বৈদ্যুতিক রোধ ও পরিবাহিতা
রোধ হচ্ছে বিদ্যুৎ পরিবাহীর ধর্ম। বিদ্যুৎ পরিবাহীর যে ধর্মের জন্য এর মধ্য দিয়ে পরিবাহিত তড়িৎ প্রবাহ বাধাগ্রস্থ হয় বা বিঘ্নিত হয়, তাকে রোধ বলে। রোধের এসআই একক ও'ম, একে গ্রীক চিহ্ন ওমেগা (Ω) দ্বারা সূচিত করা হয়। বৈদ্যুতিক যন্ত্রে প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রোধ ব্যবহার করা হয়।
নির্দিষ্ট উষ্ণতায় যে কোন পরিবাহীর রোধ এর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক এবং এর প্রস্থচ্ছেদের ব্যস্তানুপাতিক। অতিপরিবাহী (সুপার কন্ডাক্টর) ছাড়া সব পরিবাহীরই কিছু না কিছু রোধ আছে, তা যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন। কোন নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোন পরিবাহীর দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য ও এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত তড়িৎ প্রবাহের অনুপাত দ্বারা ঐ তাপমাত্রায় ঐ পরিবাহীর রোধ পরিমাপ করা যায়।
রোধ পরিমাপের জন্য নিম্নোক্ত সূত্র ব্যবহার করা হয় যা মূলতঃ ও'মের সূত্রের ভিন্নরূপঃ
কোন পরিবাহকের দুই প্রান্তের বিভব পার্থক্য ১ভোল্ট হলে যদি তার মধ্য দিয়ে ১ অ্যাম্পিয়ার তড়িৎ প্রবাহ প্রবাহিত হয় তবে ঐ পরিবাহীর রোধকে ১ ও'ম বলে। রোধের বিপরীত রাশি হলো পরিবাহিতা বা কন্ডাক্টেন্স।
রোধের নির্ভরশীলতা
কোনো পরিবাহীর রোধ চারটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে।
ক)পরিবাহীর দৈর্ঘ্যঃ
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট উপাদানের পরিবাহীর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল স্থির থাকলে পরিবাহীর রোধ এর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক। অর্থাৎ, কোনো পরিবাহীর দৈর্ঘ্য L, প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল A এবং রোধ R হলে,
খ)পরিবাহীর প্রস্থ
গ)পরিবাহীর উপাদান
ঘ)পরিবাহীর তাপমাত্রা
রোধের প্রকারভেদ
রোধ দুই প্রকার। যথাঃ
ক)স্থির মানের রোধঃ
যে সকল রোধকের মান নির্দিষ্ট তাদেরকে স্থির রোধক বলে।
খ)পরিবর্তী রোধঃ
এ ধরনের রোধকের মান প্রয়োজন অনুযায়ী পরিবর্তন করা যায়। অর্থাৎ, যে সকল রোধকের মান পরিবর্তনযোগ্য তাদেরকে পরিবর্তী রোধ বলে। এদেরকে রিওস্টেট ও বলা হয়।
তুল্য রোধ (Equivalent resistance)
কোন বর্তনীতে বিদ্যমান রোধগুলোর পরিবর্তে যে বিশেষ মানের কোন রোধের জন্য বর্তনীতে বিভব এবং তড়িৎ প্রবাহ অপরিবর্তিত থাকে, সেই মানটিকে ঐ বর্তনীর তুল্য রোধ (Req) বলে ।
তুল্য রোধ দুই ধরনের হয়ে থাকে
- শ্রেণী(অনুক্রমিক) সমবায়ের তুল্যরোধ (Rs)
- সমান্তরাল সমবায়ের তুল্য রোধ(Rp)
শ্রেণী সমবায়
একটি পরিবাহী তারে R1, R2, R3,......
ইত্যাদি রোধ শ্রেণী সমবায়ে থাকলে, তুল্যরোধ() হবে:-
সমান্তরাল সমবায়
একটি পরিবাহী তারে ইত্যাদি রোধ সমান্তরাল সমবায়ে থাকলে, তুল্যরোধ() হবে:-
ওহমের সূত্রের সাথে রোধ
বিভব পার্থক্য বিশিষ্ট কোনো পরিবাহির মধ্যে দিয়ে যদি পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তবে ওহমের সুত্রমতে,
যেসকল পদার্থ ওহমের এই সূত্র মেনে চলে তাদেরকে ওহমিক পদার্থ বলে। পরিবাহি তার কিংবা রোধ ওহমিক পদার্থের একটি উদাহরণ। কারেন্ট-ভোল্টেজ লেখচিত্রে ওহমিক পদার্থের জন্য একটি মূলবিন্দুগামী সরলরেখা পাওয়া যায় এবং ঐ সরলরেখার নতি ধনাত্মক হয়।
রোধ ও পরিবাহিতার মাঝে সম্পর্ক
কোনো একটি বস্তুর রোধ দুইটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে (ক) এর উপাদানের উপর ও (খ) এর আকারের উপর। কোনো পরিবাহির রোধ এর প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফলের ব্যস্তানুপাতিক, এর দৈর্ঘ্যের সমানুপাতিক। কোনো পরিবাহির প্রস্থচ্ছেদের ক্ষেত্রফল , দৈর্ঘ্য হলে ঐ পরিবাহির রোধ হবে,
বা, ( হল পরিবাহীর রোধাঙ্ক, যা একটি ধ্রুবক সংখ্যা)
অপরদিকে আমরা পরিবাহিতার জন্য এর বিপরীত লিখতে পারি। তথা পরিবাহিতা ( হল পরিবাহীর পরিবাহিতাঙ্ক, যা একটি ধ্রুবক সংখ্যা)
এ থেকে আমরা বলতে পারি,
আবার,
রোধের সাথে জুল প্রভাবের সম্পর্ক
বিজ্ঞানী জুল দেখান যেকোনো রোধ বিশিষ্ট পদার্থের মধ্যে দিয়ে বিদ্যুৎ প্রবাহিত হলে এর রোধ কিছু বিদ্যুৎ শক্তিকে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করে। একে তিনি জুল প্রভাব নাম দেন। তিনি দেখান, রোধ বিশিষ্ট কোনো রোধের মধ্যে দিয়ে সময় ধরে যদি পরিমাণ বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয় তবে উৎপন্ন তাপশক্তির পরিমাণ হবে, (SI পদ্ধতিতে) [১]
এর সাধারণ রূপ হল , যেখানে জুল ধ্রুবক।
তথ্যসূত্র
- ↑ প্রামাণিক, ড. গোলাম হোসেন। পদার্থবিজ্ঞান দ্বিতীয় পত্র একাদশ দ্বাদশ শ্রেণি। অক্ষরপত্র প্রকাশনী।