২০২৩ সালে সুইডেনে কুরআন পোড়ানো

২০২৩ সালে, সুইডেনে কোরআন পোড়ানোর ঘটনা ঘটেছিল, যেগুলো সুইডিশ গণমাধ্যমে সমষ্টিগতভাবে "কোরান সংকট" (কোরানক্রিসেন; কিছু ইংরেজি ভাষার গণমাধ্যমে "কোরআন পোড়ানোর সংকট") নামে পরিচিতি পায়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটে ২০২৩ সালের ২৮ জুন, যখন ৩৭ বছর বয়সী ইরাকি আসিরীয় শরণার্থী সালওয়ান মোমিকা স্টকহোম মসজিদের সামনে কোরআনের পৃষ্ঠা ছিঁড়ে এবং আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। [১] এই ঘটনা আন্তর্জাতিক প্রতিবাদ এবং নিন্দার সৃষ্টি করে, বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে। ২০ জুলাই, মোমিকা স্টকহোমে আরেকটি কোরআন পোড়ানোর পরিকল্পনা করেন, যার ফলে প্রতিবাদকারীরা বাগদাদে সুইডিশ দূতাবাসে হামলা করে এবং অগ্নিসংযোগ করে। [২]
এর ফলে ডেনমার্কে বেশ কয়েকটি অনুবর্তী প্রতিবাদ হয়, যেখানে বেশ কয়েকটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের দূতাবাসের সামনে কোরআন পোড়ানো হয়। পাল্টা প্রতিবাদ, সহিংসতা এবং বয়কটের মাধ্যমে ডেনমার্ক আবার ধর্মীয় গ্রন্থের "অশোভন আচরণ" অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে ধর্মনিন্দা আইন পুনরায় চালু করে।
ঘটনা
[সম্পাদনা]
২০২৩ সালের জানুয়ারিতে, ড্যানিশ ডানপন্থী রাজনীতিবিদ রাসমুস প্যালুডান স্টকহোমে তুরস্কের দূতাবাসের সামনে কোরআনের একটি কপি পুড়িয়ে দেন, যার ফলে তুরস্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হুলুসি আকার সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ নিয়ে আলোচনা স্থগিত করেন। [৩]দূতাবাসের বাইরে পৃথকভাবে প্রো-কুর্দি এবং ন্যাটো বিরোধী বিক্ষোভও অনুষ্ঠিত হয়। [৪]
সালওয়ান মোমিকা একজন ৩৭ বছর বয়সী আরামীয় ব্যক্তি, যিনি ইরাক থেকে পালিয়ে ২০১৮ সালে শরণার্থী হিসেবে সুইডেনে আসেন। [১] তিনি নিজেকে একজন নাস্তিক হিসেবে চিহ্নিত করেন এবং সুইডেনে কোরআন নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানান। [৫] ২৮ জুন, তিনি স্টকহোম মসজিদের সামনে পুলিশের লাইনের পেছনে হাজির হন, দুইটি সুইডিশ পতাকা হাতে রেখে, যখন সুইডেনের অঘোষিত জাতীয় সঙ্গীত "ডু গামলা, ডু ফ্রিয়া" লাউডস্পিকারে বাজছিল। তিনি কোরআন টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে সেটিতে আগুন ধরান, এবং একটি বেকনের টুকরোও তার উপরে রাখেন। এক বিক্ষোভকারী তাকে কিছু নিক্ষেপ করার চেষ্টা করে, এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। [৬] এই ঘটনাটি ইসলাম ধর্মের একটি প্রধান উৎসব ঈদুল আজহার সময় ঘটে। [৭]
এই ঘটনার পর, স্টকহোম পুলিশ জানায় যে তারা কোরআন পোড়ানোর জন্য আরও অনুমতির আবেদন পেয়েছে, তাছাড়া ইসরায়েলের দূতাবাসের সামনে তোরাহ ও বাইবেল পোড়ানোর জন্যও আবেদন করা হয়েছিল, কিন্তু পরবর্তীতে সেগুলো বাতিল করা হয়।[৮][৯]
পরবর্তী সপ্তাহগুলিতে ডেনমার্কে বেশ কিছু বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ২৪ জুলাই, ডেনিশ ডানপন্থী কর্মীরা ইরাকি দূতাবাসের সামনে কোরআন পুড়িয়ে দেয়। [১০] [১১] ২৫ জুলাই, বিক্ষোভকারীরা কপেনহেগেনে মিশরীয় দূতাবাসের সামনে কোরআন পোড়ায়, এবং একই দিনে তুর্কি দূতাবাসের সামনেও একটি কোরআন পোড়ানো হয়। ৩১ জুলাই, ডেনমার্কে মোট সাতটি কোরআন পোড়ানোর পরিকল্পনা করা হয়।[১২][১৩]
২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, মোমিকা ২০০ দর্শকের সামনে কোরআনের একটি কপি পোড়ালে একটি দাঙ্গা শুরু হয় এবং বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে পাথর নিক্ষেপ করে।[১৪] [১৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "Iraqi refugees set fire to Quran at Swedish Parliament in Stockholm"। euronews (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-৩১। ২০২৪-০১-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৬-১২।
- ↑ "Iraq boots out Swedish ambassador after Qur'an desecrated in Stockholm"। CBC। জুলাই ২০, ২০২৩। জুলাই ২০, ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ৮, ২০২৩।
- ↑ Hajjaji, Danya (২১ জানুয়ারি ২০২৩)। "Turkey condemns burning of Qur'an during far-right protest in Sweden"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "Quran-burning in Sweden exacerbates tensions with Turkey over NATO bid"। Politico। ২২ জানুয়ারি ২০২৩। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "From militia leader to refugee: The backstory of the man who burned a Koran in Sweden"। ১০ জুলাই ২০২৩। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Countries condemn desecration of Quran in Sweden"। Al Jazeera। ২৯ জুন ২০২৩। ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ Rubin, Alissa J.; Kwai, Isabella (২৯ জুন ২০২৩)। "Sweden Is Condemned in the Muslim World for Allowing Burning of Quran"। The New York Times। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Quran burnings have Sweden torn between free speech and respecting minorities"। AP News। ৫ জুলাই ২০২৩। ৮ অক্টোবর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ ToI Staff (১৫ জুলাই ২০২৩)। "Activist backs off Sweden Torah burning: Trying to draw attention to Quran desecration"। Times of Israel। ৩ আগস্ট ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জুলাই ২০২৩।
- ↑ "Denmark considers banning protests burning Quran and other religious texts"। BBC News (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-৩০। ২০২৩-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৩।
- ↑ "Saudi Arabia summons Denmark's charge d'affaires over Quran burnings"। www.aljazeera.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৮-১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৩।
- ↑ "Far-right group burns Quran in Copenhagen"। POLITICO (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২৩-০৭-২৫। ২০২৩-০৯-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৮-০৩।
- ↑ "Sverige og Danmark vurderer tiltak mot koranbrenning"। Aftenposten (নরওয়েজীয় ভাষায়)। ৩১ জুলাই ২০২৩। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪।
- ↑ "Violent riot breaks out in Sweden at Koran burning protest"। Le Monde। ২০২৩-০৯-০৪। ২০২৩-১০-১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-১৯।
- ↑ "'Violent riot' lasts through the night in Sweden after Koran burning"। sky.com। ২০২৩-০৯-০৪। ২০২৩-১০-০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০৯-১৯।