বাণিজ্য (ব্যবস্থা)
বাণিজ্য বলতে অর্থনীতিতে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ও সেবার বৃহৎ মাপের ক্রয়বিক্রয়, বিনিময় এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অন্য সমস্ত সাহায্য ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড, পদ্ধতি ও প্রক্রিয়ার সমষ্টিকে বোঝায়। বাণিজ্যে উৎপাদক বা বিক্রেতা থেকে ভোক্তা বা ক্রেতাদের কাছে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে আকাশপথ, স্থলপথ ও নৌ বা সমুদ্রপথে বড় পরিমাণে পণ্য ও সেবা পরিবহন ও সরবরাহ করার ব্যাপারটি সংশ্লিষ্ট থাকে। পণ্য স্থানান্তর ও পরিবহন ছাড়াও ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠানের কর্মকাণ্ড, গুদামজাতকরণ, অর্থসংস্থান, যোগাযোগ, মধ্যস্থতা, দালালি ও অন্যান্য সাহায্যকারী সেবা প্রদানকারী সংগঠনগুলির কর্মকাণ্ডও বাণিজ্যের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণত সংস্থা থেকে সংস্থায়, শহর থেকে শহরে, অঞ্চল থেকে অঞ্চলে, রাষ্ট্র থেকে রাষ্ট্রে বা দেশ থেকে দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘটে থাকে। ভিন্ন ভিন্ন দেশের মধ্যে ঘটলে তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বা বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। একই দেশের বিভিন্ন অংশের মধ্যে ঘটলে তাকে অভ্যন্তরীণ বা দেশজ বাণিজ্য বলে।
বাণিজ্য ও ব্যবসার মধ্যে পার্থক্য আছে। ব্যবসা হল পণ্য উৎপাদন ও উৎপাদিত পণ্যের বিতরণ। অন্যদিকে বাণিজ্য হল ব্যবসার একটি উপাংশ যেটি পণ্য উৎপাদন নয়, বরং কেবলমাত্র উৎপাদিত পণ্যের বিতরণের সাথে সম্পর্কিত। বাণিজ্য যেকোনও অর্থনীতির মেরুদণ্ডস্বরূপ। যেকোনও পণ্য শিল্পোৎপাদন করার পরে সেটিকে বাজারে কোনও ক্রেতার কাছে অর্থের বিনিময়ে বিক্রয় করতে হয়। একে উৎপাদিত পণ্যের বাণিজ্যিকীকরণ বলে। বাণিজ্যিকীকরণ ছাড়া পণ্য উৎপাদন নিরর্থক, কেননা বাণিজ্য ছাড়া উৎপাদনের খরচ মেটানো যায় না। সুতরাং বাণিজ্য ছাড়া অর্থনীতির কোনও শিল্প টিকে থাকতে পারে না। বাণিজ্য তাই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও প্রবৃদ্ধির চালিকাশক্তি।
ক্রয়বিক্রয় ও বাণিজ্যের মধ্যেও পার্থক্য আছে। একটি পণ্য একবার ক্রয়-বিক্রয়ের ঘটনাটিকে একটি ব্যবসায়িক লেনদেন বা অর্থনৈতিক লেনদেন বলে। অন্যদিকে একটি অর্থনীতিতে সংঘটিত ঐ পণ্যের সমস্ত লেনদেনকে একত্রে সামষ্টিকভাবে ঐ পণ্যের বাণিজ্য বলে। অর্থাৎ বাণিজ্য একটি ব্যষ্টিক অর্থনৈতিক ঘটনা।
বাণিজ্য মানবসভ্যতার ঊষালগ্ন থেকেই বিদ্যমান। বাণিজ্যের কারণে বাণিজ্যিক পথ ও বৃহৎ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি গড়ে উঠেছে। এর ফলে বিভিন্ন জাতির সমৃদ্ধি ঘটেছে ও তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। তবে বাণিজ্যকে বিধিবদ্ধ বা নিয়ন্ত্রণ না করলে নেতিবাচক পরিণামের সৃষ্টি হতে পারে।
২১শ শতকে এসে আন্তর্জাল বা ইন্টারনেট প্রযুক্তির মাধ্যমে বৈদ্যুতিন বা ইলেকট্রনীয়ভবে বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। একে ই-বাণিজ্য বা বৈদ্যুতিন বাণিজ্য বলে।
ব্যুৎপত্তি
বাণিজ্যকে ইংরেজি ভাষায় সাধারণত "কমার্স" পরিভাষা দিয়ে নির্দেশ করা হয়। "কমার্স" শব্দটি লাতিন শব্দ কোমের্কুম থেকে এসেছে, যেখানে কোম অর্থ "একসঙ্গে" এবং মের্ক অর্থ "পণ্যদ্রব্য"।[১]
ইতিহাস
ইতিহাসবিদ পিটার ওয়াটসন এবং রমেশ মানিক্রম দেড় লক্ষ বছর আগে সার্কা থেকে বড়-দূরত্বের বাণিজ্যের হদিস পান[৩]
ঐতিহাসিক সময়ে, মানদন্ড হিসাবে অর্থ মুদ্রা প্রবর্তনের ফলে পণ্য ও পরিষেবাদি বিনিময় সহজতর হয়। [৪]
মধ্যযুগীয় ইউরোপে ব্যাংকিং ব্যবস্থা বিকশিত হয়েছিল, জাতীয় গণ্ডি পেরিয়ে আর্থিক লেনদেনের সুবিধার্থে। [৫] বাজারগুলি শহুরে জীবনের একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে এবং শহর কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। [৬]
আরও দেখুন
- বিজ্ঞাপন
- ব্যবসা
- পুঁজিবাদ
- ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতক
- ক্রয়বিক্রয়
- মেলা
- রপ্তানি
- ই-বাণিজ্য
- অর্থনীতি
- কার্গো
- বিপণন
- বাজার
- উৎপাদন
- আমদানি
- মৎস্যবিদ্যা
- খুচরা বিক্রয়ের উন্নতিসাধন
- গণ-উৎপাদন
- লেসে-ফেয়ার
তথ্যসূত্র
- ↑ চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Commerce"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস।
- ↑ Hans Biedermann, James Hulbert (trans.), Dictionary of Symbolism - Cultural Icons and the Meanings behind Them, p. 54.
- ↑ Watson, Peter (২০০৫)। Ideas : A History of Thought and Invention from Fire to Freud। HarperCollins। আইএসবিএন 0-06-621064-X। Introduction......./
- ↑ Davies, Glyn (২০০২)। Ideas: A history of money from ancient times to the present day। University of Wales Press। আইএসবিএন 0-7083-1717-0।
- ↑ Martha C. Howell (১২ এপ্রিল ২০১০)। Commerce Before Capitalism in Europe, 1300-1600। Cambridge University Press। আইএসবিএন 978-0-521-76046-1।
- ↑ Fernand Braudel (১৯৮২)। Civilization and Capitalism, 15th-18th Century: The wheels of commerce। University of California Press। পৃষ্ঠা 30। আইএসবিএন 978-0-520-08115-4।