২৮ রমজান
অবয়ব
২৮ রমজান হলো ইসলামি চান্দ্র বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজানের ২৮তম দিন। এটি হিজরি বছরের ২৬৪তম দিন। তবে যদি শাবান মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে, তাহলে এটি ২৬৫তম দিন হয় এবং যদি সফর, রবিউস সানি, জমাদিউস সানি ও শাবান ৩০ দিনে পূর্ণ হয়, তাহলে এটি হবে বছরে ২৬৬তম দিন। এই দিনটির পর থেকে হিজরি বছরের সমাপ্তি পর্যন্ত আরও প্রায় ৯০ বা ৯১ দিন বাকি থাকে।
ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]- ৪ হিজরি — এই দিনে নবী হযরত মুহাম্মদ জয়নব বিনতে খুযাইমার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তিনি ছিলেন একজন দয়ালু ও সহানুভূতিশীল নারী, যিনি দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের প্রতি মমত্ববোধের জন্য পরিচিত ছিলেন। তাঁকে "উম্মুল মাসাকিন" বা গরিবদের মা উপাধিতে ভূষিত করা হয়। [১]
- ৯ হিজরি — তায়েফের বিখ্যাত গোত্র সাকীফের একটি প্রতিনিধি দল মদীনায় এসে নবী মুহাম্মদের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ইসলাম গ্রহণ করে মুসলিম সমাজের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। এটি ছিল ইসলামি দাওয়াতের এক বড় সাফল্য। কারণ তায়েফ দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইসলাম বিরোধী অবস্থানে ছিল।
- ৯২ হিজরি — এই দিনে ঐতিহাসিক যুদ্ধ শুযুনা (বা ওয়াদি লক্কা) সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে মুসলিম বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন তারিক বিন জিয়াদ এবং প্রতিপক্ষ ছিল গথিক রাজা লুযরীক। এই যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয় অর্জন করে এবং এর মাধ্যমেই ইসলামের স্পেনসহ গোটা আইবেরিয়া উপদ্বীপে প্রবেশ ঘটে। এরপর সেখানে পরবর্তী আট শতাব্দী ধরে মুসলিম শাসন কায়েম ছিল।
- ৩৮৬ হিজরি — ফাতিমীয় খিলাফতের নেতা আল-হাকিম বি-আমরিল্লাহ তাঁর পিতা আল-আজিজ বিল্লাহর মৃত্যুর পর খলিফা হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।
- ৪১৫ হিজরি — ফাতিমীয় রাজসভার প্রভাবশালী মন্ত্রী আলী আল-জারজারাই ঈদের জন্য একটি বিশাল রাজকীয় ভোজের আয়োজন করেন। এতে ছিল ২০০টি চিনির তৈরি ভাস্কর্য ও ৭টি বৃহৎ চিনির প্রাসাদ। পুরো কায়রো শহর মিছিল ও বাদ্যযন্ত্রের আওয়াজে মুখরিত হয়।
- ৫৫৮ হিজরি—ফাতিমীয় কায়রোতে সেনাপতি দিরগাম মন্ত্রী শাওয়ার ইবনে মুজীর সাদীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেন। বিদ্রোহে শাওয়ারের এক পুত্র ও এক ভাই নিহত হয়। ফলে শাওয়ার পালিয়ে সিরিয়ায় চলে যান। দিরগাম এরপর শাওয়ারের ঘরবাড়ি ও অনুসারীদের লুটপাট করেন।
- ৮৪৩ হিজরি— মমলুক সুলতান জাকমাক সেনাবাহিনীর জন্য নতুন নাকিব (সেনানায়ক) হিসেবে ইবনে তাবলাওয়ীকে নিয়োগ দেন।
- ১৩৩৮ হিজরি—কুয়েতীরা হামদ যুদ্ধের পর তৃতীয় প্রাচীর নির্মাণ কাজ শুরু করে। এটি কুয়েত শহর রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল।
- ১৩৫৩ হিজরি—
- ইতালির ফ্যাসিস্ট নেতা বেনিতো মুসোলিনির অধীনে ইতালি আফ্রিকার দেশ ইথিওপিয়া (তৎকালীন হাবশা) আক্রমণ করে।
- মাওসুল (ইরাক) থেকে হাইফা (ফিলিস্তিন) পর্যন্ত একটি বৃহৎ পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন চালু করা হয়। যদিও এটি পরে বন্ধ হয়ে যায়; তবে ইরাক যুদ্ধ চলাকালীন ইস্রাইলের তেলের চাহিদা পূরণে আমেরিকা এটিকে পুনরায় চালু করার চেষ্টা করে।
- ১৩৬৬হিজরি — দক্ষিণ এশিয়ায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর নেতৃত্বে পাকিস্তান স্বাধীনতা লাভ করে এবং ভারতের কাছ থেকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।
- ১৩৮৫ হিজরি— ইন্দিরা গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। তিনিই ছিলেন ভারতের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী।
- ১৩৯৮ হিজরি— প্রখ্যাত শিয়া নেতা মুসা আল-সদর লিবিয়া সফরকালে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হন।
- ১৪১৬ হিজরি— ইন্দোনেশিয়ার ইরিয়ান জায়া অঞ্চলে ৮.২ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প সংঘটিত হয়, যাতে ১০৮ জন নিহত ও ৪২৩ জন আহত হন। ভূমিকম্পের সঙ্গে বিশালাকার সুনামি সৃষ্টি হয়, যার ঢেউ অনেক এলাকায় ৭ মিটার ছাড়িয়ে যায়। এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়।
- ১৪২৭ হিজরি— সৌদি আরবের রাজা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল আজিজের নির্দেশে হাইয়াত আল-বাইআহ (আনুগত্য পরিষদ) গঠিত হয়, যার উদ্দেশ্য ছিল রাজপরিবারে সিংহাসন উত্তরাধিকারের নিয়ম নির্ধারণ।
- ১৪৩৬ হিজরি —ইরান ও শক্তিধর রাষ্ট্রগুলির মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি সম্পন্ন হয়। এটি ছিল ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে হওয়া একটি সমন্বিত ও গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি।
জন্ম
[সম্পাদনা]- ১২৮৭ হিজরি: আব্দুল আজিজ ফাহমি, একজন বিশিষ্ট বিচারক ও মিসরের "হিজব আল-আহরার আদ-দুস্তুরিয়িন" নামক সংবিধানবাদী মুক্ত দলের নেতা।
- ১৩৫৬ হিজরি: মান্দুহ লাইসি, একজন মিশরীয় চিত্রনাট্যকার ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ।
- ১৪৬৭ হিজরি:
- আল-জিলালি ফারহাতি, একজন মরক্কীয় চলচ্চিত্র পরিচালক।
- মাদিহা কামেল, একজন মিশরীয় অভিনেত্রী।
- ১৩৭৭ হিজরি: আবদুল হাকিম কাতিফান, একজন সিরীয় অভিনেতা।
- ১৩৯১ হিজরি: মুস্তফা হাজ্জি, মরক্কোর জাতীয় ফুটবল দলের একজন খেলোয়াড়।
- ১৫০০হিজরি: নাদিন সালামাহ, একজন সিরীয় অভিনেত্রী।
- ১৪০৩ হিজরি : মুসা’ইদ নাদা, একজন কুয়েতী ফুটবলার।
- ১৪০৪ হিজরি: হুসেইন হাকেম, একজন কুয়েতি ফুটবলার।
- ১৪০৬ হিজরি: ইব্রাহিম দশতি, একজন কুয়েতী গায়ক ও অভিনেতা।
- ১৪১৮ হিজরি: শাহিন্দা, একজন ইরাকি অভিনেত্রী।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]- ৬৫ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন মারওয়ান ইবনুল হাকাম। তিনি ছিলেন চতুর্থ উমাইয়া খলিফা এবং দ্বিতীয় উমাইয়া সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। [২]
- ২০৮ হিজরিতে মারা যান নাফিসা বিনতে হাসান। তিনি ছিলেন আহলুল বাইতের একজন পবিত্র নারী, যিনি তাঁর ইলম, তাকওয়া ও ইবাদতের জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন।
- ২৭২ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন আবু মাশার আল-বালখি, যিনি একজন মুসলিম জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও গণিতবিদ ছিলেন। তাঁর জ্ঞান মধ্যযুগীয় ইউরোপে অনেক প্রভাব ফেলেছিল।
- ৩৮৬ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন আল-আজিজ বিল্লাহ নেজার ইবনে মু'ইদ ইবনে ইসমাঈল। তিনি ছিলেন পঞ্চম ফাতেমীয় খলিফা। তাঁর শাসনামলে ফাতেমীয় সাম্রাজ্যের বিস্তার ঘটে।
- ৭০৩ হিজরিতে মৃত্যুবরণ করেন মুহাম্মদ ওলজাইতু, যিনি ছিলেন ৮ম ইলখান শাসক ও মঙ্গোল শাসনের একজন গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।
- ৮০৮ হিজরিতে মারা যান ইবনে খালদুন, যিনি মুসলিম দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ ইতিহাসবিদ ও সমাজবিজ্ঞানী হিসেবে বিবেচিত। [৩]
- ১৩২৯ হিজরি: আহমদ আরাবি, একজন মিশরীয় সামরিক নেতা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্রগামী ব্যক্তিত্ব।
- ১৩৬০ হিজরি: মাই জিয়াদা, একজন লেবাননি-ফিলিস্তিনি সাহিত্যিক।
- ১৩৮২ হিজরি: বিশার ফারিস, একজন লেবাননী-মিশরীয় নাট্যকার, ঐতিহাসিক ও কবি ছিলেন।
- ১৪০৬ হিজরি: তোজো মাজরাহি, ইতালীয় বংশোদ্ভূত একজন মিশরীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- ইবনে কাসির, মুহাম্মদ (২০১৩)। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আইএসবিএন 984-06-0565-8।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৫)। তারিখুল ইসলাম (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ। আইএসবিএন 27-45143-53-0।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৪)। সিয়ারু আলামিন নুবালা (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: আল-রিসালা প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-9-933-44665-9।
- খতিব বাগদাদী (২০১১)। তারিখে বাগদাদ (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়্যা। আইএসবিএন 978-274510-466-3।
- তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে জারির (২০১১)। তারিখে তাবারি: তারিখুর রুসুল ওয়াল মুলুক (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-3263-5।
- হামাবি, ইয়াকুত (২০১১)। মু'জামুল বুলদান (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-1432-7।
- সুয়ুতী, জালালুদ্দীন (২০১০)। তারিখ আল-খুলাফা (আরবি ভাষায়)। সৌদি আরব: দারুল মিনহাজ। আইএসবিএন 978-99534-9819-5।
- ইলমাজ উজতুনা (২০১০)। তারিখ আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব আরাবি। আইএসবিএন 978-61441-5031-3।
- ইয়াগি, ইসমাইল আহমদ (২০১৪)। আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া, ফিত তারিখিল ইসলামি আল-হাদিস (আরবি ভাষায়)। মাকতাবাতুল আবিকান। আইএসবিএন 978-60350-3695-5।
- বারদি, ইবনে তাগরি (২০১৬)। আল-নুজুম আল-যাহিরাহ ফি মুলুক মিসর ওয়াল কাহিরাহ (আরবি ভাষায়)। কায়রো: দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া। আইএসবিএন 978-97781-2018-9।
- ইবনে ইয়াস (২০১৮)। বাদায়ি' আল-জুহুর ফি ওয়াকায়ি' আল-দুহুর (আরবি ভাষায়)। নিল ওয়াফুরাত।
- আল-মাকদিসি, আবু শামা (২০১৮)। আল-রওজাতাইন ফি আখবার আল-দাওলাতাইন আল-নুরিয়া ওয়াস সালাহিয়া (আরবি ভাষায়)। কায়রো: মুয়াসসাসাতুর রিসালা। আইএসবিএন 978-191264-335-6।
- আল মাকরিজি, আলি ইবনে আহমদ (২০০৮)। আস-সুলুক লিমারিফা দুয়াল আল-মুলুক (আরবি ভাষায়)। দার আল-জামান।
- ড. আব্দুর রহিম, আল-হাজ্জি (২০০৫)। তারিখুল আন্দালুস আল-ইসলামি। দাম্মাম (সৌদি আরব): দার ইবনুল জাওযি।
- রহমান, ড. আতাউর (২০২৩)। ইতিহাসে ইসলাম: নবী থেকে খেলাফত। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
- ডেভিড, ফ্রমকিন (১৯৮৯)। অ্য পিচ টু ইন্ড অল পিচ: দ্য ফ্যাল অফ দ্য অটোমান অ্যাম্পায়ার (A Peace to End All Peace: The Fall of the Ottoman Empire)। আইএসবিএন 0-8050-0857-8।
- Harvey, Leonard Patrick (১৯৯২)। Islamic Spain, 1250 to 1500। Chicago: University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-31962-8।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lings, Martin, "Muhammad: his life based on the earliest sources", 1983. p. 201।
- ↑ Duri, Abd al-Aziz (২০১১)। Early Islamic Institutions: Administration and Taxation from the Caliphate to the Umayyads and ʿAbbāsids। Razia Ali কর্তৃক অনূদিত। London and Beirut: I. B. Tauris and Centre for Arab Unity Studies।
- ↑ এ. এম. দ্বীন (২০০৭) "ইসলামের অধীনে বিজ্ঞান: উত্থান, পতন এবং পুনরুজ্জীবন"। পৃষ্ঠা ১৫৭।