প্রথম চেচেন যুদ্ধ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(First Chechen War থেকে পুনর্নির্দেশিত)
প্রথম চেচেন যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: রুশ–চেচেন সংঘর্ষ

১৯৯৪ সালে রাজধানী গ্রোজনিতে চেচেন যোদ্ধাদের দ্বারা ভূপাতিত একটি রুশ মিল এমআই-৮ হেলিকপ্টার
তারিখ১১ ডিসেম্বর ১৯৯৪ – ৩১ আগস্ট ১৯৯৬
অবস্থান
ফলাফল

চেচেন বিজয়[৬]

বিবাদমান পক্ষ
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্র
আরব মুজাহিদিন[১][২][৩][৪][৫]
রাশিয়া রাশিয়া
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র জওহর দুদায়েভ 
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র সেলিম-খান ইয়ান্দারবিয়েভ
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র আসলান মাসখাদভ
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র শামিল বাসায়েভ
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র তুরপাল-আলী আতগেরিয়েভ
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র রুসলান গেলায়েভ
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র আখমেদ জাকায়েভ
ফাথি আল-জর্দানি

রাশিয়া বোরিস ইয়েলৎসিন
রাশিয়া পাভেল গ্রাচেভ

চেচনিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীসমূহের সংযুক্ত গ্রুপের অধিনায়কগণ:
রাশিয়া আলেক্সেই মিতিউখিন
রাশিয়া আনাতোলি কুলিকভ
রাশিয়া আনাতোলি স্কুর্কো
রাশিয়া ভিয়াচেস্লাভ তিখোমিরভ
রাশিয়া ভ্লাদিমির শামানভ[৯]
শক্তি
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র ৬,০০০ (চেচেনদের দাবি অনুযায়ী)
২০,০০০–৪০,০০০ (রুশদের দাবি অনুযায়ী)
৫০০–৭০০[১০]
রাশিয়া ৩৮,০০০ (ডিসেম্বর ১৯৯৪)
৭০,৫০০ (ফেব্রুয়ারি ১৯৯৫)
হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতি
ইচকেরিয়ার চেচেন প্রজাতন্ত্র ৩,০০০ যোদ্ধা নিহত অথবা নিখোঁজ (চেচেনদের দাবি অনুযায়ী)
১৭,৩৯১ যোদ্ধা নিহত অথবা নিখোঁজ (রুশদের দাবি অনুযায়ী)
রাশিয়া ৫,৭৩২ সৈন্য নিহত অথবা নিখোঁজ (রুশ সরকারি তথ্যানুযায়ী)
১৪,০০০ সৈন্য নিহত অথবা নিখোঁজ (সিএসএমআর-এর হিসাব অনুযায়ী)
১৭,৮৯২[১১]–৫২,০০০[১২] সৈন্য আহত
১,৯০৬[১১]–৩,০০০[১২] সৈন্য নিখোঁজ
৩০,০০০–৪০,০০০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত (আরএফএসএসএস-এর তথ্যানুযায়ী)[১৩]
৮০,০০০ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত (মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হিসাব অনুযায়ী)[১৪]
চেচনিয়ার বাইরে কমপক্ষে ১৬১ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত[১৫]
৫,০০,০০০+ বেসামরিক ব্যক্তি উদ্বাস্তু[১৬]

প্রথম চেচেন যুদ্ধ বা চেচনিয়ার যুদ্ধ ছিল ১৯৯৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৯৬ সালের আগস্ট পর্যন্ত রাশিয়া এবং ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্রের মধ্যে অনুষ্ঠিত একটি যুদ্ধ। ১৯৯৪–১৯৯৫ সালের প্রাথমিক অভিযানে রুশ সৈন্যরা চেচনিয়ার পার্বত্য অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার প্রচেষ্টা চালায়, কিন্তু প্রচুর লোকবল, অস্ত্রশস্ত্র ও বিমান সমর্থন থাকা সত্ত্বেও চেচেন গেরিলা যোদ্ধারা রুশ বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলে। রুশ সৈন্যদের মনোবলের অভাব, রুশ জনমতের তীব্র বিরোধিতা এবং গ্রোজনির যুদ্ধে রুশদের পরাজয়ের ফলে বোরিস ইয়েলৎসিনের সরকার ১৯৯৬ সালে চেচেনদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয় এবং পরবর্তী বছর তাদের সঙ্গে একটি শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করে।

রুশ সরকারের তথ্যমতে, যুদ্ধটিতে ৫,৭৩২ জন রুশ সৈন্য নিহত হয়, কিন্তু অন্যান্য হিসেব অনুসারে নিহত রুশ সৈন্যের সংখ্যা ৩,৫০০ থেকে ৭,৫০০ এর মধ্যে, এমনকি ১৪,০০০ বলেও দাবি করা হয়[১৭]। যদিও চেচেন যোদ্ধাদের ক্ষয়ক্ষতির কোনো সঠিক বিবরণ নেই, তবুও বিভিন্ন সূত্র এই যুদ্ধে প্রায় ৩,০০০ থেকে ১৭,৩৯১ জন যোদ্ধা নিহত বা নিখোঁজ হয়েছে বলে দাবি করে। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, এই যুদ্ধে ৩০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ বেসামরিক মানুষ নিহত ও সম্ভবত ২,০০,০০০-এর বেশি বেসামরিক মানুষ আহত হয়, এবং প্রজাতন্ত্রটির ৫,০০,০০০-এরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে[১৬]। এই যুদ্ধের ফলে প্রজাতন্ত্রটিতে দেখা দেওয়া সহিংসতা ও বৈষম্যের কারণে প্রজাতন্ত্রটির অ-চেচেন জনসংখ্যা বহুলাংশে হ্রাস পায়[১৮][১৯][২০]

পটভূমি[সম্পাদনা]

রুশ সাম্রাজ্য এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের অধীনে চেচনিয়া[সম্পাদনা]

১৮১৭ থেকে ১৮৬৪ সালে ককেশীয় যুদ্ধে স্থানীয় প্রতিরোধ মোকাবেলা করার পর ১৮৭০-এর দশকে রুশ সৈন্যরা চেচেনদের পরাজিত করে এবং তাদের ভূমি দখল করে নেয়। ১৯১৭ সালের রুশ বিপ্লবের পর চেচেনদের স্বাধীনতা লাভের প্রচেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং ১৯২২ সালে চেচনিয়া রুশ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্রসোভিয়েত ইউনিয়নের অংশে পরিণত হয়। ১৯৩৬ সালে সোভিয়েত নেতা জোসেফ স্তালিনের নির্দেশে চেচেন-ইঙ্গুশ স্বায়ত্তশাসিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৪৪ সালে সোভিয়েত গোয়েন্দা পুলিশ এনকেভিডির প্রধান ল্যাভ্রেন্তি বেরিয়ার নির্দেশ অনুযায়ী পাঁচ লক্ষাধিক চেচেন, ইঙ্গুশ ও উত্তর ককেশাসের অন্যান্য জাতির লোকেদের তাদের মাতৃভূমি থেকে বহিষ্কার করা হয় এবং সাইবেরিয়ামধ্য এশিয়ায় নির্বাসিত করা হয়। সোভিয়েত সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, আগ্রাসী জার্মান বাহিনীর সঙ্গে সহযোগিতা করার শাস্তিস্বরূপ চেচেনদেরকে নির্বাসিত করা হয়েছিল[২১]। ১৯৪৪ সালের মার্চে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্রের উচ্ছেদ ঘটায়। পরবর্তীতে সোভিয়েত মহাসচিব নিকিতা ক্রুশ্চেভ ১৯৫৭ সালে চেচেন ও ইঙ্গুশদের তাদের মাতৃভূমিতে ফেরার অনুমতি প্রদান করেন এবং তাদের প্রজাতন্ত্রটির পুন:প্রতিষ্ঠা করেন।

সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন এবং রুশ ফেডারেশন চুক্তি[সম্পাদনা]

১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়া একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। রাশিয়া সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে, কিন্তু রাশিয়ার সামরিক ও অর্থনৈতিক সামর্থ্য বহুলাংশে হ্রাস পায়। রুশ ফেডারেশনের অধিবাসীদের ৮০%-এর বেশিই ছিল রুশ জাতিভুক্ত, কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ জাতিগত ও ধর্মীয় পার্থক্য রাশিয়ার কিছু কিছু অঞ্চলে প্রকটভাবে বিদ্যমান ছিল, যা রাশিয়ার অখণ্ডতাকে হুমকির সম্মুখীন করেছিল। সোভিয়েত শাসনামলে রাশিয়ার ১০০টির বেশি জাতিকে বিভিন্ন মাত্রায় স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা হয়েছিল। এসব স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের সঙ্গে কেন্দ্রের সম্পর্ক এবং তাদের পরিপূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি ১৯৯০-এর দশকের প্রথমদিকে রাশিয়ায় একটি প্রধান রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিণত হয়। বোরিস ইয়েলৎসিন তার ১৯৯০ সালের নির্বাচনি প্রচারণায় এই সমস্যাটির প্রতি আলোকপাত করেন এবং সমস্যাটির সমাধানকে গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিহিত করেন।

এসব অঞ্চলের ক্ষমতা নির্দিষ্টকরণের জন্য একটি আইন প্রণয়ন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছিল। এজন্য ইয়েলৎসিন এবং রুশ সুপ্রিম সোভিয়েতের সভাপতি রুসলান খাসবুলাতভ (যিনি নিজেই ছিলেন একজন চেচেন) রাশিয়ার ৮৮টি ফেডারেল অঞ্চলের মধ্যে ৮৬টির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিকভাবে ফেডারেশন চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং তারপর ১৯৯২ সালের ৩১ মার্চ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় একটি আইন প্রণীত হয়। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন কিংবা স্বাধীনতার পরিবর্তে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন এবং করসংক্রান্ত সুবিধা প্রদান করে অঞ্চলগুলোকে সন্তুষ্ট করা হয়। প্রাথমিকভাবে কেবল চেচনিয়াতাতারস্তান ব্যতীত রাশিয়ার অন্যান্য সকল অঞ্চলের সঙ্গে চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৪ সালের বসন্তকালে ইয়েলৎসিন তাতারস্তানের রাষ্ট্রপতি মিন্তিমার শামায়েভের সঙ্গে একটি বিশেষ রাজনৈতিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে প্রজাতন্ত্রটি বিস্তৃত স্বায়ত্তশাসন লাভ করে। শেষ পর্যন্ত চেচনিয়াই ছিল একমাত্র অঞ্চল যেটির সঙ্গে রাশিয়ার কোনো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় নি। ইয়েলৎসিন কিংবা চেচেন সরকার কেউই বিষয়টি গুরুত্বসহ আলোচনা করে দেখার প্রতি মনোযোগ দেন নি, ফলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে এবং পুরোদমে যুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।

চেচনিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণা[সম্পাদনা]

চেচনিয়া (লাল) এবং রুশ ফেডারেশন

এর মধ্যে ১৯৯১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সোভিয়েত বিমানবাহিনীর প্রাক্তন জেনারেল ঝোখার দুদায়েভের নেতৃত্বাধীন অল-ন্যাশনাল কংগ্রেস অফ দ্য চেচেন পিপল দলের উগ্রপন্থী সদস্যরা স্বাধীনতা লাভের উদ্দেশ্যে চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সুপ্রিম সোভিয়েতের একটি অধিবেশনে আক্রমণ চালায়। আক্রমণকালে সোভিয়েত কমিউনিস্ট পার্টির গ্রোজনি শাখার প্রধান ভিতালি কুৎসেঙ্কো নিহত হন, ফলে চেচেন-ইঙ্গুশ সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রের সরকারের পতন ঘটে[২২][২৩][২৪]। পরের মাসে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে দুদায়েভ বিপুল জনসমর্থন লাভ করে জয়লাভ করেন এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সরকার সমর্থিত প্রজাতন্ত্রটির অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বহিষ্কার করেন। দুদায়েভ চেচনিয়ার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

১৯৯১ সালের নভেম্বরে ইয়েলৎসিন গ্রোজনিতে একদল অভ্যন্তরীণ সৈন্য প্রেরণ করেন, কিন্তু দুদায়েভের সৈন্যরা বিমানবন্দরে তাদেরকে ঘিরে ফেললে তারা প্রত্যাবর্তন করতে বাধ্য হয়। ১৯৯২ সালের জুনে রাশিয়ার উত্তর ওসেটিয়া-আলানিয়া প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে ইঙ্গুশদের সশস্ত্র সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেলে চেচেন-ইঙ্গুশ প্রজাতন্ত্রটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। নবগঠিত ইঙ্গুশেতিয়া প্রজাতন্ত্র রুশ ফেডারেশনে যোগদান করে, অন্যদিকে চেচনিয়া ১৯৯৩ সালে ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্র নামে মস্কোর নিয়ন্ত্রণ থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা ঘোষণা করে।

চেচনিয়ায় অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ এবং গ্রোজনি-মস্কো দ্বন্দ্ব[সম্পাদনা]

১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ সালের মধ্যে জাতিগত দাঙ্গা ও বৈষম্যের কারণে হাজার হাজার অ-চেচেন জাতিভুক্ত মানুষ (প্রধানত রুশ, ইউক্রেনীয় এবং আর্মেনীয় জাতিভুক্ত) চেচনিয়া ত্যাগ করে অথবা বহিষ্কৃত হয়[১৮][১৯][২০]। রুশ প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা চেচনিয়া ত্যাগ করার ফলে চেচনিয়ার শিল্প উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পেতে শুরু করে। এদিকে দুদায়েভের সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে দ্বন্দ্বের ফলে চেচনিয়ায় অঘোষিত গৃহযুদ্ধ শুরু হয়ে যায় এবং স্থানে স্থানে তারা ভারী অস্ত্রশস্ত্রসহ খণ্ডযুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে। ১৯৯২ সালের মার্চে দুদায়েভের বিরোধীরা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করে, কিন্তু তাদের এ প্রচেষ্টা বলপূর্বক প্রতিহত করা হয়। এক মাস পরে দুদায়েভ চেচনিয়ায় সরাসরি রাষ্ট্রপতির শাসন জারি করেন এবং ১৯৯৩ সালের জুনে একটি অনাস্থা ভোট এড়ানোর জন্য চেচনিয়ার আইনসভাকে বাতিল করে দেন। ১৯৯২ সালের অক্টোবরের শেষদিকে ইঙ্গুশ-ওসেটীয় সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিযুক্ত রুশ সৈন্যদের চেচনিয়ার সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। দুদায়েভ এটিকে "চেচেন প্রজাতন্ত্রের প্রতি আগ্রাসন" হিসেবে চিহ্নিত করেন, চেচনিয়ায় সামরিক আইন জারি করেন এবং চেচেন সীমান্ত থেকে রুশ সৈন্য প্রত্যাহার না করা হলে সৈন্য সমাবেশ করবেন বলে হুমকি দেন। তবে রুশদের চেচনিয়া আক্রমণ থেকে বিরত রাখার জন্য তিনি রুশ বাহিনীকে ঘাঁটানো থেকে বিরত থাকেন।

১৯৯৪ সালে গ্রোজনিতে রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের সামনে দুদায়েভের সমর্থকেরা প্রার্থনা করছেন

১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে আরেকটি ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানের পর দুদায়েভের বিরোধীরা রাশিয়ার সহায়তা প্রার্থনা করে। ১৯৯৪ সালের আগস্টে উত্তর চেচনিয়ায় কেন্দ্রীভূত দুদায়েভের বিরোধী দলগুলোর একটি জোট দুদায়েভকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য একটি বড় ধরনের সামরিক অভিযান শুরু করে।

রাশিয়া দুদায়েভের বিরোধীদের গোপনে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে এবং সামরিক সরঞ্জাম ও ভাড়াটে যোদ্ধা সরবরাহ করে। রাশিয়া গ্রোজনিতে সকল বেসামরিক বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়, রুশ সীমান্তরক্ষীরা চেচনিয়ার ওপর সামরিক অবরোধ আরোপ করে এবং অচিহ্নিত রুশ বিমান চেচনিয়ায় সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে শুরু করে। দুদায়েভের বিরোধীরা রুশ সৈন্যদের সহযোগিতায় ১৯৯৪ সালের অক্টোবরের মাঝামাঝি দুদায়েভের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভিযান পরিচালনা করে, কিন্তু সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে সেটি ব্যর্খ হয়। ১৯৯৪ সালের ২৬–২৭ নভেম্বর তারা আরেকটি আক্রমণ চালায়, কিন্তু রুশ সমর্থন সত্ত্বেও তারা আবারও ব্যর্থ হয়। দুদায়েভের সৈন্যরা দুদায়েভের বিরোধী পক্ষে যুদ্ধরত ২০ জন রুশ সৈন্য এবং প্রায় ৫০ জন রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাকে বন্দি করতে সক্ষম হয়, যা রুশ সরকারের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়[২৫]। ২৯ নভেম্বর রুশ রাষ্ট্রপতি ইয়েলৎসিন চেচনিয়ায় যুদ্ধরত সকল দলকে অস্ত্রসংবরণ ও আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। চেচেন সরকার তার নির্দেশ মানতে অস্বীকার করলে তিনি রুশ সেনাবাহিনীকে চেচনিয়ায় বলপূর্বক 'সাংবিধানিক শৃঙ্খলা' পুনরুদ্ধারের জন্য নির্দেশ দেন।

১ ডিসেম্বর থেকে রুশ বাহিনী চেচনিয়ায় ব্যাপকভাবে কৌশলগত বোমাবর্ষণ আরম্ভ করে। ১৯৯৪ সালের ৬ ডিসেম্বর দুদায়েভ এবং রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী পাভেল গ্রাচেভ আর 'বলপ্রয়োগ না করতে' সম্মত হন। কিন্তু মাত্র পাঁচদিন পরেই ১১ ডিসেম্বর রুশ সৈন্যরা চেচনিয়ায় প্রবেশ করে। রুশ সরকারের বক্তব্য অনুযায়ী, এ অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল 'চেচনিয়ায় সাংবিধানিক শৃঙ্খলা স্থাপন' এবং 'রাশিয়ার ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষা' করা। গ্রাচেভ দম্ভভরে ঘোষণা করেন যে, তিনি একটিমাত্র এয়ারবোর্ন রেজিমেন্টের সাহায্যে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে দুদায়েভকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারেন এবং চেচনিয়ার যুদ্ধটি হবে একটি 'সংক্ষিপ্ত ব্লিৎজক্রিগ', যেটি ২০ ডিসেম্বরের মধ্যেই সমাপ্ত হবে।

রুশ সামরিক অভিযানের প্রাথমিক পর্যায়[সম্পাদনা]

১৯৯৪ সালের ডিসেম্বরে রুশ সৈন্যরা যেন রাজধানী গ্রোজনির দিকে অগ্রসর না হয় সেজন্য চেচেন নারীরা প্রার্থনা করছেন

১৯৯৪ সালের ১১ ডিসেম্বর রুশ বাহিনী গ্রোজনি অভিমুখে ত্রিমুখী আক্রমণ চালায়। রুশ স্থলবাহিনীর উপপ্রধান জেনারেল এডওয়ার্ড ভরোবিয়োভ মূল আক্রমণটি স্থগিত করেন এবং এরপর "নিজ জনগণের বিপক্ষে সৈন্য প্রেরণ করা একটি অপরাধ" ঘোষণা দিয়ে পদত্যাগ করেন[২৬]। রুশ সরকার এবং সশস্ত্রবাহিনীর বহু সদস্যও একইভাবে যুদ্ধটির বিরোধিতা করেন। ইয়েলৎসিনের জাতিসত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা এমিল পেইন এবং রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী বোরিস গ্রোমোভ (আফগান যুদ্ধের সম্মানিত সমরনায়ক) এই যুদ্ধের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন ("এটি হবে একটি রক্তস্নান, আরেকটি আফগানিস্তান", গ্রোমোভ টেলিভিশনে বলেন)। জেনারেল বোরিস পোলিয়াকভও এই যুদ্ধের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেন। ৮০০ জনেরও বেশি নিয়মিত সৈনিক ও কর্মকর্তা এই অভিযানে অংশ নিতে অস্বীকৃতি জানায়; এদের মধ্যে ৮৩ জনকে সামরিক আদালতের সম্মুখীন করানো হয় এবং বাকিদেরকে বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে জেনারেল লেভ রোখলিনকে এই যুদ্ধে তার কৃতিত্বের জন্য রুশ ফেডারেশনের বীর পদকে ভূষিত করা হলে তিনিও তা প্রত্যাখ্যান করেন।

যুদ্ধের প্রথম কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চেচেন বিমানবাহিনী (এবং চেচনিয়ার বেসামরিক বিমানবহর) সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়, এবং ডিসেম্বরের মাঝামাঝি ইয়েলৎসিন কর্তৃক দুদায়েভের সশস্ত্র দলগুলোর সদস্যদের প্রতি ঘোষিত সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে প্রায় ৫০০ চেচেন রুশ কর্তৃপক্ষের নিকট আত্মসমর্পণ করে। তবে তা সত্ত্বেও দ্রুত বিজয় লাভ ও চেচেন আত্মসমর্পণের যে স্বপ্ন ইয়েলৎসিনের মন্ত্রিসভা দেখছিল, তা ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়। যুদ্ধের শুরু থেকেই রুশ সৈন্যরা আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগছিল। তাদের প্রস্তুতি ছিল নিম্নস্তরের এবং তাদের অনেকেই তাদেরকে কেন পাঠানো হচ্ছে, এমনকি কোথায় পাঠানো হচ্ছে তাও বুঝতে পারছিল না। কিছু কিছু রুশ ইউনিট অগ্রসর হওয়ার নির্দেশ অমান্য করে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে সৈন্যরা নিজেরাই নিজেদের সরঞ্জাম ধ্বংস করে দেয়। ইঙ্গুশেতিয়ায় বেসামরিক প্রতিবাদকারীরা রুশ বাহিনীর পশ্চিম কলামের গতিরোধ করে এবং ৩০টি সাঁজোয়া যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। প্রায় ৭০ জন অনিয়মিত সৈন্য তাদের ইউনিট থেকে পালিয়ে যায়। রুশ বাহিনীর উত্তর কলাম দোলিনস্কোয়েতে চেচেনদের কঠোর প্রতিরোধের সম্মুখীন হয় এবং প্রচুর ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়[২৬]। চেচনিয়ার গভীরে ৫০ জন রুশ প্যারাট্রুপারকে শত্রুব্যূহের গভীরে হেলিকপ্টারে করে নামিয়ে দেয়ার পর পরিত্যাগ করা হয় এবং তারা স্থানীয় চেচেন মিলিশিয়া বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে।

ইয়েলৎসিন রুশ সেনাবাহিনীকে নিয়ন্ত্রিত আচরণ করার নির্দেশ দেন, কিন্তু রুশ সৈন্যদের সেরকম প্রস্তুুতি বা প্রশিক্ষণ কোনোটাই ছিল না। বেসামরিক জনগণের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত বাড়তে থাকে, এর ফলে চেচেন জনসাধারণ রুশদের প্রতি অধিক বৈরীভাবাপন্ন হয়ে ওঠে। এমনকি যেসব চেচেন দুদায়েভকে পদচ্যুত করার রুশ প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছিল তারাও রুশদের অনিয়ন্ত্রিত আচরণে বিরূপ হয়ে ওঠে। ইয়েলৎসিন পাশ্ববর্তী প্রজাতন্ত্রগুলো (ইঙ্গুশেতিয়া, দাগেস্তান প্রভৃতি) থেকে সদ্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত অনিয়মিত সৈন্যদের চেচনিয়ায় প্রেরণ করলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটে। চেচেন যোদ্ধাদের অত্যন্ত ক্ষিপ্র দলগুলোর আক্রমণে অপ্রস্তুত এবং আত্মবিশ্বাসহীন রুশ সৈন্যরা ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। যদিও রুশ সামরিক কমান্ড কেবল নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল, কিন্তু রুশ সৈন্যরা প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতার অভাবে এলোমেলো লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত করে, এবং নির্বিচারে বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণ করতে থাকে। এর ফলে চেচেন ও রুশ সাধারণ জনগণের বিপুল প্রাণহানি ঘটে[২৭]। ২৯ ডিসেম্বর পরিপূর্ণ বিজয় অর্জনের একটি ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনায় রুশ প্যারাট্রুপাররা গ্রোজনির পার্শ্ববর্তী সামরিক বিমানবন্দর দখল করে নেয় এবং খানকালার যুদ্ধ চেচেন সাঁজোয়া বহরের একটি আক্রমণ প্রতিহত করে দেয়; পরবর্তী লক্ষ্যবস্তু ছিল গ্রোজনি শহর। রুশ বাহিনী গ্রোজনির দিকে অগ্রসর হওয়ার ফলে চেচেনরা দ্রুত গ্রোজনিতে তাদের সৈন্য সমাবেশ করে এবং প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করে।

রুশ বাহিনীর গ্রোজনি আক্রমণ[সম্পাদনা]

১৯৯৫ সালের জানুয়ারিতে গ্রোজনিতে বিধ্বস্ত ও দগ্ধ রাষ্ট্রপতির প্রাসাদের নিকটে একজন চেচেন যোদ্ধা

রুশ সৈন্যরা চেচেন রাজধানী অবরোধ করার পর এক-সপ্তাহব্যাপী বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের ফলে শহরটির হাজার হাজার সাধারণ মানুষ নিহত হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালে ড্রেসডেনের ধ্বংসসাধনের পর গ্রোজনির আক্রমণই ছিল ইউরোপের মাটিতে সবচেয়ে বড় ধরনের বিমান হামলা[২৮]। ১৯৯৫ সালের নববর্ষের দিনে রুশদের প্রথম আক্রমণ শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়, ফলে রুশদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং রুশ সৈন্যদের মনোবল প্রায় সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়ে। এই বিপর্যয়ে ১,০০০ থেকে ২,০০০ রুশ সৈন্য নিহত হয়, যাদের অধিকাংশই ছিল প্রায় অপ্রশিক্ষিত এবং নিরুৎসাহী অনিয়মিত সৈন্য। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয় রুশ সেনাবাহিনীর ১৩১তম 'মাইকোপ' মোটর রাইফেল ব্রিগেড, যেটি গ্রোজনির কেন্দ্রীয় রেল স্টেশনের নিকটে সংঘটিত যুদ্ধে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে যায়[২৬]। কিন্তু চেচেনদের হাতে প্রাথমিকভাবে পর্যুদস্ত হওয়ার পরেও এবং বিপুল ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত তীব্র যুদ্ধের পর রুশরা গ্রোজনি দখল করে নিতে সক্ষম হয়। সাঁজোয়া বহরের আক্রমণ ব্যর্থ হওয়ার পর রুশ সামরিক বাহিনী বিমানবাহিনী ও গোলাবর্ষণের সাহায্যে শহরটি জয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। একই সময়ে রুশরা অভিযোগ করে যে, চেচেন যোদ্ধারা শহরটির সাধারণ জনগণকে শহর ত্যাগ করতে না দিয়ে তাদেরকে 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করছে[২৯]। ১৯৯৫ সালের ৭ জানুয়ারি রুশ মেজর জেনারেল ভিক্তর ভরোবিয়োভ চেচেনদের মর্টার হামলায় নিহত হন, এবং চেচনিয়ায় নিহত রুশ জেনারেলদের দীর্ঘ তালিকায় তিনিই প্রথম স্থান লাভ করেন। ১৯ জানুয়ারি তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তীব্র সংঘর্ষের পর প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি সত্ত্বেও রুশ সৈন্যরা গ্রোজনির রাষ্ট্রপতির প্রাসাদ (বা প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ) দখল করে নিতে সক্ষম হয় এবং চেচেনরা শহরতলি অঞ্চলে পশ্চাৎপসরণ করে। ১৯৯৫ সালের ৬ মার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রোজনির যুদ্ধ সমাপ্তির ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত শহরের দক্ষিণাংশে যুদ্ধ চলেছিল।

রুশ রাষ্ট্রপতি ইয়েলৎসিনের মানবাধিকার বিষয়ক উপদেষ্টা সের্গেই কোভালেভের হিসেব অনুযায়ী, যুদ্ধের প্রথম পাঁচ সপ্তাহে প্রায় ২৭,০০০ বেসামরিক জনসাধারণ নিহত হয়। রুশ ইতিহাসবিদ জেনারেল দিমিত্রি ভোল্কোগোনোভের মতে, গ্রোজনিতে রুশ বোমাবর্ষণের ফলে ৫,০০০ শিশুসহ প্রায় ৩৫,০০০ বেসামরিক নর-নারী নিহত হয়, এবং নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই ছিল জাতিগত রুশ। প্রকৃত সামরিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা না গেলেও রুশ কর্তৃপক্ষ ২,০০০ রুশ সৈন্য নিহত অথবা নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করে[৩০]। গ্রোজনির রক্তপাত রাশিয়াসহ বহির্বিশ্বকে হতচকিত করে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যুদ্ধটি ব্যাপকভাবে সমালোচিত ও নিন্দিত হয়। ওএসসিই-র আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা গ্রোজনির ঘটনাবলিকে অকল্পনীয় বিপর্যয় বলে অভিহিত করে। প্রাক্তন সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্বাচেভ যুদ্ধটিকে একটি অসম্মানজনক, রক্তাক্ত অভিযান বলে অভিহিত করেন, এবং জার্মান চ্যান্সেলর হেলমুট কোল যুদ্ধটিকে পুরোপুরি পাগলামি হিসেবে আখ্যায়িত করেন[৩১]

চলমান রুশ আক্রমণ[সম্পাদনা]

গ্রোজনিতে একটি জ্বলন্ত বাড়ির নিকটে দণ্ডায়মান একজন চেচেন

গ্রোজনির পতনের পর রুশ সরকার ধীরে ধীরে নিয়মতান্ত্রিকভাবে চেচনিয়ার নিম্নভূমিতে এবং এরপর পার্বত্য অঞ্চলসমূহে নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করে। ৭ এপ্রিল ওমন ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় বাহিনীর সদস্যরা সীমান্তবর্তী সামাশকি গ্রাম দখলের সময় কমপক্ষে ১০৩ জন বেসামরিক লোককে হত্যা করে এবং আরো কয়েক শত বেসামরিক মানুষকে বন্দি করে নির্যাতন করে[৩২]। ১৫ এপ্রিল দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলে রুশরা ২০০–৩০০ সাঁজোয়া যানের সুবৃহৎ বহর নিয়ে অগ্রসর হয়[৩৩]। চেচেন যোদ্ধারা সম্পূর্ণরূপে অবরুদ্ধ শালি শহরে তাদের সামরিক সদর দপ্তর স্থানান্তর করে আর্গুন শহরটি রক্ষা করে, এরপর সের্ঝেন-ইয়ুর্তে সদর দপ্তরটি স্থানান্তর করে এবং সবশেষে ভেদেনোয় শামিল বাসায়েভের জন্মস্থানে সরে যেতে বাধ্য হয়। চেচনিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর গুদের্মেস বিনা যুদ্ধে রুশদের নিকট আত্মসমর্পণ করে, কিন্তু রুসলান গেলায়েভের নেতৃত্বাধীন যোদ্ধারা শাতোয় গ্রামটি রক্ষা করে। পরবর্তীতে চেচেন কমান্ড ভেদেনো থেকে দার্গো গ্রামে, এবং সেখান থেকে বেনোয়ে সরে যায়[৩৪]মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি বিশ্লেষণমূলক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৫ সালের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে রুশ সৈন্যবাহিনী নিয়মিত যুদ্ধের মাধ্যমে চেচনিয়ার অধিকাংশ দখল করে নেয় এবং এসময় প্রায় ২,৮০০ রুশ সৈন্য নিহত, ১০,০০০ সৈন্য আহত ও ৫০০-এরও বেশি সৈন্য নিখোঁজ অথবা বন্দি হয়[৩৫]। তবে কিছু চেচেন যোদ্ধা প্রত্যাবর্তনকারী শরণার্থীদের ভিড়ে লুকিয়ে রুশ-অধিকৃত অঞ্চলে অনুপ্রবেশ করতে সক্ষম হয়[৩৬]

যুদ্ধ চলতে থাকলে চেচেন বিদ্রোহীরা ব্যাপক হারে বেসামরিক জনগণকে জিম্মি করতে আরম্ভ করে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল রুশ জনসাধারণ ও নেতৃবৃন্দের মনে আতঙ্কের সৃষ্টি করা। ১৯৯৫ সালের জুনে শামিল বাসায়েভের নেতৃত্বে একদল চেচেন যোদ্ধা দক্ষিণ রাশিয়ার বুদিয়োন্নোভস্ক শহরের একটি হাসপাতালে ১,৫০০ জনেরও বেশি মানুষকে জিম্মি করে; বাসায়েভ ও রুশ প্রধানমন্ত্রী ভিক্তর চের্নোমির্দিনের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরিত হওয়ার পূর্বে প্রায় ১২০ জন বেসামরিক রুশ নিহত হয়[৩৭]। এই আক্রমণের ফলে রুশরা সাময়িকভাবে চেচনিয়ায় তাদের সামরিক কার্যকলাপ বন্ধ রাখে এবং এই সুযোগে চেচেনরা তাদের শক্তিবৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়। চেচনিয়ায় পুরোমাত্রার রুশ আক্রমণের ফলে দুদায়েভের অনেক বিরোধীও তার সঙ্গে যোগদান করে এবং হাজার হাজার চেচেন স্বেচ্ছাসেবক বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয়। অনেক এলাকায় স্থানীয় জনসাধারণ তাদের এলাকাগুলোকে রুশ আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য স্থানীয় আত্মরক্ষামূলক মিলিশিয়া বাহিনী গঠন করে। ১৯৯৫ সালের শেষদিকে এসব মিলিশিয়া বাহিনীতে ৫,০০০–৬,০০০ সশস্ত্র যোদ্ধা ছিল। চেচেন কমান্ডের বক্তব্য অনুযায়ী, চেচেন বিদ্রোহীরা সর্বমোট ১০,০০০–১২,০০০ পূর্ণকালীন যোদ্ধা মাঠে নামিয়েছিল। জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, চেচেন বিদ্রোহীদের মধ্যে পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও ছিল এবং বিদ্রোহীদের একটি বড় অংশ ছিল শিশু, যাদের কারো কারো বয়স ছিল মাত্র ১১ বছর[৩৮]। বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ভূমির পরিমাণ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে তারা শত্রুর অধিকৃত এলাকায় বুবি ট্র্যাপভূমি মাইন ব্যবহারসহ গেরিলাযুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করে। এসবের মধ্যে বিস্ফোরকের ব্যবহার ছিল বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য; তাছাড়া চেচেনরা কার্যকারিতার সঙ্গে মাইন ও চোরাগোপ্তা হামলাকে সমন্বিতভাবে রুশদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে।

১৯৯৫ সালের শেষদিকে চেচনিয়ায় কেন্দ্রীয় বাহিনীর কমান্ডার জেনারেল আনাতোলি রোমানভ গ্রোজনিতে একটি বোমা হামলায় গুরুতরভাবে আহত হন। ঘটনাটিকে ঘিরে রুশ সেনাবাহিনীর একটি অংশের ওপর সন্দেহের সৃষ্টি হয়, কারণ এই হামলার ফলে জেনারেল রোমানভ ও চেচেন প্রধান সেনাপতি (এবং সোভিয়েত সেনাবাহিনীর প্রাক্তন কর্নেল) আসলান মাসখাদভের সমঝোতার ভিত্তিতে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়[৩৯]; আগস্টে তারা দুইজন স্থানীয় নেতাদের বুঝিয়ে রুশ যুদ্ধবন্দিদের মুক্ত করার জন্য দক্ষিণ চেচনিয়ায় গিয়েছিলেন[৪০]। ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে গ্রোজনিতে হাজার হাজার স্বাধীনতাকামী চেচেন একটি শান্তি মিছিল বের করলে রুশ ও রুশপন্থী চেচেন সৈন্যরা মিছিলটির ওপর গুলিবর্ষণ করে বহুসংখ্যক চেচেনকে হত্যা করে[৪১]। এর দুই দিন পর চেচেন স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত গ্রোজনির বিধ্বস্ত রাষ্ট্রপতি ভবনটি ধ্বংস করে ফেলা হয়[৪২][৪৩]

মানবাধিকার লঙ্ঘন ও যুদ্ধাপরাধ[সম্পাদনা]

মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো রুশ বাহিনীকে চেচনিয়ার জনসাধারণের বিরুদ্ধে নির্বিচারে শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ করে (উদাহরণস্বরূপ, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর মতে, ১৯৯৫ সালের ডিসেম্বরে গুদের্মেসে বিদ্রোহীদের আক্রমণকালে রুশ গোলাবর্ষণ ও রকেট হামলায় কমপক্ষে ২৬৭ জন বেসামরিক মানুষ নিহত হয়[৩২])। এই যুদ্ধে রুশদের মূল রণকৌশল ছিল ব্যাপক হারে গোলাবর্ষণ ও বিমান হামলা, যার ফলে কিছু পশ্চিমা ও চেচেন সূত্র রুশ বিমান হামলাগুলোকে ইচ্ছাকৃত সন্ত্রাসী বোমাবর্ষণ হিসেবে অভিহিত করে[৪৪]

ভাগ্যের পরিহাসক্রমে, গ্রোজনিতে বসবাসকারী জাতিগত চেচেনরা গ্রামাঞ্চলগুলোতে আশ্রয় নিতে সক্ষম হয়, কিন্তু জাতিগত রুশদের সেরকম কোনো আশ্রয়স্থল না থাকায় প্রাথমিক বেসামরিক হতাহতদের মধ্যে তাদের সংখ্যাই ছিল বেশি। পরবর্তীতে অবশ্য চেচেন গ্রামগুলোও রুশ আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়; উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৫ সালের ৩ জানুয়ারিতে শালি গ্রামে রুশ বিমান হামলায় ৫৫ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়। রুশ সৈন্যরা প্রায়ই বেসামরিক জনসাধারণকে বিপজ্জনক অঞ্চলগুলো থেকে স্থানান্তরিত হতে বাধা দেয় এবং বিভিন্ন সংগঠন দুর্দশাগ্রস্ত জনসাধারণকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করলে তাদেরকেও বাধা দান করে। তাছাড়া রুশ সৈন্যরা, বিশেষত অভ্যন্তরীণ সৈন্যবাহিনীর সদস্যরা বিদ্রোহীদের প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন বেসামরিক জনগণের ওপর ব্যাপক হারে এবং ক্ষেত্রবিশেষে নিয়মতান্ত্রিকভাবে নির্যাতন চালায় এবং অনেককে বিনা বিচারে হত্যা করে। মানবাধিকার সংগঠন এবং সাহায্য সংস্থাগুলোর বিবরণ অনুযায়ী, রুশ সৈন্যরা চেচনিয়ায় জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সাধারণ জনগণের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ এবং লুণ্ঠনে লিপ্ত হয়েছিল। চেচেন বিদ্রোহীরাও ব্যাপক হারে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে, রুশদের সঙ্গে সহযোগিতা করছে এই সন্দেহে বহু চেচেনকে হত্যা বা অপহরণ করে এবং যুদ্ধবন্দি সৈন্য (বিশেষত বৈমানিক) ও বেসামরিক লোকেদের ওপর নির্যাতন চালায়। রুশ সৈন্যরা এবং চেচেন বিদ্রোহীরা উভয় পক্ষই মুক্তিপণ আদায়ের জন্য বেসামরিক জনসাধারণকে অপহরণ করে এবং যুদ্ধ ও সৈন্য চলাচলের সময় বেসামরিক জনগণকে 'মানব ঢাল' হিসেবে ব্যবহার করে (উদাহরণস্বরূপ, একদল অবরুদ্ধ রুশ সৈন্য গ্রোজনির ৯ম পৌর হাসপাতালে প্রায় ৫০০ বেসামরিক লোককে জিম্মি করেছিল)[৪৫]

রুশ সামরিক কর্মকর্তারা তাদের সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত যুদ্ধাপরাধসমূহ সাধারণত দেখেও না দেখার ভান করেন এবং এরকম কোনো ঘটনার তদন্ত হলেও দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দিতে অস্বীকৃতি জানান (ভ্লাদিমির গ্লেবভের ঘটনাটি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ)। কিন্তু রুশ প্রচারমাধ্যম বিস্তারিতভাবে এসব বর্বরতার বিবরণ রুশ জনগণের কাছে তুলে ধরে। এর ফলে রুশ সরকারের প্রতি জনসাধারণের আস্থা অনেকাংশে হ্রাস পায় এবং রাষ্ট্রপতি ইয়েলৎসিনের জনপ্রিয়তায়ও ধস নামে। ১৯৯৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় চেচনিয়া ইয়েলৎসিনের সবচেয়ে বড় নির্বাচনী বোঝাগুলোর একটি হিসেবে আবির্ভূত হয়। এর পাশাপাশি, চেচনিয়ার প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং চেচেন জনসাধারণের প্রতি রুশ বাহিনীর বর্বর আচরণ রাশিয়ায় বসবাসকারী অন্যান্য জাতির মধ্যে রুশদের প্রতি আতঙ্ক ও ঘৃণার সৃষ্টি করে।

যুদ্ধের বিস্তার[সম্পাদনা]

একটি বোর্জ সাব-মেশিনগান হাতে একজন চেচেন অনিয়মিত যোদ্ধা

চেচনিয়ার প্রধান মুফতি আহমাদ কাদিরভ কর্তৃক রাশিয়ার বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা রাশিয়ার অন্যান্য অঞ্চল এবং বহির্বিশ্ব থেকে জিহাদিদের চেচনিয়ায় এসে সেখানকার যুদ্ধে অংশ নিতে অনুপ্রাণিত করে। এক হিসাব অনুযায়ী, ৫,০০০-এরও বেশি অ-চেচেন স্বেচ্ছাসেবক ধর্মীয় অথবা জাতীয়তাবাদী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রুশদের বিরুদ্ধে এই যুদ্ধে অংশ নেয়।

রুশ সমরনায়করা চেচেন যোদ্ধাদের খোঁজে চেচনিয়ার পার্শ্ববর্তী ক্ষুদ্র প্রজাতন্ত্র ইঙ্গুশেতিয়ায় সৈন্য প্রেরণ করলে যুদ্ধটি সীমিত আকারে সেখানেও ছড়িয়ে পড়ে। ইঙ্গুশেতিয়ায় চেচনিয়া ও উত্তর ওসেটিয়া থেকে প্রায় ২,০০,০০০ শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছিল এবং এর ফলে প্রজাতন্ত্রটির ভঙ্গুর অর্থনীতি আরও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বেশ কয়েকটি ঘটনায় ইঙ্গুশ রাষ্ট্রপতি রুসলান আউশেভ তার প্রজাতন্ত্রে রুশ সৈন্যদের আক্রমণের প্রতিবাদ জানান এবং এসব আক্রমণের ফলে ইঙ্গুশেতিয়ায় সংঘটিত ক্ষয়ক্ষতির জন্য রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দেন[৪৬]। বিশৃঙ্খল রুশ সৈন্যরা ইঙ্গুশেতিয়ায়ও হত্যাকাণ্ড, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনে লিপ্ত হয় (একটি ঘটনায় ইঙ্গুশেতিয়ায় সফররত রুশ দুমা সদস্যরা মাতাল রুশ সৈন্যদের গুলিতে কমপক্ষে ৯ জন বেসামরিক ইঙ্গুশ ও ১ জন বাশকির সৈন্য নিহত হওয়ার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন; এর পূর্বে রুশ সৈন্যরা মাতাল অবস্থায় আরেকজন রুশ সৈন্য, ৫ জন ইঙ্গুশ গ্রামবাসী এবং এমনকি ইঙ্গুশেতিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেও হত্যা করেছিল)[৪৭]। এর চেয়ে বড় আকারের যুদ্ধাপরাধ পার্শ্ববর্তী দাগেস্তান প্রজাতন্ত্রে সংঘটিত হয়। বিশেষত, দাগেস্তানের কিজলিয়ারের চেচেন বিদ্রোহীদের দ্বারা সৃষ্ট জিম্মি সঙ্কটের প্রত্যুত্তরে ১৯৯৬ সালের জানুয়ারিতে রুশ সৈন্যরা দাগেস্তানের সীমান্তবর্তী পার্ভোমায়স্কি গ্রামটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়। এর ফলে তখন পর্যন্ত রাশিয়ার প্রতি অনুগত প্রজাতন্ত্রটির নেতৃবৃন্দ রুশ বাহিনীর প্রতি তীব্র নিন্দা জানায় এবং প্রজাতন্ত্রটির জনসাধারণ অসন্তুষ্ট হয়। দক্ষিণ রাশিয়ার দন কসাকরা প্রকৃতপক্ষে চেচেনদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল, কিন্তু তাদের রুশঘেঁষা সংস্কৃতি এবং গ্রোজনির চেয়ে মস্কোর সঙ্গে অধিক সখ্যের কারণে (স্থানীয় জনসাধারণ, বিশেষত চেচেনদের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক দ্বন্দ্বের বিষয়টিও বিবেচ্য) তারা চেচেনদের প্রতি শত্রুভাবাপন্ন হয়ে ওঠে; কুবান কসাকরাও চেচেনদের বিরুদ্ধে নিজেদেরকে সংগঠিত করতে আরম্ভ করে এবং তাদের বাসভূমিতে চেচেনদের অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য আধা-সামরিক রাস্তা-প্রতিবন্ধক স্থাপন করতে শুরু করে।

এদিকে চেচনিয়ার যুদ্ধ রাশিয়ার অভ্যন্তরে অন্য ধরনের বিদ্রোহী কার্যকলাপের জন্ম দেয়। চেচনিয়ার যুদ্ধে অংশ নেয়ার জন্য সেনাবাহিনীতে যোগদানের প্রতি রাশিয়ায় অন্যান্য সংখ্যালঘু জাতিগুলোর মধ্যে তীব্র অনীহার সৃষ্টি হয়, এবং রাশিয়ার অনেকগুলো প্রজাতন্ত্র এই বিষয়ে নতুন আইন ও অধ্যাদেশ জারি করে। উদাহরণস্বরূপ, চুভাশিয়া প্রজাতন্ত্রের সরকার প্রজাতন্ত্রটির যেসকল সৈন্য চেচেন যুদ্ধে অংশ নিতে অনাগ্রহী ছিল তাদেরকে আইনি সুরক্ষা প্রদান করে একটি অধ্যাদেশ জারি করে এবং রাশিয়ার অভ্যন্তরে জাতিগত বা আঞ্চলিক সংঘাতসমূহে কেন্দ্রীয় সৈন্যবাহিনীর ব্যবহারের ওপর সীমাবদ্ধতা আরোপ করে। কিছু কিছু আঞ্চলিক ও স্থানীয় আইনসভা অভ্যন্তরীণ সংঘাতে অনিয়মিত সৈন্যদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়, এবং অন্য আইনসভাগুলো এ ধরনের সংঘাতে সশস্ত্রবাহিনী ব্যবহারের ওপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের দাবি করে। রুশ সরকারি কর্মকর্তারা আশঙ্কা করতে থাকেন যে, চেচেন যুদ্ধে বিজয় লাভ ব্যতীত অন্য কোনোভাবে যুদ্ধটি শেষ হলে রাশিয়ার অন্যান্য জাতিগত সংখ্যালঘুরাও স্বাধীনতা দাবি করে বসবে।

১৯৯৬ সালের ৬ মার্চ চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা জার্মানিগামী একটি সাইপ্রিয়ট যাত্রীবাহী বিমান ছিনতাই করে। ৯ জানুয়ারি চেচেন সমস্যার প্রতি আন্তর্জাতিক দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ২০০ রুশ যাত্রীসহ একটি তুর্কি জাহাজ ছিনতাই করে। উভয় ক্ষেত্রেই আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কট সমাধান করা হয় এবং কোনো বেসামরিক প্রাণহানি ছাড়াই ছিনতাইকারীরা আত্মসমর্পণ করে[৪৮]

যুদ্ধ চলমান[সম্পাদনা]

চেচেন যোদ্ধাদের একটি দল

৬ মার্চ ১,৫০০ থেকে ২,০০০ চেচেন যোদ্ধা গ্রোজনিতে অনুপ্রবেশ করে এবং শহরটির ওপর তিন দিনব্যাপী একটি অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে অধিকাংশ এলাকা দখল করে নেয় ও প্রচুর অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ হস্তগত করে। মার্চে চেচেন যোদ্ধারা সামাশকি গ্রাম আক্রমণ করে এবং সংঘটিত যুদ্ধে শত শত গ্রামবাসী প্রাণ হারায়। এক মাস পর ১৬ এপ্রিল আরব জিহাদি নেতা ইবনে আল-খাত্তাবের যোদ্ধারা শাতোয়ে একটি বৃহৎ রুশ আর্মার্ড কলামকে ধ্বংস করে এবং কমপক্ষে ৭৬ জন রুশ সৈন্যকে হত্যা করে। ভেদেনোর নিকট আরেকটি আক্রমণে কমপক্ষে ২৮ জন রুশ সৈন্য নিহত হয়[৪৯]

যুদ্ধক্ষেত্রে পরাজয় এবং ক্রমবর্ধমান সামরিক ক্ষয়ক্ষতি রাশিয়ায় যুদ্ধটিতে ক্রমেই অজনপ্রিয় করে তুলতে থাকে। তদুপরি ১৯৯৬ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনও সন্নিকটে আসতে থাকে। এর ফলে ইয়েলৎসিনের সরকার এই যুদ্ধ শেষ করার একটি উপায় খুঁজতে থাকে। ১৯৯৬ সালের ২১ এপ্রিল রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চেচেন রাষ্ট্রপতি জওহর দুদায়েভ নিহত হন, কিন্তু তা সত্ত্বেও চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। চেচেন ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সেলিম-খান ইয়ান্দারবিয়েভের সঙ্গে একটি অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষরের পর ১৯৯৬ সালের ২৮ মে ইয়েলৎসিন আনুষ্ঠানিকভাবে চেচেন যুদ্ধে "বিজয়"ও ঘোষণা করে ফেলেন[৫০][৫১]। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যুদ্ধবিরতি ও শান্তি সংক্রান্ত আলোচনার মধ্যেই যুদ্ধ চলতে থাকে। ১৯৯৬ সালের ৬ আগস্ট রুশ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ইয়েলৎসিনের দ্বিতীয়বার শপথ গ্রহণের ৪ দিন পূর্বে যখন চেচনিয়ায় রুশ সেনাবাহিনীর অধিকাংশ সৈন্যকে অবশিষ্ট চেচেন পার্বত্য ঘাঁটিগুলোর ওপর চূড়ান্ত আক্রমণ চালানোর উদ্দেশ্যে দক্ষিণ চেচনিয়ায় প্রেরণ করা হয়েছিল, তখন চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা গ্রোজনির ওপর আরেকটি অতর্কিত আক্রমণ চালায়।

গ্রোজনির তৃতীয় যুদ্ধ এবং খাসাভ-ইয়ুর্ত চুক্তি[সম্পাদনা]

গ্রোজনির অভ্যন্তরে ও চতুর্দিকে মোতায়েনকৃত রুশ সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় ১২,০০০। তা সত্ত্বেও ১,৫০০-এর বেশি চেচেন যোদ্ধা অতর্কিত আক্রমণ চালিয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে গ্রোজনির গুরুত্বপূর্ণ জেলাগুলো দখল করে নেয়। মাসখাদভ এই অভিযানটির নাম দিয়েছিলেন অপারেশন জিরো, আর বাসায়েভ এটির নাম দিয়েছিলেন অপারেশন জিহাদ। শহরটির গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো দখল করার পর চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা শহরটিতে অবস্থিত রুশ ঘাঁটি, ফাঁড়ি ও সরকারি ভবনগুলো অবরোধ করে এবং রুশপন্থী চেচেনদের বন্দি ও ক্ষেত্রবিশেষে হত্যা করে[৫২]। একই সময়ে আর্গুন ও গুন্দের্মেস শহরদ্বয়ে অবস্থানরত রুশ সৈন্যরা তাদের সেনানিবাসে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। গ্রোজনির রুশ সৈন্যদের মুক্ত করার জন্য রুশ সাঁজোয়া বহরগুলোর বেশ কয়েকটি প্রচেষ্টা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয় (৯০০ সৈন্যের রুশ ২৭৬তম মোটর রেজিমেন্ট দুই দিন ধরে গ্রোজনির সিটি সেন্টারে পৌঁছানোর চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয় এবং রেজিমেন্টটির ৫০% সৈন্য হতাহত হয়)। রুশ সামরিক কর্মকর্তাদের মতে, পাঁচ দিনব্যাপী যুদ্ধে ২০০ জনেরও বেশি রুশ সৈন্য নিহত এবং প্রায় ৮০০ সৈন্য আহত হয়, পাশাপাশি অজ্ঞাতসংখ্যক সৈন্য নিখোঁজ হয়; চেচেনরা দাবি করে যে প্রায় ১,০০০ রুশ সৈন্য এই যুদ্ধে নিহত হয়। হাজার হাজার রুশ সৈন্য চেচেনদের হাতে বন্দি হয় অথবা আত্মসমর্পণ করে এবং তাদের ভারী অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হস্তগত হয়।

১৯ আগস্ট গ্রোজনিতে ৫০,০০০ থেকে ২,০০,০০০ চেচেন জনসাধারণ এবং হাজার হাজার রুশ কেন্দ্রীয় সৈন্যের উপস্থিতি সত্ত্বেও রুশ সৈন‍্যাধ‍্যক্ষ কনস্তান্তিন পুলিকোভস্কি চেচেন যোদ্ধাদেরকে শহর ত্যাগের জন্য ৪৮ ঘণ্টা সময় দিয়ে চরমপত্র প্রদান করেন এবং অন্যথায় প্রচণ্ড বিমান হামলা ও গোলাবর্ষণের মাধ্যমে শহরটি ধূলিসাৎ করে দেয়ার হুমকি দেন। তিনি বলেন যে এবারে কেন্দ্রীয় বাহিনী কৌশলগত বোমারু বিমান (যেটি তখন পর্যন্ত চেচনিয়ায় ব্যবহার করা হয় নি) এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে। তার এই হুমকির পর আতঙ্কিত চেচেন জনসাধারণ রুশ বাহিনী তাদের হুমকি কার্যকর করার আগেই গ্রোজনি ত্যাগের চেষ্টা চালায় এবং এর ফলে একটি চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়[৫৩]। অবশ্য ২২ আগস্ট ইয়েলৎসিনের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা জেনারেল আলেক্সান্দর লেবেদ চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি স্বাক্ষর করেন এবং বোমাবর্ষণের পরিকল্পনা স্থগিত করেন। জেনারেল পুলিকোভস্কির চরমপত্রকে তিনি একটি নিম্নমানের কৌতুক হিসেবে অভিহিত করেন[৫৪][৫৫]

আট ঘণ্টাব্যাপী আলোচনার পর ১৯৯৬ সালের ৩১ আগস্ট লেবেদ এবং মাসখাদভ খাসাভ-ইয়ুর্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। চুক্তিটির শর্তগুলোর মধ্যে ছিল: অসামরিকীকরণ, গ্রোজনি থেকে উভয় পক্ষের সৈন্য প্রত্যাহার, শহরটিতে লুণ্ঠন বন্ধ করার জন্য যৌথ সদরদপ্তর সৃষ্টি, ১৯৯৬ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে চেচনিয়া থেকে সকল কেন্দ্রীয় সৈন্য প্রত্যাহার, এবং পাঁচ বছরের মধ্যে ইচকেরিয়া চেচেন প্রজাতন্ত্র ও রুশ কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় বিষয়ে কোনো চুক্তি স্বাক্ষর না করা।

ফলাফল[সম্পাদনা]

ক্ষয়ক্ষতি[সম্পাদনা]

পলিনা ঝেরেবৎসোভার পত্রিকা: চেচনিয়া ১৯৯৯-২০০২

রুশ সশস্ত্রবাহিনীর জেনারেল স্টাফের বিবরণ অনুযায়ী, প্রথম চেচেন যুদ্ধে ৩,৮২৬ জন রুশ সৈন্য নিহত, ১৭,৮৯২ জন সৈন্য আহত এবং ১,৯০৬ জন সৈন্য নিখোঁজ হয়[১১]। রাশিয়ার সামরিক পত্রিকা এনভিও-এর মতে, ২০০৫ সাল পর্যন্ত চেচনিয়ায় কমপক্ষে ৫,৩৬২ জন রুশ সৈন্য নিহত, ৫২,০০০ সৈন্য আহত এবং প্রায় ৩,০০০ সৈন্য নিখোঁজ হয়[১২]রাশিয়ার সৈন্যদের মায়েদের কমিটির হিসেব অনুযায়ী, আহত সৈন্য এবং নিহত সৈন্যদের পরিবার-পরিজনের তথ্যানুযায়ী চুক্তিবদ্ধ সৈন্য এবং স্পেৎসনাজ সৈন্য বাদে প্রায় ১৪,০০০ নিয়মিত সৈন্য এই যুদ্ধে নিহত হয়[১৭][৫৬]। "মেমোরিয়াল" মানবাধিকার সংগঠনটির তৈরি করা এই যুদ্ধে নিহত সৈন্যদের তালিকায় ৪,৩৯৩টি নাম রয়েছে[৫৭]। ২০০৯ সালে রুশ সরকারের প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, চেচনিয়ায় দুই যুদ্ধে নিখোঁজ মোট সৈন্যের সংখ্যা ৭০০, এবং আরো প্রায় ৪০০ নিখোঁজ সৈন্যের সন্ধান পাওয়া গেছে[৫৮]

গ্রোজনিতে একটি ট্রাকে মৃতদেহ

এই যুদ্ধে প্রায় ১,০০,০০০ বা তারও বেশি চেচেন নিহত হয় বলে জানা যায়, যাদের অধিকাংশই ছিল বেসামরিক নাগরিক[৫৯]। যুদ্ধে নিখোঁজ হওয়া চেচেনদের সংখ্যা ৫০,০০০ থেকে ১,০০,০০০-এর মধ্যে বলে ধারণা করা হয়[৬০]। রুশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনাতোলি কুলিকভ দাবি করেন যে, ২০ হাজারেরও কম বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছে। সের্গেই কোভালিয়ভের হিসাব অনুসারে, ৫০,০০০-এরও বেশি বেসামরিক জনসাধারণ নিহত হয়। আলেকসান্দার লেবেদের প্রদত্ত তথ্যমতে, ৮০,০০০ থেকে ১,০০,০০০ চেচেন নিহত এবং ২,৪০,০০০ আহত হয়। চেচেন কর্তৃপক্ষের মতে, প্রায় ১,০০,০০০ চেচেন নিহত হয়[৬০]। সের্গেই গভোরুখিনের মতে, চেচনিয়ার যুদ্ধ চলাকালে, বিশেষত গ্রোজনির ওপর বোমাবর্ষণের সময় প্রায় ৩৫,০০০ জাতিগত বেসামরিক রুশ নিহত হয়[৬১]

যুদ্ধবন্দি এবং নিখোঁজ ব্যক্তিবর্গ[সম্পাদনা]

খাসাভ-ইয়ুর্ত চুক্তিতে উভয় পক্ষ সম্পূর্ণ বন্দি বিনিময়ের বিষয়ে একমত হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বহু লোককে জোরপূর্বক বন্দি করে রাখা হয়। এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত কমপক্ষে ১৩৯ জন চেচেন রুশদের হাতে বন্দি ছিল[৬২]। ১৯৯৭ সালের মধ্য জানুয়ারি পর্যন্ত চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ৭০০ থেকে ১,০০০ রুশ সৈন্য ও সেনা কর্মকর্তাকে বন্দি করে রেখেছিল[৬২]। একই সময়ে চেচেন যোদ্ধারা ১,০৫৮ জন রুশ সৈন্যকে বন্দি করে রেখেছিল এবং রুশদের হাতে বন্দি চেচেন যোদ্ধাদের মুক্তির বিনিময়ে তাদের ছেড়ে দিতে রাজি ছিল[৬৩]। ১৯৯৫ সালের জুলাই থেকে মার্কিন সাংবাদিক অ্যান্ড্রু শুমাক গ্রোজনিতে নিখোঁজ এবং তাকে মৃত বলে ধরে নেয়া হয়[৬৪]

মস্কো শান্তিচুক্তি[সম্পাদনা]

খাসাভ-ইয়ুর্ত চুক্তি রাশিয়া ও চেচনিয়ার মধ্যে আরো দুইটি চুক্তি স্বাক্ষরের সুযোগ করে দেয়। ১৯৯৬ সালের নভেম্বরের মাঝামাঝি ইয়েলৎসিন ও মাসখাদভ অর্থনৈতিক সম্পর্ক এবং যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়ে একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। ১৯৯৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সকল রুশ সৈন্য ও চেচেন যোদ্ধার জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে[৬৫]

খাসাভ-ইয়ুর্ত চুক্তি স্বাক্ষরের ৬ মাস পর ১৯৯৭ সালের ১২ মে চেচনিয়ার নবনির্বাচিত রাষ্ট্রপতি আসলান মাসখাদভ মস্কো সফর করেন এবং সেখানে তিনি ও ইয়েলৎসিন "রুশ-চেচেন সম্পর্কের নীতিমালা ও শান্তি" সম্পর্কে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যেটি "মস্কো ও গ্রোজনির মধ্যে খারাপ সম্পর্ক সৃষ্টির যে কোনো ভিত্তি" দূর করবে বলে মাসখাদভ আশা ব্যক্ত করেন[৬৬]। তবে মাসখাদভের আশা ভ্রান্ত প্রমাণিত হয়। মাত্র দুই বছর পরে ১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মকালে মাসখাদভের কিছু প্রাক্তন সহযোদ্ধা, শামিল বাসায়েভ এবং ইবনে আল-খাত্তাব, দাগেস্তান আক্রমণ করেন[৬৭] এবং এর অনিবার্য পরিণতি হিসেবে রুশ সৈন্যরা আবার চেচনিয়ায় প্রবেশ করে দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধের সূচনা ঘটায়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "TURKISH VOLUNTEERS IN CHECHNYA"The Jamestown Foundation 
  2. গুগল বইয়ে The Chechens: A Handbook, পৃ. 237,
  3. গুগল বইয়ে Politics of Conflict: A Survey, পৃ. 68,
  4. গুগল বইয়ে Energy and Security in the Caucasus, পৃ. 66,
  5. "The Chechens"google.com.tr 
  6. "Why the Russian Military Failed in Chechnya"। Foreign Military Studies Office। ১৫ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৯ 
  7. Text of the Khasavyurt Accord in English[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. Full Text of Russian–Chechen Peace Treaty[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. Galeotti, Mark (২০১৪)। Russia's War in Chechnya 1994-2009। Osprey Publishing। আইএসবিএন 1782002790 
  10. "The radicalisation of the Chechen separatist movement: Myth or reality?"। The Prague Watchdog। ১৬ মে ২০০৭। ২৫ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুন ২০১১ 
  11. "The War in Chechnya"MN-Files। Mosnews.com। ২০০৭-০২-০৭। মার্চ ২, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  12. Saradzhyan, Simon (২০০৫-০৩-০৯)। "Army Learned Few Lessons From Chechnya"। Moscow Times। 
  13. Cherkasov, Alexander। "Book of Numbers, Book of Losses, Book of the Final Judgment"Polit.ru। ২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০১৬ 
  14. "Human Rights Violations in Chechnya"। ২০০২-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১১-২৩ 
  15. 120 in Budyonnovsk, and 41 in Pervomayskoe hostage crisis
  16. First Chechnya War - 1994-1996 GlobalSecurity.org
  17. Casualty FiguresJamestown Foundation ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ আগস্ট ২০১৪ তারিখে
  18. O.P. Orlov; V.P. Cherkassov। "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" Россия — Чечня: Цепь ошибок и преступлений (Russian ভাষায়)। Memorial। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  19. Unity Or Separation: Center-periphery Relations in the Former Soviet Union By Daniel R. Kempton, Terry D. Clark p.122
  20. Allah's Mountains: Politics and War in the Russian Caucasus By Sebastian Smith p.134
  21. http://www.massviolence.org/the-massive-deportation-of-the-chechen-people-how-and-why
  22. Evangelista, Matthew (২০০২)। The Chechen Wars: Will Russia Go the Way of the Soviet Union?। Washington: Brookings Institution Press। পৃষ্ঠা 18আইএসবিএন 0-8157-2498-5 
  23. German, Tracey C. (২০০৩)। Russia's Chechen War। New York: RoutledgeCurzon। পৃষ্ঠা 176আইএসবিএন 0-415-29720-6 
  24. Gall, Carlotta; De Waal, Thomas (১৯৯৮)। Chechnya: Calamity in the Caucasus। New York: New York University Press। পৃষ্ঠা 96আইএসবিএন 0-8147-2963-0Vitaly Kutsenko, the elderly First Secretary of the town soviet either was defenestrated or tried to clamber out to escape the crowd. 
  25. "The battle(s) of Grozny" (পিডিএফ)। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৮, ২০১৭ 
  26. Gall, Carlotta; Thomas de Waal (১৯৯৮)। Chechnya: Calamity in the Caucasus। New York University Press। আইএসবিএন 0-8147-2963-0 
  27. "Cluster Munitions Use by Russian Federation Forces in Chechnya"Mennonite Central Committee। ১৩ মে ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০১৭ 
  28. Williams, Bryan Glyn (2001).The Russo-Chechen War: A Threat to Stability in the Middle East and Eurasia?. Middle East Policy 8.1.
  29. "BBC News - EUROPE - Chechens 'using human shields'"bbc.co.uk 
  30. Faurby, Ib; Märta-Lisa Magnusson (১৯৯৯)। "The Battle(s) of Grozny"Baltic Defence Review (2): 75–87। জুলাই ২০, ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  31. "The First Bloody Battle"The Chechen Conflict। BBC News। ২০০০-০৩-১৬। 
  32. The Russian Federation Human Rights Developments Human Rights Watch
  33. Alikhadzhiev interview
  34. "Iskhanov interview" (পিডিএফ)। মার্চ ৮, ২০০৮ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৫, ২০১৭ 
  35. "FM 3-06.11 Appendix H"inetres.com 
  36. "Foreign Military Studies Office Publications – Combat Stress in Chechnya: "The Equal Opportunity Disorder""। ২০০৭-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৭-১১-২৫ 
  37. "The Chronicles of Hell"। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০১৯ 
  38. The situation of human rights in the Republic of Chechnya of the Russian Federation United Nations
  39. Honoring a General Who is SilencedThe St. Petersburg Times ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৭ জুলাই ২০১৪ তারিখে
  40. "Programs – The Jamestown Foundation"jamestown.org। ২০০৬-১১-২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  41. "Chris Hunter, Mass protests in Grozny end in bloodshed"hartford-hwp.com 
  42. টেমপ্লেট:খবর উদ্ধৃতি
  43. টেমপ্লেট:খবর উদ্ধৃতি
  44. "404w Page Not Found (DTIC)" (পিডিএফ)dtic.mil। জুন ২৯, ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। 
  45. "Grozny, August 1996. Occupation of Municipal Hospital No. 9 Memorial"memo.ru। ৩ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  46. "July archive"jhu.edu। ৮ জুন ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  47. "Army demoralized"। সেপ্টেম্বর ২৭, ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ নভেম্বর ২৬, ২০১৭ 
  48. Pro-Chechen Ferry Hijackers Surrender to Turks, The New York Times, January 20, 1996
  49. Russian fighting ceases in Chechnya; Skeptical troops comply with Yeltsin orderCNN ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৩ মার্চ ২০০৮ তারিখে
  50. Yeltsin declares Russian victory over ChechnyaCNN ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
  51. History of Chechnya WaYNaKH Online
  52. "czecz"memo.ru। ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  53. Lebed calls off assault on GroznyThe Daily Telegraph ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মে ২০০৮ তারিখে
  54. Lebed promises peace in Grozny and no Russian assaultCNN ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১১ ডিসেম্বর ২০০৮ তারিখে
  55. Lee Hockstader and David Hoffman (১৯৯৬-০৮-২২)। "Russian Official Vows To Stop Raid"। Sun Sentinel। ২০১২-০২-০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-০২-০৩ 
  56. "hrvc.net"hrvc.net। ২০০২-১২-২৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  57. "Неизвестный солдат кавказской войны"memo.ru। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  58. "700 Russian servicemen missing in Chechnya – officer"Interfax। ১০ এপ্রিল ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  59. The Russian Army in Chechnyaby Pavel Felgenhauer ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৩ মার্চ ২০১১ তারিখে
  60. "Civil and military casualties of the wars in Chechnya"। ডিসেম্বর ২৮, ২০০২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ জুন ১, ২০১৬  Russian-Chechen Friendship Society
  61. Dunlop, John B. (জানুয়ারি ২৬, ২০০৫)। "Do Ethnic Russians Support Putin's War in Chechnya?"The Jamestown Foundation। মার্চ ৩, ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  62. "RUSSIA / CHECHNYA"hrw.org 
  63. AI Report 1998: Russian FederationAmnesty International ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৪ নভেম্বর ২০০৭ তারিখে
  64. টেমপ্লেট:উদ্ধৃতি খবর
  65. "Account Suspended"worldaffairsboard.com 
  66. "F&P RFE/RL Archive"friends-partners.org। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৭ 
  67. John Pike (১৯৯৯-০৮-১৭)। "War In Dagestan"। globalsecurity.org। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-০৮-২৪