প্রহর
প্রহর হল সময়ের পুরোনো দেশী একক। দিন ও রাতে চার প্রহর করে মোট অষ্টপ্রহর হিসেব করা হতো। অষ্টপ্রহর বলতে একদিন(২৪ঘণ্টা) বুঝায়। অতএব, তিন ঘণ্টায় এক প্রহর হয়। [১]
প্রহর পদ্ধতিতে দিনের গণনা সকাল ছয়টায় (৬ ঘটিকায়) আরম্ভ হতো, আর রাত সন্ধ্যা ছ’টায়। অতএব প্রথম প্রহর মানে ৬টা থেকে ৯টা, দ্বিতীয় প্রহর মানে ৯টা থেকে ১২টা, তৃতীয় প্রহর মানে ১২টা থেকে ৩টে আর চতুর্থ প্রহর মানে ৩টে থেকে ৬টা হিসেব করা হয়।
রাতের চারটি প্রহর নিয়ে কখন কে জাগে সে সম্বন্ধে প্রচলিত কথা:
"প্রথম প্রহরে সবাই জাগে, দ্বিতীয় প্রহরে ভোগী।
তৃতীয় প্রহরে তস্কর জাগে চতুর্থ প্রহরে যোগী।"
প্রহর | আন্তর্জাতিক সময় | প্রহর | আন্তর্জাতিক সময় |
---|---|---|---|
তৃয়ামা | ০০ঃ০০ ― ০৩ঃ০০ | অপরাহ্ণ | ১২ঃ০০ ― ১৫ঃ০০ |
ঊষা | ০৩ঃ০০ ― ০৬ঃ০০ | সায়াহ্ন | ১৫ঃ০০ ― ১৮ঃ০০ |
পূর্বাহ্ণ | ০৬ঃ০০ ― ০৯ঃ০০ | প্রাদশা | ১৮ঃ০০ ― ২১ঃ০০ |
মধ্যাহ্ন | ০৯ঃ০০ ― ১২ঃ০০ | নিশীথা | ২১ঃ০০ ― ০০ঃ০০ |
প্রহর শেষ হলে সেই প্রহর হল ঘোষণা করা হত বা ঘণ্টা বাজত। অর্থাৎ দিনের দ্বিপ্রহর হয় বেলা ১২টায় (দুপুর ২টায় নয়), যখন সূর্য মধ্যগগনে। দুপুর (বা হিন্দি দোপাহর) শব্দটি দ্বিপ্রহর থেকে এসেছে। রবীন্দ্রনাথের শিশু পর্যায়ের প্রশ্ন কবিতার শেষে খোকা যে পশ্ন মাকে করে: "রাতের বেলা দুপুর হলে পরে দুপুর বেলা রাত হবেনা কেন?" এর উত্তরও লুকিয়ে আছে "দুপুর" শব্দের দ্ব্যর্থে। "রাতদুপুর" অর্থাৎ "রাত্রি দ্বিপ্রহর" বা রাত ১২টা। কিন্তু "দুপুরবেলা" মানে "অপরাহ্ন কাল"। সঙ্কীর্ণ অর্থ ছিল "দিবা দ্বিপ্রহর", কিন্ত প্রচলিত বর্তমান অর্থ 'অপর অহ্ন': অহ্নকে দ্বিপ্রহর (মধ্যদিন) দ্বারা কৃত দুটি ভাগের দ্বিতীয়টি।
প্রহরী অর্থাৎ যে শুধু পাহারাই (প্রহরা) দেয় না, প্রহর ঘোষণাও করে। প্রহরের পুর্বে আট যোগ করে গঠিত বাগধারা হল আটপ্রহর যার অর্থ দিন রাত।
তথ্যসূত্র
- ↑ Monier-Williams Sanskrit-English Dictionary ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১৯ জুলাই ২০২১ তারিখে, sv. "prahara."