কাত্রিন দ্যনোভ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(Catherine Deneuve থেকে পুনর্নির্দেশিত)
কাত্রিন দ্যনোভ
Catherine Deneuve
জন্ম
কাত্রিন ফাবিয়েন দর্লেয়াক

(1943-10-22) ২২ অক্টোবর ১৯৪৩ (বয়স ৮০)
পেশাঅভিনেত্রী, গায়িকা, মডেল, চলচ্চিত্র প্রযোজক
কর্মজীবন১৯৫৭-বর্তমান
দাম্পত্য সঙ্গীডেভিড বেইলি
(বি. ১৯৬৫; বিচ্ছেদ. ১৯৭২)
সঙ্গীরজার ভাদিম (১৯৬১-১৯৬৪)
মারচেল্লো মাস্ত্রোইয়ান্নি (১৯৭১-১৯৭৫)
হিউ জনসন (১৯৮২-১৯৮৩)
পিয়ের লেসক্যুর (১৯৮৪–১৯৯১)
সন্তানক্রিস্তিয়ঁ ভাদিম
কিয়ারা মাস্ত্রোইয়ান্নি
পিতা-মাতামোরিস দর্লেয়াক
র‍্যনে সিমোনো
আত্মীয়ফ্রঁসোয়াজ দর্লেয়াক (বোন)

কাত্রিন দ্যনোভ (ফরাসি: Catherine Deneuve; আ-ধ্ব-ব: [katʁin dənœv] শুনুন; জন্ম ২২ অক্টোবর ১৯৪৩) হলেন একজন ফরাসি অভিনেত্রী। পাশাপাশি তিনি খণ্ডকালীন গায়িকা, মডেল ও প্রযোজক। তাকে সর্বকালের সেরা ইউরোপীয় ও ফরাসি অভিনেত্রীদের একজন হিসেবে গণ্য করা হয়।[১] তিনি লুইস বুনিউয়েল, ফ্রঁসোয়া ত্রুফোরোমান পোলান্‌স্কিসহ বিভিন্ন পরিচালকদের পরিচালনায় হিমশীতল, নিরুত্তাপ ও রহস্যময় চরিত্রে অভিনয়ের জন্য খ্যাতি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি মিরেই মাতিওকে ছাপিয়ে গিয়ে ফ্রান্সের স্বাধীনতার জাতীয় প্রতীক মারিয়ানের দাপ্তরিক মুখবন্ধ হিসেবে স্থান অধিকার করেন। ১৪ বার সেজার পুরস্কারে মনোনীত দ্যনোভ ত্রুফো পরিচালিত ল্য দের্নিয়ে মেত্রো (১৯৮০) ও রেজিস ওয়ারনিয়ে পরিচালিত আঁদোশিন (১৯৯২) চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য দুইবার এই পুরস্কার অর্জন করেন এবং প্রথম চলচ্চিত্রটিতে তার কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে একটি দাভিদ দি দোনাতেল্লো অর্জন করেন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

দ্যনোভ ১৯৪৩ সালের ২২শে অক্টোবর প্যারিসে জন্মগ্রহণ করেন।[২] তার পিতা মোরিস দর্লেয়াক (১৯০১-১৯৭৯) ও মাতা র‍্যনে সিমোনো (জ. ১৯১১), তারা দুজনেই ফরাসি মঞ্চ অভিনয়শিল্পী ছিলেন। দ্যনোভের দুই বোন রয়েছে, তারা হলেন ফ্রঁসোয়াজ দর্লেয়াক (১৯৪২-১৯৬৭) এবং সিলভি দর্লেয়াক (জ. ১৯৪৬)।[৩] এছাড়া তার মায়ের পক্ষে তার এক সৎ বোন রয়েছে, তার নাম দানিয়েল। ১৯৩৭ সালে এমে ক্লারিওঁ-র সাথে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের ফলে দানিয়েলের জন্ম হয়, কিন্তু মোরিস তাকে দত্তক নেন এবং তার নামের শেষাংশ যোগ করার অধিকার প্রদান করেন। দ্যনোভ ছিল তার মায়ের বিবাহপূর্ব নাম। কাত্রিন তার বোনদের থেকে নিজেকে আলাদা করতে তার মঞ্চনাম হিসেবে এই নামটি ব্যবহার করেন। তিনি ক্যাথলিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।[৪]

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৬৯ সালে দ্যনোভ

দ্যনোভের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে অঁদ্রে উ্যনবেল পরিচালিত লে কোলেজিয়েন (Les Collégiennes, ১৯৫৭) চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। এই চলচ্চিত্রে তার ছোট বোন সিলভি দর্লেয়াক-ও অভিনয় করেছিলেন। সিলভি-ও তার সৎ বড় বোন দানিয়েলের মত খণ্ডকালীন শিশুশিল্পী চরিত্রে কয়েকটি চলচ্চিত্রে কাজ করেছেন।[৫] যাই হোক, দ্যনোভ এরপর পরিচালক রজার ভাদিমের পরিচালনায় কয়েকটি চলচ্চিত্রে এবং জাক-জেরার কর্ন্যু-র পরিচালনায় লম আ ফাম (L'Homme à femmes, ১৯৬০) চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। লম আ ফাম চলচ্চিত্রে তার অভিনয় পরিচালক জাক দ্যমির নজর কাড়ে। দ্যমি তাকে ১৯৬৪ সালে সঙ্গীতধর্মী লে পারাপ্লুই দ্য শেরবুর (Les Parapluies de Cherbourg) চলচ্চিত্রে কাজের সুযোগ দেন, যা দ্যনোভকে তারকা খ্যাতি এনে দেয়।[৫] এরপর দ্যনোভ রোমান পোলান্‌স্কির ভীতিপ্রদ ধ্রুপদী রিপালশন (১৯৬৫) চলচ্চিত্রে নিরুত্তাপ কিন্তু যৌন-কামনা উদ্রেককারী চরিত্রে অভিনয় করেন, যার জন্য তিনি "আইস মেইডেন" ("বরফকন্যা") ডাকনাম অর্জন করেন। এই চরিত্রটি তার লুইস বুনিউয়েলের বেল দ্য জুর (১৯৬৭) ও ত্রিস্তানা (১৯৭০) চলচ্চিত্রে কাজ সহজ করে দেয়।[৬] বুনিউয়েলের পরিচালনায় তার এই চলচ্চিত্র দুটি তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কর্ম[৭][৮]

১৯৮০ সালে ফ্রঁসোয়া ত্রুফো পরিচালিত ল্য দের্নিয়ে মেত্রো চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে সেজার পুরস্কার এবং শ্রেষ্ঠ বিদেশি অভিনেত্রী বিভাগে একটি দাভিদ দি দোনাতেল্লো অর্জন করেন। ১৯৮৩ সালে তিনি টনি স্কটের দ্য হাঙ্গার চলচ্চিত্রে ডেভিড বাউয়িসুজান সার‍্যান্ডনের সাথে উভকামী ভ্যাম্পায়ার চরিত্রে অভিনয় করেন। এই চরিত্রটির কারণে সমকামী নারী ও অন্য বিশেষ কিছু দর্শকমহলে (বিশেষ করে গথিক উপ-সংস্কৃতিতে) দ্যনোভের অনুসারীসংখ্যা বৃদ্ধি পায়।[৯] ১৯৮৮ সালে দ্রোল দঁদ্রোয়া পুর উ্যন রঁকোঁত্র চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে প্রযোজক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। এতে তিনি ও তার একাধিক চলচ্চিত্রের সহশিল্পী জেরার দ্যপার্দিও শ্রেষ্ঠাংশে অভিনয় করেন।

১৯৯২ সালে তিনি রেজিস ওয়ারনিয়ে পরিচালিত আঁদোশিন (১৯৯২) চলচ্চিত্রে ভাঁসঁ পেরেজের বিপরীতে অভিনয় করেন। এই চলচ্চিত্রে তার অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে একাডেমি পুরস্কারের মনোনয়ন লাভ করেন এবং তার দ্বিতীয় সেজার পুরস্কার অর্জন করেন। এরপর তিনি অঁদ্রে তেশিনে-র দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন, সেগুলো হল মা সেজোঁ প্রেফেরে (১৯৯৩) ও লে ভোলর (১৯৯৬)। ১৯৯৭ সালে দ্যনোভকে জো কোকারের গাওয়া "নুবলিয়ে জামে" গানের সঙ্গীত ভিডিওতে দেখা যায়। ১৯৯৮ সালে তিনি প্লাস ভঁদোম চলচ্চিত্রে অভিনয় করে সমাদৃত হন এবং ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসব থেকে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী বিভাগে ভোল্পি কাপ অর্জন করেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Beautiful but aloof: Catherine Deneuve turns 75"ডয়েচে ভেলে (ইংরেজি ভাষায়)। ২১ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০২০ 
  2. আজুরি, ফিলিপে; সেগুরে, অলিভিয়ে (১৮ ডিসেম্বর ২০১৯)। "À voix nue : Entretien avec Catherine Deneuve"ভ্যানিটি ফেয়ার (ফরাসি ভাষায়)। ভ্যানিটি ফেয়ার। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  3. "Catherine Deneuve"ইয়াহু মুভিজ। ১০ নভেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  4. "The Los Angeles Times Interview from 1992"Tout Sur Deneuve। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  5. "Catherine Deneuve interviewed by Arnaud Despelchin"। Film Comment magazine (November/December 2008 edition)। ১৬ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০ 
  6. "Philip French's Screen Legends, The Observer Review, p.12"দ্য গার্ডিয়ান। লন্ডন। ১ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। ৮ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  7. ব্লক, ম্যাক্সিন; রোথ, অ্যানা হার্থ; ক্যান্ডি, মার্জরি ডেন্ট; মরিৎজ, শার্ল (১৯৭৮)। Current Biography Yearbook। এইচ.ডব্লিউ. উইলসন কোং.। পৃষ্ঠা ৯৮। আইএসবিএন 978-99973-770-2-9Catherine Deneuve has also ... been called the "ice maiden" because of the aloof and enigmatic personality she has glacially portrayed in such classic art films as Polanski's Repulsion ... 
  8. জোন্স, অ্যালিস (৭ মার্চ ২০০৭)। "Catherine the great: Deneuve's five finest roles"দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। ১০ নভেম্বর ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০The first and most chilling of Deneuve's classic ice-maiden roles." "Deneuve's best-known role. 
  9. সুইট, ম্যাথু (২৯ নভেম্বর ২০০২)। "My lips are sealed ... In her new film, 8 Women, the French icon Catherine Deneuve shares a kiss with her co-star Fanny Ardant. It's not her favourite part of the movie, she tells Matthew Sweet"দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট। লন্ডন। ২ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০২০  (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]