বিষয়বস্তুতে চলুন

১৮২৪-এর ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১৮২৪ এর ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি
ধরণদ্বিপাক্ষিক চুক্তি
স্বাক্ষর১৭ মার্চ ১৮২৪ (1824-03-17)
স্থানলন্ডন, যুক্তরাজ্য, ইউনাইটেড কিংডম অফ গ্রেট ব্রিটেইন এন্ড আয়ারল্যান্ড
মূল স্বাক্ষরকারী United Kingdom
 Netherlands
অনুমোদনকারীUK
Netherlands

১৮২৪-এর ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি (লন্ডন চুক্তি নামেও পরিচিত) হচ্ছে লন্ডনে তদকালীন যুক্তরাজ্য এবং নেদারল্যান্ডের যুক্তরাজ্য এর মধ্যে ১৮২৪ সালের ১৭ মার্চে সাক্ষরিত একটি চুক্তি। এই চুক্তিতে ১৮১৪-এর ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি নির্বাহ করার ক্ষেত্রে তৈরি বিবাদ নিরসনের জন্য এই চুক্তি করা হয়েছিল। ওলন্দাজদের পক্ষ থেকে এই চুক্তিতে সাক্ষর করেন হেন্ড্রিক ফাগেল এবং এন্টন রেইনহার্ড ফাল্ক এবং যুক্তরাজ্যের হয়ে এই চুক্তিতে সাক্ষর করেন জর্জ ক্যানিং এবং চার্লস উইলিয়াম-ওয়েইন

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

নেপলীয় যুদ্ধের সময় ১৮১৪ সালের চুক্তি অনুযায়ী ওলন্দাজদের সম্পত্তিগুলোকে ইংরেজরা নিয়ে নিতে গেলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। সেই সাথে মশলার দ্বিপপুঞ্জকে ঘিরে কয়েকশ বছর ধরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের অধিকার নিয়ে ঝামেলা চলছিল। ১৮১৪ সালে যে চুক্তিটি করা হয় তা ইংরেজ আর ওলন্দাজ কোন পক্ষ থেকেই মালয় অঞ্চলে পরিষ্কার করে জানানো হয়নি আর সেগুলোর সীমাবদ্ধতাগুলো বলা হয়নি। স্যার স্ট্যামফোর্ড র‍্যাফলসের দ্বারা ১৮১৯ সালে ইংরেজদের মালয় উপদ্বিপে সিংগাপুর প্রতিষ্ঠিত করা দুটি রাষ্ট্রের মধ্যে উত্তেজনা বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে ওলন্দাজরা দাবি করে যে র‍্যাফলস আর জোহরের সুলতানের মধ্যে যে চুক্তি হয় তা অবৈধ, কেননা জোহর সালতানাত ওলন্দাজের প্রভাব বলয়ে পড়ে। ব্রিটিশ ভারতে অবস্থিত ওলন্দাজদের বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্নগুলোও কলকাতা আর বাটাভিয়ার মধ্যকার বিবাদের কারণে পরিণত হয়। ১৮২০ সালে দূর প্রাচ্যে ব্রিটিশ বণিকদের বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে তারা দখিণ পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতিকে পরিষ্কার করার জন্য দুই দেশের মধ্যে আলাপালোচনার জন্য তাড়া দিতে থাকে। এসবের উপর ভিত্তি করেই ১৮২৪ এর ইংরেজ-ওলন্দাজ চুক্তিটি তৈরি করা হয়েছিল।

ক্যানিং এবং ফাগেল এর মধ্যে আলাপালোচনা শুরু হয় ১৮২০ সালের ২০ জুলাইইয়ে। ওলন্দাজরা ইংরেজদের সিংগাপুর ত্যাগ করতে হবে এই দাবিতে অনড় ছিল। অন্যদিকে ক্যানিং নিশ্চিত ছিলেন না যে ঠিক কোন পরিস্থিতিতে সিংগাপুরকে অর্জন করা হয়েছে। আর প্রথম দিকে কেবল অবিতর্কিত সমস্যাগুলো যেমন মুক্ত-নৌচালনা অধিকার এবং জলদস্যুদের নির্মূল করার ব্যাপারেই সম্মতি অর্জন করা হয়েছিল। এই বিষয়ে আলোচনা ১৮২০ সালের ৫ আগস্টে স্থগিত হয়ে যায়, এবং ১৮২৩ সালের পূর্ব পর্যন্ত এই আলোচনা আর এগোয়নি। এই সময়ে এই বিষয়ে আলোচনা পুনরায় শুরু হবার কারণ ছিল যে, ইংরেজদের দ্বারা সিংগাপুরের বাণিজ্যিক মূল্য সুস্বীকৃত ছিল। ১৮২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বরে আলোচনা পুনরায় শুর হয়, এসময় সেই অঞ্চলে স্পষ্ট প্রভাব বলয় প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে এই আলোচনা শুরু হয়। ওলন্দাজরা এটা বুঝতে পারে যে সিংগাপুরের বৃদ্ধিকে কমানো বা বন্ধ করা যাব না, তাই তারা এর বদলে বিনিময়ের দিকে জোড় দিল। তারা মালাক্কা প্রণালীর উত্তরাঞ্চল এবং তাদের ভারতীয় উপনিবেশগুলোর দাবি ছেড়ে দিতে চায় এবং বিনিময়ে তারা মালাক্কা প্রণালীর দক্ষিণাঞ্চল এবং বেনকুলেনে ইংরেজ উপনিবেশ (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বেংকুলু) দাবি করে। সর্বশেষ চুক্তিটি ১৮২৪ সালের ২৩ মার্চে ফাগেল এবং ক্যানিং এর দ্বারা সাক্ষরিত হয়।

চুক্তির শর্ত

[সম্পাদনা]

এই চুক্তি অনুসারে, উভয় রাষ্ট্রই ব্রিটিশ ভারত, সিলন এবং বর্তমান সময়ের ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিংগাপুরে "সর্বাধিক বিশেষ সুবিধাপ্রাপ্ত রাষ্ট্র" এর ভিত্তিতে বাণিজ্য করতে পারবে, কিন্তু এদেরকে অবশ্যই স্থানীয় নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে। এটি এই দুই দেশের মধ্যে একটি দেশের বণিক এবং জাহাজের ক্ষেত্রে অন্য দেশে বাণিজ্য করার জন্য যে কর লাগতে পারে তা সীমিত করে দেয়। তারা এতেও সম্মত হয় যে, তারা পূর্বাঞ্চলের দেশগুলোর সাথে এমন কোন চুক্তি করবে না যেখানে দুই দেশের কোন একটি দেশ অনুপস্থিত থাকে। তারা এই বিষয়ে সম্মত হন যে বাণিজ্যে ব্যাঘাত সৃষ্টি করার জন্য তারা সামরিক বা বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করবে না। তারা জলদস্যুতার বিরোধিতা করতে, জলদস্যুদের লুকোবার জায়গা না দিতে, তাদের রক্ষা না করতে এবং তাদের সামগ্রি বিক্রি করতে না দিতে রাজি হয়। তারা এতেও সম্মত হয় তাদের কোন স্থানীয় কর্মকর্তা ইউরোপে তাদের সরকারের কাছে অনুমতি না নিয়ে পূর্বভারতীয় দ্বিপপুঞ্জে কোন নতুন দপ্তর চালু করবেন না।

  • ইংরেজরা মালুকু দ্বিপপুঞ্জে, বিশেষ করে আম্বন, বান্দা এবং টারনেটে বাণিজ্য করার অধিকার লাভ করবে।
  • নেদারল্যান্ডস ভারতীয় উপমহাদেশে তার সকল উপনিবেশ (১৬০৯ সাল থেকে ওলন্দাজ ভারত) এবং সেগুলোর সাথে যুক্ত থাকার অধিকার ত্যাগ করবে।
  • যুক্তরাজ্য বেনকুলেনে (বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার বেংকুলু) তাদের মার্লবোরো দুর্গের কারখানা এবং সুমাত্রা দ্বিপে থাকা তাদের সকল সম্পত্তি নেদারল্যান্ডসকে সমর্পন করবে এবং তারা সেই দ্বিপে আর কোন দপ্তর খুলবে না এবং এর শাসকদের সাথে আর কোন চুক্তি করবে না।
  • নেদারল্যান্ডস মালাক্কার শহর ও দুর্গ ইংরেজদের কাছে সমর্পন করবে এবং মালয় উপদ্বিপে আর কোন দপ্তর খুলতে পারবে না এবং এর শাসকদের সাথে কোন চুক্তি করতে পারবে না।
  • যুক্তরাজ্য নেদারল্যান্ডস এর বিলিটন দ্বিপের দখলের প্রতি বিরোধিতা বন্ধ করে।
  • নেদারল্যান্ডস যুক্তরাজ্যের সিংগাপুর দ্বিপের দখলের প্রতি বিরোধিতা বন্ধ করে।
  • যুক্তরাজ্য কারিমন দ্বিপপুঞ্জে বা বাতাম, বিনতান, লিংগিন, বা সিংগাপুর প্রণালীর দক্ষিণে অবস্থিত অন্যান্য দ্বিপগুলোতে কোন দপ্তর প্রতিষ্ঠা না করতে, বা সেইসব অঞ্চলের শাসকদের সাথে কোনরকম চুক্তি না করতে রাজি হয়।

সম্পত্তি এবং উপনিবেশের সকল স্থানান্তর ১৮২৫ সালের ১ মার্চ থেকে শুরু হবার কথা বলা হয়। তারা ১৮১৭ সালের ২৪ জুনে হওয়া জাভায় একটি সম্মেলন অনুসারে, নেদারল্যান্ডসকে জাভা ফিরিয়ে দেয়াতে রাজি হয়, কিন্তু ১৮২৫ সালের পূর্বে লন্ডনে নেদারল্যান্ডস এর দ্বারা যে ১ লক্ষ পাউন্ড দেবার কথা ছিল তা নাকোচ হয়। যুক্তরাজ্যের দ্বারা চুক্তিটি ১৮২৪ সালের ৩০ এপ্রিলে অনুমোদিত হয় এবং নেদারল্যান্ডস এর দ্বারা ১৮২৪ সালের ২ জুনে অনুমোদিত হয়।

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]