স্মৃতি (বৈদিক শাস্ত্র)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভীষ্মের মৃত্যু

স্মৃতি (সংস্কৃত: स्मृति, IAST: Smṛti), বা সোজাসুজি ভাবে "যা মনে রাখা হয়", হচ্ছে ঐতিহ্যগতভাবে রচিত কিন্তু ক্রমাগত সংশোধিত এক প্রকার বৈদিক শাস্ত্র যা একটি নির্দিষ্ট লেখক দারা রচিত হয়েছে বলে নির্দেশ করে এবং যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মুখেমুখে প্রাচারিত এবং সংশোধিত হয়েছিলো।[১]  স্মৃতিকে সাধারণত অমৌলিক কাজ বলে ধরা হয় এবং হিন্দু দর্শনের মীমসঞ্জন শাখা বাদে অন্যান্য শাখায় স্মৃতিকে শ্রুতির তুলনায়, কম নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হয়। [২]

স্মৃতি সাহিত্য হচ্ছে বিভিন্ন বৈচিত্রময় গ্রন্থের এক বিশাল সংকলন। এই সংকলনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, যা ছয় বেদাঙ্গ (বেদের ঐচ্ছিক চর্চা) সীমাবদ্ধা নয়, মহাকাব্য (মহাভারতরামায়ণ), ধর্মসূত্র এবং ধর্মশাস্ত্র (বা স্মৃতিশাস্ত্রসমূহ), অর্থশাস্ত্র, বিভিন্ন পুরাণ, কাব্য বা কবি সাহিত্য, ব্যাপক ভাষ্য বা ব্যাখ্যা (বিভিন্ন শ্রুতি ও অ-শ্রুতি গ্রন্থের পর্যালোচনা ও মন্তব্য),এবং রাজনীতি, নৈতিকতা (নীতিশাস্ত্র), সংস্কৃতি, শিল্প ও সমাজ সম্পর্কে ব্যাপক নিবন্ধ(সারসংক্ষেপ)।[৩][৪]

প্রত্যেক স্মৃতি পাঠকে বিভিন্ন সংস্করনে ও বিভিন্ন ব্যাখ্যায় পাওয়া যায়। প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় হিন্দু ঐতিহ্যের মধ্যে স্মৃতিকে সবচেয়ে অবাধ বলে ধারণা করা হয় যা যে কেউ লিখতে বা পুনর্বিন্যস্ত করতে পারতো।[৫]

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

স্মৃতি হচ্ছে একটি সংস্কৃত শব্দ, যার মূল হচ্ছে স্মর(स्मर), যার অর্থ "স্মৃতি, স্মৃতিচারণ, চিন্তা বা মনের কথা বলা," বা কেবলই "স্মৃতি"।[৬] এই শব্দটিকে প্রাচীন বৈদিক সাহিত্যে পাওয়া যায়, বিশেষ করে ছান্দোগ্যোপনিষদ্‌ এর ৭.১৩ অনুচ্ছেদে। পরবর্তীতে এবং আধুনিক সাহিত্যে, এই শব্দটিকে ব্যাখ্যা করা হয় ঐতিহ্য বা স্মরণ হিসেবে এবং এর পাশাপাশি বৈদিক পরবর্তী ধর্মশাস্ত্রের "ঐতিহ্যসমুহ যা মনে রাখা হয়েছে" হিসেবে। ডেভিড ব্রিক এর মতে স্মৃতির সঠিক বা আসল মানে হচ্ছে ঐতিহ্য, গ্রন্থ নয়।[৭]

স্মৃতিকে আবার "১৮" নাম্বার এর প্রতীকী সমার্থক শব্দ হিসেবে ধরা হয়, যা ভারতীয় ঐতিহ্যের সেই ১৮ জন পন্ডিতকে নির্দেশ করে যারা ধর্ম সম্পর্কে স্মৃতি শাস্ত্র লিখেছিলো (যার বেশীরভাগই হারিয়ে গিয়েছে)। ভাষাগত দিক দিয়ে, স্মৃতি হচ্ছে স্লোকের এক প্রকারের ছন্দের নাম। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী,[৮] স্মৃতি হচ্ছে দেবতা ধর্ম ও মেধার মেয়ে।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Wendy Doniger O'Flaherty (1988), Textual Sources for the Study of Hinduism, Manchester University Press, আইএসবিএন ০-৭১৯০-১৮৬৭-৬, pages 2-3
  2. James Lochtefeld (2002), "Smrti", The Illustrated Encyclopedia of Hinduism, Vol. 2: N–Z, Rosen Publishing, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮২৩৯৩১৭৯৮, page 656-657
  3. Purushottama Bilimoria (2011), The idea of Hindu law, Journal of Oriental Society of Australia, Vol. 43, pages 103-130
  4. Roy Perrett (1998), Hindu Ethics: A Philosophical Study, University of Hawaii Press, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮২৪৮২০৮৫৫, pages 16-18
  5. Sheldon Pollock (2011), Boundaries, Dynamics and Construction of Traditions in South Asia (Editor: Federico Squarcini), Anthem, আইএসবিএন ৯৭৮-০৮৫৭২৮৪৩০৩, pages 41-58
  6. smRti Monier-Williams' Sanskrit-English Dictionary, Cologne Digital Sanskrit Lexicon, Germany
  7. Brick, David. 2006. pp. 295-301
  8. Manmatha Nath Dutt, গুগল বইয়ে A Prose English Translation of Srimadbhagavatam, পৃ. RA3-PA5,
  9. literally, prudence