২৪ মুহররম
অবয়ব
২৪ মুহররম হল ইসলামি চান্দ্র বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহররম ও হিজরি বছরের ২৪তম দিন এবং এরপর থেকে হিজরি বছর শেষ হতে আরো ৩৩০ বা ৩৩১ দিন বাকি থাকে।
ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]- ৪৯১ হিজরি: দামেস্কের শাসক দাক্কাক ইবনে তুতুশ একটি তৎকালীন খ্রিস্টান ক্রুসেডার বাহিনী দ্বারা অবরুদ্ধ আন্তাকিয়ার সাহায্যে এগিয়ে আসেন। আন্তাকিয়া তখন একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর ছিল, যার উপর নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক ও সামরিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। দাক্কাক ইবনে তুতুশের এই উদ্যোগ ছিল মুসলিম প্রতিরোধের অংশ, যা প্রথম ক্রুসেড যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে সংঘটিত হচ্ছিল।
- ১০৮২ হিজরি: উসমানীয় সাম্রাজ্য পোল্যান্ডের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ ঘোষণা করে। এটি ইউরোপীয় বড় শক্তিগুলোর সাথে উসমানীয়দের একাধিক টানাপোড়ন ও দ্বন্দ্বের একটি পর্ব ছিল, যার ধারাবাহিকায় পরবর্তীতে অনেক সামরিক সংঘর্ষ ও কূটনৈতিক টানাপোড়েন ঘটে।
- ১২৭৩ হিজরি: মিশরের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কায়রো ও আলেকজান্দ্রিয়ার মধ্যে প্রথম রেলপথ নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এটি আধুনিক পরিবহন ব্যবস্থার সূচনা ছিল, যা মিশরের আর্থ-সামাজিক কাঠামোতে বড় পরিবর্তন আনে এবং দেশটির বাণিজ্য ও যোগাযোগ ব্যবস্থাকে পূর্বের তুলনায় উন্নত করে।
- ১৩১৭ হিজরি: আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ইমাম হিসেবে দায়িত্বে থাকা শায়খ হাসুনা নাওয়াওয়িকে পদচ্যুত করা হয়। তিনি আল-আজহারের ২৩তম প্রধান ছিলেন। তার স্থানে শায়খ আব্দুর রহমান কুতব নাওয়াওয়িকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
- ১৩২৫ হিজরি: "আল-জারিদা" নামে একটি নতুন পত্রিকার প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়, যার প্রধান সম্পাদক ছিলেন আহমদ লুৎফি সাইয়্যেদ। এই পত্রিকাটি "মিশর জাতীয়তাবাদের" পক্ষে এবং উসমানীয় খিলাফতের রাজনৈতিক প্রভাবের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়।
- ১৩৪৯ হিজরি: ইরাকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নূরি সাঈদ বৃটিশ সরকারের সঙ্গে একটি জোট চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তি ১৯২২ সালের পূর্ববর্তী একটি চুক্তির ধারাবাহিকতা ছিল, যা বৃটিশদের ইরাকের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখার পথ সুগম করে। এ চুক্তির কারণে ইরাকিদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ জন্মায় এবং ১৯৩৫ সালে মধ্য ইউফ্রেটিস অঞ্চলে উপজাতীয় বিদ্রোহ ঘটে।
- ১৩৫৬ হিজরি: প্রখ্যাত মিশরীয় কবি বাইরাম তূনিসি আস-সার্দুক নামে একটি ব্যঙ্গাত্মক পত্রিকা পুনরায় প্রকাশ করেন। ফলে তিউনিসিয়ার ঔপনিবেশিক ফরাসি প্রশাসন তাঁর উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং তাকে তিউনিস থেকে চূড়ান্তভাবে বহিষ্কার করে। ফলে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়।
- ১৩৬২ হিজরি: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে জার্মান সেনাপতি এরউইন রোমেল তিউনিসিয়ার কাফসা শহর থেকে মার্কিন ও ফরাসি বাহিনীকে বিতাড়িত করেন এবং শহরটির উপর জার্মান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন। এই অভিযান আফ্রিকীয় যুদ্ধভাগের অংশ ছিল।
- ১৩৯৯ হিজরি: ইরানের রাজধানী তেহরানে মার্কিন সরকার ও নাগরিকদের বিরুদ্ধে তীব্র ও সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়। এটি ইরানে মার্কিন প্রভাবের বিরুদ্ধে জনরোষের একটি চূড়ান্ত প্রকাশ ছিল, যা পরবর্তীতে ইরান-আমেরিকা সম্পর্কে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করে।
- ১৪১১ হিজরি: ইরাক সরকার ইরান থেকে তাদের সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে এবং আলজিয়ার্স চুক্তিকে স্বীকার করে। এই চুক্তির মাধ্যমে শাতুল আরব নদীকে দুই দেশের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়, যা দীর্ঘমেয়াদি সীমান্ত বিরোধের অবসান ঘটায়।
- ১৪২৯ হিজরি: দুবাইয়ের শাসক শেখ মুহাম্মদ বিন রাশিদ আল মাকতুম তার পুত্র হামদান বিন মুহাম্মদকে দুবাইয়ের ক্রাউন প্রিন্স হিসেবে নিয়োগ দেন।
- ১৪৩১ হিজরি: মিশরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আহমদ আবু আল-গাইস ঘোষণা দেন যে, গাজা অভিমুখী কোন ধরণের মানবিক সহায়তা বহনকারী কাফেলা মিশরের ভূখণ্ড দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না; তা যেই সংগঠন বা দেশের পক্ষ থেকেই আসুক না কেন। এই সিদ্ধান্ত ফিলিস্তিনি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সহানুভূতিকে বাধাগ্রস্ত করে।
- ১৪৩২ হিজরি: একটি ইসরায়েলি আদালত দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট মোশে কাৎসাভকে ধর্ষণ ও যৌন হেনস্থার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে।
- ১৪৩৫ হিজরি: দুবাই শহরকে এক্সপো ২০২০-এর আয়োজনের জন্য নির্বাচিত করা হয় এবং এই আন্তর্জাতিক মেলা আয়োজনের মাধ্যমে দুবাই তার বৈশ্বিক অবস্থানকে আরো মজবুত করে এবং প্রযুক্তি ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করে।
জন্ম
[সম্পাদনা]- ১২৬৯ হিজরি - দাউদ সলিওয়া: ইরাকি সাংবাদিক, শিক্ষক ও কবি।
- ১৩২৯ হিজরি - মাহমুদ আস্-সাব্বায়া: মিশরীয় অভিনেতা।
- ১৩৪৩ হিজরি - আহমাদু অহিজু: ক্যামেরুনের রাষ্ট্রপতি।
- ১৩৪৭ হিজরি -
- ইলিয়াস জেমস খুরি, লেবাননী বংশোদ্ভূত নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত মার্কিন রসায়নবিদ।
- মুহাম্মদ মাহদি আকাশ, মুসলিম ব্রাদারহুডের সাধারণ নেতা।
- ১৩৫৩ হিজরি - জাইন আশমাবি, একজন মিশরীয় অভিনেতা।
- ১৩৫৭ হিজরি - মাজিদ তুবিয়া, মিশরীয় সাহিত্যিক।
- ১৩৯৭ হিজরি - নাসির আল-উসমান, কুয়েতি ফুটবল খেলোয়াড়।
- ১৩৯৯ হিজরি - ইয়ালদিরাই বাস্তুয়ার্ক, তুর্কি ফুটবল খেলোয়াড়।
- ১৪০৯ হিজরি - নূরী শাহীন, একজন তুর্কি ফুটবল খেলোয়াড়।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]- ১৩১৯ হিজরি - আব্দুহ আল-হামুলি, মিশরীয় সঙ্গীতজ্ঞ।
- ১৩২০ হিজরি - আয়িশা আত্-তৈমুরিয়া, মিশরীয় সাহিত্যিক।
- ১৩৯০ হিজরি - মুহাম্মাদ ফাদিল বিন আশুর, তিউনিস ও আরব বিশ্বের একজন ইসলামি চিন্তাবিদ। [১]
- ১৩৯৯ হিজরি - ফিলিপ হিট্টি, লেবাননী বংশোদ্ভূত মার্কিন ইতিহাসবিদ।
- ১৪২৪ হিজরি - মুহাম্মাদ তৌফিক, মিশরীয় অভিনেতা।
- ১৪২৭ হিজরি - আতওয়ার বাহজাত, ইরাকি গণমাধ্যমকর্মী।
- ১৪৩০ হিজরি - হুসাইন আলী মাহফূয, ইরাকি সাহিত্যিক ও ইতিহাসবিদ।
- ১৪৩৪ হিজরি - আম্মার আশ-শরীঈ, মিশরীয় সঙ্গীতজ্ঞ।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জী
[সম্পাদনা]- ইবনে কাসির, মুহাম্মদ (২০১৩)। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আইএসবিএন 984-06-0565-8।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৫)। তারিখুল ইসলাম (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ। আইএসবিএন 27-45143-53-0।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৪)। সিয়ারু আলামিন নুবালা (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: আল-রিসালা প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-9-933-44665-9।
- খতিব বাগদাদী (২০১১)। তারিখে বাগদাদ (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়্যা। আইএসবিএন 978-274510-466-3।
- তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে জারির (২০১১)। তারিখে তাবারি: তারিখুর রুসুল ওয়াল মুলুক (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-3263-5।
- হামাবি, ইয়াকুত (২০১১)। মু'জামুল বুলদান (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-1432-7।
- সুয়ুতী, জালালুদ্দীন (২০১০)। তারিখ আল-খুলাফা (আরবি ভাষায়)। সৌদি আরব: দারুল মিনহাজ। আইএসবিএন 978-99534-9819-5।
- ইলমাজ উজতুনা (২০১০)। তারিখ আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব আরাবি। আইএসবিএন 978-61441-5031-3।
- ইয়াগি, ইসমাইল আহমদ (২০১৪)। আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া, ফিত তারিখিল ইসলামি আল-হাদিস (আরবি ভাষায়)। মাকতাবাতুল আবিকান। আইএসবিএন 978-60350-3695-5।
- বারদি, ইবনে তাগরি (২০১৬)। আল-নুজুম আল-যাহিরাহ ফি মুলুক মিসর ওয়াল কাহিরাহ (আরবি ভাষায়)। কায়রো: দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া। আইএসবিএন 978-97781-2018-9।
- ইবনে ইয়াস (২০১৮)। বাদায়ি' আল-জুহুর ফি ওয়াকায়ি' আল-দুহুর (আরবি ভাষায়)। নিল ওয়াফুরাত।
- আল-মাকদিসি, আবু শামা (২০১৮)। আল-রওজাতাইন ফি আখবার আল-দাওলাতাইন আল-নুরিয়া ওয়াস সালাহিয়া (আরবি ভাষায়)। কায়রো: মুয়াসসাসাতুর রিসালা। আইএসবিএন 978-191264-335-6।
- আল মাকরিজি, আলি ইবনে আহমদ (২০০৮)। আস-সুলুক লিমারিফা দুয়াল আল-মুলুক (আরবি ভাষায়)। দার আল-জামান।
- ড. আব্দুর রহিম, আল-হাজ্জি (২০০৫)। তারিখুল আন্দালুস আল-ইসলামি। দাম্মাম (সৌদি আরব): দার ইবনুল জাওযি।
- রহমান, ড. আতাউর (২০২৩)। ইতিহাসে ইসলাম: নবী থেকে খেলাফত। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
- ডেভিড, ফ্রমকিন (১৯৮৯)। অ্য পিচ টু ইন্ড অল পিচ: দ্য ফ্যাল অফ দ্য অটোমান অ্যাম্পায়ার (A Peace to End All Peace: The Fall of the Ottoman Empire)। আইএসবিএন 0-8050-0857-8।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ محمد الفاضل بن عاشور، الحركة الأدبية والفكرية في تونس، الدار التونسية للنشر، تونس، ط3، 1983।