১৯৭০ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম
![]() | এই নিবন্ধটি ইংরেজি উইকিপিডিয়া হতে অনুবাদের মাধ্যমে অমর একুশে নিবন্ধ প্রতিযোগিতা ২০২৫ উপলক্ষ্যে মানোন্নয়ন করা হচ্ছে। নিবন্ধটিকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই নিবন্ধকার কর্তৃক সম্প্রসারণ করে অনুবাদ শেষ করা হবে; আপনার যেকোন প্রয়োজনে এই নিবন্ধের আলাপ পাতাটি ব্যবহার করুন।
আপনার আগ্রহের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। |
১৯৭০ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম | |
---|---|
![]() মৌসুম সারাংশের মানচিত্র | |
মৌসুমী সীমানা | |
প্রথম গঠিত | মে ২, ১৯৭০ |
সর্বশেষ বিলুপ্তি | নভেম্বর ২৯, ১৯৭০ |
সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড় | |
নাম | ১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড় |
• সর্বাধিক বাতাস | 185 km/h (115 mph) |
• সর্বনিম্ন চাপ | ৯৬০ hPa (mbar) |
মৌসুমী পরিসংখ্যান | |
নিম্নচাপ | ১৫ |
ঘূর্ণিঝড় | ৭ |
মারাত্মক ঘূর্ণিঝড় | ৩ |
মোট প্রাণহানির ঘটনা | ৫০০,৮০৫+ (ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতি গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুম ) |
মোট ক্ষতি | $86.4 million (১৯৭০ USD) |
সম্পর্কিত নিবন্ধসমূহ | |
১৯৭০ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুম ছিল এই অঞ্চলের অত্যন্ত বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় মৌসুম। এ বছর মোট সাতটি ঘূর্ণিঝড় দেখা গিয়েছিল যার মধ্যে তিনটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছিল। ১৯৭০ সালে আরব সাগরের তুলনায় বঙ্গোপসাগর বেশি সক্রিয় ছিল এবং তিনটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের সবকটিই সেখানে তৈরি হয়েছিল। অস্বাভাবিকভাবে এই বছর আরব সাগরের কোনও ঝড়ই স্থলভাগে আঘাত হানেনি। মৌসুমের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঝড় ছিল ভোলা ঘূর্ণিঝড়, যা বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছিল এবং ১২ নভেম্বর বাংলাদেশে আঘাত হানে। এই ঝড়ে কমপক্ষে ৫ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছিল যা এটিকে ইতিহাসের সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত করেছিল।[১][২] এই মৌসুমটি ছিল বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের মৌসুম এবং প্রায় ৫,০০,৮০৫ জন মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। এর সিংহভাগই মারা ভোলার ঘূর্ণিঝড়ে।
মৌসুমের সারাংশ
[সম্পাদনা]
বিস্তারিত পর্যায়
[সম্পাদনা]প্রথম অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]এপ্রিলের শেষের দিকে একটি নিম্নচাপ দক্ষিণ আন্দামান সাগরে তৈরি হয়ে উত্তরে বঙ্গোপসাগরের দিকে সরে যায় যা ২ মে এই বছরের প্রথম নিম্নচাপে পরিণত হয়। উচ্চ-স্তরের প্রতিরোধী ঘূর্ণিবায়ুর প্রভাবে নিম্নচাপটি তীব্রতর হয় এবং পরের দিন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এরপর ঝড়টি উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেয় এবং ৪ মে আরও শক্তিশালী হয়ে একটি তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। খুব দ্রুতই এটি ১৫০ কিমি/ঘ (৯৫ মা/ঘ) বেগের বাতাসের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল। এবং একটি সুস্পষ্ট চোখ তৈরি হয়। ৭ মে ভোরে ঝড়টি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমানে বাংলাদেশ) কক্সবাজারের কাছে স্থলভাগে আঘাত হানে এবং সন্ধ্যায় পশ্চিম বার্মার উপর দিয়ে গিয়ে দুর্বল হয়ে যায়।
Very severe cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | মে ২ – মে ৭ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 150 km/h (90 mph) (3-min) 975 hPa (mbar) |
ঘূর্ণিঝড়টি ৩ মে নাগাদ আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে এর প্রভাব সম্পর্কে বেশি কিছ জানা যায় না তবে পশ্চিম বার্মার আকিয়াবে ৫৫ কিমি/ঘ (৩৫ মা/ঘ) বেগের ঝড়ো বাতাসের খবর পাওয়া গিয়েছিল।
দ্বিতীয় নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]
Depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | মে ২৩ – মে ২৪ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 45 km/h (30 mph) (3-min) |
২৩শে মে সকালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমানে বাংলাদেশ) উপকূলের কাছে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়। এটি উপকূলের দিকে অগ্রসর হয় এবং সেই রাতে কক্সবাজারের দক্ষিণে স্থলভাগে আঘাত হানে, পরের দিন দক্ষিণ আসামের উপর দিয়ে ছড়িয়ে দুর্বল হয়ে পড়ে। ক্ষয়ক্ষতি সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়না।
তৃতীয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]
Severe cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | মে ২৮ – জুন ২ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 95 km/h (60 mph) (3-min) 986 hPa (mbar) |
২৭ মে আরব সাগরের কর্ণাটক - গোয়া উপকূলে একটি লঘুচাপ তৈরি হয় এবং পরের দিন তা নিম্নচাপে পরিণত হয়। ২৯ মে উত্তর দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ঝড়টি সর্বোচ্চ ৯৫ কিমি/ঘ (৬০ মা/ঘ) তীব্রতায় পৌঁছেছিল। এর পরপরই এটি পশ্চিম দিকে মোড় নেয় এবং শীঘ্রই ৩১ মে উত্তর আরব সাগরের দিকে অগ্রসর হয়ে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি পশ্চিম দিকে আরও অগ্রসর হয়ে পরে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং ২ জুন আরব উপদ্বীপের স্থলভাগে আঘাত হানে। পরের দিন দক্ষিণ সৌদি আরবের উপর দিয়ে অবশিষ্ট নিম্নচাপটি সরে যায়।
স্থলভাগে ঘূর্ণিঝড়টির খুব একটা প্রভাব পড়েনি তবে মে মাসের শেষের দিকে মৌসুমি বায়ু এটির সাথে যুক্ত হয়ে ভারতের পশ্চিমাংশে প্রবেশ করে। ঘূর্ণিঝড়টি উপমহাদেশ থেকে পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে আরব সাগর থেকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে আর্দ্র বাতাসের অনুপ্রবেশ জুনের প্রথম তিন দিন পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এর ফলে গুজরাট, রাজস্থান এবং পশ্চিম মধ্যপ্রদেশের অঞ্চলে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছিল।[৩]
চতুর্থ ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]Cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | জুন ৭ – জুন ১১ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 65 km/h (40 mph) (3-min) 986 hPa (mbar) |
৬ জুন উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ তৈরি হয় এবং পরের দিন এটি আরও উত্তর দিকে সরে গিয়ে গাঙ্গেয় বদ্বীপের দক্ষিণে অগ্রসর হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি স্থলভাগের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় তার গতিপথ পরিবর্তন করে এবং ৮ জুন বঙ্গোপসাগরে পুনরায় আবির্ভূত হয়। সমুদ্রের উপর দিয়ে যাওয়ার পর ৯ জুন সকালে নিম্নচাপটি গতি বাড়িয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ঘূর্ণিঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যায় এবং সেই রাতে উত্তর ওড়িশার বালাসোরের কাছে এটি দ্বিতীয়বার স্থলভাগে আঘাত হানে। ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত দুর্বল হয়ে স্থলভাগে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং পশ্চিমে মধ্য ভারতের উপর দিয়ে অগ্রসর হয়। ১১ জুন বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে এটি লঘুচাপে পরিণত হয়।
৯ জুন সমুদ্র উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টির একটানা বাতাসের গতিবেগ ৬৫ কিমি/ঘ (৪০ মা/ঘ) রেকর্ড করা হয়েছিল। এর প্রভাবে ওড়িশা এবং পশ্চিমবঙ্গের বেশিরভাগ অংশে উচ্চ মাত্রার বৃষ্টিপাত হয়েছিল। উভয় রাজ্যের বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় ১০০ মিমি (৩.৯ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়েছিল। এছাড়াও ঝড়টি স্থলভাগ দিয়ে অতিক্রম করার সময় বিদর্ভ এবং দক্ষিণ মধ্যপ্রদেশে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে। ১৩ জুন শুধু খান্ডোয়ায় সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ২৮০ মিমি (১১ ইঞ্চি)। বৃষ্টিপাতের ফলে বিদর্ভের কিছু অংশে স্থানীয় বন্যা দেখা দিয়েছিল এবং এই অঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়।[৩]
পঞ্চম গভীর নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Deep depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | জুন ২৯ – জুলাই ৩ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | ≥50 km/h (30 mph) (3-min) |
২৮ জুন উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপর তৈরি হওয়া একটি লঘুচাপ ২৯ জুনের প্রথম দিকে নিম্নচাপে পরিণত হয়। ওড়িশা উপকূল অতিক্রম করার আগে নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আরও তীব্রতর হয়ে একটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। স্থলভাগে আঘাত হানার পর ঝড়টি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ২ জুলাই উত্তর-পূর্ব মধ্যপ্রদেশের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সময় আরও দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়। ৩ জুলাই সন্ধ্যায় এটি মধ্য উত্তর প্রদেশের উপর একটি আংশিক নিম্নচাপে পরিণত হয়।
নিম্নচাপটি পুরো সময় জুড়ে উড়িষ্যা, মধ্যপ্রদেশ এবং বিদর্ভে তীব্র বৃষ্টিপাত ঘটায়। ৩০ জুন নিম্নচাপটি স্থলভাগে আঘাত হানার সময় পারাদ্বীপে ২১০ মিমি (৮.৩ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত এবং ৮৫ কিমি/ঘ (৫৫ মা/ঘ) গতিবেগের বাতাস রেকর্ড করা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টিপাতের প্রভাবে উড়িষ্যার কিছু অংশ প্লাবিত হয় এবং কটক জেলার ধানক্ষেতগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হয়। আরও পশ্চিমে ওয়েনগঙ্গা নদীর কোথাও কোথাও প্লাবিত হয়। মধ্যপ্রদেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয় এবং রায়পুর এলাকায় ফসলের ক্ষতি হয়। ২ জুলাই নিম্নচাপটির কারণে রায়পুরে ২৪ ঘন্টায় সর্বোচ্চ ২৩০ মিমি (৯.১ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।[৩]
ষষ্ঠ গভীর নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Deep depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | জুলাই ৬ – জুলাই ৮ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 55 km/h (35 mph) (3-min) 992 hPa (mbar) |
৫ জুলাই একটি লঘুচাপ অঞ্চল বার্মা উপকূলের দিকে পশ্চিমে সরে যায় এবং পরের দিন উত্তর-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় নিম্নচাপটি তীব্রতর হয়ে ৭ জুলাই গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। ৮ জুলাই সকালে এই ঘূর্ণিঝড়টি উড়িষ্যা উপকূলে আঘাত হানে এবং খুব দ্রুত স্থলভাগে নিম্নচাপের একটি বিস্তৃত অঞ্চলে পরিণত হয়।
আংশিক নিম্নচাপটি পশ্চিম বিহারের উপর দিয়ে উত্তর দিকে সরে যায় এবং ১২ জুলাই পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করে পরে এটি মৌসুমি জলপ্রবাহ দ্বারা শোষিত হয়েছিল। সমুদ্র উপকূলে সর্বোচ্চ ৫৫ কিমি/ঘ (৩৫ মা/ঘ) বেগে বাতাস রেকর্ড করা হয়েছিল। নিম্নচাপের ফলে পূর্ব ভারতের অনেক জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছিল। নিম্নচাপের অবশিষ্টাংশ শোষণ না করা পর্যন্ত স্থলভাগে প্রতিদিন ১০০ মিমি (৩.৯ ইঞ্চি) এরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছিল।[৩]
সপ্তম নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | আগস্ট ১৭ – আগস্ট ১৯ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 45 km/h (30 mph) (3-min) |
১৫ আগস্ট বার্মার উপর অবস্থিত একটি লঘুচাপ অঞ্চল বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে পশ্চিমে সরে যায় এবং ১৭ আগস্ট সন্ধ্যায় নিম্নচাপে পরিণত হয়। তখন এটি গোপালপুরের ১০০ কিমি (৬২ মা) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে সরে যায় এবং গোপালপুরের কাছে স্থলভাগে আঘাত হানে এবং আরও পশ্চিমে সরে যায়। ২০ আগস্ট নাগাদ যখন এটি পশ্চিম মধ্যপ্রদেশে অবস্থানকালে আংশিক নিম্নচাপে পরিণত হয়।
নিম্নচাপটির প্রভাবে কারণে দক্ষিণ ও মধ্য ভারতের বেশিরভাগ অংশে ব্যাপক বৃষ্টিপাতসহ কিছু জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়। মহারাষ্ট্রে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক এলাকায় বিশেষ করে রাজ্যের পূর্বাঞ্চলে সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। গোদাবরী নদীর পানি ভদ্রাচলমের কিছু অংশ এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অনেক গ্রামে প্লাবিত হয়। বৃষ্টিপাতের ফলে তেলেঙ্গানায় ধানক্ষেতের ক্ষতি হয় এবং সড়ক যোগাযোগ ব্যাহত হয়। ১৯ আগস্ট বোম্বেতে ২০০ মিমি (৭.৯ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।[৩]
অষ্টম ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]Cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | সেপ্টেম্বর ২ – সেপ্টেম্বর ১৩ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 65 km/h (40 mph) (3-min) |
৩১শে আগস্ট পশ্চিমবঙ্গের উপর কেন্দ্রীভূত একটি লঘুচাপ বলয় ২ সেপ্টেম্বর নিম্নচাপে পরিণত হয়। তখন এটি মেদিনীপুরের ৫০ কিমি (৩১ মা) পূর্বে অবস্থান করছিল। পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে এটি আরও তীব্র হয়ে পরের দিন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় যা রাঁচির ৫০ কিমি (৩১ মা) পূর্বে অবস্থান করছিল। ৭ সেপ্টেম্বর গুজরাটের আহমেদাবাদের কাছে দুর্বল হয়ে নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার আগে পর্যন্ত এটি পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে। এরপর নিম্নচাপটি উত্তর দিকে মোড় নেয় এবং দক্ষিণ-পশ্চিম রাজস্থানে প্রবেশ করে। ৮ সেপ্টেম্বর এই ঘূর্ণিঝড়টি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে ঘুরে যায় এবং পরের দিন সন্ধ্যায় আরব সাগরে নেমে যায়। সাগরের উপর দিয়ে অতিক্রমকালে এটি আবার তীব্র হয়ে ওঠে এবং ১০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা নাগাদ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। ১১ সেপ্টেম্বর ঘূর্ণিঝড়টির স্বল্প সময়ের জন্য চোখ ফুটে উঠে এবং ধীরে ধীরে পশ্চিম দিকে সরে যায়। ১৪ সেপ্টেম্বর নাগাদ ওমান উপকূলের কাছে পৌঁছানোর সাথে সাথে নিম্নচাপের একটি বিস্তৃত অঞ্চলে পরিণত হয়।[৩]
ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রমকালে ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায়। পশ্চিমবঙ্গে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে অনেক জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয় এবং কিছু প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে প্রতিবেশী ওড়িশার কিছু অংশে বন্যার পানি ঢুকে ফসলের ক্ষতি হয়। বর্ধমানে দুই দিনে ৩৯০ মিমি (১৫ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়। পশ্চিমবঙ্গে কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে। নর্মদা এবং তাপ্তি নদী উভয়ই মধ্যপ্রদেশ এবং গুজরাটের বেশকিছু অংশ প্লাবিত করেছিল। গুজরাটে বন্যায় অনেক প্রাণহানি ঘটে এবং ফসল ও অন্যান্য সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষতি হয়। গুজরাটের ভারুচ জেলার দুটি গ্রামের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ জন বন্যার পানিতে ভেসে যায়। ঘূর্ণিঝড়টি অতিক্রম করার সময় ৭ জুলাই সুরাটে ২৬০ মিমি (১০ ইঞ্চি) এবং কচ্ছ জেলায় আরও ৮০ মিমি (৩.১ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়।[৩]
নবম গভীর নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Deep depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | সেপ্টেম্বর ৮ – সেপ্টেম্বর ১৮ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 55 km/h (35 mph) (3-min) 990 hPa (mbar) |
৮ সেপ্টেম্বর একটি লঘুচাপ অঞ্চল বার্মা থেকে বঙ্গোপসাগরের দিকে সরে গিয়ে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে আরও শক্তিশালী হয়ে পরের দিন গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং তখন এটি কলকাতা থেকে ১৫০ কিমি (৯৩ মা) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। পরে এটি পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করে এবং উত্তর-পশ্চিমে ছোট নাগপুর মালভূমি পেরিয়ে যায়। ১২ সেপ্টেম্বর উত্তর প্রদেশের উপর নিম্নচাপটি অবস্থান করে এবং ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লখনউয়ের কাছাকাছি অবস্থান করে। এরপর নিম্নচাপটি পূর্ব দিকে মোড় নেয় এবং ১৮ সেপ্টেম্বর উত্তর বিহারের উপর দিয়ে দুর্বল হয়ে একটি আংশিক নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি তার পুরো সময়কালে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, বিহার, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং লখনউর পর্যন্ত পশ্চিমে সর্বোচ্চ ১৪০ মিমি (৫.৫ ইঞ্চি) পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। উত্তর প্রদেশে বৃষ্টিপাতের ফলে সম্পত্তির মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বন্যা দেখা দেয়। সেইসাথে প্রায় ১৫০ জন প্রাণ হারায়। উত্তর বিহারে গঙ্গা নদীর পানি মুঙ্গের জেলার কিছু অংশ প্লাবিত করে। অন্যদিকে গণ্ডকী নদী মোতিহারীর কিছু অংশ প্লাবিত করে। বৃষ্টিপাত দক্ষিণবঙ্গের বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটায়। বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৮০ জনে দাঁড়ায় এবং আক্রান্ত হয় প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ। সেইসাথে ফসল ও বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। উড়িষ্যার জলেশ্বর সম্পূর্ণরূপে প্লাবিত হয়েছিল।[৩]
দশম নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | সেপ্টেম্বর ২১ – সেপ্টেম্বর ২৩ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 45 km/h (30 mph) (3-min) |
২০শে সেপ্টেম্বর পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি সুনির্দিষ্ট লঘুচাপ অঞ্চল তৈরি হয় এবং পরের দিন সকালে এটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। এসময় নিম্নচাপটি বিশাখাপত্তনমের প্রায় ১০০ কিমি (৬২ মা) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এরপর নিম্নচাপটি বিদর্ভ অতিক্রম করে স্থলভাগের উপর দিয়ে সরে যায় এবং ২৩ সেপ্টেম্বর গুজরাটের উপর দিয়ে দুর্বল হয়ে একটি আংশিক নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি দেশের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় উত্তর দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে এবং এর অবশিষ্টাংশের প্রভাবে পরের পুরো সপ্তাহজুড়ে গুজরাটে বিক্ষিপ্তভাবে বৃষ্টিপাত হয়। হায়দ্রাবাদ এবং সেকেন্দ্রাবাদে চার ঘন্টা ধরে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে শহর দুটির অনেক ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। বোম্বেতে প্রায় ১৩০ মিমি (৫.১ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে প্রায় ৭৫ জন প্রাণ হারায়।[৩]
একাদশ নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | অক্টোবর ১১ – অক্টোবর ১৩ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 45 km/h (30 mph) (3-min) |
১১ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরে তৈরি একটি লঘুচাপ অঞ্চল দক্ষিণ ভারতীয় উপমহাদেশের উপর দিয়ে অতিক্রম করে দক্ষিণ মহারাষ্ট্র উপকূলে আরব সাগরে পতিত হয়ে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয়। পশ্চিম দিকে সরে যাওয়ার সাথে সাথে নিম্নচাপটি আর বিকশিত হয়নি এবং ১৩ অক্টোবর আরব উপদ্বীপের দিকে এগিয়ে আসার সাথে সাথে এটি নিম্নচাপ অঞ্চলে পরিণত হয়। নিম্নচাপের ফলে দক্ষিণ মহারাষ্ট্র এবং কর্ণাটক রাজ্যে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। কর্ণাটকের কারওয়ারে রেকর্ডকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৪০ মিলিমিটার (১.৬ ইঞ্চি)। লাক্ষাদ্বীপ অঞ্চলেও বিক্ষিপ্তভাবে ভারী বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গিয়েছিল।
দ্বাদশ তীব্র ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]
Very severe cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | অক্টোবর ১৮ – অক্টোবর ২৪ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 130 km/h (80 mph) (3-min) 980 hPa (mbar) |
১৮ অক্টোবর মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয় এবং উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। এটি ধীরে ধীরে তীব্র হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে মোড় নেয় এবং ২০ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। পরের দিন ঝড়টি এই মৌসুমের দ্বিতীয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয় এবং গাঙ্গেয় বদ্বীপ বরাবর আরও উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। স্থলভাগে আঘাত হানার আগে ঘূর্ণিঝড়টির সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ১৩০ কিমি/ঘ (৮০ মা/ঘ)। ২৩ অক্টোবর সকালে পশ্চিমবঙ্গ-পূর্ব পাকিস্তান সীমান্তের কাছে এটি আঘাত হানে এবং দুর্বল হয়ে ২৪শে অক্টোবর দক্ষিণ আসামের উপর দিয়ে চলে যায়।
এই ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টির সময় তামিলনাড়ুতে এবং বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে অগ্রসর হওয়ার সময় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে। পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র বৃষ্টিপাতের ফলে ভূমিধ্বসের সৃষ্টি করে। ২৪শে অক্টোবর ভারতের শিলংয়ে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল ২২০ মিমি (৮.৭ ইঞ্চি) পড়েছিল। কলকাতার পূর্ব দিক দিয়ে অতিক্রম করার সময় ১০৫ কিমি/ঘ (৬৫ মা/ঘ) বেগের ঝোড়ো হাওয়ায় সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছিল।
ঘূর্ণিঝড়টির ফলে পূর্ব পাকিস্তানে ২০০ থেকে ৩০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল খুলনা জেলায়। এ জেলায় ২০০ টিরও বেশি গ্রাম ধ্বংস হয়ে কয়েক হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়।[৪]
ত্রয়োদশ অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]Extremely severe cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | নভেম্বর ৮ – নভেম্বর ১৩ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 185 km/h (115 mph) (3-min) 960 hPa (mbar) |
৮ নভেম্বর সকালে দক্ষিণ-মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি নিম্নচাপ তৈরি হয়। এটি খুব ধীরে ধীরে উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে পরের দিন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। উপসাগরের অগ্রভাগের দিকে এগিয়ে আসার সাথে সাথে ঘূর্ণিঝড়টি তীব্রতর হতে থাকে। ১১ নভেম্বর এটি মৌসুমের তৃতীয় তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। সেইদিনই সন্ধ্যায় এটি সর্বোচ্চ গতিবেগ অর্জন করেছিল। ৩ মিনিটে ১৮৫ কিমি/ঘ (১১৫ মা/ঘ) বেগে এবং ১ মিনিটে ২৪০ কিমি/ঘ (১৫০ মা/ঘ) গতিবেগে চলার মাধ্যমে এটি মৌসুমের সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়ে পরিণত হয়েছিল।[৫] একটি সুস্পষ্ট চোখও তৈরি হয়েছিল। ১১ নভেম্বর ভারতের ৫৫০০ টনের মালবাহী জাহাজ মহাজগমিত্র ঘণ্টায় ১৮০ মাইল বেগে বাতাসের রেকর্ড করেছিল এবং ৫০ জন যাত্রী নিয়ে ভারতের পূর্ব উপকূলে ডুবে যাওয়ার আগে একটি বিপদ সংকেত দিয়েছিল। এরপর ১২ নভেম্বর রাতে ঘূর্ণিঝড়টি পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) উপকূলে আছড়ে পড়ে । ঘূর্ণিঝড়টি দ্রুত দুর্বল হয়ে স্থলের দিকে অগ্রসর হয় এবং পরের দিন দক্ষিণ আসামের উপর দিয়ে মিলিয়ে যায়।
এই ঘূর্ণিঝড় গাঙ্গেয় বদ্বীপে ১০ মিটার (৩৩ ফুট) উচ্চতার এক ভয়াবহ ঝড়ো জলোচ্ছ্বাসের সৃষ্টি করে। মূলত এই ঢেউয়ের ফলেই প্রায় ৩ থেকে ৫ লক্ষ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল।[১] যা এই ঘূর্ণিঝড়কে এখন পর্যন্ত রেকর্ড করা সবচেয়ে মারাত্মক গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় এবং বর্তমানকালের সবচেয়ে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলির মধ্যে একটির জায়গা করে নিয়েছে।[৬] ঝড়ের ফলে মোট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যায় যা ২০০৮ সালের হিসাবে প্রায় ৪৮০ মিলিয়ন ডলারের সমান। এই অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্য উৎপাদন ক্ষমতার বেশিরভাগই ধ্বংস হয়ে যায়। সর্বমোট প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
ঝড়ের পর ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনায় উদাসীনতার জন্য পাকিস্তান সরকার পূর্ব পাকিস্তানের স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা এবং আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম উভয়েরই তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে। ডিসেম্বরে পূর্ব পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ১৬২টি আসনের মধ্যে ১৬০টি আসন লাভ করে বিরোধীদল আওয়ামী লীগ ভূমিধস বিজয় অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানিদের এবং কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে অব্যাহত অস্থিরতার ফলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হয় যা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সৃষ্টির মাধ্যমে পরিণতি ল্ভ করে। আধুনিক যুগে এটিই প্রথম কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটাতে মূল চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছিল।[৭][৮]
চৌদ্দ গভীর নিম্নচাপ
[সম্পাদনা]Deep depression (IMD) | |
স্থিতিকাল | নভেম্বর ১৯ – নভেম্বর ২০ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 50 km/h (30 mph) (3-min) |
দক্ষিণ আন্দামান সাগরের উপর তৈরি একটি লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর পেরিয়ে পশ্চিম দিকে সরে যায় এবং ১৯ নভেম্বর সকালে একটি নিম্নচাপে পরিণত হয় যখন এটি মাদ্রাজের প্রায় ৬০০ কিমি (৩৭০ মা) দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থান করছিল। এই ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম-উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও তীব্রতর হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয় এবং পরের দিন তামিলনাড়ুর স্থলভাগে আঘাত হানে। নিম্নচাপটি পরবর্তীতে তামিলনাড়ুর উপর দিয়ে দুর্বল হয়ে একটি আংশিক নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপের ফলে তামিলনাড়ুর বেশিরভাগ অংশে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। যার ফলে পুদুচেরি থেকে আতিরামপট্টিনাম পর্যন্ত নিচু উপকূলীয় অঞ্চলসহ উপকূলীয় অঞ্চলগুলিতে ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তামিলনাডুর তাঞ্জাবুর জেলায় ফসল ও বাসস্থানের ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং মাদ্রাজে বৃষ্টির কারণে হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। কুড্ডালোরে আকস্মিকভাবে ৪৪০ মিমি (১৭ ইঞ্চি) এরও বেশি বৃষ্টিপাত হয় যার মধ্যে শুধু ২০ নভেম্বরেই ৩১০ মিমি (১২ ইঞ্চি) বৃষ্টিপাত হয়।[৩]
পঞ্চদশতম ঘূর্ণিঝড়
[সম্পাদনা]Cyclonic storm (IMD) | |
স্থিতিকাল | নভেম্বর ২২ – নভেম্বর ২৯ |
---|---|
চুড়ান্ত তীব্রতা | 75 km/h (45 mph) (3-min) |
২১শে নভেম্বরের শেষের দিকে কেরালার উপকূলে আরব সাগরে একটি আংশিক নিম্নচাপের আবির্ভাব হয় এবং পরের দিন পশ্চিম দিকে অগ্রসর হওয়ার সাথে সাথে এটি একটি নতুন নিম্নচাপে পরিণত হয়। নিম্নচাপটি আরও তীব্রতর হয়ে পশ্চিমে সরে গিয়েছিল এবং ধীরে ধীরে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে মোড় নিয়েছিল। ২৮ নভেম্বর সুকাত্রার দক্ষিণ-পূর্বে এটি একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। এর কিছুসময় পরেই সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ৭৫ কিমি/ঘ (৪৫ মা/ঘ)। ঘূর্ণিঝড়টি পশ্চিম-দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে থাকে এবং পরের দিন সোমালিয়া উপকূলে আবারো একটি আংশিক নিম্নচাপ অঞ্চলে পরিণত হয়ে দ্রুত দুর্বল হয়ে পড়ে। এটি ছিল ১৯৭০ সালে উত্তর ভারত মহাসাগরের সর্বশেষ ঘূর্ণিঝড়। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ২২ থেকে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত লাক্ষাদ্বীপে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়। যার মধ্যে ২৩ নভেম্বর আমিনীতে বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় ৬০ মিমি (২.৪ ইঞ্চি)।[৩]
মৌসুমের প্রভাব
[সম্পাদনা]১৯৭০ সালের উত্তর ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুমের সমস্ত ঝড়ের একটি তালিকাটি নিচে দেওয়া হল। এতে মৌসুমের সমস্ত ঝড় এবং তাদের নাম, সময়কাল, সর্বোচ্চ তীব্রতা (আইএমডি ঝড়ের স্কেল অনুসারে), ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা, ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর মোট সংখ্যা উল্লেখ করা হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর মোট পরিমাণের মধ্যে সেই ঝড়ের পূর্বসূরী তরঙ্গ বা অতিক্রান্তীয় নিম্নচাপের সময় ঘটে যাওয়া ক্ষয়ক্ষতি এবং মৃত্যুর পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এবং সমস্ত ক্ষয়ক্ষতির পরিমান ১৯৭০ সালের মার্কিন ডলারের সমমান ধরে হিসাব করা হয়েছে।
নাম | তারিখ | সর্বোচ্চ তীব্রতা | ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা | ক্ষতি (ইউএস ডলার) |
মৃত্যু | সূত্র | ||
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
শ্রেণী | বাতাসের গতিবেগ | বায়ূচাপ | ||||||
প্রথম | মে ২-৭, ১৯৭০ | অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় | ১৫০ কিমি/ঘ (৯৫ মা/ঘ) | ৯৭৫ হেPa (২৮.৭৯ inHg) | বাংলাদেশ, মিয়ানমার | [৩] | ||
দ্বিতীয় | মে ২৩-২৪, ১৯৭০ | নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | বাংলাদেশ, মিয়ানমার | [৩] | ||
তৃতীয় | মে ২৮ - জুন ২, ১৯৭০ | তীব্র ঘূর্ণিঝড় | ৯৫ কিমি/ঘ (৬০ মা/ঘ) | ৯৮৬ হেPa (২৯.১২ inHg) | সৌদি আরব | [৩] | ||
চতুর্থ | জুন ৭-৮, ১৯৭০ | ঘূর্ণিঝড় | ৬৫ কিমি/ঘ (৪০ মা/ঘ) | ৯৮২ হেPa (২৯.০০ inHg) | পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, মধ্য প্রদেশ | [৩] | ||
পঞ্চম | জুন ২৯ - জুলাই ৩, ১৯৭০ | গভীর নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | ওড়িশা | [৩] | ||
ষষ্ঠ | জুলাই ৬-৮, ১৯৭০ | গভীর নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | বার্মা, ওড়িশা | [৩] | ||
সপ্তম | আগস্ট ১৭-১৯, ১৯৭০ | গভীর নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | বার্মা, ওড়িশা | [৩] | ||
অষ্টম | সেপ্টেম্বর ২-১৩, ১৯৭০ | ঘূর্ণিঝড় | অজানা | অজানা | পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আরব উপকূল | [৩] | ||
নবম | সেপ্টেম্বর ৮-১৮, ১৯৭০ | গভীর নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | বার্মা, পশ্চিমবঙ্গ | [৩] | ||
দশম | সেপ্টেম্বর ২১-২৩, ১৯৭০ | নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | অন্ধ্র প্রদেশ | [৩] | ||
একাদশ | অক্টোবর ১১-১৩, ১৯৭০ | নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | সৌদি আরব | [৩] | ||
দ্বাদশ | অক্টোবর ১৮-২২, ১৯৭০ | অতি তীব্র ঘূর্ণিঝড় | ১৩০ কিমি/ঘ (৮০ মা/ঘ) | ৯৮০ হেPa (২৮.৯৪ inHg) | তামিলনাডু, পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ | ২০০-৩০০ | [৩] | |
ত্রয়োদশ (১৯৭০ ভোলা ঘূর্ণিঝড়) | নভেম্বর ৮-১৩, ১৯৭০ | অত্যন্ত তীব্র ঘূর্ণিঝড় | ১৮৫ কিমি/ঘ (১১৫ মা/ঘ) | ৯৬৬ হেPa (২৮.৫৩ inHg) | ভারত, বাংলাদেশ | ৩০০,০০০-৫০০,০০০ | [৩][৫] | |
চতুর্দশ | নভেম্বর ১৯-২০, ১৯৭০ | গভীর নিম্নচাপ | অজানা | অজানা | তামিলনাডু | [৩] | ||
পঞ্চদশ | নভেম্বর ২২-২৯, ১৯৭০ | ঘূর্ণিঝড় | ৭৫ কিমি/ঘ (৪৫ মা/ঘ) | অজানা | সোমালিয়া | [৩] | ||
মৌসুম সমষ্টি | ||||||||
১৫ টি | মে ২ - নভেম্বর ২৯, ১৯৭০ | ১৫০ কিমি/ঘ (৯৫ মা/ঘ) | ৯৭৫ হেPa (২৮.৭৯ inHg) | অজানা | ≥৩০২,০০০ |
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- উত্তর ভারত মহাসাগরের গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়
- গ্রীষ্মমন্ডলীয় ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ডের তালিকা
- ১৯৭০ আটলান্টিক হারিকেন মৌসুম
- ১৯৭০ সালের প্রশান্ত মহাসাগরীয় হারিকেন মৌসুম
- ১৯৭০ প্রশান্ত মহাসাগরীয় টাইফুন মৌসুম
- অস্ট্রেলিয়ান ঘূর্ণিঝড় মৌসুম: ১৯৬৯-৭০, ১৯৭০-৭১
- দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ঘূর্ণিঝড় মৌসুম: ১৯৬৯-৭০, ১৯৭০-৭১
- দক্ষিণ-পশ্চিম ভারত মহাসাগরের ঘূর্ণিঝড় মৌসুম: ১৯৬৯-৭০, ১৯৭০-৭১
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ "ভোলা ঘূর্ণিঝড়: ৫০ বছর আগের সাইক্লোন যেভাবে বদলে দিয়েছিল তৎকালীন পাকিস্তানের রাজনীতি"। BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৪।
- ↑ "উপকূলবাসীর দুঃখগাথা সেই ভয়াল ১২ নভেম্বর আজ | জাতীয়"। BSS। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৪।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ চ ছ জ ঝ ঞ ট ঠ ড ঢ ণ ত থ দ ধ ন প ফ ব ভ ম য India Weather Review Annual Summary — Part-C: Storms and Depressions 1970 (পিডিএফ) (প্রতিবেদন)। India Meteorological Department। ১৯৭১। জুন ১৪, ২০১৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ মে ২৬, ২০২০।
- ↑ Staff writer (অক্টোবর ২৭, ১৯৭০)। "125 Die In Hurricane In Pakistan"। The Daily Gleaner। Reuters। পৃষ্ঠা 15। সংগ্রহের তারিখ মে ২১, ২০২৪ – Newspaper Archive-এর মাধ্যমে।
- ↑ ক খ Schwerdt, Richard (জানুয়ারি ১৯৭১)। "Worst Cyclone of the Century Batters East Pakistan"। Mariners Weather Log। National Oceanic and Atmospheric Administration। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৪।
- ↑ Kabir, M. M.; Saha B. C.। "Cyclonic Storm Surge Modelling for Design of Coastal Polder" (পিডিএফ)। Institute of Water Modeling। জুন ২২, ২০০৭ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৫, ২০০৭।
- ↑ Olson, Richard (ফেব্রুয়ারি ২১, ২০০৫)। "A Critical Juncture Analysis, 1964–2003" (পিডিএফ)। USAID। সেপ্টেম্বর ১৯, ২০০৯ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৫, ২০০৭।
- ↑ এক্সপ্লেইন, স্টার (২০২৪-০৫-২৫)। "সত্তরের ভোলা ঘূর্ণিঝড় যেভাবে বদলে দিয়েছিল পাকিস্তানের ইতিহাস"। দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৪।