হাইপোকন্ড্রিয়াসিস
| হাইপোকন্ড্রিয়াসিস | |
|---|---|
| প্রতিশব্দ | হাইপোকন্ড্রিয়া, স্বাস্থ্য উদ্বেগ (HA), অসুস্থতা উদ্বেগ ব্যাধি |
| অনারে দোমিয়ে, কাল্পনিক অসুস্থতা (আনু. ১৮৬০–১৮৬২) | |
| বিশেষত্ব | মনোরোগ বিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান |
| লক্ষণ | গুরুতর অসুস্থতা আছে বা বিকাশ করবে এমন অত্যধিক ও অবিরাম ভয় বা আবেশ; অত্যধিক স্বাস্থ্য সেবা অনুসন্ধান |
| রোগের সূত্রপাত | শৈশবের প্রথম দিকে |
| পার্থক্যমূলক রোগনির্ণয় | প্যানিক ডিসঅর্ডার, অবসেসিভ-কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার, সাধারনীকৃত উদ্বেগ ব্যাধি |
| চিকিৎসা | জ্ঞানীয় আচরণগত থেরাপি (CBT) |
| ঔষধ | এসএসআরআই, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট |
| আরোগ্যসম্ভাবনা | ~৫০% ~১-৫ বছর পরেও মানদণ্ড পূরণ করে |
| সংঘটনের হার | ~৫% |
হাইপোকন্ড্রিয়াসিস বা হাইপোকন্ড্রিয়া হল এমন একটি মানসিক অবস্থা যেখানে একজন ব্যক্তি এই ভেবে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন থাকেন যে তার একটি গুরুতর অসুস্থতা আছে, যদিও বাস্তবে তা নেই।[১] এটি একটি প্রাচীন ধারণা, যার সংজ্ঞা সময়ের সাথে সাথে বদলেছে। এতে আক্রান্ত ব্যক্তি তার দেহ বা মনের সাধারণ অনুভূতিগুলোকেও একটি গুরুতর রোগের লক্ষণ বলে ভুল ব্যাখ্যা করেন।[২] হাইপোকন্ড্রিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে 'হাইপোকন্ড্রিয়াক' বলা হয়। তারা যেকোনো ছোটখাটো শারীরিক বা মানসিক লক্ষণ নিয়েও অযৌক্তিকভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে তাদের একটি ভয়ানক রোগ হয়েছে বা হবে।[৩]
চিকিৎসক রোগীকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এবং বারবার নিশ্চিত করেও যদি বলেন যে তার কোনো গুরুতর শারীরিক রোগ নেই, বা থাকলেও তার উদ্বেগ সেই রোগের তুলনায় অনেক বেশি, তবুও হাইপোকন্ড্রিয়াক ব্যক্তির উদ্বেগ দূর হয় না। অনেক হাইপোকন্ড্রিয়াক একটি নির্দিষ্ট লক্ষণ নিয়ে চিন্তিত থাকেন, যেমন পেটের সমস্যা, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া বা পেশীর দুর্বলতা। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য লক্ষণগুলো কমপক্ষে ছয় মাস ধরে থাকতে হবে।[৪]
আন্তর্জাতিক রোগ শ্রেণীবিন্যাস (আইসিডি-১০) হাইপোকন্ড্রিয়াসিসকে একটি মানসিক ও আচরণগত ব্যাধি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।[৫] ডিএসএম-৪-টিআর হাইপোকন্ড্রিয়াসিসকে একটি সোমাটোফর্ম ডিসঅর্ডার হিসেবে বর্ণনা করেছিল[৬] এবং গবেষণায় দেখা গেছে এটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে আসা রোগীদের প্রায় ৩% কে প্রভাবিত করে।[৭] ২০১৩ সালে প্রকাশিত DSM-5 হাইপোকন্ড্রিয়াসিসের রোগনির্ণয়কে প্রতিস্থাপন করেছে দৈহিক লক্ষণ ব্যাধি (৭৫% ক্ষেত্রে) এবং অসুস্থতা উদ্বেগ ব্যাধি (২৫% ক্ষেত্রে) দিয়ে।[৮][৯]
হাইপোকন্ড্রিয়ার বৈশিষ্ট্য হল ছোটখাটো শারীরিক বা মানসিক অনুভূতিকে একটি গুরুতর রোগের লক্ষণ হিসেবে ভুল ব্যাখ্যা করা, নিজের শরীরের অবস্থা নিয়ে অতিরিক্ত সচেতনতা ও পরীক্ষা করা, এবং নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে অবিরাম চিন্তা। হাইপোকন্ড্রিয়াসিসে আক্রান্ত অনেক ব্যক্তি চিকিৎসকের রোগনির্ণয় ও আশ্বাসকে সন্দেহের চোখে দেখেন। চিকিৎসকের চেম্বারে বা হাসপাতালে গেলেই তাদের রক্তচাপ বেড়ে যায় বা উদ্বেগ বেড়ে যায়, যাকে হোয়াইট কোট সিনড্রোম বলে।[১০] তাদের প্রায়শই চিকিৎসক, পরিবার বা বন্ধুদের কাছ থেকে আশ্বাস নেওয়ার প্রয়োজন হয়। এই অবস্থাটি রোগী এবং তার কাছের মানুষদের জন্যও কষ্টদায়ক হতে পারে।[১১] কিছু হাইপোকন্ড্রিয়াক অসুস্থতার কথা চিন্তা করতেই ভয় পান, আবার কিছু ব্যক্তি আবেশের বশে বারবার ডাক্তারের কাছে যান।
২০২৩ সালের ডিসেম্বরে JAMA Psychiatry-তে প্রকাশিত ৪১,১৯০ জনের উপর করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, হাইপোকন্ড্রিয়াসিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আয়ু অন্যদের তুলনায় প্রায় পাঁচ বছর কম হয়।[১২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Berrios GE (2001) Hypochondriasis. History of the Concept. In Starcevic V & Lipsitt DR (eds). Hypochondriasis. Oxford, Oxford University Press, pp3-20.
- ↑ Avia MD, Ruiz MA (২০০৫)। "Recommendations for the Treatment of Hypochondriac Patients"। Journal of Contemporary Psychotherapy। ৩৫ (3): ৩০১–১৩। ডিওআই:10.1007/s10879-005-4322-3। এস২সিআইডি 28529570।
- ↑ Kring, Ann M.; Davison, Gerald C.; Neale, John M.; Johnson, Sheri L. (২০০৭)। Abnormal Psychology with Cases (10th সংস্করণ)। Wiley। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৪৭১-৭১২৬০-২।[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ Goldberg, Richard J. (২০০৭)। Practical Guide to the Care of the Psychiatric Patient। Mosby/Elsevier। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৩২৩-০৩৬৮৩-২।[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ Drs; Sartorius, Norman; Henderson, A.S.; Strotzka, H.; Lipowski, Z.; Yu-cun, Shen; You-xin, Xu; Strömgren, E.; Glatzel, J.; Kühne, G.-E.; Misès, R.; Soldatos, C.R.; Pull, C.B.; Giel, R.; Jegede, R.; Malt, U.; Nadzharov, R.A.; Smulevitch, A.B.; Hagberg, B.; Perris, C.; Scharfetter, C.; Clare, A.; Cooper, J.E.; Corbett, J.A.; Griffith Edwards, J.; Gelder, M.; Goldberg, D.; Gossop, M.; Graham, P.; Kendell, R.E.; Marks, I.; Russell, G.; Rutter, M.; Shepherd, M.; West, D.J.; Wing, J.; Wing, L.; Neki, J.S.; Benson, F.; Cantwell, D.; Guze, S.; Helzer, J.; Holzman, P.; Kleinman, A.; Kupfer, D.J.; Mezzich, J.; Spitzer, R.; Lokar, J.। "The ICD-10 Classification of Mental and Behavioural Disorders Clinical descriptions and diagnostic guidelines" (পিডিএফ)। www.who.int বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। Microsoft Word। bluebook.doc। পৃ. ১১৬। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জুন ২০২১ – Microsoft Bing এর মাধ্যমে।
- ↑ American Psychiatric Association: Diagnostic and Statistical Manual of Mental Disorders, 4th ed., text revised, Washington, DC, APA, 2000.[পৃষ্ঠা নম্বর প্রয়োজন]
- ↑ Escobar JI, Gara M, Waitzkin H, Silver RC, Holman A, Compton W (মে ১৯৯৮)। "DSM-IV hypochondriasis in primary care" (পিডিএফ)। General Hospital Psychiatry। ২০ (3): ১৫৫–৯। ডিওআই:10.1016/S0163-8343(98)00018-8। পিএমআইডি 9650033। এস২সিআইডি 597107।
- ↑ "DSM-5 redefines hypochondriasis - Mayo Clinic"। Mayo Clinic।
- ↑ Diagnostic and statistical manual of mental disorders : DSM-5. (5th সংস্করণ)। American Psychiatric Association। ২০১৩। পৃ. ৩১০। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৮৯০৪২-৫৫৪-১।
- ↑ Olatunji BO, Etzel EN, Tomarken AJ, Ciesielski BG, Deacon B (নভেম্বর ২০১১)। "The effects of safety behaviors on health anxiety: an experimental investigation"। Behaviour Research and Therapy। ৪৯ (11): ৭১৯–২৮। ডিওআই:10.1016/j.brat.2011.07.008। পিএমআইডি 21839987।
- ↑ "Illness anxiety disorder"। Mayo Clinic। সংগ্রহের তারিখ ২ জানুয়ারি ২০২৩।
- ↑ Mataix-Cols, David; Isomura, Kayoko; Sidorchuk, Anna (২০২৪)। "All-Cause and Cause-Specific Mortality Among Individuals With Hypochondriasis"। JAMA Psychiatry। ৮১ (3): ২৮৪–২৯১। ডিওআই:10.1001/jamapsychiatry.2023.4744। পিএমসি 10719832। পিএমআইডি 38091000। সংগ্রহের তারিখ ২৪ জানুয়ারি ২০২৪।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Belling, Catherine (২০১২)। A Condition of Doubt: The Meanings of Hypochondria। New York: Oxford University Press। আইএসবিএন ৯৭৮-০-১৯-৯৮৯২৩৬-৫।
- Crampton, C. (২০২৪)। A Body Made of Glass: A Cultural History of Hypochondria (First hardcover সংস্করণ)। New York: Ecco। আইএসবিএন ৯৭৮০০৬৩২৭৩৯০০। ওসিএলসি 1417759007।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]| শ্রেণীবিন্যাস | |
|---|---|
| বহিঃস্থ তথ্যসংস্থান |