৯৬৯ আন্দোলন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
৯৬৯ আন্দোলন
၉၆၉ လှုပ်ရှားမှု
নেতাআশিন ওয়েরাথু
ধরনজাতীয়তাবাদী আন্দোলন
উত্পত্তি মিয়ানমার
রাজনৈতিক মতাদর্শইসলামের বিরোধিতা, বৌদ্ধ পুনর্জাগরণবাদ, ধর্মীয় জাতীয়তাবাদ
ধর্মবৌদ্ধ ধর্ম

৯৬৯ আন্দোলন (বর্মী: ၉၆၉ လှုပ်ရှားမှု) মিয়ানমারের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন[১] যা বার্মায় ইসলামের বিস্তার রুখতে বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠের কর্তৃক সংঘটিত হয়।[২][৩] ৯৬৯ তিনটি অঙ্ক দ্বারা "বুদ্ধ, বৌদ্ধ অনুশীলন ও বৌদ্ধ সম্প্রদায়কে প্রতীকিভাবে" প্রকাশ করা হয়।[১][২][৪] প্রথম ৯ দ্বারা গৌতম বুদ্ধের ৯টি বিশেষ গুণ এবং ৬ দ্বারা তার বিশেষ নিরঞ্জন বোঝায়। এই নিরঞ্জন বুদ্ধের শিক্ষা অর্থেও প্রকাশ করা হয়। শেষের ৯ দ্বারা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের সম্প্রদায় সংঘ (ধর্মীয় সম্প্রদায়) প্রকাশ করে। অতীতে বুদ্ধ, নিরঞ্জন এবং সংঘ বৌদ্ধধর্মের প্রতীক ছিল। যা বুদ্ধের তিনটি অলংকার নামেও খ্যাত। অতীতে, বুদ্ধ, সংঘ, ধর্ম, ধর্ম চক্র এবং "৯৬৯" বৌদ্ধ চিহ্ন ছিল।[৫]

এই আন্দোলন মিয়ানমার ও এর বাইরে শক্তিশালী প্রভাব রাখে।[৬] যদিও আন্তর্জাতিক প্রচারমাধ্যমে আন্দোলনটির কঠোর সমালোচিত হয়। "স্ট্রেইট টাইমস"-এর প্রতিবেদনে, আশিন ওয়েরাথু, আন্দোলনের নেতাকে, সাম্প্রতিক মুসলিম বিদ্বেষী সহিংসতার জন্য দায়ী করে।[৭]

বিভিন্ন প্রচারমাধ্যমে আন্দোলনটিকে মুসলমান বিরোধী এবং "ইসলামোফোবিয়া" বলে চিহ্নিত করে।[৮][৯][১০][১১] যদিও মিয়ানমারের বৌদ্ধ সমর্থকেরা এই আন্দোলনকে ইসলামবিদ্বেষী বলতে অস্বীকার করে। আন্দোলনের নেতা ওয়েরাথু আন্দোলনটিকে "রাখাইন (বৌদ্ধ)দের বাঙালি সন্ত্রাসী কর্তৃক রক্ষার আন্দোলন" বলে বক্তব্য দেন।[১২] অপর একটি সূত্রে, দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে মুসলমানদের মাঝে সুপরিচিত ৭৮৬ অঙ্ক তিনটির বিপরীত অঙ্ক হিসেবে ৯৬৯ অঙ্কের প্রবর্তন করা হয়েছিলো বলে দাবী করা হয়।[১]

ওয়েরাথু[সম্পাদনা]

৯৬৯ আন্দোলনের প্রধান নেতা আশিন ওয়েরাথু। বিভিন্ন রিপোর্টে তিনি মুসলমানদের দোকান বর্জনের ঘোষণাদিয়েছিলেন।[১৩][১৪][১৫] ওয়েরাথু অবশ্য ২০১২ সালের রাখাইন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় উদ্দেশ্যমূলকভাবে নিজেকে জড়ানো হয়েছে বলে মিথ্যে দাবী করেন। তার মতে "৯৬৯ কোনো সহিংসতা নয়"।[৪] এশিয়া টাইমস অনলাইনের এক প্রতিবেদনে ওয়েরাথুকে "জটিল চরিত্রের" অধিকারী বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি মুসলমানদের দমিয়ে রাখতে চাইলেও পুলিশের সহিংসতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেন।[৩] 

টাইম ম্যাগাজিনের ২০১৩ সালের ২০শে জুন প্রকাশিত প্রচ্ছদ রিপোর্টে ওয়েরাথুকে "বৌদ্ধ সন্ত্রাসবাদের চেহারা" বলে অভিহিত করা হয়।[১৬] ওয়েরাথু মুসলমানদের সম্পর্কে বলেন, “আপনি দয়া ও ভালোবাসায় পূর্ণ হলেও পাগল কুকুরের পাশে ঘুমাতে পারবেন না।" তিনি আরও বলেন, "আমরা দূর্বল হয়ে গেলে আমাদের দেশ মুসলমানদের অধিকারে চলে যাবে।"[২] "কিছু মানুষ টাইম ম্যাগাজিনের এই শিরোনামকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে তা বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি অপমানসূচকভাবে দেখেন।" ডক্টর ইয়ান মিয়ো থাইন নামক একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক এরূপ মন্তব্য দেন।[১৭] এই নিবন্ধ প্রকাশের পর ওয়েরাথু মিয়ানমারে সংঘটিত মুসলমানদের উপর হওয়া নির্যাতনের নিজের দায় অস্বীকার করেন।[১৮] এর কিছুদিন পরই ২০১৩ সালের জুন মাসের টাইম ম্যাগাজিনের সংখ্যাটি মিয়ানমারে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। [১৯]

উদ্যোগ[সম্পাদনা]

এই আন্দোলন একটি আইনের সূচনা করার উদ্যোগ নিচ্ছে, যার ফলে কোনো বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নারী স্থানীয় অফিশিয়ালের অনুমতি ব্যতিরেকে বৌদ্ধ ধর্মালম্বী নয় এমন কোনো পুরুষকে বিয়ে করতে পারবেন না।[২০] ধাম্মাপিয়া, একজন জ্যেষ্ঠ ভিক্ষু এই আইনের প্রস্তাবনা তৈরি করেন। তিনি বলেন, তারা ভিন্ন ধর্মের মধ্যে শান্তি রক্ষা করা বুঝিয়েছেন এবং মুসলিম পুরুষের সাথে বৌদ্ধ নারীদেরকে বিয়ের ফলে জোরপুর্বক ইসলামে রূপান্তরিত হতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যকে "সুরক্ষিত" করেছেন। সরকারি ধর্মীয় নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, যখন কল্পিত ইসলামী হুমকি থেকে বৌদ্ধ বিশ্বাসের সুরক্ষার ৯৬৯ আন্দোলনকে সমর্থন করলেও তাদের আইনি উদ্যোগ বাতিল করে দেয় এবং "৯৬৯ আন্দোলনের ভিত্তিতে কোনো আনুষ্ঠানিক সংগঠন না তৈরির নিষেধাজ্ঞা জারি করে।[২১]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "969: The Strange Numerological Basis for Burma's Religious Violence - Alex Bookbinder"। The Atlantic। ৯ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  2. "Extremism builds among Myanmar's Buddhists | Seattle Times Newspaper"। Seattletimes.com। ২১ জুন ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  3. Matthew J Walton (২ এপ্রিল ২০১৩)। "Buddhism turns violent in Myanmar"Asia Times। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৮ 
  4. "Root Out the Source of Meikhtila Unrest"। Irrawaddy.org। ২৭ আগস্ট ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  5. "Nationalist Monk U Wirathu Denies Role in Anti-Muslim Unrest"। Irrawaddy.org। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  6. "Monks speak out against misuse of '969'"। Mmtimes.com। ১০ এপ্রিল ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  7. Nirmal Ghosh (১ এপ্রিল ২০১৩)। "Anti-Muslim monk changes tack, vows to promote peace"The Straits Times 
  8. Downs, Ray (২৭ মার্চ ২০১৩)। "Is Burma's Anti-Muslim Violence Led by Buddhist Neo-Nazis ?"। Vice.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  9. Sardina, Carlos (১০ মে ২০১৩)। "Who are the monks behind Burma's '969′ campaign? | DVB Multimedia Group"। Dvb.no। ৩১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  10. Lindsay Murdoch (১৫ এপ্রিল ২০১৩)। "Anti-Muslim movement hits Myanmar"। Smh.com.au। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  11. "Myanmar's extremist Buddhists get free rein"। Nation.com.pk। ১৫ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  12. "Religious radicals driving "Myanmar's" unrest"Global Post। ৩১ মার্চ ২০১৩। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১৮ 
  13. Hodal, Kate; Khalili, Mustafa; Salfield, Alice (১৬ এপ্রিল ২০১৩)। "Burma's Bin Laden, the Buddhist monk who fuels hatred - video | World news"। London: theguardian.com। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  14. "Fanatical Buddhist Monk Saydaw Wirathu Calling for Boycott of Myanmar Muslims [VIDEO] - IBTimes UK"। Ibtimes.co.uk। ২৬ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  15. "The 'Burmese bin Laden' fomenting violence against Myanmar's Muslims | The National"। Thenational.ae। ২৯ মার্চ ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  16. Beech, Hannah (১ জুলাই ২০১৩)। "The Buddhist Monks Advocating Intolerance in Asia"। TIME। ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  17. [১]
  18. "Myanmar Monk Rejects Terrorist Label Following Communal Clashes"। Rfa.org। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  19. Williams, Alex (২৮ জুন ২০১৩)। "Myanmar bans TIME Magazine over 'Buddhist Terror' cover story (video)"Inside Investor। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ জুন ২০১৩ 
  20. "Buddhism v Islam in Asia: Fears of a new religious strife"। The Economist। ২৭ জুলাই ২০১৩। সংগ্রহের তারিখ ১৯ অক্টোবর ২০১৩ 
  21. Jared Ferrie and Min Zayar Oo (১১ সেপ্টেম্বর ২০১৩)। "Myanmar Buddhist committee bans anti-Muslim organizations"Reuters। ১৯ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৮ অক্টোবর ২০১৩