হায়দ্রাবাদের বুদ্ধ মূর্তি
হায়দ্রাবাদের বুদ্ধ মূর্তি | |
---|---|
অবস্থান | হুসেন সাগর, হায়দ্রাবাদ, তেলেঙ্গানা, ভারত |
স্থানাঙ্ক | ১৭°২৪′৫৬″ উত্তর ৭৮°২৮′৩০″ পূর্ব / ১৭.৪১৫৫৬° উত্তর ৭৮.৪৭৫০০° পূর্ব |
উচ্চতা | ৫৮ ফুট (১৮ মিটার) |
Dedicated | ১ ডিসেম্বর ১৯৮২ |
ভাস্কর | এস এম গণপতি স্থপতি |
পরিচালকবর্গ | বুদ্ধ পূর্ণিমা প্রজেক্ট অথরিটি, হায়দ্রাবাদ মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি |
হায়দ্রাবাদের বুদ্ধ মূর্তি দক্ষিণ ভারতের অধুনা তেলেঙ্গানা রাজ্যের হায়দ্রাবাদ শহরে অবস্থিত অখণ্ড একক শিলার বুদ্ধ মূর্তি। জিব্রাল্টার শিলায় নির্মিত বিশ্বের উচ্চতম গৌতম বুদ্ধের মূর্তিটি হুসেন সাগরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]হায়দ্রাবাদ অধুনা তেলেঙ্গানা রাজ্যের রাজধানী (২০১৪ খ্রিস্টাব্দের ২ জুন পৃথক রাজ্য হওয়ার কারণে) পূর্বে এটি অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের রাজধানী ছিল। দক্ষিণ ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় চলচ্চিত্র তারকা তথা ব্যক্তিত্ব এন টি রামা রাও তৎকালীন অখণ্ড অন্ধ্রপ্রদেশ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। তিনি ১৯৮৩ -১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দ সময়ের শাসনামলে রাজ্যে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ইতিহাস রক্ষায় বেশ কিছু মূর্তি স্থাপনের জন্য বিপুল অর্থ ব্যয় করেন। তিনি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সফরের সময়, তিনি স্ট্যাচু অব লিবার্টি দেখেন এবং এর পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টায় অনুপ্রাণিত হয়ে বলেন - "আমি প্রকৃতই এমন কিছু দেখতে চেয়েছিলাম ...,.. আর এটিই হবে সমাজের প্রতি আমার অবদান।" [১]
হায়দ্রাবাদে রামা রাও গৌতম বুদ্ধের মূর্তি স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেন, কেননা তার মতে "গৌতম বুদ্ধ ছিলেন এমন মানবতাবাদী, যিনি মানুষের মাঝে প্রকৃত সত্যের বাণী প্রচার করেছেন। এটিই আমাদের গর্ব।" দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর, তিনি হায়দ্রাবাদ হতে ৪৬ কিলোমিটার দূরত্বে নালগোন্ডা জেলায় রায়গিরির ভঙ্গিরে এক পাহাড়ের ধারে একটি অখণ্ড সাদা গ্রানাইট শিলার সন্ধান পান। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর রামা রাও মূর্তির কাঠামো নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে, শত শত শ্রমিকদের নিরলস কাজের ফলে মন্দিরের স্থপতি এবং নির্মাতা এস এম গণপতি স্থপতি মূর্তিটি তৈরি করেন। পাঁচ বছর সময়ে ৩০ লক্ষ মার্কিন ডলার অর্থমূল্যে ৫৮ ফুট বা ১৮ মিটার উঁচু এবং ৩৫০ টন ওজনের মূর্তিটি তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছিল। [১] ৫৮ ফুট বা ১৮ মিটার উচ্চতার ৩৫০ টন ওজনের এই মূর্তিটি হল বিশ্বের উচ্চতম মনোলিথ তথা অখণ্ড একক শিলার বুদ্ধ মূর্তি। ১৫ ফুট (৪.৬ মি), এটিকে হুসেন সাগরের মাঝখানে স্থাপনের জন্য ১৫ ফুট (বা ৪.৬ মিটার) পরিমাপের একটি কংক্রিট প্ল্যাটফর্ম, যেটাকে রক অফ জিব্রাল্টার বা "জিব্রাল্টারের শিলা" বলা হয়, [২] নির্মিত হয়েছিল এবং এ জন্য শহরের সন্নিহিত রাস্তাগুলোকেও প্রশস্ত করা হয়েছিল [১]
হুসেন সাগরের মাঝে তৈরি দ্বীপে লুম্বিনি পার্কে অবস্থিত এই বুদ্ধ মূর্তিটির কাছে যেতে নৌকায় ১৫ মিনিট সময় লাগে। [৩] মূর্তিটি খয়রাতাবাদের লকডি-কা-পুল এবং অ্যাসেম্বলি হায়দ্রাবাদ মেট্রো স্টেশনের কাছেই।
দুর্ঘটনা
[সম্পাদনা]এন টি রামা রাও-এর নেতৃত্বে গঠিত অন্ধ্রপ্রদেশ সরকার ১৯৮৯ খ্রিস্টাব্দে ক্ষমতাচ্যুত হয়। পরের বছরেই, মূর্তিটি স্থাপনার জন্য প্রস্তুত ছিল। মূর্তিটিকে কংক্রিটের প্ল্যাটফর্মে স্থাপনার দায়িত্ব ছিল স্থানীয় কোম্পানি এবিসি লিমিটেডের উপর। একটি ট্রেলার গাড়িতে করে মূর্তিটি হুসেন সাগরের তীরে আনা হলে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের ১০ মার্চ, কোম্পানির কর্মীরা মূর্তিটিকে একটি বিশাল মালবাহী বার্জের উপরে তোলেন। কিন্তু মাত্র ১০০ গজ (৯১ মিটার) যাওয়ার পর হঠাৎ বার্জ উল্টে মূর্তিটি সাগরে পড়ে যায়। [৪] এই দুর্ঘটনায় ১০ জনের প্রাণ হানি ঘটে। [৫]
দুই বছর ধরে উদ্ধার অভিযানের পর মূর্তিটি তুলে আনা সম্ভব হয়। শেষমেশ ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দের ১ ডিসেম্বরে মূর্তিটিকে প্ল্যাটফর্মে সফলভাবে স্থাপন করা হয়। ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে তিব্বতের আধ্যাত্মিক প্রধান বৌদ্ধ ধর্মীয় গুরু নোবেলজয়ী ১৪শ দলাই লামা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মূর্তিটির পবিত্রতা আনেন। [৬]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- অহিংসার মূর্তি
- সবচেয়ে উঁচু মূর্তির তালিকা
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
অভয় মুদ্রায় দণ্ডায়মান বুদ্ধ
-
ক্লোজ-আপ ভিয়ু
-
হুসেন সাগরে সূর্যাস্তের সময় বুদ্ধ মূর্তি
-
সন্ধ্যাকালীন দৃশ্য
-
চন্দ্রালোকে রাত্রিকালীন দৃশ্য
-
বুদ্ধ মূর্তির বেসমেন্টের এক ভাস্কর্য
-
হুসেন সাগরে বুদ্ধ মূর্তি
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ গ Coll, Steve (৯ এপ্রিল ১৯৯০)। "Buddha of the Lake Bottom"। The Washington Post। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২। – via HighBeam Research (সদস্যতা প্রয়োজনীয়)
- ↑ Raje, Abhishek (২৩ জানুয়ারি ২০১২)। "Ram Charan Teja shoots at iconic Buddha statue"। The Times of India। Hyderabad। Times News Network। ৩ জানুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ Goldberg, Kory., Décary, Michelle.(2012), "The South: Hydrabad", Along the Path: The Meditator's Companion to the Buddha's Land, Pariyatti Publisher, p.372. আইএসবিএন ১৯৩৮৭৫৪০৩৪, 9781938754036
- ↑ "10 drown as the statue of Buddha takes a dip"। New Straits Times। New Delhi। ১১ মার্চ ১৯৯০। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "Buddha Statue Sinks Barge, Drowning 10"। St. Louis Post-Dispatch। New Delhi। Associated Press। ১১ মার্চ ১৯৯০। পৃষ্ঠা 13A।
- ↑ "Buddha statue consecrated"। The Hindu। Hyderabad। ৩ জানুয়ারি ২০০৬। ১৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ সেপ্টেম্বর ২০১২।