১ সফর
অবয়ব
১ সফর হল ইসলামি বর্ষপঞ্জির দ্বিতীয় মাস সফরের প্রথম দিন এবং এটি হিজরি চান্দ্র পঞ্জিকা অনুসারে বছরের ৩১তম দিন। এই দিনের পর বছর শেষ হতে আরো ৩২৩ বা ৩২৪ দিন বাকি থাকে।
ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]- ২ হিজরি: মুসলিমদের প্রথম সামরিক অভিযান সংঘটিত হয়, যার নাম ছিল আবওয়া অভিযান যুদ্ধ। তবে এই অভিযানে যুদ্ধের কোনো ঘটনা ঘটেনি; বরং এই অভিযানে মহানবি বনি কিনানার উপগোত্র বনি দুমরার সাথে একটি সন্ধিচুক্তি ও মৈত্রীচুক্তি সম্পাদন করেন। এই চুক্তি মুসলিমদের ভবিষ্যৎ অগ্রযাত্রার জন্য একটি কৌশলগত ভিত্তি স্থাপন করে। [১]
- ১২ হিজরি: মুসলিম সেনাবাহিনী ও সাসানীয় পারসিকদের মধ্যে সংঘটিত হয় মাযার বা সানি যুদ্ধ। এই যুদ্ধের নেতৃত্ব দেন সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ। এই যুদ্ধে মুসলিমরা বিজয় অর্জন করেন এবং পারসিকদের এক বড় অংশকে পরাজিত করেন। এটি ছিল ইসলামি বিজয়যাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। [২]
- ১৩ হিজরি: প্রথম খলিফা আবু বকর সিদ্দীক, যিনি সদ্যই রিদ্দার যুদ্ধে বিদ্রোহ দমন করেছেন–শাম অঞ্চল বিজয়ের জন্যে চারটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করেন। এই বাহিনীগুলোর নেতৃত্বে ছিলেন: আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ, আমর ইবনুল আস, শুরাহবীল ইবন হাসানা ও ইয়াজিদ ইবনে আবি সুফিয়ান। এই প্রস্তুতি ইসলামের উত্তর দিকে বিস্তারের সূচনা করে। [৩]
- ৩৭ হিজরি: ইসলামের ইতিহাসে বিখ্যাত গৃহযুদ্ধ সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়, যা খলিফা আলি ও মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের মধ্যে ঘটেছিল। যদিও কিছু ঐতিহাসিক সূত্র বলে যে, এই যুদ্ধ ৩৯ হিজরিতে ঘটেছিল; তবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ৩৭ হিজরিকে গ্রহণ করেছেন। [৪]
- ৬১ হিজরি: কারবালা যুদ্ধের মর্মান্তিক ঘটনার পর যুদ্ধবন্দীদের মধ্যে থাকা নবী পরিবারের নারী এবং ইমাম আলী জয়নুল আবেদীনকে ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়ার নির্দেশে শামে (সিরিয়া) নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
- ১৮৭ হিজরি: বিখ্যাত রাজনীবিদি ও আব্বাসীয় খলিফা হারুনুর রশিদের প্রভাবশালী মন্ত্রী জাফর ইবনে ইয়াহইয়া বারামকীকে হত্যা করা হয় এবং এটি বারামকা পরিবারের পতনের সূচনা ছিল, যা "নক্ববাতুল বারামিকা" নামে পরিচিত।
- ৪৭৮ হিজরি: মুসলিম শাসনের অধীনস্থ শহর তোলেতো স্পেনের খ্রিষ্টান কাস্তিলীয়দের হাতে পতিত হয়। এটি ছিল আন্দালুসে ইসলামি কর্তৃত্বের পতনের সূচনা বিন্দু।
- ৯২৯ হিজরি: উসমানীয় সুলতান সুলাইমান আল-কানুনির নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী শক্তিশালী দুর্গ রোডস দ্বীপ জয় করে। এই জয়ের মাধ্যমে তারা মধ্যপ্রাচ্যের পূর্ব উপকূল থেকে ক্রুসেডারদের শেষ ঘাঁটিও উৎখাত করে।
- ১২৪৮ হিজরি: বাগদাদের উসমানীয় শাসকের বিরুদ্ধে সেখানে বসবাসরত একজন প্রখ্যাত ধর্মীয় নেতা ও ফকীহ মুফতি আবদুল গনী আল-জামিল বিদ্রোহ ঘোষণা করেন।
- ১৩৩২ হিজরি: ব্রিটিশ সরকার মিশরের খেদিভ আব্বাস হিলমিকে পদচ্যুত করে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তারা মিশরে তাদের রক্ষাকবচ (প্রটেক্টরেট) প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়, যাতে মিশরকে উসমানীয় খেলাফত থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা যায়। তখন উসমানীয় সাম্রাজ্য প্রথম বিশ্বযুদ্ধে গ্রেট ব্রিটেন ও মিত্রশক্তির বিরোধী পক্ষ ছিল।
- ১৩৮২ হিজরি – আলজেরিয়ার জাতীয় মুক্তি ফ্রন্ট (এফএলএন) আলজেরীয় স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করে। কারণ ফরাসি সরকার আলজেরীয় স্বাধীনতাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দেয়। তখন শুধুমাত্র দুই পক্ষের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির সরকারি অনুমোদন বাকি ছিল এবং এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের রক্তাক্ত সংগ্রামের এক ঐতিহাসিক অধ্যায় শেষ হয়।
- ১৩৯৫ হিজরি–সাইপ্রাসের তুর্কি বংশোদ্ভূত স্থানীয় অধিবাসীরা ঘোষণা দেন যে, তারা "তুর্কি ফেডারেল সাইপ্রাস রাষ্ট্র" প্রতিষ্ঠা করেছেন। এটি ছিল এক স্বাধীন প্রশাসনিক সত্তা, যা সাইপ্রাসে তুর্কিদের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা গঠনের একটি পদক্ষেপ ছিল। এর পেছনে কারণ ছিল, তুরস্ক ও গ্রিসের মধ্যে সাইপ্রাস দ্বীপ নিয়ে আলোচনার ব্যর্থতা এবং তুর্কি সেনাবাহিনী দ্বারা দ্বীপের প্রায় ৩৫ শতাংশ ভূখণ্ড দখল করা।
- ১৪০৪ হিজরি– তুরস্কের "আনাফ ভতান পার্টি" (মায়ের ভূমির দল) নির্বাচন জিতে সরকার গঠন করে। এই দলের নেতৃত্বে ছিলেন তুরগুত ওজাল, যিনি পরবর্তীকালে তুরস্কের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হয়ে ওঠেন। এই নির্বাচনের ফলাফল তুরস্কের রাজনীতিতে এক নতুন অধ্যায় সূচনা করে।
- ১৪২০ হিজরি–কুয়েতী আমির শেখ জাবের আল-আহমদ আল-সাবাহ একটি রাজকীয় ফরমান জারি করেন, যার মাধ্যমে কুয়েতের নারীদের ভোটাধিকার ও প্রার্থী হওয়ার অধিকার প্রদান করা হয়। তবে পরবর্তীতে এই ফরমানটি জাতীয় সংসদ দ্বারা খারিজ করে দেওয়া হয়।
- ১৪২৫ হিজরি–ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ও হামাস সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিনকে ভোরবেলার ফজরের নামাজের সময় নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
- ১৪৩১ হিজরি – ইখওয়ানুল মুসলিমিন আন্দোলন তাদের দাওয়াহ কার্যক্রমের প্রধান বা 'মুরশিদে আম' হিসেবে ড. মুহাম্মদ বাদিঈকে নির্বাচন করে। তিনি মোহাম্মদ মাহদি আকিফের স্থলাভিষিক্ত হন এবং সংগঠনের অষ্টম মুরশিদে আম হন।
- ১৪৩৬ হিজরি– তিউনিসিয়ায় প্রথমবারের মতো নতুন সংবিধানের অধীনে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এটি ছিল আরব বসন্ত পরবর্তী সময়ের দ্বিতীয় নির্বাচন।
জন্ম
[সম্পাদনা]- ১২৫৫ হিজরি: ইয়াকুব সানু — মিশরীয় হাস্যরসাত্মক সাংবাদিক ও নাট্যকার।
- ১৩৫০ হিজরি: কোসার রামজি — মিশরীয় অভিনেত্রী।
- ১৩৯৩ হিজরি: মোহাম্মদ আল-হাজ্জি — সৌদি অভিনেতা।
- ১৩৯৭ হিজরি: হুসাইন আব্দুলগানি — সৌদি ফুটবলার।
- ১৪০৪ হিজরি: মাই সেলিম — জর্ডানীয় অভিনেত্রী ও গায়িকা।
- আমিরা আল-তাওয়িল — সৌদি ব্যবসায়ী।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]- ১৮৭ হিজরি: জাফর বারমাকি — আব্বাসীয় যুগের বিখ্যাত মন্ত্রী।
- ১০৭১ হিজরি: আইয়ুব খালওয়াতি — ওসমানীয় সিরিয়ান সুফি, লেখক ও কবি।
- ১৩০২ হিজরি: মুহসিন আল-খাদরি — ইরাকি কবি।
- ১৩৪৬ হিজরি: ইলিয়াস আল-আয়ুবি — ওসমানীয় ফিলিস্তিনি ইতিহাসবিদ।
- ১৩৮৭ হিজরি: নাসের সামআন — সিরিয়ান-ব্রাজিলিয়ান কবি।
- ১৩৯৪ হিজরি: ফাউজি জাজায়েরলি — মিশরীয় অভিনেতা।
- ১৩৯৫ হিজরি: আবদুল লতিফ কুয়েতি — কুয়েতি গায়ক।
- ১৪২৪ হিজরি: দুরিয়া আহমাদ —মিশরীয় অভিনেত্রী।
- ১৪২৫ হিজরি: আহমাদ ইয়াসিন — হামাস আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও ইসলামি নেতা।
- ১৪২৬ হিজরি: আবদুল আজিজ আল শেখ — সৌদি আরবীয় ‘আল-আমর বিল মারুফ ওয়ান্নাহি আনিল মুনলার’ দপ্তরের প্রধান।
- ১৪২৯ হিজরি: রজা আল-নাক্কাশ—মিশরীয় সাংবাদিক ও সাহিত্যিক।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জী
[সম্পাদনা]- ইবনে কাসির, মুহাম্মদ (২০১৩)। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আইএসবিএন 984-06-0565-8।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৫)। তারিখুল ইসলাম (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ। আইএসবিএন 27-45143-53-0।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৪)। সিয়ারু আলামিন নুবালা (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: আল-রিসালা প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-9-933-44665-9।
- খতিব বাগদাদী (২০১১)। তারিখে বাগদাদ (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়্যা। আইএসবিএন 978-274510-466-3।
- তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে জারির (২০১১)। তারিখে তাবারি: তারিখুর রুসুল ওয়াল মুলুক (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-3263-5।
- হামাবি, ইয়াকুত (২০১১)। মু'জামুল বুলদান (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-1432-7।
- সুয়ুতী, জালালুদ্দীন (২০১০)। তারিখ আল-খুলাফা (আরবি ভাষায়)। সৌদি আরব: দারুল মিনহাজ। আইএসবিএন 978-99534-9819-5।
- ইলমাজ উজতুনা (২০১০)। তারিখ আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব আরাবি। আইএসবিএন 978-61441-5031-3।
- ইয়াগি, ইসমাইল আহমদ (২০১৪)। আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া, ফিত তারিখিল ইসলামি আল-হাদিস (আরবি ভাষায়)। মাকতাবাতুল আবিকান। আইএসবিএন 978-60350-3695-5।
- রহমান, ড. আতাউর (২০২৩)। ইতিহাসে ইসলাম: নবী থেকে খেলাফত। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Afzalur Rahman (1993), Muhammad As a Military Leader, Kazi Publications, p. 119।
- ↑ A.I. Akram, The Sword of Allah: Khalid bin al-Waleed, His Life and Campaigns, Nat. Publishing. House, Rawalpindi (1970)।
- ↑ طقّوش، مُحمَّد سُهيل (1424هــ - 2002م). تاريخ الخُلفاء الرَّاشدين: الفُتوحات والإنجازات السياسيَّة (ط. الأولى). بيروت - لُبنان: دار النفائس. ص. 169।
- ↑ "Battle of Ṣiffīn | Caliphate Civil War, Muawiyah I, Ali ibn Abi Talib | Britannica"। www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৪-১৬।