তেজনা থামলে তারা কর্মক্ষেত্রে ফিরে আসেন ও বিকল্প তৈল শ্রমিকদের মাধ্যমে কার্যক্রম শুরু হয়। ধর্মঘটের ফলাফল হিসেবে প্রতিষ্ঠানের শ্রমশক্তির প্রায় ৪০% (প্রায় ১৮,০০০ শ্রমিক) শ্রমিককে কর্তব্যে অবহেলার কারণে বরখাস্ত করা হয়েছিল।[৮][৯]

তৈল কূটনীতি[সম্পাদনা]

১৯৫০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়কাল থেকে শেষদিক পর্যন্ত তৈলের মূল্য ক্রমশঃ নিম্নমূখী হতে থাকে। এ প্রেক্ষিতে ভেনেজুয়েলা, ইরান, সৌদি আরব, ইরাককুয়েতের ন্যায় তৈল উৎপাদনকারী দেশগুলো সেপ্টেম্বর, ১৯৬০ সালে বাগদাদে একত্রিত হয় ও পেট্রোলিয়াম রপ্তানী দেশসমূহের সংগঠন বা ওপেক সংস্থা গঠন করে। এ সংস্থার প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে সদস্যভূক্ত দেশগুলো একত্রে কাজ করবে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেলের মূল্য স্থিতিশীল রাখবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে অতিরিক্ত তৈল উৎপাদন করা থেকে বিরত রাখতে রপ্তানীর অনুপাতও নির্ধারণ করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ১৫ ডিসেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জুন ২০১৭ , Energy Information Administration. Last Update: 30 June 2010.
  2. Venezuela oil reserves topped Saudis in 2010:OPEC. Market Watch. 18 July 2011
  3. US Energy Information Administration, “Country Energy Profiles: Venezuela”, US Energy Information Administration, [১][স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]).
  4. Anibal Martinez (১৯৬৯)। Chronology of Venezuelan Oil। Purnell and Sons LTD। 
  5. Yergin 1991, পৃ. 233–236, 432।
  6. Yergin 1991, পৃ. 510–513।
  7. Yergin 1991, পৃ. 767।
  8. McCaughan 2005, পৃ. 128।
  9. López Maya, Margarita (২০০৪)। "Venezuela 2001–2004: actores y estrategias"Cuadernos del Cendes21 (56): 109–132। আইএসএসএন 1012-2508 

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]