প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য
যুগ অনুযায়ী সাহিত্যের ইতিহাস |
---|
ব্রোঞ্জ যুগ |
ধ্রুপদি |
আদি মধ্যযুগ |
মধ্যযুগীয় |
প্রাগাধুনিক |
আধুনিক (শতাব্দী অনুযায়ী) |
সাহিত্য প্রবেশদ্বার |
মিশরীয় ভাষায় রচিত প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য হল মিশরীয় সাহিত্যের প্রাচীনতম রচনা সংকলন। এই সাহিত্যের রচনাকাল প্রাচীন মিশরীয় ফ্যারাওদের রাজত্বকাল থেকে শুরু করে সেই দেশে রোমান আধিপত্যের শেষ পর্যায় পর্যন্ত। প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য ও সুমেরীয় সাহিত্যকে একযোগে বিশ্বের প্রাচীনতম সাহিত্য গণ্য করা হয়।[১]
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ সহস্রাব্দের শেষ ভাগে অর্থাৎ, মিশরে প্রাক্রাজবংশীয় যুগের অন্তিম পর্যায়ে হায়ারোগ্লাফিক ও হায়রাটিক উভয় আকারেই প্রথম লিখন পদ্ধতির উদ্ভব ঘটে। পুরনো রাজ্যের সমসাময়িক কালে (খ্রিস্টপূর্ব ষড়বিংশ থেকে দ্বাবিংশ শতাব্দী) সাহিত্য বলতে ছিল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থাবলি, "ইপিসল " (ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে নির্দেশিত বা প্রেরিত চিঠি), সাধারণ চিঠিপত্র, স্তোত্র ও কবিতা এবং বিশিষ্ট প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের কর্মজীবনের স্মৃতিচারণামূলক স্মারক আত্মজৈবনিক গ্রন্থাবলি। মধ্য রাজ্যের প্রথম পর্যায়ের (খ্রিস্টপূর্ব একবিংশ থেকে সপ্তদশ শতাব্দী) আগে সে দেশে আখ্যানমূলক সাহিত্যের উদ্ভব ঘটেনি। রবার্ট বি. পার্কিনসনের মতে, মিশরে আখ্যানমূলক সাহিত্যের উৎপত্তি ছিল একটি "গণমাধ্যম বিপ্লব" এবং তা ছিল বুদ্ধিজীবী লিপিকর শ্রেণির উত্থান, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য বিষয়ে নতুন সাংস্কৃতিক সংবেদনশীলতা, সাক্ষরতার নজিরবিহীন মাত্রা এবং লিখন উপকরণগুলি সর্বসাধারণের কাছে সহজলভ্য হয়ে ওঠার ফলশ্রুতি।[২] অবশ্য এই সময় সাক্ষরতার সামগ্রিক হার সম্ভবত মিশরের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশেরও কম ছিল। তাই সাহিত্য রচনা ছিল অভিজাত শ্রেণির কুক্ষিগত। এই কাজে একচেটিয়া অধিকার ছিল সরকারি কার্যালয় ও শাসক ফ্যারাওয়ের দরবারের সঙ্গে যুক্ত লিপিকর শ্রেণির। অবশ্য প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য রাজসভার সামাজিক-রাজনৈতিক বিন্যাসক্রমের উপর নির্ভরশীল ছিল কিনা তা নিয়ে আধুনিক গবেষকদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে।
মধ্য রাজ্যের কথ্য ভাষা মধ্য মিশরীয় নতুন রাজ্যের সময়কালে (খ্রিস্টপূর্ব ষোড়শ থেকে একাদশ শতাব্দী) ধ্রুপদি ভাষায় পরিণত হয়। তৎকালীন স্থানীয় ভাষা পরবর্তী মিশরীয় সেই সময় প্রথম সাহিত্যের ক্ষেত্রে প্রযুক্ত হয়। মধ্য মিশরীয় ভাষা তখন পবিত্র চিত্রিলিপিতে লিখিত গ্রন্থাবলির মৌখিক পাঠের ভাষা হিসেবে রয়ে গিয়েছিল। নতুন রাজ্যের লিপিকরেরা সেই ভাষায় লিখিত অনেক সাহিত্যকীর্তি প্রামাণ্যকরণ এবং অনুলিপি করেন। মধ্য রাজ্যের সাহিত্যের কয়েকটি বর্গ, যেমন "উপদেশ" ও আখ্যায়িকা নতুন রাজ্যেও জনপ্রিয় থেকে যায়। যদিও টলেমীয় যুগের (খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ থেকে প্রথম শতাব্দী) আগে ভবিষ্যদ্বাণী-সংক্রান্ত গ্রন্থের ধারাটি পুনরুজ্জীবিত হয়নি। জনপ্রিয় কাহিনিগুলির অন্যতম হল সিনুহের গল্প ও বাগ্মী কৃষক এবং গুরুত্বপূর্ণ উপদেশগুলির অন্যতম হল আমেনেমহাতের শিক্ষা ও আনুগত্যবাদী শিক্ষা। নতুন রাজ্যের যুগে পবিত্র মন্দির ও সমাধির দেওয়ালে স্মারক দেওয়াল লিখন সাহিত্যের একটি স্বতন্ত্র বর্গ হিসেবে বিকশিত হয়ে ওঠে। তা সত্ত্বেও তাতে অন্যান্য বর্গে ব্যবহৃত সূত্রগত রচনাশৈলী ব্যবহৃত হত। অল্প কয়েকটি বর্গের ক্ষেত্রে সঠিক লেখকের নাম উল্লেখ গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ছিল। ছদ্মনামে লেখা "উপদেশ" বর্গের রচনাগুলিকে ভুলভাবে বিশিষ্ট ঐতিহাসিক চরিত্রের উক্ত বলে চালানো হত।
প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্য রক্ষিত হয়েছে বিভিন্ন ধরনের লিখন-মাধ্যমে। এগুলির মধ্যে প্যাপিরাস লেখ্যপট ও মোড়ক যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে চুনাপাথর বা চীনামাটির অস্ট্রাকা (এক ধরনের মৃৎপাত্র), কাঠের তৈরি লেখার বোর্ড, প্রস্তরনির্মিত স্মারক সৌধ ও শবাধারও। আধুনিক প্রত্নতত্ত্ববিদরা খননকার্য চালিয়ে যে সকল গ্রন্থ উদ্ধার করেছেন এবং সংরক্ষণ করে থাকেন, তা প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যিক উপাদানের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। নীল নদের প্লাবন সমভূমি এলাকার আর্দ্র জলবায়ু প্যাপিরাই ও কালিতে লিখিত অভিলেখমালা সংরক্ষণের উপযুক্ত নয়। তাই প্রাচীন মিশরীয় সাহিত্যের একটি বৃহৎ অংশ বিনষ্ট হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে সহস্রাধিক বছর ধরে ভূগর্ভে প্রোথিত সাহিত্যের গুপ্ত ভাণ্ডার আবিষ্কৃত হয়েছে মিশরীয় সভ্যতার শুষ্ক মরুভূমির প্রান্তবর্তী জনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলিতে।
লিপি, মাধ্যম ও ভাষা
চিত্রলিপি, হায়রাটিক ও ডিমোটিক
প্রাচীন মিশরীয় সংস্কৃতি |
---|
খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে আদি রাজবংশীয় যুগে মিশরীয় চিত্রলিপি ও তার গোটা গোটা হাতের লেখাবিশিষ্ট রূপ হায়রাটিক লিখিত লিপিগুলিতে সুপ্রচলিত হয়েছিল।[৪] মিশরীয় চিত্রলিপিগুলি ছিল বিভিন্ন প্রাকৃতিক বস্তুর ছোটো ছোটো শিল্পগুণসমৃদ্ধ ছবি।[৫] উদাহরণস্বরূপ, দরজার হুড়কার চিত্রলিপিটির উচ্চারণ ছিল সে এবং সেটি ছিল স শব্দের উদ্গাতা; এই চিত্রলিপিটি অন্য এক বা একাধিক চিত্রলিপির সঙ্গে যুক্ত হয়ে বিভিন্ন ধরনের ধ্বনি সৃষ্টি করত, যেগুলির অর্থ ছিল দুঃখ, আনন্দ, সৌন্দর্য ও অমঙ্গলের মতো নানা বিমূর্ত ধারণা।[৬] প্রাক্রাজবংশীয় মিশরের শেষ পর্বে, আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৩১০০ অব্দ নাগাদ খোদিত নারমার প্যালিটে মাগুর মাছ ও বাটালি বোঝাতে ব্যবহৃত চিত্রলিপিগুলি যুক্ত করে রাজা নারমারের নাম লেখা হয়েছিল।[৭]
মিশরীয়রা তাদের চিত্রলিপিকে বলত "দেবতার শব্দাবলি"। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থের মাধ্যমে দেবতা ও মৃতের আত্মার মধ্যে সংযোগ স্থাপনের মতো বিশেষ মর্যাদাসম্পন্ন উদ্দেশ্যেই এই চিত্রলিপির ব্যবহার সংরক্ষিত রেখেছিল।[৮] প্রতিটি চিত্রলিপিগত শব্দ ছিল একাধারে একটি করে নির্দিষ্ট বস্তুর প্রতীক এবং সেই বস্তুর সারতত্ত্বের মধ্যে নিহিত। এই ধারণার মাধ্যমে সেই শব্দটিকে দৈব উপায়ে সৃষ্ট এবং বৃহত্তর ব্রহ্মাণ্ডের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হত।[৯] মনে করা হত, পুরোহিত ধূপ প্রজ্বালনের মতো আচারগুলি পালন করলে মৃতের আত্মা ও দেবতারা মন্দিরগাত্রে খোদিত চিত্রলিপিগুলি পড়তে পারেন।[১০] দ্বাদশ রাজবংশে প্রবর্তিত এবং পরবর্তীকালেও অনুসৃত অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত গ্রন্থগুলিতে দেখা যায়, মিশরীয়রা বিশ্বাস করতেন যে কোনও কোনও চিত্রলিপির বিকৃতি এমনকি সম্পূর্ণ মুছে দেওয়া ভালো অথবা মন্দ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। কারণ, সমাধিস্থ মৃতের আত্মার কাছে লিপিগুলি পরলোকে পুষ্টিসাধনের অন্যতম উপায়।[১১] একটি বিষধর সাপ বা অন্য কোনও বিপজ্জনক প্রাণীর নাম-দ্যোতনাকারী চিত্রলিপি বিকৃত করলে কোনও সম্ভাব্য বিপদের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় বলে মনে করা হত।[১১] যদিও মৃত ব্যক্তির নাম-পরিচায়ক চিত্রলিপির প্রতিটি নিদর্শন মুছে দেওয়ার অর্থ ছিল মৃতের আত্মার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত লিপিগুলি পাঠের ক্ষমতা চলে যাওয়া এবং মনে করা হত, এর ফলে সেই আত্মা জড় বস্তুতে পরিণত হয়।[১১]
মিশরীয় চিত্রলিপির একটি সরলীকৃত ও গোটা গোটা হাতের লেখাবিশিষ্ট রূপ হল হায়রাটিক।[১২] চিত্রলিপির মতোই হায়রাটিক ব্যবহৃত হত পবিত্র ও ধর্মীয় গ্রন্থাবলিতে। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দে চারুলিপিমূলক হায়রাটিক অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত প্যাপিরাই ও মন্দিরের বেলনাকারে পাকানো বস্ত্রের প্রধান লিপি হয়ে ওঠে।[১৩] চিত্রলিপিগুলির লিখনের জন্য নিরতিশয় শুদ্ধতা ও যত্নের প্রয়োজত হত। কিন্তু গোটা গোটা হাতের লেখাবিশিষ্ট হায়রাটিক অনেক দ্রুত লিখে ফেলা যেত। সেই জন্য লিপিকারদের নথি-লিখনের কাজে এটির ব্যবহার ছিল অনেক সহজ।[১৪] এটি প্রাথমিক ভাবে ব্যক্তিগত চিঠিপত্র, আইন-সংক্রান্ত নথিপত্র, কবিতা, রাজস্বের তথ্যাদি, চিকিৎসা-সংক্রান্থ গ্রন্থাবলি, গাণিতিক গবেষণামূলক আলোচনা গ্রন্থ ও নির্দেশনামূলক সহায়িকার মতো অ-রাজকীয়, অ-স্মারকীয় ও অপেক্ষাকৃত কম আনুষ্ঠানিক লেখালিখির জন্য শর্টহ্যান্ড লিপি হিসেবে ব্যবহৃত হত।[১৫] হায়রাটিক লেখা হত দু’টি পৃথক শৈলীতে। একটি ছিল অধিকতর পরিমাণে চারুলিপিমূলক এবং সাধারণত সরকারি নথি ও সাহিত্যিক পাণ্ডুলিপি রচনার জন্য সংরক্ষিত। অন্যটি ব্যবহৃত হত অপ্রাতিষ্ঠানিক বিবরণ ও চিঠিপত্র লেখার কাজে।[১৬]
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম সহস্রাব্দের মধ্যভাগেও চিত্রলিপি ও হায়রাটিক লিপিগুলি রাজকার্যে, স্মারকের গায়ে, ধর্মীয় ও অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত লেখালিখিতে ব্যবহৃত হত। কিন্তু সেই সময় একটি নতুন এবং আরও অধিকতর পরিমাণে গোটা গোটা হাতের লেখাবিশিষ্ট লিপি অপ্রাতিষ্ঠানিক ও দৈনন্দিন লেখালিখির কাজে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। সেটি হল ডিমোটিক।[১৩] প্রাচীন মিশরীয়দের দ্বারা গৃহীত শেষ লিপিটি হল কপটিক বর্ণমালা, যা ছিল গ্রিক বর্ণমালার একটি সংশোধিত রূপ।[১৭] খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতাব্দীতে খ্রিস্টধর্ম সমগ্র রোমান সাম্রাজ্যের রাষ্ট্রধর্ম ঘোষিত হলে কপটিক লিপিটিই স্বীকৃতি অর্জন করে। চিত্রলিপিগুলি পৌত্তলিকতাবাদী ধর্মীয় ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত পৌত্তলিক চিত্র এবং বাইবেলীয় শাস্ত্র লিখনের কাজে অযোগ্য ঘোষণা করে বাতিল করে দেওয়া হয়।[১৭]
লিখন যন্ত্রপাতি ও উপকরণ
মিশরীয় সাহিত্য বিভিন্ন প্রকার মাধ্যমের উদ্ভব ঘটিয়েছিল। শিলালিপি খোদাই করার কাজে দরকারি একটি যন্ত্র ছিল বাটালি। সেই সঙ্গে প্রাচীন মিশরের প্রধান লিখনযন্ত্র ছিল তুলি-লাগানো এক ধরনের শরের কলম।[১৮] কার্বন কালো ও লাল গিরিমাটির রঞ্জক লাগিয়ে এই কলম দিয়ে প্যাপিরাসের পাকানো লেখ্যপটে লেখা হত। প্যাপিরাস ছিল সাইপেরাস প্যাপিরাস নামক গাছের শাঁসের ফালি চ্যাপ্টা করে বানানো এক ধরনের পাতলা উপকরণ। এছাড়া চীনামাটির ছোটো পাত্র বা অস্ট্রাকা নামে পরিচিত চুনাপাথরের ভাঙা টুকরোর উপরেও এই কলম দিয়ে লেখা হত।[১৯] মনে করা হয় যে, গোল করে পাকানো প্যাপিরাস ছিল মোটামুটি দামি বাণিজ্যিক পণ্য। কারণ, অনেক প্যাপিরাসই ছিল প্যালিম্পসেস্ট অর্থাৎ, যে পাণ্ডুলিপি থেকে নতুন লেখা লিপিবদ্ধ করার জন্য মূল লেখা মুছে ফেলা হয়েছে।[২০] এই প্রথাটি এবং সেই সঙ্গে বড়ো আকারের প্যাপিরাসের নথিগুলিকে ছিঁড়ে ছোটো করে চিঠি লেখার কাজে ব্যবহার করা হত দেখে মনে করা হয় যে, সাইপেরাস প্যাপিরাস লতার বৃদ্ধির মরসুমের স্বল্পতা এর কারণ।[২০] এই একই কারণে অস্ট্রাকা ও চুনাপাথরের তবক অপেক্ষাকৃত ছোটো রচনাগুলি লেখার কাজে ব্যবহার করা হত।[২১] পাথর, চীনামাটির অস্ট্রাকা ও প্যাপিরাস ছাড়া লেখার অন্যান্য উপকরণ ছিল কাঠ, হাতির দাঁত ও পলেস্তারা।[২২]
মিশরে রোমান শাসনকালে প্রথাগত মিশরীয় শরের কলমের বদলে গ্রিকো-রোমান জগতের প্রধান লিখনযন্ত্রটির প্রচলন ঘটে। এটি ছিল একটি অপেক্ষাকৃত ছোটো ও মোটা এবং কাটা নিব-যুক্ত শরের কলম।[২৩] একইভাবে আদি মিশরীয় রঞ্জকগুলি পরিত্যক্ত হয়ে সেই স্থান অধিকার করল গ্রিক সিসা-ভিত্তিক কালি।[২৩] গ্রিকো-রোমান লিখনযন্ত্রগুলি গ্রহণ করার ফলে মিশরীয় হাতের লেখাও প্রভাবিত হয়েছিল। হায়রাটিক চিহ্নগুলি অধিকতর স্থান জুড়ে লেখা হতে লাগল এবং সেই সঙ্গে অধিকতর বৃত্তাকার রূপ ধারণ করল এবং সেগুলির কৌণিক নির্ভুলতাও বৃদ্ধি পেল।[২৩]
লিখিত উপাদানের সংরক্ষণ
মরুভূমি অঞ্চলে নির্মিত ভূগর্ভস্থ মিশরীয় সমাধিস্থলগুলিই সম্ভবত প্যাপিরাস নথি সংরক্ষণের সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, অসংখ্য সুসংরক্ষিত মৃতের বই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া-সংক্রান্ত প্যাপিরাই সমাধিস্থলগুলিতে রাখা হয়েছিল যাতে তা সংশ্লিষ্ট সমাধিতে সমাধিস্থ মৃতের আত্মাকে পরলোকে সহায়তা করতে পারে।[২৪] যদিও সমাধিকক্ষে ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কহীন প্যাপিরাই রাখার প্রথা শুধুমাত্র ছিল মধ্য রাজ্যের শেষ পর্যায়ে এবং নতুন রাজ্যের প্রথম ভাগে। এই কারণে অধুনা-লভ্য অধিকাংশ সুসংরক্ষিত সাহিত্য-সংক্রান্ত প্যাপিরাইই এই সময়কালের।[২৪]
প্রাচীন মিশরের অধিকাংশ জনবসতিই গড়ে উঠেছিল নীল নদের পলিগঠিত প্লাবন সমভূমিতে। এই অঞ্চলের আর্দ্র জলবায়ু প্যাপিরাস নথিপত্রের দীর্ঘস্থায়ী সংরক্ষণের অনুপযুক্ত ছিল। প্রত্নতত্ত্ববিদগণ প্লাবন সমভূমি থেকে উচ্চে অবস্থিত মরু অঞ্চলের জনবসতি এলাকা[২৫] এবং এলিফ্যান্টাইন, এল-লাহুন ও এল-হিবার মতো যে সকল অঞ্চলে সেচব্যবস্থার অস্তিত্ব ছিল না সেই সকল এলাকা[২৬] থেকে অনেক বেশি সংখ্যক প্যাপিরাস নথি আবিষ্কার করেছেন।
সূত্রনির্দেশিকা
- ↑ Foster 2001, পৃ. xx.
- ↑ Parkinson 2002, পৃ. 64–66.
- ↑ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 26.
- ↑ Wilson 2003, পৃ. 7–10; Forman ও Quirke 1996, পৃ. 10–12; Wente 1990, পৃ. 2; Allen 2000, পৃ. 1–2, 6.
- ↑ Wilson 2003, পৃ. 28; Forman ও Quirke 1996, পৃ. 13; Allen 2000, পৃ. 3.
- ↑ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 13; একই ধরনের উদাহরণের জন্য, দেখুন Allen (2000: 3) ও Erman (2005: xxxv-xxxvi).
- ↑ Wilkinson 2000, পৃ. 23–24; Wilson 2004, পৃ. 11; Gardiner 1915, পৃ. 72.
- ↑ Wilson 2003, পৃ. 22, 47; Forman ও Quirke 1996, পৃ. 10; Wente 1990, পৃ. 2; Parkinson 2002, পৃ. 73.
- ↑ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 10.
- ↑ Wilson 2003, পৃ. 63–64.
- ↑ ক খ গ Wilson 2003, পৃ. 71; Forman ও Quirke 1996, পৃ. 101–103.
- ↑ Erman 2005, পৃ. xxxvii; Simpson 1972, পৃ. 8–9; Forman ও Quirke 1996, পৃ. 19; Allen 2000, পৃ. 6.
- ↑ ক খ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 19.
- ↑ Wilson 2003, পৃ. 22–23.
- ↑ Wilson 2003, পৃ. 22–23, 91–92; Parkinson 2002, পৃ. 73; Wente 1990, পৃ. 1–2; Spalinger 1990, পৃ. 297; Allen 2000, পৃ. 6.
- ↑ Parkinson 2002, পৃ. 73–74; Forman ও Quirke 1996, পৃ. 19.
- ↑ ক খ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 17.
- ↑ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 17–19, 169; Allen 2000, পৃ. 6.
- ↑ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 19, 169; Allen 2000, পৃ. 6; Simpson 1972, পৃ. 8–9; Erman 2005, পৃ. xxxvii, xlii; Foster 2001, পৃ. xv.
- ↑ ক খ Wente 1990, পৃ. 4.
- ↑ Wente 1990, পৃ. 4–5.
- ↑ Allen 2000, পৃ. 5; Foster 2001, পৃ. xv; কাঠের পাটাতনে লেখা নিয়ে আরও দেখুন Wente 1990, পৃ. 5–6।
- ↑ ক খ গ Forman ও Quirke 1996, পৃ. 169.
- ↑ ক খ Quirke 2004, পৃ. 14.
- ↑ Wente 1990, পৃ. 2–3; Tait 2003, পৃ. 9–10.
- ↑ Wente 1990, পৃ. 2–3.
তথ্যসূত্র
- Allen, James P. (২০০০), Middle Egyptian: An Introduction to the Language and Culture of Hieroglyphs, Cambridge: Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-65312-6
- Bard, Katherine A.; Shubert, Steven Blake (১৯৯৯), Encyclopedia of the Archaeology of Ancient Egypt, New York and London: Routledge, আইএসবিএন 0-415-18589-0
- Breasted, James Henry (১৯৬২), Ancient Records of Egypt: Vol. I, The First to the Seventeenth Dynasties, & Vol. II, the Eighteenth Dynasty, New York: Russell & Russell, আইএসবিএন 0-8462-0134-8
- Brewer, Douglas J.; Teeter, Emily (১৯৯৯), Egypt and the Egyptians, Cambridge: Cambridge University Press, আইএসবিএন 0-521-44518-3
- Budge, E. A. Wallis (১৯৭২), The Dwellers on the Nile: Chapters on the Life, History, Religion, and Literature of the Ancient Egyptians, New York: Benjamin Blom
- Erman, Adolf (২০০৫), Ancient Egyptian Literature: A Collection of Poems, Narratives and Manuals of Instructions from the Third and Second Millennia BC, translated by Aylward M. Blackman, New York: Kegan Paul, আইএসবিএন 0-7103-0964-3
- Fischer-Elfert, Hans-W. (২০০৩), "Representations of the Past in the New Kingdom Literature", Tait, John W., 'Never Had the Like Occurred': Egypt's View of Its Past, London: University College London, Institute of Archaeology, an imprint of Cavendish Publishing Limited, পৃষ্ঠা 119–138, আইএসবিএন 1-84472-007-1
- Forman, Werner; Quirke, Stephen (১৯৯৬), Hieroglyphs and the Afterlife in Ancient Egypt, Norman: University of Oklahoma Press, আইএসবিএন 0-8061-2751-1
- Foster, John Lawrence (২০০১), Ancient Egyptian Literature: An Anthology, Austin: University of Texas Press, আইএসবিএন 0-292-72527-2
- Gardiner, Alan H. (১৯১৫), "The Nature and Development of the Egyptian Hieroglyphic Writing", The Journal of Egyptian Archaeology, 2 (2): 61–75, জেস্টোর 3853896, ডিওআই:10.2307/3853896
- Gozzoli, Roberto B. (২০০৬), The Writings of History in Ancient Egypt during the First Millennium BC (ca. 1070–180 BC): Trends and Perspectives, London: Golden House Publications, আইএসবিএন 0-9550256-3-X
- Greenstein, Edward L. (১৯৯৫), "Autobiographies in Ancient Western Asia", Civilizations of the Ancient Near East, New York: Scribner, পৃষ্ঠা 2421–2432
- Koosed, Jennifer L. (২০০৬), (Per)mutations of Qohelet: Reading the Body in the Book, New York and London: T & T Clark International (Continuum imprint), আইএসবিএন 0-567-02632-9
- Lichtheim, Miriam (১৯৮০), Ancient Egyptian Literature: Volume III: The Late Period, Berkeley and Los Angeles: University of California Press, আইএসবিএন 0-520-04020-1
- Lichtheim, Miriam (২০০৬), Ancient Egyptian Literature: Volume II: The New Kingdom, with a new foreword by Hans-W. Fischer-Elfert, Berkeley and Los Angeles: University of California Press, আইএসবিএন 0-520-24843-0
- Loprieno, Antonio (১৯৯৬), "Defining Egyptian Literature: Ancient Texts and Modern Literary Theory", Cooper, Jerrold S.; Schwartz, Glenn M., The Study of the Ancient Near East in the 21st Century, Winona Lake, Indiana: Eisenbrauns, পৃষ্ঠা 209–250, আইএসবিএন 0-931464-96-X
- Mokhtar, G. (১৯৯০), General History of Africa II: Ancient Civilizations of Africa (Abridged সংস্করণ), Berkeley: University of California Press, আইএসবিএন 92-3-102585-6
- Morenz, Ludwid D. (২০০৩), "Literature as a Construction of the Past in the Middle Kingdom", Tait, John W., 'Never Had the Like Occurred': Egypt's View of Its Past, translated by Martin Worthington, London: University College London, Institute of Archaeology, an imprint of Cavendish Publishing Limited, পৃষ্ঠা 101–118, আইএসবিএন 1-84472-007-1
- Parke, Catherine Neal (২০০২), Biography: Writing Lives, New York and London: Routledge, আইএসবিএন 0-415-93892-9
- Parkinson, R. B. (২০০২), Poetry and Culture in Middle Kingdom Egypt: A Dark Side to Perfection, London: Continuum, আইএসবিএন 0-8264-5637-5
- Quirke, S. (২০০৪), Egyptian Literature 1800 BC, questions and readings, London: Golden House Publications, আইএসবিএন 0-9547218-6-1
- Perdu, Olivier (১৯৯৫), "Ancient Egyptian Autobiographies", Sasson, Jack, Civilizations of the Ancient Near East, New York: Scribner, পৃষ্ঠা 2243–2254
- Seters, John Van (১৯৯৭), In Search of History: Historiography in the Ancient World and the Origins of Biblical History, New Haven: Yale University Press, আইএসবিএন 1-57506-013-2
- Simpson, William Kelly (১৯৭২), Simpson, William Kelly, সম্পাদক, The Literature of Ancient Egypt: An Anthology of Stories, Instructions, and Poetry, translations by R.O. Faulkner, Edward F. Wente, Jr., and William Kelly Simpson, New Haven and London: Yale University Press, আইএসবিএন 0-300-01482-1
- Spalinger, Anthony (১৯৯০), "The Rhind Mathematical Papyrus as a Historical Document", Studien zur Altägyptischen Kultur, 17: 295–337
- Tait, John W. (২০০৩), "Introduction—'...Since the Time of the Gods'", Tait, John, 'Never Had the Like Occurred': Egypt's View of Its Past, London: University College London, Institute of Archaeology, an imprint of Cavendish Publishing Limited, পৃষ্ঠা 1–14, আইএসবিএন 1-84472-007-1
- Wente, Edward F. (১৯৯০), Meltzer, Edmund S., সম্পাদক, Letters from Ancient Egypt, translated by Edward F. Wente, Atlanta: Scholars Press, Society of Biblical Literature, আইএসবিএন 1-55540-472-3
- Wildung, Dietrich (২০০৩), "Looking Back into the Future: The Middle Kingdom as a Bridge to the Past", Tait, John, 'Never Had the Like Occurred': Egypt's View of Its Past, London: University College London, Institute of Archaeology, an imprint of Cavendish Publishing Limited, পৃষ্ঠা 61–78, আইএসবিএন 1-84472-007-1
- Wilkinson, Toby A. H. (২০০০), "What a King Is This: Narmer and the Concept of the Ruler", The Journal of Egyptian Archaeology, 86: 23–32, জেস্টোর 3822303, ডিওআই:10.2307/3822303
- Wilson, Penelope (২০০৩), Sacred Signs: Hieroglyphs in Ancient Egypt, Oxford and New York: Oxford University Press, আইএসবিএন 0-19-280299-2
- Wilson, Penelope (২০০৪), Hieroglyphs: A Very Short Introduction, Oxford and New York: Oxford University Press, আইএসবিএন 0-19-280502-9
বহিঃসংযোগ
- ইন্টারনেট এনশিয়েন্ট হিস্ট্রি সোর্স বুক: ইজিপ্ট (ফোর্ডহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয়, নিউ ইয়র্ক)
- দ্য ল্যাঙ্গুয়েজ অফ এনশিয়েন্ট ইজিপ্ট (বেলজিয়ান মিশরতত্ত্ববিদ জ্যাকাস কিনার রচিত)
- বই: লিটারেচার অফ দি এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান (পাঠযোগ্য এইচটিএমএল ফরম্যাটে)
- প্রোজেক্ট গুটেনবার্গ ই-বই: দ্য লিটারেচার অফ দি এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ানস (ই. এ. ওয়ালিস বাজ রচিত)
- ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস প্রেস - এনশিয়েন্ট ইজিপশিয়ান লিটারেচার: অ্যান অ্যানথোলজি (২০০১) (সমগ্র মুখবন্ধ, জন এল. ফস্টার রচিত)