১১ রমজান
অবয়ব
১১ রমজান হল ইসলামি চান্দ্র বর্ষপঞ্জির নবম মাস রমজানের একদাশ দিন। দিনটি হিজরি বর্ষপঞ্জিকা অনুযায়ী বছরের ২৪৭তম দিন। তবে যদি শাবান মাস ৩০ দিনে সম্পূর্ণ হয়, তাহলে এটি ২৪৮তম দিন এবং যদি সফর, রবিউস সানি, জমাদিউস সানি ও শাবান প্রত্যেকটি মাস ৩০ দিনে হয়, তাহলে এটি ২৪৯তম দিন হবে। এই দিনটির পর বছর শেষ হওয়ার ১০৭ বা ১০৮ দিন বাকি থাকে।
ঘটনাবলী
[সম্পাদনা]- ৩ হিজরি: ইসলাম ধর্মের প্রবর্তক মহানবী মুহাম্মদ ‘মিসকিনদের মাতা’ নামে খ্যাত জয়নব বিনতে খুজায়মাকে বিবাহ করেন। [১] তিনি মেহমানদারি ও দানশীলতার জন্য বিখ্যাত ছিলেন।
- ৯ হিজরি: আরব গোত্র সাকিফের একটি প্রতিনিধি দল নবী মুহাম্মদের নিকট এসে ইসলাম গ্রহণ করে। তাদের নেতা উরওয়া ইবন মাসউদ পূর্বেই ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার জাতিকে ইসলাম ধর্মে আহ্বান করতে গিয়ে শহীদ হন। তার মৃত্যুর পর গোত্রটি অনুধাবন করে যে, ইসলাম গ্রহণ করাই তাদের জন্য কল্যাণকর হবে; তাই তারা ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। নবী মুহাম্মদ তাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং আবু সুফিয়ান ইবনে হারব ও মুগিরা ইবনে শু'বাকে তাদের দেব-দেবীর মূর্তি ধ্বংস করার জন্য পাঠান। [২]
- ১২ হিজরি: রোমান সম্রাট হিরাক্লিয়াস হামা শহরের অভিজাতদের একত্রিত করে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। কারণ মুসলিম খলিফা আবু বকর ইয়াজিদ ইবনে আবু সুফিয়ান, আবু উবাইদাহ ইবন জাররাহ, শুরাহবিল ইবন হাসানাহ এবং আমর ইবনুল আসের নেতৃত্বে চারটি বাহিনী প্রেরণ করেছিলেন। হেরাক্লিয়াস পরে আন্তাকিয়া গমন করেন ও সেখান থেকে কনস্টান্টিনোপলে বাহিনীর সহায়তা চান।
- ১২৯ হিজরি: আব্বাসীয় বিপ্লব আনুষ্ঠানিকভাবে আবু মুসলিম খোরাসানির নেতৃত্বে খোরাসানে শুরু হয়। এটি পরবর্তীতে উমাইয়া খিলাফতের পতন ঘটায় এবং আব্বাসি খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়। [৩]
- ২৩৩ হিজরি: আব্বাসীয় খলিফা জাফর আল-মুতাওয়াক্কিল তার পুত্র মুহাম্মদ আল-মুনতাসিরকে হিজাজ, ইয়ামান ও তাইফ অঞ্চলের দায়িত্ব প্রদান করেন।
- ২৫২ হিজরি: বাগদাদ শহরে খলিফার অনুসারী ও মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ ইবনে তাহিরের অনুগতদের মধ্যে এক যুদ্ধে সংঘর্ষ ঘটে।
- ২৮৭ হিজরি: আব্বাসীয় সেনাপতি আব্বাস ইবনে আমর আল-গানাভি কারামাতিয়া সম্প্রদায় থেকে মুক্তি পেয়ে বাগদাদে ফিরে আসেন এবং খলিফা আহমদ আল-মু’তাদিদের নিকট একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।
- ৪৯৫ হিজরি: সাইফুদ্দৌলা সাদাকা ইবনে মনসুর নামে এক নেতা হিল্লা শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এটি আধুনিক ইরাকের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহরে পরিণত হয়।
- ৬৫৫ হিজরি: মঙ্গোল নেতা হালাকু খান আব্বাসীয় খলিফা আল-মুস্তাসিমের নিকট আত্মসমর্পণ ও রাজধানীতে উপস্থিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান।
- ৮২৫ হিজর: মামলুক সুলতান আল-জাহির তুতর ‘সুলতান হাসান মাদ্রাসা’ পুনরায় খুলে দেন, যা পূর্বে আল-জাহির বারকুক বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
- ৮৪৩ হিজরি: মামলুক সুলতান জাকমাক হালব শহরের ‘কাতিব আস-সির’ পদ থেকে ইবনে আশকারকে বরখাস্ত করেন এবং এই দায়িত্ব দেন ইবনে সাফাহকে, যিনি বিনিময়ে ৬০০০ দিনার প্রদান করেন।
- ৮৭৫ হিজরি: কায়রো শহরের বিচারক সুয়াইকা সাবাইনকে কেলেঙ্কারির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তিনি ক্ষমা পেলেও আদালতের কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি নিতে হয়।
- ৯২২ হিজরি: উসমানীয় সুলতান সেলিম প্রথম কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই দামেস্ক দখল করেন। বারো দিনের অবরোধের পর শহর আত্মসমর্পণ করে এবং সেলিম শহরের প্রশাসন শিহাবুদ্দিন আহমাদ ইবন ইয়াখশার হাতে দেন। সেলিম এখানে ৬৭ দিন অবস্থান করেন এবং এই সময়ে তিনি মহান বীর সালাহউদ্দিন আইযুবির কবর জিয়ারত করেন।
- ৯৮৬ হিজরি: উসমানীয় সাম্রাজ্য ককেশাস অঞ্চলে সংঘটিত শামাখি নামক যুদ্ধে সাফাভীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে বড় ধরনের একটি বিজয় অর্জন করে। এই যুদ্ধে সাফাভিদের প্রায় ১৫,০০০ সৈন্য নিহত হয়। এই বিজয় উসমানীয়দের সামরিক ক্ষমতা ও রাজনৈতিক প্রভাবের সুস্পষ্ট নিদর্শন ছিল।
- ১৩৭৬ হিজরি: জর্দানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সুলেইমান আন-নাবুলসি তার সরকারসহ রাজা হুসেইনের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেন। এই পদত্যাগের পেছনে মূল কারণ ছিল বাগদাদ চুক্তিতে যোগদানের প্রশ্নে রাজা ও সরকারের মধ্যে দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য।
- ১৩৮০ হিজরি: মরোক্কোর যুবরাজ মৌলায় হাসান তার পিতা রাজা পঞ্চম মুহাম্মদের মৃত্যুর পর সিংহাসনে আরোহণ করেন। তিনি রাজা দ্বিতীয় হাসান নাম ধারণ করেন এবং মরোক্কোর রাজতন্ত্রের নতুন অধ্যায় শুরু হয়।
- ১৩৮৭ হিজরি: দক্ষিণ ইয়েমেনের গণতান্ত্রিক ইয়েমেন প্রজাতন্ত্র আরব লীগে সদস্যপদ লাভ করে। এটি ছিল ইয়েমেনের আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক স্বীকৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
- ১৪১০ হিজরি: আলবেনিয়ার মুসলিম জনগণ বহু বছরের পর কমিউনিস্ট শাসনের হস্তক্ষেপ ছাড়াই স্বাধীনভাবে রমজান মাসের রোজা পালন শুরু করে। পূর্বে রোজা রাখা নিষিদ্ধ ছিল এবং কেউ রোজা রাখলে তাকে গ্রেফতার করা হতো।
- ১৪৩৫ হিজরি:
- হাদি আল-বাহরাকে সিরিয়ার বিপ্লবী ও বিরোধী শক্তির জাতীয় জোটের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়।
- ইয়েমেনের উত্তরে হুথি বিদ্রোহীরা 'আমরান' শহরের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে এবং ৩১০ ট্যাংক ব্যাটালিয়নের সদর দপ্তরে আক্রমণ চালায়, যা "আমরান যুদ্ধ" নামে পরিচিত।
- ১৪৩৬ হিজরি:
- পাকিস্তানে প্রচণ্ড তাপপ্রবাহে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় ১৩০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে।
- ইরাকের প্রধানমন্ত্রী হায়দার আল-আবাদি ঘোষণা করেন যে, বাথ পার্টির প্রাক্তন সিনিয়র নেতা ও অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অভিযুক্ত আব্দুল বাকী আস-সাদুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে
- ১৪৩৮ হিজরি: সৌদি আরব, বাহরাইন, মিশর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, লিবিয়া এবং মালদ্বীপ একযোগে কাতারের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। এই দেশগুলোর অভিযোগ ছিল, কাতার সন্ত্রাসবাদে সহায়তা করছে এবং ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখে উপসাগরীয় আরব দেশগুলোর নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে
- ১৪৪৬ হিজরি: সোমালিয়ার হিরান অঞ্চলের বেলেদওয়েইন শহরের একটি হোটেলে আল-শাবাব গোষ্ঠীর দ্বারা সংঘটিত এক আক্রমণ ও অবরোধে অন্তত ২১ জন নিহত হয়।
জন্ম
[সম্পাদনা]- ১৩৪৮ হিজরি: রফিক আল-সাবি'ঈ, একজন খ্যাতিমান সিরিয়ান অভিনেতা।
- ১৩৫৪ হিজরি: হিশাম জা'ঈত, একজন তিউনিসীয় লেখক, ইতিহাসবিদ ও চিন্তাবিদ।
- ১৩৯৬ হিজরি: মিশারি আল-আফাসি, একজন কুয়েতি ক্বারী।
- ১৩৯৯ হিজরি: ইয়াস আবু গাজালাহ, সিরীয় অভিনেতা।
- ১৪০৪ হিজরি: মাসউদ শুজায়ি, ইরানি ফুটবল খেলোয়াড়।
- ১৪০৯ হিজরি: শাওক, কুয়েতি অভিনেত্রী।
- ১৪১৩ হিজরি: আরিজ আল-আত্তার, কুয়েতি অভিনেত্রী।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]- ৯৫ হিজরি: সাঈদ ইবনে জুবাইর, একজন প্রখ্যাত তাবেয়ি ও হাদিসবিশারদ।
- ৬২৪ হিজরি: চেঙ্গিজ খান, মঙ্গোল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রথম গ্রেট খান।
- ৭৬৪ হিজরি: ইবনে শাকির আল-কুতুবি, মুসলিম ইতিহাসবিদ ও লেখক।
- ৮৪২ হিজরি: শামসুদ্দীন আল-বাসাতি, মুসলিম বিচারপতি ও কাজিউল কুযাত।
- ১৩৪৬ হিজরি: মুহাম্মদ জাফর শাব্বার, ইরানি-ইরাকি শিয়া মুসলিম আলেম।
- ১৩৮০ হিজরি: রাজা পঞ্চম মুহাম্মদ, মরক্কোর রাজা।
- ১৪৩৫ হিজরি: হামিদ আল-কুশাইবি, ইয়েমেনি সামরিক নেতা।
- ১৪৪১ হিজরি: মোহাম্মদ আবদুল হামিদ হিলমি, প্রাক্তন মিশরীয় বিমান বাহিনীর প্রধান।
- ১৪৪২ হিজরি: মারওয়ান আদেল হামজা, ইরাকি কবি।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- ইবনে কাসির, মুহাম্মদ (২০১৩)। আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ (বাংলা ভাষায়)। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন। আইএসবিএন 984-06-0565-8।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৫)। তারিখুল ইসলাম (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল-কুতুব আল-ইলমিয়্যাহ। আইএসবিএন 27-45143-53-0।
- আল-যাহাবী, শামসুদ্দীন (২০১৪)। সিয়ারু আলামিন নুবালা (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: আল-রিসালা প্রকাশনী। আইএসবিএন 978-9-933-44665-9।
- খতিব বাগদাদী (২০১১)। তারিখে বাগদাদ (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়্যা। আইএসবিএন 978-274510-466-3।
- তাবারি, মুহাম্মদ ইবনে জারির (২০১১)। তারিখে তাবারি: তারিখুর রুসুল ওয়াল মুলুক (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-3263-5।
- হামাবি, ইয়াকুত (২০১১)। মু'জামুল বুলদান (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব ইলমিয়া। আইএসবিএন 978-27451-1432-7।
- সুয়ুতী, জালালুদ্দীন (২০১০)। তারিখ আল-খুলাফা (আরবি ভাষায়)। সৌদি আরব: দারুল মিনহাজ। আইএসবিএন 978-99534-9819-5।
- ইলমাজ উজতুনা (২০১০)। তারিখ আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া (আরবি ভাষায়)। বৈরুত: দারুল কুতুব আরাবি। আইএসবিএন 978-61441-5031-3।
- ইয়াগি, ইসমাইল আহমদ (২০১৪)। আল-দাওলাহ আল-উসমানিয়া, ফিত তারিখিল ইসলামি আল-হাদিস (আরবি ভাষায়)। মাকতাবাতুল আবিকান। আইএসবিএন 978-60350-3695-5।
- বারদি, ইবনে তাগরি (২০১৬)। আল-নুজুম আল-যাহিরাহ ফি মুলুক মিসর ওয়াল কাহিরাহ (আরবি ভাষায়)। কায়রো: দারুল কুতুব আল-মিসরিয়া। আইএসবিএন 978-97781-2018-9।
- ইবনে ইয়াস (২০১৮)। বাদায়ি' আল-জুহুর ফি ওয়াকায়ি' আল-দুহুর (আরবি ভাষায়)। নিল ওয়াফুরাত।
- আল-মাকদিসি, আবু শামা (২০১৮)। আল-রওজাতাইন ফি আখবার আল-দাওলাতাইন আল-নুরিয়া ওয়াস সালাহিয়া (আরবি ভাষায়)। কায়রো: মুয়াসসাসাতুর রিসালা। আইএসবিএন 978-191264-335-6।
- আল মাকরিজি, আলি ইবনে আহমদ (২০০৮)। আস-সুলুক লিমারিফা দুয়াল আল-মুলুক (আরবি ভাষায়)। দার আল-জামান।
- ড. আব্দুর রহিম, আল-হাজ্জি (২০০৫)। তারিখুল আন্দালুস আল-ইসলামি। দাম্মাম (সৌদি আরব): দার ইবনুল জাওযি।
- রহমান, ড. আতাউর (২০২৩)। ইতিহাসে ইসলাম: নবী থেকে খেলাফত। ঢাকা: ইসলামিক ফাউন্ডেশন।
- ডেভিড, ফ্রমকিন (১৯৮৯)। অ্য পিচ টু ইন্ড অল পিচ: দ্য ফ্যাল অফ দ্য অটোমান অ্যাম্পায়ার (A Peace to End All Peace: The Fall of the Ottoman Empire)। আইএসবিএন 0-8050-0857-8।
- Harvey, Leonard Patrick (১৯৯২)। Islamic Spain, 1250 to 1500। Chicago: University of Chicago Press। আইএসবিএন 0-226-31962-8।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Lings, Martin, "Muhammad: his life based on the earliest sources", 1983. p. 201.।
- ↑ "Al-Mughira b. Shu'ba"। WikiShia (ইংরেজি ভাষায়)। ২০২০-০৬-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৪-১২।
- ↑ Rivlin, Paul (২০০৯-০২-০৯)। Arab Economies in the Twenty-First Century (ইংরেজি ভাষায়)। Cambridge: Cambridge University Press। পৃষ্ঠা ৮৬।