হাসিবুল ইসলাম মিজান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
হাসিবুল ইসলাম মিজান
জন্ম৭ই সেপ্টেম্বর ১৯৫৭
মৃত্যু১৮ এপ্রিল ২০১৯ (বয়স ৬২)
পেশাচলচ্চিত্র পরিচালক
উল্লেখযোগ্য কর্ম
আমার স্বপ্ন তুমি, কপাল, তুমি আছো হৃদয়ে
দাম্পত্য সঙ্গীরাশিদা আক্তার

হাছিবুল ইসলাম মিজান একজন বাংলাদেশি চলচ্চিত্র পরিচালক ছিলেন। তিনি অনেকগুলো জনপ্রিয় বাংলা চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। পরিচালনার পাশাপাশি তিনি ছিলেন একাধারে কাহিনীকার, চিত্রনাট্যকার, গীতিকার ও প্রযোজক।

জীবনী[সম্পাদনা]

হাছিবুল ইসলাম মিজানের জন্ম ১৯৫৭ সালের ৭ই সেপ্টেম্বর পিরোজপুরে[১] পিরোজপুরের সদর উপজেলার কলেজ রোডে চিলা শেখ বাড়িতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম মতিয়ার রহমান শেখ ও মাতার নাম নূরজাহান বেগম। নয় ভাই বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ।

হাসিবুল ইসলাম মিজান ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল ৬২ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।[২][৩][৪]

চলচ্চিত্রে আগমন[সম্পাদনা]

হাছিবুল ইসলাম মিজানের চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে ১৯৮০ এর দশকে। প্রখ্যাত চিত্র পরিচালক দারাশিকো’র হাত ধরে তার চলচ্চিত্রের পথচলা শুরু। দারাশিকোর সাথে সহকারী চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। পরবর্তীতে বিশিষ্ট চলচ্চিত্রকার এস এম শফির সাথেও প্রধান সহকারী পরিচালক হিসেবে বেশ কয়েকটি সিনেমাতে কাজ করেন হাছিবুল ইসলাম মিজান।

মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র সমূহ[সম্পাদনা]

হাছিবুল ইসলাম মিজানের প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র “প্রেমের কসম” পরিচালনার মাধ্যমে চলচ্চিত্রাঙ্গনে অভিষেক ঘটে তার।[৫] চলচ্চিত্রটি ছিল মাহফুজ আহমেদ অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র, "প্রেমের কসম" এর মাধ্যমেই অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ চলচ্চিত্রে নাম লেখেন।।[৬][৭] এটি মুক্তি পায় ১৯৯৮ সালে। প্রেমের কসম ছবির শ্রেষ্ঠাংশে সে সময়ের ছোটপর্দার সুদর্শন অভিনেতা মাহফুজ আহমেদ এর পাশাপাশি ছিলেন “পাগল মন” খ্যাত জনপ্রিয় নায়িকা অন্তরা।

প্রথম ছবি নির্মাণের পর আস্তে আস্তে চলচ্চিত্রে কিছুটা অশ্লীলতার ছোঁয়া আসায় বেশ কিছুদিন ছবি নির্মাণ থেকে বিরত থাকেন তিনি। এরপর ২০০৫ সালে মুক্তি পায় তার পরবর্তী চলচ্চিত্রআমার স্বপ্ন তুমি[৮] এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন চিত্রনায়ক ফেরদৌস, শাকিব খান এবং চিত্রনায়িকা শাবনূর। বক্স অফিসে তুমুল সফলতা পায় "আমার স্বপ্ন তুমি" ছবিটি এবং ২০০৫ সালের সর্বাধিক ব্যবসাসফল ছবিগুলোর একটি হিসেবে ঢালিউড বক্স অফিসে জায়গা করে নেয়। এ ছবির মাধ্যমে ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খানের ক্যারিয়ারের উত্থান শুরু।[৯] প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই ছবির গানগুলোও তখন ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

এরপর ২০০৬ সালে মুক্তি পায় হাছিবুল ইসলাম মিজান পরিচালিত তার পরবর্তী চলচ্চিত্র “জন্ম”। এই সিনেমাতে অভিনয় করেন শাকিব খান, শাবনূর, এ টি এম শামসুজ্জামান, ডন সহ আরো অনেকে।

২০০৭ সালে তার নির্মিত পরবর্তী চলচ্চিত্র “কপাল” মুক্তিলাভ করে। কপালে অভিনয় করেন শাকিব খান, শাবনূর, মাহফুজ আহমেদ, রেসি ও শিশু শিল্পী দিঘী। কপাল ছবিটির কাহিনী লিখেছেন এ টি এম শামসুজ্জামান। মাহফুজ আহমেদ তার দুর্দান্ত অভিনয়ের জন্যে বেশ প্রশংসিত হন এবং বক্স অফিসেও "কপাল" সুপারহিট ব্যবসা করে।

২০০৭ সালেই তার পরিচালিত সর্বশেষ মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র তুমি আছো হৃদয়ে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়।[৫] এস আই টুটুলের সঙ্গীত পরিচালনায় এই ছবির গানগুলি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। নবাগত নায়ক কায়েস আরজু এবং টিভি অভিনেত্রী আয়েশা মুক্তিকে জুটি করে ‘তুমি আছো হৃদয়ে’ সিনেমার মাধ্যমে তিনি চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন।

নির্মাণাধীন চলচ্চিত্র সমূহ[সম্পাদনা]

হাছিবুল ইসলাম মিজানের "ফুলবানু", "মনে মনে প্রেম" ও "চাই শুধু তোমাকে" নামে নির্মাণাধীন তিনটি সিনেমা রয়েছে।

টেলিভিশন পর্দার জন্যে অবদান[সম্পাদনা]

চলচ্চিত্রের পাশাপাশি ছোটপর্দার জন্যেও অনেক গুলো নির্মাণ রয়েছে নির্মাতা হাছিবুল ইসলাম মিজানের। “কি আশায় বাঁধি খেলা ঘর” নামে একটি ২৬ পর্বের ধারাবাহিক নাটক নির্মাণ করেছিলেন তিনি, যা ২০০১ সালে চ্যনেল আই তে প্রচারিত হয়। এর পাশাপাশি বেশ কয়েকটি প্যাকেজ নাটক ও টেলিফিল্ম নির্মাণ করেছিলেন তিনি।

চলচ্চিত্র বিষয়ক অনুষ্ঠান[সম্পাদনা]

এটিএন বাংলায় সাপ্তাহিক সিনেমা বিষয়ক অনুষ্ঠান “তিব্বত তারার দেশে” নিয়মিত নির্মাণ করেছেন তিনি। তবে পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র নিয়ে অনুষ্ঠান “শুভমুক্তি” নির্মাণ করেন হাছিবুল ইসলাম মিজান, যা বাংলাদেশী চলচ্চিত্র প্রেমীদের কাছে প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। এই অনুষ্ঠানটিও নিয়মিত প্রচার হত এটিএন বাংলাতে। এর পাশাপাশি তিনি মাসিক বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান “রং তামাশা” পরিচালনা করেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

হাছিবুল ইসলাম মিজান বিয়ে করেন ১৯৮৮ সালে, তার স্ত্রীর নাম রাশিদা আক্তার। ব্যাক্তিগত জীবনে তিনি তিন ছেলের জনক। ২০১৫ সালের ৫ই মার্চ তার স্ত্রী মৃত্যুবরণ করেন। তার তিন ছেলে হলেন রাশেদুল ইসলাম ইফাজ, আমিনুল ইসলাম আলভী এবং আরিফুল ইসলাম আলিফ।

নির্বাচিত চলচ্চিত্র তালিকা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুল ইসলাম মিজান আর নেই"একুশে টেলিভিশন। ১৯ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  2. "চলচ্চিত্র পরিচালক হাসিবুল ইসলাম আর নেই"সময় টিভি। ২৪ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  3. "চিত্রপরিচালক হাসিবুল ইসলাম মিজানের ইন্তেকাল"ইনকিলাব। ১৯ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  4. "Filmmaker Hasibul Islam Mizan no more"Daily Observer। ২০ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  5. "চলচ্চিত্র নির্মাতা হাসিবুল ইসলাম আর নেই"কালের কণ্ঠ। ১৯ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  6. "চিত্রনায়িকা অন্তরা আর নেই"যুগান্তর। ১০ জানুয়ারি ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ 
  7. "২০ বছর পর কার কোথায় অবস্থান"ভোরের কাগজ। ৭ জুলাই ২০১৮। ২৪ অক্টোবর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  8. "'আমার স্বপ্ন তুমি' ছবির নির্মাতা মিজান আর নেই"চ্যানেল আই। ১৮ এপ্রিল ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৯ 
  9. webdesk@somoynews.tv। "চলচ্চিত্র পরিচালক হাসিবুল ইসলাম আর নেই"somoynews.tv (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৪-২২