বিষয়বস্তুতে চলুন

স্বর্গপক্ষী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

স্বর্গপক্ষী
বৃহৎ স্বর্গপক্ষী (Paradisaea apoda)
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: প্রাণীজগৎ
পর্ব: কর্ডাটা
শ্রেণী: পক্ষী
বর্গ: প্যাসারিফর্মিস
পরিবার: প্যারাডিসাইডি
সুয়াইনসন, ১৮২৫
গণ ও প্রজাতি

১৭টি গণে ৪৫টি প্রজাতি[]

স্বর্গপক্ষী (birds-of-paradise) হচ্ছে প্যারাডিসাইডি (Paradisaeidae)পরিবারের অন্তর্গত পাখি, যারা প্যাসারিফর্মিস (Passeriformes) নামের বর্গের সদস্য। এই পাখিগুলোর বেশিরভাগই দেখা যায় পূর্ব ইন্দোনেশিয়া, পাপুয়া নিউ গিনি ও পূর্ব অস্ট্রেলিয়ায়। এই পরিবারে ১৭টি গণের মোট ৪৫টি প্রজাতি আছে।

এই পাখিদের সবচেয়ে পরিচিত বৈশিষ্ট্য হলো পুরুষ পাখিদের রঙিন ও আকর্ষণীয় পালক। পুরুষ ও স্ত্রী পাখিদের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকে (যাকে বলে "লিঙ্গভেদ")। পুরুষ পাখিদের ঠোঁট, ডানা, লেজ বা মাথা থেকে লম্বা ও সাজানো পালক থাকে, যা প্রেমপ্রকাশের সময় কাজে লাগে[]। সাধারণত, এরা ঘন জঙ্গলেই বসবাস করে।

এদের খাবার মূলত ফল, তবে মাঝে মাঝে ছোট পোকামাকড়ও খায়।

এদের প্রজননের ধরন একেক প্রজাতির মধ্যে আলাদা হয়—কিছু একসঙ্গী নিয়েই থাকে, আবার কিছু অনেক সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্ক করে, যাকে বলে "লেক[] সিস্টেম" বা প্রদর্শনভিত্তিক বহুগামিতা।

তবে দুঃখজনকভাবে, অনেক প্রজাতি এখন বিপন্ন হয়ে পড়ছে—মানুষের শিকার ও বন ধ্বংসের কারণে।

বিবরণ

[সম্পাদনা]

স্বর্গপক্ষী কর্ভিড (Corvidae) গোত্রের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়। স্বর্গপক্ষীর আকার ৫০ গ্রাম (১.৮ আউন্স) ও ১৫ সেমি (৫.৯ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট রাজস্বর্গপক্ষী (king bird-of-paradise) থেকে শুরু করে ৪৪ সেমি (১৭ ইঞ্চি) দৈর্ঘ্য ও ৪৩০ গ্রাম (১৫ আউন্স) ওজনবিশিষ্ট কার্ল-ক্রেস্টেড ম্যানুকোড (curl-crested manucode) পর্যন্ত বিস্তৃত। দীর্ঘ লেজবিশিষ্ট কালো সিকলবিল (black sicklebill) প্রজাতিটি সর্বাধিক দৈর্ঘ্যের, যার দৈর্ঘ্য ১১০ সেমি (৪৩ ইঞ্চি)। অধিকাংশ প্রজাতিতে পুরুষ পাখির লেজ স্ত্রী পাখির তুলনায় দীর্ঘ ও বৃহৎ হয়, এবং এই পার্থক্য অল্প থেকে চরম মাত্রায় হতে পারে। পাখাগুলি সাধারণত গোলাকার, তবে কিছু প্রজাতির পুরুষদের ক্ষেত্রে এগুলো শব্দ উৎপাদনের জন্য গঠনে পরিবর্তিত। ঠোঁটের গঠনেও স্বর্গপক্ষীদের মধ্যে বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়—কিছু প্রজাতির ঠোঁট দীর্ঘ ও বাঁকানো (যেমন সিকলবিল ও রাইফেলবার্ড), আবার কিছু প্রজাতির ঠোঁট ছোট ও সরু (যেমন অ্যাস্ট্রাপিয়া)। দেহের আকারের মতো ঠোঁটের আকারও লিঙ্গভেদে ভিন্ন হতে পারে, তবে অনেক প্রজাতিতে স্ত্রীদের ঠোঁট পুরুষদের তুলনায় বড়, বিশেষ করে কীটভোজী প্রজাতিগুলিতে।[]

লিঙ্গভেদে পালকের পার্থক্য প্রজনন প্রণালীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত। সামাজিকভাবে একবিবাহী ম্যানুকোড ও প্যারাডাইস-ক্রো প্রজাতিগুলি যৌনদ্বৈতরূপহীন, অর্থাৎ পুরুষ ও স্ত্রী দেখতে প্রায় একরকম। পলিগ্যামি প্রথা অনুসরণকারী Paradigalla গণের দুইটি প্রজাতিও যৌনদ্বৈতরূপহীন। এসব প্রজাতির পালক সাধারণত কালো, যার মধ্যে সবুজ ও নীল দীপ্তি থাকে। অন্যদিকে, যৌনদ্বৈতরূপবিশিষ্ট প্রজাতির স্ত্রী স্বর্গপক্ষীদের পালক সাধারণত মলিন, যা পরিবেশে মিশে থাকার জন্য উপযোগী, বিপরীতে পুরুষদের পালক হয় উজ্জ্বল ও রঙিন। এসব প্রজাতির অপ্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের পালক স্ত্রীসদৃশ হয়, এবং পূর্ণবয়স্ক পালক পেতে সাত বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এই স্ত্রীসদৃশ পালক অল্পবয়সী পুরুষদের শিকারি থেকে রক্ষা করে এবং প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের আগ্রাসন থেকেও বাঁচায়।[]

বিচরণস্থল ও আচরণ

[সম্পাদনা]

স্বর্গপক্ষীর বৈচিত্র্যের কেন্দ্রস্থল হচ্ছে নিউ গিনি দ্বীপ, যেখানে প্রায় সব কটি গণ পাওয়া যায়। কেবল দুটি গণ নিউ গিনির বাইরে অবস্থিত—এগুলো হলো LycocoraxSemioptera, উভয়ই একপ্রজাতিভুক্ত (monotypic) এবং শুধুমাত্র নিউ গিনির পশ্চিমে অবস্থিত মালুকু দ্বীপপুঞ্জে (Maluku Islands) স্থানীয় (endemic)। Ptiloris গণভুক্ত রাইফেলবার্ডদের মধ্যে দুটি প্রজাতি পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় অরণ্যে স্থানীয়, একটি প্রজাতি অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি উভয় অঞ্চলেই দেখা যায়, এবং আরেকটি শুধুমাত্র নিউ গিনিতে পাওয়া যায়। নিউ গিনির বাইরে আরেকটি গণের সদস্য হলো Phonygammus, যার একটি প্রজাতি কুইন্সল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলে দেখা যায়। বাকি সব প্রজাতি নিউ গিনি এবং আশপাশের কয়েকটি দ্বীপে সীমাবদ্ধ। অনেক স্বর্গপক্ষীর বিস্তৃতি খুবই সীমিত, বিশেষ করে যেসব প্রজাতির আবাসস্থল নির্দিষ্ট, যেমন মধ্য-পর্বত অরণ্য (যেমন: কালো সিকলবিল) বা নির্দিষ্ট দ্বীপে স্থানীয় (যেমন: উইলসনের স্বর্গপক্ষী)।[]

অধিকাংশ স্বর্গপক্ষী বিষুবীয় অরণ্যে বাস করে—এর মধ্যে রয়েছে বর্ষাবন, জলাভূমির অরণ্য এবং শৈবাল-আবৃত বনাঞ্চল। এরা প্রায় সবাই একাকী ও গাছে বসবাসকারী। [] কয়েকটি প্রজাতিকে উপকূলবর্তী ম্যাঙ্গ্রোভ অরণ্যেও দেখা গেছে। দক্ষিণতম স্বর্গপক্ষী প্রজাতি হলো অস্ট্রেলিয়ার প্যারাডাইস রাইফেলবার্ড, যা উপ-ক্রান্তীয় ও উষ্ণমণ্ডলীয় আদ্র অরণ্যে বসবাস করে। ম্যানুকোড গোত্রভুক্ত স্বর্গপক্ষীরাই আবাসস্থলের দিক থেকে সবচেয়ে অভিযোজিত; বিশেষত glossy-mantled manucode বনভূমি ও খোলা সাভান্না অঞ্চলে উভয় স্থানে বাস করে। মধ্য-পর্বত অঞ্চল (১,০০০–২,০০০ মিটার উচ্চতা) স্বর্গপক্ষীদের সবচেয়ে সাধারণ আবাসস্থল, যেখানে ৪০টি প্রজাতির মধ্যে ৩০টি পাওয়া যায়।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Gill, Frank; Donsker, David; Rasmussen, Pamela, সম্পাদকগণ (জানুয়ারি ২০২২)। "Crows, mudnesters, melampittas, Ifrit, birds-of-paradise"IOC World Bird List Version 12.1। International Ornithologists' Union। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  2. Ullman, Johanna Kennelly (২০২৫-০৪-০৩)। "This Colorful Bird Executes an Immaculate Display of Courtship"A-Z Animals (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৪-০৫ 
  3. Ligon, Russell A.; Diaz, Christopher D.; Morano, Janelle L.; Troscianko, Jolyon; Stevens, Martin; Moskeland, Annalyse; Laman, Timothy G.; Scholes, Edwin (২০১৮-১১-২০)। Price, Trevor, সম্পাদক। "Evolution of correlated complexity in the radically different courtship signals of birds-of-paradise"PLOS Biology (ইংরেজি ভাষায়)। 16 (11): e2006962। আইএসএসএন 1545-7885ডিওআই:10.1371/journal.pbio.2006962 
  4. Hoyo, Josep del; Elliott, Andrew; Christie, David A.; Bock, Walter Joseph; Collar, Nigel James (২০০৯)। Handbook of the birds of the world। Barcelona: Lynx ed। আইএসবিএন 978-84-96553-50-7 
  5. "Birds of Paradise"web.archive.org। ২০১১-০৫-১৫। ২০১১-০৫-১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০৫-১২ 
  6. Heads, Michael (২০০১)। "Birds of paradise, biogeography and ecology in New Guinea: a review"Journal of Biogeography (ইংরেজি ভাষায়)। 28 (7): 893–925। আইএসএসএন 1365-2699ডিওআই:10.1046/j.1365-2699.2001.00600.x