১২ মুহররম
অবয়ব
১২ মহররম হল ইসলামি চান্দ্র বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস মুহররম ও হিজরি বছরের ১২তম দিন এবং এরপর থেকে হিজরি বছর শেষ হতে আরো ৩৪২ বা ৩৪৩ দিন বাকি থাকে।
ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]- ৬৯৪ হিজরি – মামলুক নেতা আদিল জাইনুদ্দিন কুতুবগা আল-মানসুরি’ মিশরের শাসনভার গ্রহণ করেন এবং মামলুক বাহরি সালতানাতের দশম সুলতান হিসেবে অভিষিক্ত হন। এই সালতানাত মধ্যযুগীয় ইসলামি বিশ্বের এক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ও রাজনৈতিক শক্তি ছিল, যা মিশর ও সিরিয়ায় প্রভাব বিস্তার করেছিল।[১]
- ১১২০ হিজরি – উসমানীয় বাহিনী ও আলজেরীয় মুজাহিদরা একত্র হয়ে স্পেন অধিকৃত গুরুত্বপূর্ণ আলজেরীয় শহর ‘ওহরান’ পুনরুদ্ধার করেন। এই বিজয়ে ৭৫০০ জন মুসলিম মৃত্যু বরণ করেন। প্রায় ১৫ হাজার স্পেনীয় সৈন্য নিহত হয় এবং ৫ হাজার বন্দি হয়।
- ১৩২৩ হিজরি–শায়খ আব্দুর রহমান আল-শার্বিনি 'আল-আজহার' বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বা শায়খ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন। তিনি ছিলেন আল-আজহারের ২৭তম শায়খ এবং তিনি শিক্ষা, ফিকহ ও ধর্মীয় নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
- ১৩২৬ হিজরি –মিশরীয় জাতীয় নেতা মোহাম্মদ ফরিদ 'আল-হিজব আল-ওয়াতানী আল-মিসরীর' (মিশরীয় জাতীয় দল) নেতা নির্বাচিত হন। পূর্বতন নেতা মুস্তফা কামালের মৃত্যুর পর পদটি শূন্য হয়ে পড়েছিল।
- ১৩৩৯ হিজরি – ফরাসি সেনাপতি হেনরি গুরোর নেতৃত্বে ফরাসিরা দামেস্ক দখল করে এবং শরিফ হুসেইন ইবনে আলীর পুত্র ফয়সালের বাহিনীকে পরাজিত করে। ঘটনাটি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর শাম অঞ্চলে ফরাসি আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হয়।
- ১৩৫৮ হিজরি – ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নেতা মহাত্মা গান্ধী মুম্বাই শহরে উপবাস ধর্মঘট শুরু করেন। এর উদ্দেশ্যে ছিল ভারতের একতা ও স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গড়ে তোলা।
- ১৩৬১ হিজরি– দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে নাৎসি জার্মান বাহিনী লিবিয়ার বেনগাজি শহর দখল করে নেয়।
- ১৩৭৫ হিজরি – ইসরায়েলি সেনারা ফিলিস্তিনের খান ইউনুস শহরে এক রক্তক্ষয়ী গণহত্যা চালায়, যাতে ৩৬ জন নিরীহ ফিলিস্তিনি শহীদ হন এবং আরও ৩১ জন আহত হন।
- ১৩৯৯ হিজরি – সৌদি রাজা খালিদ বিন আব্দুল আজিজ রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত 'প্রিন্স সুলতান মিলিটারি মেডিক্যাল সিটির' উদ্বোধন করেন।
- ১৪০৬ হিজরি–রাজনৈতিক টানাপোড়েনের কারণে তিউনিসিয়ার সরকার লিবিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
- ১৪০৮ হিজরি –
- ১৪২৫ হিজরি– মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড একটি পূর্ণাঙ্গ জাতীয় সংস্কার প্রস্তাবনা প্রকাশ করে। এতে মোট ১৩টি দিক তুলে ধরা হয়, যার মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ‘মধ্যপ্রাচ্য বিস্তৃত উদ্যোগের' প্রতিক্রিয়া জানায়।
- ১৪৩০ হিজরী: জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ একটি প্রস্তাব নম্বর ১৮৬০ গ্রহণ করে। এ প্রস্তাবে অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় চলমান আগুন-বিনিময় বা সংঘর্ষ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাব অনুযায়ী, যুদ্ধবিরতির পরে ইসরায়েলি বাহিনীকে সম্পূর্ণরূপে গাজা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত মূলত ২০০৮-২০০৯ সালে গাজা অঞ্চলে ইসরায়েলের সামরিক আগ্রাসন বন্ধ করার জন্য গৃহীত হয়েছিল।
- ১৪৩৩ হিজরি:
- অন্তর্বর্তীকালীন ইয়েমেনি রাষ্ট্রপতি আব্দ রাব্বু মনসুর হাদি একটি ঐতিহাসিক ডিক্রি জারি করেন, যার মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যের সরকার গঠিত হয় এবং এই সরকারের নেতৃত্বে ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা মুহাম্মদ বাসিন্দওয়া। এই পদক্ষেপটি উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের উদ্যোগে গৃহীত ইয়েমেনি সংকট সমাধানের পরিকল্পনার অংশ ছিল।
- মিশরে কামাল আল-জানজুরির নেতৃত্বাধীন সরকার শপথ গ্রহণ করে। মিশরের সামরিক পরিষদের প্রধান মাশীর মোহাম্মদ হোসেন তানতাবির সামনে তারা শপথ নেন। এই পরিষদ একটি আদেশ জারি করে, যার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রপতির বেশিরভাগ কার্যনির্বাহী ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তবে রাষ্ট্রপতির সামরিক ও বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা এই আদেশের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।
- তিউনিসিয়ার জাতীয় সাংবিধানিক পরিষদ একটি অস্থায়ী সংবিধানের পক্ষে ভোট দেয়। এই সংবিধানটি দেশের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নির্ধারণ করে এবং একটি অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের পথ খুলে দেয়।
- ১৪৩৯ হিজরি: সিরিয়ার দামেস্কে অবস্থিত মাইদান এলাকার একটি পুলিশ বিভাগে একটি আত্মঘাতী হামলার ঘটনা ঘটে। এই হামলায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন এবং আরও অনেকে আহত হন।
- ১৪৪০ হিজরি: ইরানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের আহওয়াজ শহরে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ চলাকালীন একদল সশস্ত্র ব্যক্তি হামলা চালায়। এই কুচকাওয়াজটি প্রথম ইরান-ইরাক উপসাগরীয় যুদ্ধের বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ছিল। হামলায় ২৯ জন নিহত এবং ৫৩ জনের বেশি আহত হন। হামলার দায় দুটি গোষ্ঠী স্বীকার করে—ইসলামিক স্টেট ও আরব সংগ্রামী সংগঠন "আহওয়াজ মুক্তি আন্দোলন"।
জন্ম
[সম্পাদনা]- ১৩০৭ হিজরি - আব্দুর রহমান বিন নাসির সাঈদি, একজন সৌদি আলেম, ফকিহ ও মুফাসসির।
- ১৩১২ হিজরি - মাহমুদ তাইমূর, একজন মিশরীয় সাহিত্যিক ও ছোটগল্পকার।
- ১৩৪৩ হিজরি - মুহাম্মদ জিয়াউল হক, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট।
- ১৩৫৪ হিজরি - নাইফ আবু উবাইদ, একজন জর্ডানি কবি।
- ১৩৯৯ হিজরি - ইনজি শরাফ, একজন মিশরীয় অভিনেত্রী।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]- ৬৯৩ হিজরি - আল-আশরাফ সালাহউদ্দীন খলিল, মামলুক বাহরি সালতানাতের অষ্টম সুলতান।
- ১২৫১ হিজরি - মুখতার বিন আবদুল মালিক আল-জামি, মরক্কোর সুলতান আবুল ফাদল আব্দুর রহমান বিন হিশামের প্রধান মন্ত্রী।
- ১৩৭৩ হিজরি - ইসমাইল আলে ইয়াসিন, একজন ইরাকি কবি।
- ১৩৯১ হিজরি - ষষ্ঠ কিরিল্লোস, আলেকজান্দ্রিয়ার পোপ ও কিবতীয় অর্থোডক্স গির্জার ১১৬তম পিতৃপুরুষ।
- ১৪০৪ হিজরি - আহমদ তৌফিক আল-মাদানি: একজন আলজেরীয় সংগ্রামী, মন্ত্রী, ইতিহাসবিদ ও "তাকওয়িম আল-মানসুর" গ্রন্থের রচয়িতা।
- ১৪২৬ হিজরি -
- মুহাম্মদ আত-তাহির রুইস, একজন তিউনিসীয় অধ্যাপক, ইমাম, ফকিহ ও ইতিহাসবিদ।
- আবদুর রহিম আল-বারঈ, একজন সুদানী আলেম ও সুফি।
- ১৪২৯ হিজরি - সুআদ মাকাউই, একজন মিশরীয় গায়িকা।
- ১৪৩১ হিজরি - আল-হাবিব বুরকীবাহ, একজন তিউনিসীয় রাজনীতিবিদ।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- ইবনে কাসির, মুহাম্মদ (২০১৩)। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আইএসবিএন 984-06-0565-8।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৫)। তারিখুল ইসলাম (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ। আইএসবিএন 27-45143-53-0।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৪)। সিয়ারু আলামিন নুবালা (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: আল-রিসালা প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-9-933-44665-9।
- খতিব বাগদাদী (২০১১)। তারিখে বাগদাদ (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়্যা। আইএসবিএন 978-274510-466-3।
- তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে জারির (২০১১)। তারিখে তাবারি: তারিখুর রুসুল ওয়াল মুলুক (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-3263-5।
- হামাবি, ইয়াকুত (২০১১)। মু'জামুল বুলদান (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-1432-7।
- সুয়ুতী, জালালুদ্দীন (২০১০)। তারিখ আল-খুলাফা (আরবি ভাষায়)। সৌদি আরব: দারুল মিনহাজ। আইএসবিএন 978-99534-9819-5।
- ইলমাজ উজতুনা (২০১০)। তারিখ আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব আরাবি। আইএসবিএন 978-61441-5031-3।
- ইয়াগি, ইসমাইল আহমদ (২০১৪)। আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া, ফিত তারিখিল ইসলামি আল-হাদিস (আরবি ভাষায়)। মাকতাবাতুল আবিকান। আইএসবিএন 978-60350-3695-5।
- বারদি, ইবনে তাগরি (২০১৬)। আল-নুজুম আল-যাহিরাহ ফি মুলুক মিসর ওয়াল কাহিরাহ (আরবি ভাষায়)। কায়রো: দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া। আইএসবিএন 978-97781-2018-9।
- ইবনে ইয়াস (২০১৮)। বাদায়ি' আল-জুহুর ফি ওয়াকায়ি' আল-দুহুর (আরবি ভাষায়)। নিল ওয়াফুরাত।
- আল-মাকদিসি, আবু শামা (২০১৮)। আল-রওজাতাইন ফি আখবার আল-দাওলাতাইন আল-নুরিয়া ওয়াস সালাহিয়া (আরবি ভাষায়)। কায়রো: মুয়াসসাসাতুর রিসালা। আইএসবিএন 978-191264-335-6।
- আল মাকরিজি, আলি ইবনে আহমদ (২০০৮)। আস-সুলুক লিমারিফা দুয়াল আল-মুলুক (আরবি ভাষায়)। দার আল-জামান।
- ড. আব্দুর রহিম, আল-হাজ্জি (২০০৫)। তারিখুল আন্দালুস আল-ইসলামি। দাম্মাম (সৌদি আরব): দার ইবনুল জাওযি।
- রহমান, ড. আতাউর (২০২৩)। ইতিহাসে ইসলাম: নবী থেকে খেলাফত। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
- ডেভিড, ফ্রমকিন (১৯৮৯)। অ্য পিচ টু ইন্ড অল পিচ: দ্য ফ্যাল অফ দ্য অটোমান অ্যাম্পায়ার (A Peace to End All Peace: The Fall of the Ottoman Empire)। আইএসবিএন 0-8050-0857-8।
- Harvey, Leonard Patrick (১৯৯২)। Islamic Spain, 1250 to 1500। Chicago: University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-31962-8।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Jo Van Steenbergen, "The Mamluk Sultanate as a military patronage state: Household politics and the case of the Qalāwūnid Bayt (1279-1382)." Journal of the Economic and Social History of the Orient 56.2 (2013): 189–217.।