আবদুল হক দেহলভী
শায়খ আবুল মজিদ আবদুল হক বিন সাইফুদ্দীন দেহলভী বুখারি (আরবি: شیخ ابو المجد عبدالحق بن سیف الدین دہلوی بخاری)(৯৫৮ হিজরি/১৫৫১ খ্রিঃ - ১০৫২ হিঃ/১৬৪২ খ্রিঃ) একজন স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত ও জগতশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। ভারতের মধ্যে ইসলাম প্রচারে তথা ইলমে হাদিস-এর প্রচার চর্চায় তার অবদান অবিস্মরণীয়।
জন্ম
শায়খ মোহাক্কিক আবদুল হক মোহাদ্দিস দেহলভী ৯৫৮ হিজরি সনে মুতাবিক ১৫৫১ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লি তে জন্ম গ্রহণ করেন ।
শিক্ষার্জন
বিশ বাইশ বছর বয়সে তিনি ইলমে দ্বীন - এর যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করতে সক্ষম হন ।. ৯৯৬ হিজরি / ১৫৮৮ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ' হেজাজ ' গমন করেন এবং কয়েক বছর পর্যন্ত হারামাইন শরিফাইন ( ফজিলত পূর্ণ পবিত্র দুই মসজিদ ) - এর যুগ-মহাত্নন আউলিয়াকিরাম ও যুগশ্রেষ্ঠ উলামায়েকিরামদের সান্নিধ্য লাভ করেন । বিশেষ করে শায়খ আবদুল ওয়াহাব মুত্তাকি ; খলিফায়ে শায়খ আলী মুত্তাকি - এর মুল্যবান সাহচর্য্যের মধ্য দিয়ে তিনি ' ইলমে হাদিস' '- এর পরিপূর্ণ জ্ঞান অর্জন করেন ।
দ্বীনি খেদমতে অবদান
এ উপমহাদেশে ইলমে হাদিসের চর্চা , প্রচার-প্রসারের ইতিহাসে যুগ বিভাজন নিরিক্ষায় চতুর্থ যুগের বর্ণনা লিখতে গিয়ে মুফতি আমিমুল ইহসান বলেন , - এই যুগের সবচে বেশি উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব দু'জন । এক. শায়খ আহমদ সেরহিন্দী মুজাদ্দিদে আলফেসানী । দুই. শায়খ আবদুল হক দেহলভী । শায়খ আবদুল হক দেহলভী সম্পর্কে মুজাদ্দিদে আলফেসানী তার 'মাক্তুবাতে' লিখেন যে , হিন্দুস্থানে হাদিস-এর বীজ বপন করেন শায়খ আবদুল হক দেহলভী ।[১] তিনি দিল্লিতে দরসে হাদিস পেশ করতেন। সাধারণ লোকদের সুবিধার্থে ফার্সি ভাষায় 'মিশকাত'-এর ব্যখ্যাগ্রন্থ লিখেন । গ্রন্থটির নাম 'আশশায়াতুল লুমুয়াত' । 'মিশকাত'-এর আরেকটি ব্যখাগ্রন্থ আরবি ভাষায় লিখেন যার নাম হল 'আল লুমুয়াত শরহে শাফারুস সায়াদাত' ।[২] এছাড়া তিনি দ্বীনি খেদমতের লক্ষ্যে অসংখ্য গ্রন্থ রচনা করেন ।
বাইআত ও খিলাফত
প্রথমে তিনি তার সম্মানিত পিতার নিকট 'বাইআত' হন । এরপর কাদিরিয়া ছিলছিলায় মুছা পাক শহিদ মুলতান (রাহ্) - এর হাতে ' বাইআত ' হন । তাছাড়া তিনি মক্কা মোকার্রমাতে অবস্থান কালে শায়খ আবদুল ওয়াহাব মুত্তাকি (রাহ্) - এর নিকট ' বাইআত ' হয়েছিলেন । সেখান থেকে চিশতিয়া , কাদিরিয়া ও শাজেলিয়া ছিলছিলায় নীত হন এবং মদিনা মুনাওয়ারাতে তিনি ইজাজত লাভ করেন ।
তিনি হারামাইন শরিফাইন থেকে ফিরে এসে খাজা বাকি বিল্লাহ্ (রাহ্) - এর নিকট নক্শেবন্দিয়া ছিলছিলায় বাইআত হন । আর এটা ছিল শায়খ আবদুল কাদির জিলানি (রাহ্) - এর রুহানি ইঙ্গিত ।[৩]
রচনাবলী
- আশিআতুল লুমআত শরহে মিশকাত
- মাদারেজুন নবুওয়াত
- জুয্বুল কুলুব
- আখবারুল আখিয়ার
- জুব্দাতুল আসার
- মিফতাহুল ফতুহ
- মা সাবাতা মিনাস্ সুন্নাহ্ ফি আইয়ামিস সুন্নাহ্
- রেসালায়ে যারবুল আকদাম
- দেওয়ান
- মাক্তুবাত
- তাকমিলুল ইমান (ফার্সি)[৪][৫]
সুযোগ্য পুত্র
শায়খ আবদুল হক (রহ) স্বীয় ছেলে শায়খ নুরুল হক-কে যোগ্য উত্তরসূরী হিসেবে যে শিক্ষাদান করেন পরবর্তীতে ছেলে বিজ্ঞ মুহাদ্দিস হিসেবে গড়ে ওঠেন । পিতৃ-সান্নিধ্যের পাশাপাশি বিজ্ঞ উস্তাদের কাছ থেকেও জ্ঞান লাভ করেন । শিক্ষার্জনের পর ফলস্বরূপ তার ছেলেও সহিহ বুখারির বিস্তৃত এক ব্যখ্যাগ্রন্থ ফার্সি ভাষায় লিপিবদ্ধ করেন , যার নাম 'তায়সীরুল বারী' । তিনি সহিহ মুসলিম-এরও 'মানবাউল ইলম' নামক ফার্সি ভাষায় একটি ব্যখ্যাগ্রন্থ রচনা করেন ।[৬] ছেলের এই কীর্তি বস্তুত শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস সাহেবের ইলমে হাদিস চর্চার অভিষ্ঠ লক্ষ্যের পূর্ণতার প্রমাণ বহন করে এতে কোন সন্দেহ নাই ।
ছাত্র
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ) -এর অসংখ্য ছাত্র তার নিকট থেকে শিক্ষার্জন করেছেন এবং তারাও এ উপমহাদেশে ইলমে হাদিসের খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন । উল্লেখযোগ্য কয়েকজনের নাম নিচে দেওয়া হল ।
- শায়খ নুরুল হক (হিঃ ১০৭৩) (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীর সুযোগ্য ছেলে)।
- খাজা খাওয়ান্দ মুঈনুদ্দীন আল মারুফ হযরত এইশা ।
- মোল্লা সুলাইমান আহমাদাবাদী ।
- মুহাম্মাদ হুসাইন খানী ।[২]
মৃত্যু
তিনি ১০৫২ হিজরিতে মুতাবেক ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুবরণ করেন ।
তথ্যসূত্র
- ↑ মুফতি সাইয়েদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান : তারীখে ইলমে হাদীস , পৃষ্ঠা-১০০ । বাংলা অনুবাদ : লোকমান আহমদ আমীমী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন ।
- ↑ ক খ মুফতি সাইয়েদ মুহাম্মাদ আমীমুল ইহসান : তারীখে ইলমে হাদীস , পৃষ্ঠা-১০২ । বাংলা অনুবাদ : লোকমান আহমদ আমীমী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন ।
- ↑ গ্রন্থঃ ' তাকমিলুল ইমান ' - শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভি; পৃষ্ঠা - ১৮; سبزواری পিবলিশার্স, করাচি।
- ↑ مدارج النبوۃ عبد الحق محدث دہلوی صفحہ 9 تا 11 شبیر برادرز لاہور
- ↑ تکمیل الایمان، عبد الحق محدث دہلوی، صفحہ 14 تا 20، سبزواری پبلشر کراچی
- ↑ হাদীস শাস্ত্রের ইতিহাস - মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী (রহ) , পৃষ্ঠা : ২৪২ । অনুবাদ - মাওলানা মুহাম্মদ আমিনুর রহমান , মুহাম্মদী কুতুবখানা, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম ।