বিষয়বস্তুতে চলুন

আডলফ হিটলার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

এটি এই পাতার একটি পুরনো সংস্করণ, যা Mehedi Abedin (আলোচনা | অবদান) কর্তৃক ১২:৩৩, ১১ জানুয়ারি ২০২৩ তারিখে সম্পাদিত হয়েছিল (42.0.7.247 (আলাপ)-এর সম্পাদিত 6407906 নম্বর সংশোধনটি বাতিল করা হয়েছে)। উপস্থিত ঠিকানাটি (ইউআরএল) এই সংস্করণের একটি স্থায়ী লিঙ্ক, যা বর্তমান সংস্করণ থেকে ব্যাপকভাবে ভিন্ন হতে পারে।

আডলফ হিটলার
ফিউরার
ভাইমার প্রজাতন্ত্রের তৃতীয় রাষ্ট্রপতি
কাজের মেয়াদ
২রা আগস্ট, ১৯৩৪ – ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৫
পূর্বসূরীপল ভন হিন্ডেনবার্গ
(রাষ্ট্রপতি হিসেবে)
উত্তরসূরীকার্ল ডোনিট্জ
(রাষ্ট্রপতি হিসেবে)
জার্মানির চ্যান্সেলর
রাইখ্‌সকান্‌ৎলার
কাজের মেয়াদ
৩০শে জানুয়ারি, ১৯৩৩ – ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৫
পূর্বসূরীপল ভন স্কেলিচার
উত্তরসূরীজোসেফ গোয়েবলস
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম২০শে এপ্রিল, ১৮৮৯
Braunau am Inn, অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরি
মৃত্যু৩০ এপ্রিল ১৯৪৫(1945-04-30) (বয়স ৫৬)
বার্লিন, জার্মানি
মৃত্যুর কারণআত্মহত্যা
নাগরিকত্বঅস্ট্রীয় (১৮৮৯-১৯৩২)
জার্মান (১৯৩২-১৯৪৫)
জাতীয়তা১৯২৫ সাল পর্যন্ত অস্ট্রীয়; ১৯৩২-এর পর জার্মান
রাজনৈতিক দলন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি (এনএসডিএপি)
দাম্পত্য সঙ্গীইভা ব্রাউন
(১৯৪৫ সালের ২৯শে এপ্রিল বিয়ে করেন)
পেশালেখক, রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপ্রধান, চিত্রশিল্পী
স্বাক্ষর

আডলফ হিটলার ( [ˈadɔlf ˈhɪtlɐ] জার্মান ভাষায়: Adolf Hitler আডল্‌ফ্‌ হিট্‌লা) (২০শে এপ্রিল, ১৮৮৯ - ৩০শে এপ্রিল, ১৯৪৫) অস্ট্রীয় বংশোদ্ভূত জার্মান রাজনীতিবিদ যিনি ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। হিটলার ১৯৩৩ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মানির চ্যান্সেলর এবং ১৯৩৪ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সে দেশের ফিউরার ছিলেন।

হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভাইমার প্রজাতন্ত্রে নাৎসি পার্টির নেতৃত্ব লাভ করেন। অভ্যুত্থান করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়েছিলেন যে কারণে তাকে জেল খাটতে হয়েছিল। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে মোহনীয় বক্তৃতার মাধ্যমে জাতীয়তাবাদ, ইহুদি বিদ্বেষ ও সমাজতন্ত্র বিরোধিতা ছড়াতে থাকেন। এভাবেই এক সময় জনপ্রিয় নেতায় পরিণত হন। নাৎসিরা তাদের বিরোধী পক্ষের অনেককেই হত্যা করেছিল, রাষ্ট্রের অর্থনীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিল, সামরিক বাহিনীকে নতুন নতুন সব অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছিল এবং সর্বোপরি একটি সমগ্রতাবাদী ও ফ্যাসিবাদী একনায়কত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। হিটলার এমন একটি বৈদেশিক নীতি গ্রহণ করেন যাতে সকল "লেবেনস্রাউম" (জীবন্ত অঞ্চল) দখল করে নেয়ার কথা বলা হয়। ১৯৩৯ সালে জার্মানরা পোল্যান্ড অধিকার করে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রিটেনফ্রান্স জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়।

যুদ্ধের অক্ষ শক্তি তথা জার্মান নেতৃত্বাধীন শক্তি মহাদেশীয় ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও এশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল দখল করে নিয়েছিল। কিন্তু অবশেষে মিত্র শক্তি বিজয় লাভ করে। ১৯৪৫ সালের মধ্যে জার্মানি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়। হিটলারের রাজ্য জয় ও বর্ণবাদী আগ্রাসনের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষকে প্রাণ হারাতে হয়। ৬০ লক্ষ ইহুদিকে পরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়। ইহুদি নিধনের এই ঘটনা ইতিহাসে হলোকস্ট নামে পরিচিত।

১৯৪৫ সালে যুদ্ধের শেষ দিনগুলোতে হিটলার বার্লিনেই ছিলেন। লাল ফৌজ যখন বার্লিন প্রায় দখল করে নিচ্ছিল সে রকম একটা সময়ে ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি ফিউরারবাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন।

কৈশোর ও যৌবনকাল

হিটলারের বাবা Alois বৈধভাবে (সমাজ সাপেক্ষে) জাত ছিলেন না। এক কথায় বলতে গেলে জারজ ছিলেন। তিনি জীবনের অনেকটা সময় শেষ নাম হিসেবে মায়ের নাম (Schicklgruber) ব্যবহার করেছিলেন। ১৮৭৬ সালেই Alois প্রথম হিটলার নামটি গ্রহণ করেন। তার ছেলে অ্যাডলফ-ও কখনও হিটলার ছাড়া অন্য কোন শেষ নাম ব্যবহার করেনি।

সরকারী কাস্টম্‌স থেকে অবসর গ্রহণের পর হিটলারের বাবা সপরিবারে আপার অস্ট্রিয়ার লিন্‌ৎস শহরে চলে আসেন। এখানেই হিটলারের বাল্যকাল অতিবাহিত হয়। এ কারণে সারাজীবন তিনি লিন্‌ৎসকে ভালবেসে গেছেন, কোন শহরকে এর উপরে স্থান দিতে পারেননি। বাবাকে তিনি খুব পছন্দ করতেন না বরং ভয় করতেন। কিন্তু মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসার কোন কমতি ছিল না। ১৯০৩ সালে বাবা মারা যান। বাবার রেখে যাওয়া পেনশন ও সঞ্চয়ের অর্থ দিয়েই তাদের সংসার কোনমতে চলতে থাকে। অনেক ভোগান্তির পর ১৯০৭ সালে মাতাও মারা যান। হিটলার নিঃস্ব হয়ে পড়েন। পড়াশোনায় বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। এক সময় ভিয়েনায় যান। কিন্তু চিত্রশিল্পী হবার স্বপ্ন নিয়ে আবার লিন্‌ৎসে ফিরে আসেন। আবার ভিয়েনায় যান। সামান্য যা ভাতা পেতেন তা দিয়ে ভিয়েনার মত শহরে চলতে-ফিরতে তার বেশ কষ্ট হতো। শিল্পী হিসেবেই তার বেশ সম্ভাবনা ছিল। এই উদ্দেশ্যে অস্ট্রিয়ার "একাডেমি অফ ফাইন আর্টস"-এ ভর্তি পরীক্ষা দেন। কিন্তু সুযোগ পাননি।

গ্রন্থ

হিটলারের লেখা গ্রন্থ হল "মাইন কাম্ফ"।

অগত্যা বেশ ক'বছর তাকে একাকী ও বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করতে হয়। এ সময় পোস্টকার্ড ও বিজ্ঞাপনের ছবি এঁকে সামান্য উপার্জন করতেন। এই অর্থ দিয়ে ভিয়েনার এক হোস্টেল থেকে আরেক হোস্টেলে বাস করতে থাকেন। এ সময় তার মধ্যে বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য দেখা গিয়েছিল যেগুলো তার পরবর্তী জীবন সম্বন্ধে আমাদের কিছু ধারণা পেতে সাহায্য করে। যেমন: একাকিত্ব, গোপনীয়তা, প্রাত্যহিক অস্তিত্বের বোহেমীয় ভাব (ছন্নছাড়া জীবন-যাপন), কসমোপলিটানিজ্‌মের প্রতি ঘৃণা এবং ভিয়েনার বহুজাতিক অবস্থার প্রতি বিতৃষ্ণা।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে যোগদান

মাদাম তুসো জাদুঘরে নাৎসীবাদী আডলফ হিটলারের মোমের ভাস্কর্য

১৯১৩ সালে মিউনিখে চলে যান। ১৯১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে অস্ট্রীয় সামরিক বাহিনীতে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেন। স্বাস্থ্যগত কারণে সৈনিক হবার সুযোগ পাননি। তাকে সামরিক বাহিনীর জন্য আনফিট ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে জার্মান সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ছিলেন ১৬তম বাভারিয়ান রিজার্ভ ইনফ্যান্ট্রি রেজিমেন্টে। যুদ্ধের পুরোটা সময় জার্মানিকে সেবা দিয়ে গেছেন। ১৯১৬ সালের অক্টোবরে আহত হওয়ার পর বেশ কিছুদিন বিশ্রামে ছিলেন। এছাড়া যুদ্ধের বাকিটা সময় সক্রিয় থেকেছেন। অধিকাংশ সময়ই সম্মুখ সারিতে থেকে হেডকোয়ার্টার্স রানার হিসেবে কাজ করেছেন। যুদ্ধে সাহসিকতা ও বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১৪ সালের ডিসেম্বরে সেকেন্ড ক্লাস আয়রন ক্রস লাভ করেন। ১৯১৮ সালের আগস্টে তাকে ফার্স্ট ক্লাস আয়রন ক্রস দেয়া হয়। একজন করপোরালের পক্ষে এটা বেশ বড় প্রাপ্তি। হিটলার খুব উৎসাহের সাথে যুদ্ধ করেছেন।

রাজনীতিতে প্রবেশ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি হেরে যায়। হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরে হিটলার রাজনীতিতে যোগ দেন। ১৯১৯ সালের মে-জুনের দিকে জার্মানির বিশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে মিউনিখের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় হন। সেপ্টেম্বরে মিউনিখের ক্ষুদ্র দল "জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি"-তে সামরিক রাজনৈতিক এজেন্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯২০ সালে তাকে এই দলের প্রচারণার দায়িত্ব দেয়া হয়। দলের ভেতরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করার জন্য তিনি সেনাবাহিনী ত্যাগ করেন। এই বছরই দলের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় National-sozialistische Deutsche Arbeiterpartei (নাৎসি পার্টি)। জার্মানির তৎকালীন পরিস্থিতিতে এ ধরনের একটি রাজনৈতিক দলের উত্তরণের বেশ ভাল সম্ভাবনা ছিল। কারণ যুদ্ধের বিভীষিকা এবং শান্তি চুক্তিতে জার্মানির বিশাল পরাজয়ের কারণে জনমনে অসন্তোষ দানা বেধে উঠেছিল। এর সাথে ছিল অর্থনৈতিক অস্থিরতা। বাভারিয়াতে এই অবস্থা ছিল আরও বিরূপ। সেখানে বার্লিনের প্রজাতন্ত্রী সরকারের তীব্র বিরোধিতা প্রকাশিত হতে শুরু করেছিল। হিটলারও বাভারিয়ার মিউনিখ শহরেই তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। ১৯২০ সালেই একটি ডানপন্থী সরকার প্রতিষ্ঠা করার জন্য বার্লিনে সামরিক ক্যু করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এই ক্যু ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।

আডলফ হিটলারের যৌনজীবন

বারঘোফে কুকুরের সাথে আডলফ হিটলার এবং ইভা ব্রাউন
আডলফ হিটলারের যৌনজীবন নিয়ে দীর্ঘদিন ইতিহাসবিদ এবং পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক চলছে। পুরো জীবনে কিছু সংখ্যক মেয়ের সাথে তার রোমান্টিক সম্পর্ক ছিল এবং একই সাথে  সমকামিতার প্রতি তার বিদ্বেষ দেখা গেছে। তিনি সমকামিতায় আসক্ত ছিলেন, এমন কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। তার নাম অনেক মেয়ের সাথেই যুক্ত হয়েছে, যাদের মধ্যে দুজন আত্মহত্যা করেছে। অন্যান্য ঘটনার মধ্যে আছে, একজন আত্মহত্যা চেষ্টার ৮ বছর পর মারা গিয়েছিল এবং আরেকজন একটি ব্যর্থ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছিল। যদিও এসব বিষয়ে জোরালো প্রমাণ নেই। 
হিটলারকে সবাই জানত একজন সংসারত্যাগী চিরকুমার মানুষ হিসেবে , যিনি তার পুরো জীবন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ও রাষ্ট্রের জন্য উৎসর্গ করেছেন।  ইভা ব্রাউনের সাথে তার ১৪ বছরের প্রেমের সম্পর্ক বাইরে এবং ভেতরের কেউ জানত না। ব্রাউনের জীবনীলেখক হেইকে গোরটেমা উল্লেখ করেছেন যে, এই জুটি স্বাভাবিক যৌন জীবন উপভোগ করত। হিটলার এবং ব্রাউন ১৯৪৫ এ এপ্রিলের শেষ দিকে বিয়ে করেছিলেন এবং আত্মহত্যার পূর্ব পর্যন্ত ৪০ ঘণ্টারও কম সময় একসাথে ছিলেন। 
এলিস কর্তৃক যুদ্ধের সময়ের দুইটি প্রতিবেদনে হিটলারকে মানসিকভাবে বিশ্লেষণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ১৯৪৩ সালে উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে ওয়াল্টার সি ল্যাঙ্গার, দি আমেরিকান অফিস অব স্ট্র্যাটিজিক সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে বলেন, হিটলারের অবদমিত সমকাম প্রবণতা ছিল এবং আরো বলেন, হিটলার পুরুষত্বহীন কর্পোহিল ছিলেন।  হেনরি মুররে এবং নাৎসি পার্টি বিরোধী অট্টো স্ট্রেসার আলাদা আলাদা প্রতিবেদনে একই মত দেন। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ স্যার ইয়ান কারশাও স্ট্রেসারের মতকে  "হিটলারবিরোধী প্রোপাগান্ডা" হিসেবে উল্লেখ করেন। []

বিয়ে

১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ইভা ব্রাউনকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই তিনি ফিউরার বাংকারে সস্ত্রীক আত্মহত্যা করেন। ইভা ব্রাউন সায়ানাইড বিষ ও হিটলার নিজে কপালে গুলি করে মারা যান।

হস্তক্ষেপ

১৯৩৯ সালে তিনি গারহার্ড ডোমাগ নামীয় এক চিকিৎসাবিজ্ঞানীকে তার প্রাপ্য নোবেল পুরস্কার গ্রহণে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন।[]

আরও দেখুন

তথ্যসূত্র

  1. Kershaw 2008, পৃ. 219।
  2. Levinovitz, Agneta Wallin (২০০১)। পৃষ্ঠা 23।  |শিরোনাম= অনুপস্থিত বা খালি (সাহায্য)