মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র
পদার্থবিজ্ঞানে, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র একটি মডেল যা একটি বিশাল বস্তুর চারপাশে প্রসারিত প্রভাব ব্যাখ্যা করতে ব্যবহৃত হয়।[১] কোনো বিশাল বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র আরেকটি বিশাল বস্তুর উপর একটি বল উৎপাদন করতে পারে। এইভাবে, মহাকর্ষীয় ঘটনা ব্যাখ্যা করতে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র ব্যবহার করা হয়, এবং প্রতি কেজি নিউটনে (N/kg) পরিমাপ করা হয়। মূল ধারণায়, মহাকর্ষ ছিল বিন্দু ভরের মধ্যবর্তী একটি বল। আইজ্যাক নিউটনের পর, পিয়েরে-সাইমন ল্যাপ্লেস মহাকর্ষকে এক ধরনের বিকিরণ ক্ষেত্র বা বিকিরণ তরল হিসেবে প্রদর্শন করার চেষ্টা করেছিলেন, এবং ঊনবিংশ শতাব্দী থেকে মহাকর্ষের ব্যাখ্যা সাধারণত একটি বিন্দু আকর্ষণের পরিবর্তে একটি ক্ষেত্র মডেলের দিক থেকে শেখানো হয়।
ক্ষেত্র মডেলটিতে দুটি কণা একে অপরকে আকৃষ্ট করার পরিবর্তে কণাগুলো তাদের ভরের মাধ্যমে স্থান-কাল বিকৃত করে এবং এই বিকৃতিটি "বল" হিসাবে অনুধাবন ও পরিমাপ করা হয়। এ জাতীয় একটি মডেলে বলা হয়েছে যে,[২] স্থান-কালের বক্রতার প্রতিক্রিয়াতে পদার্থগুলো নির্দিষ্ট পথে সরে যায়,[৩] এর অর্থ হয় মহাকর্ষীয় বল নেই, বা মহাকর্ষ একটি কল্পিত বল।[৪]
মহাকর্ষকে সমতা নীতির বাধ্যতার দ্বারা অন্যান্য বল থেকে পৃথক করা হয়েছে।
মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র: কোনো বস্তুর আশেপাশে যে অঞ্চলব্যাপী এর মহাকর্ষীয় প্রভাব বজায় থাকে, অর্থাৎ অন্য কোনো বস্তু রাখা হলে সেটি আকর্ষণ বল লাভ করে, তাকে ঐ বস্তুর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র বলে।
শাস্ত্রীয় বলবিজ্ঞান
শাস্ত্রীয় বলবিজ্ঞানে, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র মূলত একটি ভৌত পরিমাণ।[৫] নিউটনের মহাকর্ষ সূত্র ব্যবহার করে একটি মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রকে সংজ্ঞায়িত করা যায়। এইভাবে নির্ধারণ করা হয়, M ভরের কোনো কণার চারপাশে মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র g একটি ভেক্টর ক্ষেত্র যা কোনো ভেক্টরের প্রতিটি বিন্দুতে গঠিত কণার দিকে সরাসরি নির্দেশ করে। উক্ত ভেক্টর ক্ষেত্রের প্রতিটি বিন্দুতে মাত্রা সার্বজনীন সূত্র প্রয়োগ করে গণনা করা হয়, এবং মহাশূন্যের যে কোন বস্তুর উপর প্রতি ইউনিট ভরের জন্য বলের পরিমাণ প্রতিনিধিত্ব করে। যেহেতু এখানে বল ক্ষেত্রটি সংরক্ষণশীল, তাই বল ক্ষেত্রের সাথে সংশ্লিষ্ট স্থানের প্রতিটি বিন্দুতে একটি স্কেলার বিভব শক্তি, রয়েছে; একে বলা হয় মহাকর্ষীয় বিভব।[৬] মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র সমীকরণটি হল,[৭]
যেখানে F হল মহাকর্ষ বল, m উক্ত কণার ভর, R হল কণাটির অবস্থান(অথবা নিউটনের গতির দ্বিতীয় সূত্রের জন্য যা একটি সময় নির্ভর ফাংশন, যা পরীক্ষা শুরুর জন্য কণাগুলো মহাশূন্যে একটি নির্দিষ্ট বিন্দু দখল করে), R̂ হল R এর অরীয় দিক বরাবর ইউনিট ভেক্টর, t হল সময়, G মহাকর্ষীয় ধ্রুবক, এবং ∇ হল ডেল অপারেটর।
এর মধ্যে রয়েছে নিউটনের সার্বজনীন মহাকর্ষ সূত্র, এবং মহাকর্ষীয় বিভব ও ত্বরণের মধ্যে সম্পর্ক। এখানে, +d২R/dt২ এবং +F/m অভিকর্ষজ ত্বরন g(যা সুষম ত্বরণের সমতুল্য, অর্থাৎ একই গাণিতিক রূপ, কিন্তু প্রতি একক ভর মহাকর্ষীয় বল হিসেবেও সংজ্ঞায়িত করা হয়) এর সমতুল্য। ঋণাত্মক মান সন্নিবেশ করা হয় যেহেতু বল স্থানচ্যুতি বিরোধী কাজ করে। আকর্ষণ ভরের ভর ঘনত্ব ρ এর দিক থেকে সমতুল্য ক্ষেত্র সমীকরণ হলঃ
যা গাউসের মহাকর্ষ সূত্র, এবং পয়সনের মহাকর্ষ সমীকরণ ধারণ করে। নিউটন এবং গাউসের সূত্র গাণিতিকভাবে সমতুল্য, এবং ডাইভার্জেন্স উপপাদ্য দ্বারা সম্পর্কিত।
এই ধ্রুপদী সমীকরণগুলো একটি মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের উপস্থিতিতে একটি পরীক্ষামূলক কণার জন্য গতির অন্তরক সমীকরণ, অর্থাৎ এই সমীকরণগুলোর স্থাপন এবং সমাধানের মাধ্যমে একটি পরীক্ষামূলক ভরের গতি নির্ণয় এবং বর্ণনা করা যায়।
একাধিক কণার চারপাশের ক্ষেত্র প্রতিটি স্বতন্ত্র কণার চারপাশের ক্ষেত্রের ভেক্টর যোগফলের সমান। এই ধরনের ক্ষেত্রে কোনো বস্তু এমন একটি বল লাভ করবে যা এই স্বতন্ত্র ক্ষেত্রগুলোতে বস্তু যে বল লাভ করবে তার ভেক্টর যোগফলের সমান। গাণিতিকভাবে,
অর্থাৎ ভর mj এর মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র হল অন্যান্য সকল ভর mi এর জন্য সকল মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রের যোগফল, শুধুমাত্র ভর mj ছাড়া। ইউনিট ভেক্টর R̂ij এর দিক Ri − Rj বরাবর।
সাধারণ আপেক্ষিকতা
সাধারণ আপেক্ষিকতায়, ক্রিস্টোফেল প্রতীক মহাকর্ষীয় বল ক্ষেত্রে ভূমিকা পালন করে এবং মেট্রিক টেনসর মহাকর্ষীয় বিভবে ভূমিকা পালন করে।
সাধারণ আপেক্ষিকতায়, মহাকর্ষীয় ক্ষেত্র আইনস্টাইনের ক্ষেত্র সমীকরণ দ্বারা নির্ধারণ করা হয়,
যেখানে T হল স্ট্রেস-এনার্জি টেনসর, G হল আইনস্টাইন টেনসর, এবং হল আইনস্টাইনের মহাকর্ষীয় ধ্রুবক। κ-কে সংজ্ঞায়িত করা হয় κ = 8πG/c4 হিসাবে, যেখানে G হল মহাকর্ষের নিউটনীয় ধ্রুবক এবং c হল আলোর বেগ।
এই সমীকরণ মহাশূন্যের কোনো অঞ্চলে পদার্থ ও শক্তি বন্টনের উপর নির্ভরশীল, নিউটনীয় মহাকর্ষের বিপরীতে, যা শুধুমাত্র পদার্থের বন্টনের উপর নির্ভরশীল। সাধারণ আপেক্ষিকতায় ক্ষেত্রগুলো স্থান-কালের বক্রতা প্রতিনিধিত্ব করে। সাধারণ আপেক্ষিকতা বলে যে, বক্র স্থানের একটি অঞ্চলে থাকা, কোনো ক্ষেত্রের গ্রেডিয়েন্টকে ত্বরান্বিত করার সমতুল্য। নিউটনের দ্বিতীয় সূত্র অনুযায়ী, এটি কোনো বস্তুর জন্য একটি কাল্পনিক বলের অভিজ্ঞতা সৃষ্টি করবে যদি এটি ক্ষেত্র বরাবর ধরে রাখা হয়। এই কারণে, একজন ব্যক্তি পৃথিবীর পৃষ্ঠে দাঁড়ালে মনে হবে, মহাকর্ষ বল তাকে নিচের দিকে টেনে নিচ্ছে। সাধারণভাবে, সাধারণ আপেক্ষিকতা দ্বারা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত মহাকর্ষীয় ক্ষেত্রগুলো শাস্ত্রীয় বলবিজ্ঞানের ভবিষ্যদ্বাণী থেকে সামান্য ভিন্ন, কিন্তু সহজেই যাচাইযোগ্য কিছু পার্থক্য রয়েছে, এই ক্ষেত্রে আলোর বিচ্ছুরণ সবচেয়ে পরিচিত।
তথ্যসূত্র
- ↑ "Gravitational field"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ "Gravitational field"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ "Gravitational field"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ "Gravitational field"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৮-২৫।
- ↑ "The Feynman Lectures on Physics Vol. II Ch. 1: Electromagnetism"। www.feynmanlectures.caltech.edu। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-১০-১৩।
- ↑ "Book sources"। Wikipedia (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Lerner, Rita G.; Trigg, George L. (১৯৯১)। Encyclopedia of physics। Internet Archive। New York : VCH। আইএসবিএন 978-0-89573-752-6।