স্পেস এক্স

স্থানাঙ্ক: ৩৩°৫৫′১৫″ উত্তর ১১৮°১৯′৪০″ পশ্চিম / ৩৩.৯২০৭° উত্তর ১১৮.৩২৭৮° পশ্চিম / 33.9207; -118.3278
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্পেসএক্স
স্পেসএক্স
শিল্পমহাকাশ
প্রকারব্যক্তিগত
প্রতিষ্ঠাকাল৬ মে ২০০২; ২০ বছর আগে (2002-05-06)[১]
প্রতিষ্ঠাতাইলন মাস্ক
সদরদপ্তর
Hawthorne, ক্যালিফোর্নিয়া, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
৩৩°৫৫′১৫″ উত্তর ১১৮°১৯′৪০″ পশ্চিম / ৩৩.৯২০৭° উত্তর ১১৮.৩২৭৮° পশ্চিম / 33.9207; -118.3278
প্রধান ব্যক্তি
  • ইলন মাস্ক
    (সিইও এবং সিটিও)
  • গুইন শটওয়েল
    (President and COO)
  • টম ম্যুলার
    (CTO of Propulsion)
পণ্যসমূহ
  • মহাকাশ যান
  • রকেট ইঞ্জিন
  • ড্রাগন ক্যাপসুল
  • স্টারশিপ ( উন্নয়ন চলছে )
  • স্টারলিঙ্ক
  • এএসডিএস অবতরণ প্ল্যাটফর্ম
পরিষেবাসমূহঅরবিটাল রকেট লঞ্চ
আয়বৃদ্ধিUS$2 billion (2019)
মালিকইলন মাস্ক ট্রাস্ট
(54% equity; 78% voting control)[২]
কর্মীসংখ্যা
প্রায় ৮,০০০[৩][৪]
(May,2020)
ওয়েবসাইটwww.spacex.com
পাদটীকা / তথ্যসূত্র
[৫][৬][৭][৮]

স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পোরেশন (ইংরেজি: Space Exprolration Technologies Corporation) বা সংক্ষেপে স্পেসএক্স (ইংরেজি: SpaceX) একটি মার্কিন মহাকাশযান প্রস্তুতকারক এবং মহাকাশ যাত্রা সেবা প্রদানকারী কোম্পানি। এর প্রধান কার্যালয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার অঙ্গরাজ্য হথর্ন নগরীতে অবস্থিত। মহাকাশ যাত্রা ও ভ্রমণ সহজলভ্য করার এবং মঙ্গল গ্রহে মানুষের বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে প্রযুক্তি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তা ইলন মাস্ক ২০০২ সালে এই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠা করেন।[৯] স্পেসএক্স মহাকাশযান এবং রকেট ইঞ্জিনের তৈরির পাশাপাশি ড্রাগন কার্গো স্পেসক্র্যাফট(Dragon cargo spacecraft) এবং স্টারলিংক স্যাটেলাইট(Starlink satellite) (ইন্টারনেট সরবরাহ করে এমন স্যাটেলাইট) তৈরি করেছে। স্পেসএক্স ড্রাগন ২(Dragon 2) স্পেসক্র্যাফট এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মানুষ ও পণ্য নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা চালু করেছে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০০১-২০০৪:প্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

২০০১ সালে ইলন মাস্ক পরিকল্পনা করেন মার্স ওয়েসিস নামে একটি প্রকল্পের যেখানে তিনি মঙ্গল গ্রহে গ্রীনহাউজ তৈরি করবেন বলে ঠিক করেন এবং এই গ্রীনহাউজ এর মধ্যে গাছ জন্মায় কিনা পরীক্ষা করবেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে মহাকাশ অনুসন্ধানে জনগনদের আগ্রহ পেতে এবং নাসার বাজেট বৃদ্ধির প্রয়াসে প্রকল্পটি "জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘতম ভ্রমণ" হবে। তিনি রাশিয়া থেকে সস্তায় রকেট কেনার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সাশ্রয়ী মূল্যের রকেট খুঁজে না পেয়ে ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফিরে আসেন।

মাস্ক অনুভব করেছিল যে তিনি এমন একটি সংস্থা শুরু করতে পারেন যা তার সাশ্রয়ী মূল্যের রকেট তৈরি করতে পারে। প্রথম দিকে টেসলা এবং স্পেসএক্স বিনিয়োগকারী স্টিভ জুরভেটসনের মতে, মাস্ক গণনা করেছিল যে রকেট তৈরির জন্য কাঁচামালগুলি তখন রকেটের বিক্রয়মূল্যের মাত্র ৩% ছিল। ভার্টিকাল ইন্টিগ্রেশন প্রয়োগ করে, প্রায় ৮৫% ইন-হাউস লঞ্চ হার্ডওয়্যার উৎপাদন করে, এবং আধুনিক সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মডুলার পদ্ধতির মাধ্যমে।

২০০২ এর প্রথম দিকে, মাস্ক তার নতুন মহাকাশ সংস্থার জন্য কর্মীদের সন্ধান করতে শুরু করেছিল, যার শীঘ্রই নাম হবে স্পেসএক্স। মাস্ক রকেট ইঞ্জিনিয়ার টম মুলারের (পরে স্পেসএক্সের প্রপুলশনের সিটিও) কাছে গিয়ে তার ব্যবসায়ের অংশীদার হওয়ার জন্য তাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মুয়েলার মাস্কের হয়ে কাজ করতে সম্মত হন এবং এভাবে স্পেসএক্সের জন্ম হয়। স্পেসএক্সের প্রথম সদর দফতরটি ক্যালিফোর্নিয়ার এল সেগুন্দোরের একটি গুদামে অবস্থিত ছিল। সংস্থাটি ২০০৫ সালের নভেম্বরে ১৬০ জন কর্মচারী নিয়ে শুরু করে যা ২০২০ সালের মে মাসে আট হাজারে পরিণত হয়েছিল, যখন সিওও গুইন শটওয়েল বলেছিলেন যে স্টারলিংক অনলাইন আনার জন্য এই সংস্থাটির আরও বেশি বৃদ্ধি পাবে বলে তারা আশা করেননি।   ২০১৬ সালে, মাস্ক আন্তর্জাতিক মহাকাশচারী কংগ্রেসে একটি ভাষণ দিয়েছিলেন, যেখানে তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে মার্কিন সরকার রকেট প্রযুক্তিকে একটি "উন্নত অস্ত্র প্রযুক্তি" হিসাবে ব্যবহার করে, যা আমেরিকান ছাড়া কেউ বানাতে পারবে না।

২০০৫-২০০৯: ফ্যালকন ১ ও প্রথম কাক্ষিক উড্ডায়ন[সম্পাদনা]

স্পেসএক্স নিজেস্ব অর্থে প্রথম কাক্ষিক উৎক্ষেপণ যান(রকেট) তৈরি করে। ফ্যালকন ১ ব্যয়যোগ্য, সল্প ধারনকারী, দুই ধাপে কক্ষে পৌছানোর মতন একটি রকেট ছিল। ফ্যালকন ১ উন্নয়নে মোট খরচ আনুমানিক ৯০ মিলিয়ন থকে ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি এর ডিএআরপিএ ফ্যালকন প্রোজেক্ট(DARPA Falcon Project) থেকে ফ্যালকন নামটি গ্রহণ করা হয়।

২০০৫ সালে স্পেসএক্স দশকের শেষ হতে হতে মানববাহী যোগ্য বাণিজ্যিক মহাকাশযাত্রা প্রকল্প অনুসরণের পরিকল্পনা ঘোষণা করে। এটি প্রকল্পই পরবর্তীতে ড্রাগন মহাকাশযান হয়ে উঠে। ২০০৬ সালে নাসা সিওটিএস প্রোগ্রামে আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মানুষ ও পণ্য পুনঃসরবরাহ ক্ষমতা প্রদর্শনের জন্যে স্পেসএক্সকে নির্বাচন করে এবং ৩৯৬ মিলিয়ন ডলার প্রদান করে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বিভাগ একটি প্রকল্পের অধীনে ফ্যালকন ১ এর প্রথম দুটি উৎক্ষেপণ কিনেছিল। এই প্রকল্পে ডিএআরপিএ-তে ব্যবহারের উপযুক্ত নতুন ইউ.এস উৎক্ষেপণ বাহন মূল্যায়ন করা হয়। ২০০৬ থেকে ২০০৮ সালে প্রথম তিনটি রকেট উৎক্ষেপণই ব্যর্থ হয় যা প্রায় কোম্পানির অবসান ছিল। টেসলা মোটোরস এর অর্থায়ন ব্যর্থ হয়েছিল এবং যথাক্রমে টেসলা, সোলারসিটি এবং ইলন মাস্ক ব্যাক্তিগতভাবে একত্রে প্রায় দেউলিয়া হয়েছিল। মাস্ক তখন চাপের কারণে "দুঃস্বপ্ন থকে জেগে উঠতেন, চিৎকার করতেন ও শারীরিক যন্ত্রণায় থাকতেন।"

২০০৮ সালে ২৮শে সেপ্টেম্বর চতুর্থ প্রচেষ্টায় প্রথমবার উৎক্ষেপণ সফল হলে আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়। মাস্ক তাঁর অবশিষ্ট ৩০ মিলিয়ন ডলার স্পেসএক্স ও টেসলার মধ্যে ভাগ করে দেন এবং ডিসেম্বরে নাসা প্রথম বাণিজ্যিক পুনঃসরবরাহ মিশনের(Commercial Resupply Mission; CRS) চুক্তি পুরস্কৃত করে স্পেসএক্সকে ১.৬ বিলিয়ন ডলার প্রদান করে আর্থিকভাবে কোম্পানিটিতে রক্ষা করে। এই কারণ এবং অন্যান্য বাণিজ্যিক কার্যক্রমে সক্ষমতা অর্জনের কারণে ফ্যালকন ১ এর দ্বিতীয় সফল ও সর্বমোট পঞ্চম উৎক্ষেপনের পরে রকেটটি অবসর গ্রহণ করে। এটি স্পেসএক্সকে কোম্পানির সম্পদ একটি বৃহত্তর কাক্ষিক রকেট ফ্যালকন ৯ উন্নয়নে লক্ষ্য করতে সাহায্য করে। গুয়েন শটওয়েল তৎকালীন নাসা প্রশাসক(ও স্পেসএক্সের সাবেক চুক্তিকারী) মাইকেল গ্রিফিন-এর সাথে সিআরএস চুক্তি স্থির করাতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখায় শটওয়েলকে স্পেসএক্সের রাষ্ট্রপতিতে পদোন্নতি করা হয়। গ্রিফিন পরবর্তীতে অনুমান করেছিলেন যে স্পেসএক্স-এর ৮৫% মূলত নাসার পুরষ্কারের মাধ্যমে ফেডারেল সরকার দ্বারা অর্থায়ন করা হয় এবং বাকি ১৫% প্রদান করে ইলন মাস্ক এবং আন্যান্য বেসরকারী বিনিয়োগকারী। তিনি প্রাথমিকভাবে বাণিজ্যিক মহাকাশ প্রকল্পের জন্য যা পরিকল্পনা করেছিলেন সেটার তুলনায় সরকারী অর্থায়নের পরিমাণকে "তাঁর দৃষ্টিতে অত্যধিক" মনে করতেন।

২০১০-২০১২: ফ্যালকন ৯, ড্রাগন ও নাসার চুক্তি[সম্পাদনা]

প্রাথমিকভাবে স্পেসএক্স ছোট ফ্যালকন ১ উড্ডয়ন বাহনের পরে মাঝারি ক্ষমতা সম্পন্ন ফ্যালকন ৫ তৈরি করার পরিকল্পনা করেছিল। এর পরিবর্তে ২০০৫ সালে একটি পুনঃব্যবহার যোগ্য ও ভারী উত্তোলন ক্ষমতা সম্পন্ন যান ফ্যালকন ৯ উন্নয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। উল্লেখিত ক্ষমতাগুলো প্রদর্শন করতে সফল হলে নাসা বেশ কয়েকটি বাণিজ্যিক উড্ডয়ন কিনতে চাওয়ায় ফাল্কন ৯ এর উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। এটি মূলত ২০০৬ সালের সিওটিএস(Commercial Orbital Transportation Services) প্রোগ্রামের অর্থের সাহায্যে শুরু হয়েছিল। ফ্যালকন ৯, ড্রাগন স্পেসক্রাফট এবং এদের একত্রে উড্ডয়ন ক্ষমতা প্রদর্শনে এর উদ্দ্যেশে এই চুক্তিতে সামগ্রিকভাবে ২৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার উন্নয়ন তহবিল হিসেবে প্রদান করা হয়েছিল। এই চুক্তির অংশ হিসেবে ২০১০ সালের জুনে ড্রাগন মহাকাশযানের প্রাথমিক মডেলের সাথে ফাল্কন ৯ উৎক্ষেপণ করা হয়।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ১(COTS Demo Flight 1) এ ফ্যালকন ৯ এর দ্বিতীয় উড্ডয়নে প্রথমবার ড্রাগন কার্যকরী মহাকাশযানের উৎক্ষেপণ হয়। এটি দুটি কক্ষপথ ভ্রমণ করে মিশনের সকল উদ্দ্যেশ্য পূরণ করে সুরক্ষিত অবস্থায় ফেরত আসে। ২০১০ এর ডিসেম্বরের মধ্যে স্পেসএক্স প্রত্যেক তিন মাসে একটি করে ফ্যালকন ৯ ও ড্রাগন মহাকাশযান তৈরি করছিল।

২০১১ সালের এপ্রিল মাসে, কমারসিয়াল ক্রিউ ডেভেলাপমেন্টের দ্বিতীয় দফার অংশ হিসেবে নাসা স্পেসএক্সকে ৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের চুক্তি প্রদান করে। এ চুক্তিতে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মানবাহী যান হিসেবে ড্রাগনকে গড়ে তুলার জন্যে একটি সংযুক্ত উৎক্ষেপণ বাতিল ব্যবস্থা(launch abort system) গড়ে তুলার নির্দেশ ছিল। ২০১২ সালের অগাস্ট মাসে মানব বাহন ব্যবস্থার সূক্ষ্ম নকশা গড়ে তুলতে নাসা স্পেসএক্সকে একটি নির্ধারিত মূল্যের স্পেস আক্ট এগ্রিমেন্ট পুরস্কৃত করে।

২০১২ সালের শুরুর দিকে মাস্কের কাছে স্পেসএক্সের দুই-তৃতীয়াংশ স্টকের মালিকানা ছিল এবং তাঁর ৭০ মিলিয়ন শেয়ারের মূল্য তৎকালীন প্রাইভেট মার্কেটে অনুমানিক মুল্য ৮৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। এই হিসেবে স্পেসএক্সের মোট মূল্য দাঁড়িয়েছিল ১.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০১২ সালের মে মাসে ড্রাগন সি২+ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে ড্রাগন আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মাল পাঠাতে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক স্পেসক্রাফট হয়ে উঠে। এই উড্ডয়নের পরে, স্পেসএক্স এর মূল্য প্রায় দিগুণ হয়ে দাড়ায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারে বা শেয়ার প্রতি ২০ ডলার। এই সময়ের মধ্যে স্পেসএক্স মোট ১ বিলিয়ন ডলারে এর প্রথম দশক চালিয়েছিল। এর মধ্যে প্রায় ২০০ মিলিয়ন ডলার প্রাইভেট ইক্যুইটি প্রদান করা হয়েছিল। যার মধ্যে ১০০ মিলিয়ন বিনিয়োগ করেছিল ইলন মাস্ক এবং অন্যান্য বিনিয়োগকারী বাকি ১০০ মিলিয়ন দিয়েছিল।

২০১২ সালের শেষভাগে স্পেসএক্স স্বয়ংক্রিয় পুনঃব্যবহার কার্যক্রম শুরু করে। এ সময়ে অবতরণ প্রযুক্তির সল্প-উচ্চতায়, সল্প-বেগে পরীক্ষণ করা হতো। ফাল্কন ৯ এর প্রাথমিক সংস্করণগুলো লম্বভাবে উৎক্ষেপণ এবং অবতরণ করতো। ২০১৩ সালের শেষের দিকে বুস্টারের অতি বেগ ও উচ্চতার পরীক্ষণ শুরু হয়।

২০১৩-২০১৫: বাণিজ্যিক উড্ডয়ন ও দ্রুত উন্নয়ন[সম্পাদনা]

স্পেসএক্স ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি ক্রেতার জন্যে প্রথম বাণিজ্যিক মিশন উৎক্ষেপণ করে। ২০১৪ সালে, স্পেসএক্স বিশ্বব্যাপী প্রকাশ্যে প্রতিযোগিতায় ২০টি চুক্তির মধ্যে ৯টি চুক্তি জিতেছিল। এই সালে অ্যারিয়ানস্পেস স্পেসএক্সের সাথে প্রতিযোগিতায় মোকাবেলার জন্যে ইউরোপীয় সরকারের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভর্তুকি অনুরোধ করেছিল। ২০১৪ সাল থেকে শুরু করে, স্পেসএক্সের সক্ষমতা এবং স্বল্পমূল্যে সেবা প্রদান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিলিটারি মালামাল(payload) এর উৎক্ষেপণ মার্কেটেও প্রভাব ফেলে। প্রায় এক দশক ধরে এই মার্কেটে মার্কিন মহাকাশযাত্রা সেবাপ্রদানকারী ইউনাইটেড লঞ্চ অ্যালায়েন্স(United Launch Alliance)-এর আধিপত্য ছিল। এই একচোটিয়া অবস্থায় কিছু বছরে সেবাপ্রদানকারী উৎক্ষেপণ মূল্য বাড়িয়ে ৪০০ মিলিয়ন ডলারের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিল। ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নাসা স্পেসএক্সকে কমার্শিয়াল ক্রিউ ট্র্যান্সপোরর্টেশন ক্যাপাবিলিটি(Commercial Crew Transportation Capability; CCtCap) প্রদান করে মানব পরিবহন ব্যবস্থা(Crew Transportation System) উন্নয়নের চুক্তি চূড়ান্ত করে। এই চুক্তিতে কয়েকটি প্রযুক্তিগত ও প্রমাণপত্রদান(cerification) মাইলফলক, একটি যন্ত্রনিয়ন্ত্রিত উড্ডয়ন পরীক্ষা, একটি মানবচালিত উড্ডয়ন পরীক্ষা এবং প্রমাণপত্রদানের পর ছয়টি কার্যকরী মিশন অন্তর্ভুক্ত ছিল।

২০১৫ এর জানুয়ারীতে কোম্পানির ৮.৩৩% এর জন্যে স্পেসএক্স গুগল এবং ফাইডেলিটি থেকে ১ বিলিয়ন ডলার গ্রহণ করে। এতে কোম্পানির মূল্য দাড়ায় প্রায় ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই মাসে স্পেসএক্স বিশ্বব্যাপী ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানে একটি নতুন উপগ্রহ-পুঞ্জ স্টারলিঙ্ক ঘোষণা করে।

২০১৫ সালের জুনের শেষদিকে ফ্যালকন ৯ এর প্রথম গুরুতর ব্যর্থতার সম্মুখীন হয়। আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে সপ্তম পুনঃসরবরাহ মিশন সিআরএস-৭(CRS-7) উড্ডয়নের ২ মিনিটে বিস্ফরিত হয়। রকেটটিতে একটি বদ্ধপাত্রে চাপবিশিষ্ট হিলিয়াম অবলম্বন করতে একটি ২ ফুট লম্বা দন্ড ছিল, যেটি ত্বরণের বলে খুলে গিয়েছিল। ফলে একটি ফাটল ধরে এবং উচ্চচাপের হিলিয়াম নিম্নচাপের জ্বালানির ট্যাঙ্কে ঢুকে পরে এবং উড্ডয়নটি ব্যর্থ হয়।

২০১৫-২০১৭: পুনঃব্যবহারের মাইলফলক[সম্পাদনা]

স্পেসএক্স সর্বপ্রথম রকেটের প্রথম স্তরকে(first stage) সফলভাবে অবতরণ এবং পুনঃরুদ্ধার করে ২০১৫ সালে ডিসেম্বরে ফ্যালকন ৯ ফ্লাইট ২০ মিশনে। ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে স্পেসএক্স অ্যাটলান্টিক মহাসাগরে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশবন্দর ড্রোন জাহাজ(Autonomus Spaceport Drone Ship; ASDS) অফ কোর্স আই স্টিল লাভ ইউ-তে প্রথমবার সফলভাবে অবতরণ করাতে পেরেছিল। এমন কয়েকটি সফল অবতরণ হলে ২০১৬ সালের অক্টোবরে স্পেসএক্স ঘোষণা করে যে ফ্যালকন ৯ এর পুনঃব্যবহৃত প্রথম স্তরে পেলোড উড়ালে ক্রেতাদের ১০% মূল্য ছাড় দেয়া হবে।

২০১৬ সালে সেপ্টেম্বরে স্পেসএক্স নিজের দ্বিতীয় গুরুত্বর ব্যর্থতা দেখে। একটি ফ্যালকন ৯ উৎক্ষেপণের পূর্বে নিয়মমাফিক স্থির ইন্ধন পরীক্ষায়(static fire test) জ্বালানি ভরার কার্যক্রমের সময় বিস্ফোরিত হয়। এতে অনুমানিক ২০০ মিলিয়ন ডলারের যোগাযোগ স্যাটেলাইট নষ্ট হয়ে যায়। রকেটটিতে ব্যবহৃত তরল অক্সিজেন অতিরিক্ত ঠাণ্ডা হয়ে কঠিন হয়ে যায় ও এটি হিলিয়াম পাত্রের কার্বন যৌগের সাথে প্রজ্বলিত হয়ে উঠে ফলে বিস্ফোরণ হয়। এই দুর্ঘটনাটিকে ব্যর্থ উড্ডয়ন না ধরা সত্ত্বেও এটির ফলে কোম্পানিটির উৎক্ষেপণ সেবা চার মাস স্থগিত হয়ে যায়। এ সময় কোথায় ত্রুতি হয়েছিল তা খুজে বের করা হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে স্পেসএক্স উড্ডয়ন সেবা পুরনায় চালু করে।

একই বছরের মার্চ মাসে স্পেসএক্স একটি উদ্ধারকৃত ফ্যালকন ৯ ব্যবহার করে এসইএস-১০ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করে। এ সময়েই সর্বপ্রথম পুনঃ-উৎক্ষেপণের মাধ্যমে পেলোড-ধারী কাক্ষিক রকেট পুনরায় মহাকাশে ফেরত গিয়েছে। এই রকেটের প্রথম স্তরতিকে আবার উদ্ধার করা হয়। এটি পুনঃব্যবহৃত কক্ষগামী রকেটের প্রথম অবতরণ ছিল।

২০১৭-২০১৮: নেতৃস্থানীয় বিশ্বব্যাপী উড্ডয়ন ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

২০১৭ সালের জুলাইতে ৩৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করায় কোম্পানিটির মোট মূল্য দাড়িয়েছিল ২১ বিলিয়ন ডলারে। ২০১৭ সালে বৈশ্বিক মার্কেটে প্রেরিত উৎক্ষেপণ চুক্তিগুলোর মধ্যে ৪৫% স্পেসএক্স অর্জন করেছিল। ২০১৮ সালের মার্চের মধ্যে স্পেসএক্স ১০০টির বেশি উৎক্ষেপণ করেছিল যা চুক্তি থেকে প্রায় ১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে। এই চুক্তিগুলোর মধ্যে সরকারি(নাসা/ডোড) ও বেসরকারি দুটি ক্রেতাই ছিল। এটি উৎক্ষেপণের পরিমাণের দিক দিয়ে স্পেসএক্সকে বিশ্বব্যাপী মূখ্য বেসরকারি উৎক্ষেপণ সেবা প্রদানকারী করে তুলে।

২০১৭ সালে স্পেসএক্স একটি অধীনস্থ কোম্পানি দ্য বোরিং কোম্পানি তৈরি করে এবং কয়েকটি স্পেসএক্স কর্মী ব্যবহার করে স্পেসএক্সের সদরদপ্তর ও কারখানার পাশে পরীক্ষামূলকভাবে একটি ছোট সুরঙ্গ তৈরি করে। এই কাজ ২০১৮ সালের মে মাসে সম্পন্ন হয় ডিসেম্বরে জনসাধারনের জন্য উম্মুক্ত করা হয়। ২০১৮ চলাকালীন দ্য বোরিং কোম্পানিকে একটি নতুন কর্পোরেট সত্তায় পরিনত করা হয়। এর মূলধনের ৬% স্পেসএক্সের কাছে, ১০% এর অল্প প্রাথমিক কর্মচারীদের কাছে এবং বাকি ইলন মাস্কের কাছে যায়।

২০১৯-বর্তমান: স্টারশিপ, স্টারলিঙ্ক এবং প্রথম মানব উড্ডয়ন[সম্পাদনা]

২০১৯ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে স্টারশিপ ও স্টারলিঙ্ক প্রকল্প অর্থায়ন করতে স্পেসএক্স ১০% কর্মীদের ছাটাই করে। ২০১৯ এর প্রথম দিকে ফ্লোরিডা ও টেক্সাসে স্টারশিপের প্রাথমিক প্রটোটাইপ গঠন ও পরীক্ষণ শুরু হয়। এই বছরের পরবর্তীতে সকল স্টারশিপ গঠন ও পরীক্ষণ স্পেসএক্সের দক্ষিণ টেক্সাস উৎক্ষেপণ স্থলে স্তানান্তর করা হয়। আরার, ২০১৯ সালের মে মাসে স্পেসএক্স ৬০টি স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের প্রথম বড় ব্যাচ উৎক্ষেপণ করার মাধ্যমে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের স্থাপনা শুরু হয়। এটি পরবর্তী বছরে পৃথিবীর বৃহত্তম বেসরকারি স্যাটেলাইট পুঞ্জ হয়ে উঠে। ২০১৯ সালে তিন দফা তহবিল সংগ্রহের মাধ্যমে স্পেসএক্স মোট ১.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার মূলধন অর্জন করে। ২০১৯ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের মধ্যে স্পেসএক্স এর মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে ৩.৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয় এবং ২০২০-এর মার্চ তা পৌছায় ৩৬ বিলিয়ন ডলারে।

২০২০ সালের মে মাসে স্পেসএক্স ক্রিউ ড্রাগন ডেমো-২ মিশনে ক্রিউ ড্রাগনের মাধ্যমে সফলভাবে দুইটি মহাকাশচারীদের(ডোগ হার্লিবব বেনকেন) অক্ষে পৌছিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক অর্জন করে। এতে স্পেসএক্স প্রথম বেসরকারি কোম্পানি হয় যে আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মহাকাশচারীদের পাঠিয়েছে। এর পাশাপাশি এটি গত ৯ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমি থেকে প্রথম মানববাহী উৎক্ষেপণ ছিল। এই মিশনটি ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার এর কেনেডি স্পেস সেন্টার লঞ্চ কমপ্লেক্স ৩৯-এ(Kennedy Space Center Launch Complex 39-A; LC-39A) থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।

২০২০ সালের ১৯শে অগাস্টে বেসরকারি কোম্পানি দ্বারা সংগঠিত সবচেয়ে বড়গুলোর একটি ফান্ডিং রাউন্ডে স্পেসএক্স ১.৯ বিলিয়ন অর্জনের পরে কোম্পানিটির মূল্য দাড়ায় ৪৬ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে শেয়ারপ্রতি প্রায় ৪২০ ডলারে একটি ইক্যুইটি রাউন্ডে ৯৯ বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে আরও ১.৬১ বিলিয়ন ডলার অর্জন করলে কোম্পানিটির মূল্য আনুমানিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার হয়। ২০২১-এর মধ্যে স্পেসএক্স ইক্যুইটি অর্থায়নের মাধ্যমে মোট প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে। ২০১৯ থেকে এই মূলধনের বেশিরভাগই স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট পুঞ্জের গঠন কার্যক্রমে এবং স্টারশিপ উৎক্ষেপণ বাহনের উন্নয়ন ও উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০২১ এর অক্টোবরের মধ্যে স্পেসএক্সের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১০০.৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২১ সালের মধ্যে স্টারলিঙ্কের জন্যে ভূমিতে কম্পিউটার ও যোগাযোগ সেবার দেয়ার জন্যে স্পেসএক্স গুগল ক্লাউড প্ল্যাটফর্মমাইক্রোসফট অ্যাজুরে-এর সাথে চুক্তিতে প্রবেশ করে। ২০২২ সালে অর্থায়নের নতুন দফায় স্পেসএক্সের মূল্য হয় ১২৭ বিলিয়ন ডলার।

২০২১ সালের জুলাইতে স্পেসএক্স এ শর্টফল অফ গ্রাভিটাস নামক একটি নতুন স্বয়ংক্রিয় ড্রোন শিপের উন্মোচন করে। ২০২১ সালে ২৯শে অগাস্টে সিআরএস-২৩ মিশনে এটিতে প্রথমবার একটি বুস্টার অবতরণ করানো হয়। ২০২২ সালের প্রথম ১৩০ দিনের মধ্যেই স্পেসএক্স ১৮ বার রকেট উৎক্ষেপণ করে এবং দুবার মহাকাশচারীদের পৃথিবীতে ফেরত নিয়ে আসে। ২০২২ সালের বেশিরভাগ মিশনই স্টারলিঙ্কের ছিল। এটি একটি ভোক্তানির্ভর ইন্টারনেট ব্যবসা যা গুচ্ছে গুচ্ছে ইন্টারনেট-সম্প্রচার সক্ষম স্যাটেলাইট পাঠিয়ে থাকে। বর্তমানে পৃথিবীর অক্ষে স্টারলিঙ্কের ২,২০০ টির বেশি স্যাটেলাইট আছে। ২০২১ সালে কোম্পানির সিইও ইলন মাস্ক ঘোষণা করেন যে স্পেসএক্স একটি কার্বন ডাই-অক্সাইড অপসারণ প্রকল্প শুরু করছে যেটায় সংগৃহীত কার্বনকে রকেট জ্বালানিতে পরিণত করা হবে। এর পূর্বে ফেব্রুয়ারিতে তিনি সবচেয়ে ভালো কার্বন আটক প্রযুক্তি(carbon capture technology) তৈরি করার প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদেরকে আর্থিক পুরস্কার দিতে এক্স প্রাইজ ফাউন্ডেশনকে ১০০ মিলিয়ন ডলার দান করার ঘোষণা দেন।

২০২২ সালের অগাস্টে রিউটার্স জ্ঞাপিত করে যে, ইউক্রেনে রুশ আক্রমণের চলাকালে রাশিয়া সয়ুজ রকেটের প্রাপ্তি আটকিয়ে রেখেছে বিধায় স্পেসএক্সের উৎক্ষেপণ কাঠামো সাময়িকভাবে ব্যবহার করার সম্ভাবনায় ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি(ইএসএ) স্পেসএক্সের সাথে প্রাথমিক আলোচনা শুরু করেছে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে ফেডারেল কমিউনিকেশন্স কমিশন স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত স্পেসএক্সের প্রায় ৭৫০০ টি পরবর্তী প্রজম্মের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের অনুমোদন দেয়।

২০২২ সালে স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ এক বছরে একই প্রকার বাহনে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ উৎক্ষেপণের জন্যে বিশ্ব রেকর্ডধারী হয়ে উঠে। ২০২২ এ স্পেসএক্স প্রায় প্রতি ৬ দিনে একটি রকেট উৎক্ষেপণ করে এবং মোট ৬১ বার উৎক্ষেপণ করেছিল। কেবলমাত্র নভেম্বরে একটি ফ্যালকন হেভি উৎক্ষেপণ বেতীত বাকি সকল উৎক্ষেপণ ফ্যালকন ৯ রকেটে করা হয়েছিল।

সংক্ষেপে অর্জনসমূহ[সম্পাদনা]

স্পেসএক্স কৃর্তক অর্জনের তালিকা
তারিখ অর্জন Flight
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ প্রথম বেসরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণ তরল-জ্বালানি নির্ভর রকেট কক্ষে পৌছায়।[১০] ফ্যালকন ১ ফ্লাইট ৪
১৪ জুলাই, ২০০৯ প্রথম বেসরকারি অর্থায়নে সম্পূর্ণ তরল-জ্বালানি নির্ভর রকেট অক্ষে বাণিজ্যিক স্যাটেলাইট পাঠায়। ফ্যালকন ১ ফ্লাইট ৫ এ রাজাকস্যাট
৯ ডিসেম্বর, ২০১০ প্রথম বেসরকারি কোম্পানি সফলভাবে একটি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ, স্থাপন ও উদ্ধার করে। স্পেসএক্স সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ১ এ স্পেসএক্স ড্রাগন
২৫ মে, ২০১২ প্রথম বেসরকারি কোম্পানি একটি মহাকাশযান আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পাঠায়।[১১] ড্রাগন সি২+
২২ ডিসেম্বর, ২০১৫ প্রথমবার একটি কাক্ষিক পর্যায়ের রকেটের প্রথম স্তর অবতরণ করানো হয়। অর্বকম ওজি২ ম২ এ ফ্যালকন ৯ বি১০২১
৮ এপ্রিল, ২০১৬ সমুদ্র প্ল্যাটফর্মে প্রথমবার একটি কাক্ষিক পর্যায়ের রকেটের প্রথম স্তর অবতরণ করানো হয়। স্পেসএক্স সিআরএস-৮ এ ফ্যালকন ৯ বি১০২১
৩০ মার্চ, ২০১৭ একটি কাক্ষিক পর্যায়ের রকেটের প্রথম স্তরকে প্রথমবার পুনঃব্যবহার, পুনঃউড্ডয়ন ও (দ্বিতীয়) অবতরণ করা হয়।[১২] এসইএস-১০ এ ফ্যালকন ৯ বি১০২১
৩০ মার্চ ২০১৭ প্রথমবার একটি পেলোড সুরক্ষককে নিয়ন্ত্রিতভাবে ফেরৎ আনা ও উদ্ধার।[১৩] এসইএস-১০
৩ জুন, ২০১৭ প্রথমবার একটি বেসরকারি মালবাহী মহাকাশযানের পুনঃউড্ডয়ন।[১৪] স্পেসএক্স সিআরএস-১১ তে ড্রাগন সি১০৬
৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১৭ প্রথম একটি বেসরকারি মহাকাশযানকে সূর্যকেন্দ্রিক অক্ষে পাঠানো হয়। ফ্যালকন হেভি ফ্লাইট টেস্টে ইলন মাস্কের টেসলা রোডস্টার
২ মার্চ, ২০১৯ প্রথম বেসরকারি কোম্পানি যে একটি মানববাহনযোগ্য মহাকাশযানকে কক্ষপথে পাঠায়। ক্রিউ ড্রাগন ডেমো-১
৩ মার্চ, ২০১৯ প্রথম বেসরকারি কোম্পানি যে একটি মানববাহনযোগ্য মহাকাশযানকে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্ত করে।
২৫ জুলাই, ২০১৯ একটি পূর্ণ-চক্র বিশিষ্ট দহন চক্র বিশিষ্ট ইঞ্জিনের(full flow staged combustion cycle engine) প্রথম উড্ডয়ন(র‍্যাপটর)।[১৫] স্টারহপার
১১ নভেম্বর, ২০১৯ পেলোড খোলকের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউড্ডয়ন। ২০১৯ এর এপ্রিলের আরবস্যাট-৬এ মিশনে এই খোলকটি প্রথমবার ব্যবহৃত হয়েছিল।[১৬] স্টারলিঙ্ক ২ ভি১.০
জানুয়ারী ২০২০ পৃথিবীতে বৃহত্তম বেসরকারি স্যাটেলাইট পুঞ্জ অপারেটর।[১৭] স্টারলিঙ্ক ৩ ভি১.০
৩০ মে, ২০২০ প্রথমবার একটি বেসরকারি কোম্পানি কক্ষপথে মানুষ পাঠায়।[১৮] ক্রিউ ড্রাগন ডেমো-২
৩১ মে, ২০২০ প্রথমবার একটি বেসরকারি কোম্পানি আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মানুষ পাঠায়।[১৯]
২৪ জানুয়ারী, ২০২১ একক মিশনে সর্বোচ্চ পরিমাণ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ(১৪৩ টি)।[ক][২০] ফ্যালকন ৯ এ ট্রান্সপোর্টার-১
২৩ এপ্রিল, ২০২১ প্রথমবার একটি মানুষ্যবাহী স্পেস ক্যাপসুলের পুনঃব্যবহার ও পুনঃউড্ডয়ন।[২১] ক্রিউ ড্রাগন এনডেভর
১৭ জুন, ২০২১ একটি "জাতীয় প্রতিরক্ষা" মিশনে প্রথমবার একটি বুস্টার পুনহব্যবহার করা হয়।[২২] ফ্যালকন ৯ এ জিপিএস III-০৫, বুস্টার বি১০৬২ এর দ্বিতীয় উড্ডয়ন
১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১ সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক দলের প্রথম কাক্ষিক উড্ডয়ন।[২৩][২৪] ইন্সপাইরেশন৪
২৪ নভেম্বর, ২০২১ কোনো মিশনে ব্যর্থতা বা আংশিক ব্যর্থতা ব্যতীত এক প্রকার রকেটে দীর্ঘতম একটানা কাক্ষিক উড্ডয়ন।(ফ্যালকন ৯, ১০১টি উৎক্ষেপণ)।[২৫] ডাবল অ্যাসটেরয়েড রিডাইরেকশন টেস্ট(Double Asteroid Redirection Test)
৯ এপ্রিল, ২০২২ প্রথমবার সম্পূর্ণ বেসামরিক দলকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে সংযুক্ত করা হয়।[২৬] অ্যাক্সিওম মিশন ১
২০ অক্টোবর, ২০২২ এক বছরে এক প্রকার রকেট দ্বারা সর্বোত্তম পরিমাণ উৎক্ষেপণ। (ফ্যালকন ৯, ৪৮টি উৎক্ষেপণ)।[২৭] স্টারলিঙ্ক ৪-৩৬
  1. Excluding the passive objects launched as part of Project West Ford

যন্ত্রপাতি[সম্পাদনা]

উড্ডয়ন যান[সম্পাদনা]

স্পেসএক্স তিনটি উৎক্ষেপণ বাহন বা রকেট তৈরি করেছে। ছোট-ভর সক্ষম ফ্যালকন ১ প্রথম উৎক্ষেপণ বাহন ছিল এবং এটি ২০০৯ সালে অবসরপ্রাপ্ত হয়েছে। মাঝারি-ভর সক্ষম ফ্যালকন ৯ এবং ভারী-ভর সক্ষম ফ্যালকন হেভি উভয়ই বর্তমানে সক্রিয় আছে। ফ্যালকন ১ একটি ছোট রকেট যা কয়েকশত কিলোগ্রাম পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে স্থাপনের সক্ষম ছিল। এটি ২০০৬ ও ২০০৯ এর মধ্যে পাঁচবার উৎক্ষেপণ করা হয়, যার মধ্যে দুবার সফল হয়েছিল। ফ্যালকন ১ প্রথম বেসরকারি জ্বালানিচালিত রকেট ছিল যা কক্ষপথে পৌছাতে পেরেছিল।

ফ্যালকন ৯ একটি মাঝারি-ভর সক্ষম উৎক্ষেপণ বাহন ছিল যা ২২,৮০০ কিলোগ্রাম পর্যন্ত কক্ষপথে পৌছাতে পারতো। এটি ডেল্টা IV এবং এটলাস V সহ বিশ্বজুড়ে অন্যান্য রকেটের প্রতিযোগী ছিল। এর প্রথম স্তরে ৯টি মারলিন ইঞ্জিন ছিল। ২০১০ সালের ৪ই জুনে ফ্যালকন ৯ ভি১.০ প্রথম চেষ্টায়ই কক্ষপথে পৌঁছাতে পেরেছিল। ২০১২ সালের ২২শে মে রকেটটির তৃতীয় উড্ডয়নে সিওটিএস ডেমো ফ্লাইট ২ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে এটি প্রথম বেসরকারি মহাকাশযান ছিল যা আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌছেছিল এবং সংযুক্ত হয়েছিল। ২০১৩ সালে এটির উন্নতি করে ফ্যালকন ৯ ভি১.১ তৈরি করা হয়, ২০১৫ সালে ফ্যালকন ৯ ফুল থ্রাস্ট এবং অবশেষে ২০১৮ সালে ফ্যালকন ৯ ব্লক ৫ তৈরি করা হয়। ফ্যালকন ৯ এর প্রথম স্তরকে বিপরীতদিকে পরিচালনার মাধ্যমে অবতরণ করা, উদ্ধার করা ও পুনঃউড্ডয়ন করার মতোন করে নকশা করা হয়।

ফ্যালকন হেভি একটি ভারী-ভর সক্ষম বাহন যা প্রায় ৬৩,৮০০ কেজি পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে পাঠাতে পারবে এবং ২৬,৭০০ কেজি ভুস্থির কক্ষপথে নিতে পারবে। এটি তিনটি সামান্য পরিবর্তিত ফ্যালকন ৯ এর প্রথম স্তরের মূল অংশ, অর্থাৎ মোট ২৭টি মারলিন ১ডি ইঞ্জিন ব্যবহার করে। ২০১৮ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারী ফ্যালকন হেভি সফলভাবে এর উদ্বোধনী মিশন পূরণ করে। এই মিশনে ইলন মাস্কের নিজস্ব টেসলা রোডস্টারকে সফলভাবে সুরজকেন্দ্রিক কক্ষপথে পাঠানো হয়।

ন্যাশনাল সেকিউরিটি স্পেস লঞ্চ-এর জন্যে ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভি উভয়েই উৎক্ষেপণ পরিচালনার জন্য প্রত্যয়িত। ২০২৩ এর ১৮ই ফেব্রুয়ারী অনুসারে, ফ্যালকন ৯ ও ফ্যালকন হেভিকে ২১০ বার উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০৮টি পুরোপুরি সফল মিশন, একটি আংশিকভাবে সফল এবং একটি উড্ডয়নকালীন ব্যর্থতা অন্তর্ভুক্ত। এর পাশাপাশি ২০১৬ সালে স্থির প্রজ্বলন পরীক্ষার প্রস্তুতিকালে একটি উড্ডয়ন-পূর্বকালীন(pre-flight) ব্যর্থতা হয়েছিল।

রকেট ইঞ্জিন[সম্পাদনা]

২০০২ সালে স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠার পর থেকে উৎক্ষেপণ বাহনে ব্যবহারের জন্যে কোম্পানিটি বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন –মারলিন, কেস্ট্রেল ও র‍্যাপটর– তৈরি করেছে। ড্রাগন শ্রেণীর মহাকাশযানের প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা(reaction control system) হিসেবে ড্রেকো এবং ক্রিউ ড্রাগনে বাতিল(abort) সক্ষমতা প্রদানের জন্যে সুপারড্রেকো ব্যবহার করা হয়।

মারলিন শ্রেণির রকেট ইঞ্জিন জ্বালানি হিসেবে তরল অক্সিজেন ও আরপি-১(এক প্রকার কেরোসিন) ব্যবহার করে। মারলিন ইঞ্জিনকে প্রাথমিকভাবে ফ্যালকন ১ রকেটের প্রথম স্থরে ব্যবহার করা হয়েছিল এবং বর্তমানে ফ্যালকন ৯ এবং ফ্যালকন হেভি বাহনগুলোর উভয় স্তরে ব্যবহার করা হয়। কেস্ট্রেল ইঞ্জিনে একই জ্বালানি ছিল এবং এটি ফ্যালকন ১ রকেটের দ্বিতীয় স্তরের প্রধান ইঞ্জিন হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছিল।

ড্রেকো এবং সুপারড্রেকো উভয়ই স্বতঃস্ফূর্ত জ্বালানি(hypergolic propellant) নির্ভর রকেট ইঞ্জিন। ড্রেকো ইঞ্জিনগুলো ড্রাগন ও ড্রাগন ২ মহাকাশযানে প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জন্যে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে সুপারড্রেকো ইঞ্জিন অধিকতর শক্তিশালী এবং মানববাহী ড্রাগন ২ এর কোনো মিশন বাতিলের অবস্থা হলে আটটি সুপারড্রেকো ইঞ্জিন মহাকাশযানটিকে উৎক্ষেপণ বাতিল সক্ষমতা(launch abort capability) প্রদান করে।

র‍্যাপটর একটি নতুন শ্রেণির তরল অক্সিজেন ও তরল মিথেন জ্বালানি নির্ভর পূর্ণ-চক্র ক্রমের দহন চক্র বিশিষ্ট(full flow staged combustion cycle) ইঞ্জিন। এই ইঞ্জিনগুলো বর্তমানে উন্নয়নশীল স্টারশিপ উৎক্ষেপণ ব্যবস্থার প্রথম ও দ্বিতীয় স্তরে ব্যবহার করা হয়। তৈরিকৃত সংস্করণগুলো ২০১৬ সালের শেষের দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় এবং ২০১৯ সালে ইঞ্জিনটি প্রথমবার উড্ডয়ন করে স্টারহপার বাহনকে ২০ মিটার(৬৬ ফিট) উচ্চতার নিয়ে যায়।

ড্রাগন স্পেসক্রাফট[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে মালামাল ও মানুষ পাঠানোর জন্যে স্পেসএক্স ড্রাগন স্পেসক্রাফট তৈরি করেছিল। ড্রাগনের প্রথম সংস্করণ কেবলামাত্র মালামাল পরিবহনে ব্যবহার করা হতো এবং এটি ২০১০ সালে প্রথমবার উৎক্ষেপিত হয়। ড্রাগনে মহাকাশযানের দ্বিতীয় প্রজন্ম ড্রাগন ২ বর্তমানে সক্রিয় আছে। এটি ২০১৯ সালের প্রথমদিকে মানববিহীন অবস্থায় প্রথমবার উড্ডয়ন করেছিল এবং ২০২০ সালে মানব সহ উড্ডয়ন করে। নাসার সাথে সিআরএস চুক্তির অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পুনঃসরবরাহ করতে ড্রাগন ২ এর মালবাহী বিকল্প রুপ ২০২০ সালের ডিসেম্বরে উড্ডয়ন করা হয়েছিল।

২০২০ সালের মার্চে স্পেসএক্স ড্রাগন এক্সএল প্রকাশিত করে। এটি গেটওয়ে লজিস্টিক্স সার্ভিসেস চুক্তির অংশ হিসেবে নাসার পরিকল্পিত লুনার গেটওয়ে স্পেস স্টেশনে মালামাল পুনঃসরবরাহের মহাকাশযান হিসেবে পরিকল্পিত করা হয়েছে। ফ্যালকন হেভি রকেটে ড্রাগন এক্সএল উৎক্ষেপণ করা হবে এবং এটি ৫০০০ কেজির বেশি ভর গেটওয়ে-তে পরিবহণ করতে সক্ষম। ড্রাগন এক্সএল এককালীন ছয় থেকে বার মাস গেটওয় স্পেস স্টেশনের সাথে সংযুক্ত থাকবে।

স্বয়ংক্রিয় মহাকাশবন্দর ড্রোন জাহাজ[সম্পাদনা]

ফ্যালকন ৯ এবং ফ্যালকন হেভির কাক্ষিক উড্ডয়নের পরে স্পেস নিয়মিত এদের প্রথম স্তরগুলো ফেরত নিয়ে আসে। এটি নিজস্ব প্রপালশন সিস্টেম ব্যবহার করে পুর্বনিরধারিত অবতরণ ভূমিতে অবতরণ করে। যখন জ্বালানির পরিমাণ উৎক্ষেপণ স্থানে ফেরত আসার অনুকুলে থাকে না, তখন রকেটগুলো সমুদ্রে একটি ভাসমান অবতরণযোগ্য প্ল্যাটফর্মে ফেরত যায়। এই প্ল্যাটফর্মগুলোকে স্বয়ংক্রিয় মহাকাশবন্দর ড্রোন জাহাজ(autonomous spaceport drone ships; ASDS) বলা হয়।

এছাড়া স্পেসএক্সের ভাসমান উৎক্ষেপণ প্যাটফর্ম প্রবর্তন করার পরিকল্পনা আছে। ২০২০ দশকে পরিবর্তিত তেল শোধনাগার ব্যবহার করে সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণের উপায় প্রদান করা হবে। এটি মূলত দ্বিতীয় প্রজম্মের উৎক্ষেপণ বাহনের জন্যে তৈরি করা হবে: গুরু-ভর বাহন সক্ষম স্টারশিপ ব্যবস্থা, যা সুপার হেভি বুস্টার ও স্টারশিপের দ্বিতীয় স্তর নিয়ে গঠিত। স্পেসএক্স গভীরপানির দুটি তেল শোধনাগার ক্রয় করেছে এবং স্টারশিপের উৎক্ষেপণ আনুকূল্য করতে উন্নয়ন করছে।

স্টারশিপ[সম্পাদনা]

স্পেসএক্স বর্তমানে স্টারশিপ নামক একটি গুরু-ভর বাহন সক্ষম উৎক্ষেপণ ব্যবস্থা তৈরি করছে। এটি একটি পুনঃব্যবহারযোগ্য প্রথম স্তর, সুপারহেভি এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য় দ্বিতীয় স্তর মহাকাশ বাহন স্টারশিপ নিয়ে গঠিত। ২০২০ দশকের প্রথমাংশের মধ্যে এই ব্যবস্থা কোম্পানিটির বিদ্যমান উৎক্ষেপণ বাহন যন্ত্রকে প্রতিস্থাপন করবে বলে পরিকল্পিত।

স্পেসএক্স প্রাথমিকভাবে ২০১৬ সালে কেবলমাত্র মঙ্গলে গমন ও অন্যান্য আন্তঃগ্রহ ব্যবহারের জন্য একটি ১২ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট আইটিএস ধারণা কল্পিত করেছিল। ২০১৭ সালে তাঁরা একটি ক্ষুদ্রতর ৯ মিটার ব্যাস বিশিষ্ট বাহনের পরিকল্পনা স্থির করে যা স্পেসএক্সের সকল উৎক্ষেপণ সেবা প্রদানকারী সকল সক্ষমতা প্রতিস্থাপন করবে— পৃথিবীর কক্ষপথে, চাঁদের কক্ষপথে; আন্তঃপ্রহ মিশনে; এবং সম্ভবত, পৃথিবীতে আন্তঃমহাদেশীয় যাত্রী বাহনে— কিন্তু এগুলো করতে হবে একটি স্পস্টভাবে একটি নিম্নতর-ব্যয়ের গঠন দ্বারা।

ব্যপকভাবে ব্যয় হ্রাস করার পাশাপাশি কর্মক্ষমতার উন্নতি সম্ভব করতে ২০১৮ সালে স্টারশিপ ব্যবস্থাটি কার্বন ফাইবারের পরিবর্তে স্টেনলেস স্টিল ব্যবহার করে পুনরায় নকশা করা হয়। বেসরকারি যাত্রী ইয়াসাকু মায়েজাওয়া ২০২৩ সালে স্টারশিপ বাহনে চাঁদের চারদিকে ভ্রমণ করার জন্যে চুক্তি নিবেশ করেছিলেন। স্পেসএক্সের দীর্ঘমেয়াদী দর্শন হলো মঙ্গল গ্রহে মানুষের উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে প্রযুক্তি ও সম্পদের উন্নয়ন করা।

২০১৯ সালে স্পেসএক্স টেক্সাসের বোকা চিকায় স্টারশিপের প্রথম প্রটোটাইপগুলো তৈরি করা শুরু করে। পরিবর্তিতে এ স্থানের নাম দেয়া হয় স্টারবেস। পুনরাবৃত্তিমূলক নকশা নীতি ব্যবহার করে স্পেসএক্স স্টারশিপ তৈরি করছে। এদের উদ্দেশ্য দ্রুতগতিতে একাধিক প্রটোটাইপ তৈরি করা ও পরীক্ষণ করা। ২০২১ সালের মে মাসে একটি সম্পূর্ণ স্টারশিপ প্রটোটাইপকে প্রথমবার সফলভাবে উৎক্ষেপণ ও অবতরণ করানো হয়।

স্টারলিঙ্ক[সম্পাদনা]

স্টারলিঙ্ক স্পেসএক্স দ্বারা তৈরিকৃত একটি ইন্টারনেট স্যাটেলাইট পুঞ্জ। এটি ~৫৫০ কি.মি কক্ষপ্তহে কয়েক হাজারটি অন্তর-যুক্ত যোগাযোগ স্যাটেলাইট নিয়ে গঠিত। স্পেসএক্সের মালিকানাধীন ও পরিচালনায় এটির উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী সল্প মূল্যের ব্রডব্যান্ড সেবার গুরুত্বর চাহিদা পূরণ করা। ২০১৫ সালে এর উন্নয়ন কার্যক্রম শুরু হয় এবং স্যাটেলাইটের প্রাথমিক প্রোটোটাইপের পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের জন্যে ২০১৭ সালে স্পেসএক্সের প্যায স্যাটেলাইট মিশনের সাথে এদের উৎক্ষেপণ করা হয়। ২০১৯ সালের মে মাসে স্পেসএক্স ফ্যালকন ৯ এর মাধ্যমে ৬০টি স্যাটেলাইটের প্রথম গুচ্ছ উৎক্ষেপণ করা হয়। ২০২০ সালের শেষের দিকে স্যাটেলাইট পুঞ্জটির প্রারম্ভিকভাবে পরিক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয় এবং ২০২১ সালের শুরুর দিকে প্রথম অর্ডারগুলো নেয়া হয়। গ্রাহকদেরকে বলা হয়েছিল ৫০Mbps থেকে ১৫০Mbps স্পিডের এবং লেটেন্সি ২০ms থেকে ৪০ms এর ইন্টারনেট সেবা প্রত্যাশা করতে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্টারলিঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা ১ মিলিয়ন অতিক্রম করেছিল।

জ্যোতির্বিদরা এতো বৃহৎ সংখ্যক স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানোর পরিকল্পনাকে আলো দূষণের বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সমালচনা করেছেন। কেননা দৃশ্যমান ও রেডিও তরঙ্গদৈঘ্যে স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের উজ্জ্বলতা বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণে হস্তক্ষেপ করতে পারে। এর প্রতিক্রিয়া হিসেবে, স্পেসএক্স স্টারলিঙ্ক স্যাটেলাইটের উজ্জ্বলতা কমাতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। স্টারলিঙ্কের বৃহৎ সংখ্যক স্যাটেলাইট দীর্ঘমেয়াদে মহাকাশে ধ্বংসাবশেষ সংঘর্ষের বিপদ তৈরি করছে। তবে স্যাটেলাইটগুলোতে ক্রিপ্টন জ্বালানির হল থ্রাস্টার আছে, যার ফলে স্যাটেলাইটের মেয়াদ শেষে কক্ষপথ থেকে বিচ্যুত করা সম্ভব হবে। এছাড়া এদেরকে এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যাতে এরা আপলিংক করা ট্রাকিং ডাটার অনুসারে কোনো সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে পারে।

২০২২ সালের ডিসেম্বরে স্পেসএক্স স্টারশিল্ড প্রকল্প ঘোষণা করে। এতে স্টারলিঙ্ক-উদ্ভূত স্যাটেলাইট বাসের সাথে মিলিটারি বা সরকারি পেলোড অন্তর্ভুক্ত করা হবে। স্পেস ডেভেলাপমেন্ট এজেন্সি মহাকাশ ভিত্তিক মিসাইল সুরক্ষা ব্যবস্থার জন্যে স্যাটেলাইট সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্রেতা।

অন্যান্য প্রকল্প[সম্পাদনা]

প্রতিষ্ঠান সমূহ[সম্পাদনা]

সদর দপ্তর, উৎপাদন, এবং সংস্কার প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

উন্নয়ন এবং পরীক্ষণ প্রতিষ্ঠান[সম্পাদনা]

উড্ডয়ন ব্যবস্থাসমূহ[সম্পাদনা]

চুক্তি[সম্পাদনা]

আন্তর্জাতিক মহাকাশযানে মালামাল পরিবহন[সম্পাদনা]

মানব পরিবহণ[সম্পাদনা]

জাতীয় সুরক্ষা[সম্পাদনা]

উড্ডয়ন বাজারে প্রতিযোগিতা এবং মূল্য নির্ধারণের চাপ[সম্পাদনা]

কর্পোরেট অ্যাফ্যার্স[সম্পাদনা]

পরিচালনা পর্ষদ[সম্পাদনা]

নেতৃত্বের পরিবর্তন[সম্পাদনা]

কর্মক্ষেত্রের সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "California Business Search (C2414622 - Space Exploration Technologies Corp)"। California Secretary of State। সংগ্রহের তারিখ মে ৫, ২০১৮ 
  2. Fred Lambert (নভেম্বর ১৭, ২০১৬)। "Elon Musk's stake in SpaceX is actually worth more than his Tesla shares"। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১, ২০১৭ 
  3. "SpaceX's Redmond effort 'very speculative'"। Seattle Times। May,2020। সংগ্রহের তারিখ May,2020  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ=, |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)
  4. Gwynne Shotwell (ফেব্রুয়ারি ৩, ২০১৬)। Gwynne Shotwell comments at Commercial Space Transportation Conference। Commercial Spaceflight। event occurs at 2:43:15–3:10:05। সংগ্রহের তারিখ ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৬ 
  5. "Gwynne Shotwell: Executive Profile & Biography"। Bloomberg। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১, ২০১৭ 
  6. W.J. Hennigan (২০১৩-০৬-০৭)। "How I Made It: SpaceX exec Gwynne Shotwell"। Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ মার্চ ১, ২০১৭ 
  7. SpaceX Tour – Texas Test Site। spacexchannel। নভেম্বর ১১, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ মে ২৩, ২০১২ 
  8. "SpaceX NASA CRS-6 PressKit Site" (পিডিএফ)। এপ্রিল ১২, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ১৩, ২০১৫ 
  9. Kenneth Chang (সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬)। "Elon Musk's Plan: Get Humans to Mars, and Beyond"। New York Times। সংগ্রহের তারিখ সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬ 
  10. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; nasa2008 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  11. Kenneth Chang (২৫ মে ২০১২)। "Space X Capsule Docks at Space Station"The New York Times। ৯ আগস্ট ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ মে ২০১২ 
  12. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; :2 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
  13. "SpaceX, In Another First, Recovers US$6 Million Nose Cone From Reused Falcon 9"Fortune। ১২ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ মে ২০১৭ 
  14. spacexcmsadmin (২৯ জানুয়ারি ২০১৬)। "Zuma mission"। SpaceX। ২৬ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৭ 
  15. Burghardt, Thomas (২৫ জুলাই ২০১৯)। "Starhopper successfully conducts debut Boca Chica Hop"NASASpaceFlight.com। ২৬ জুলাই ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ জানুয়ারি ২০২১ 
  16. Clark, Stephen। "SpaceX to reuse payload fairing for first time on Nov. 11 launch – Spaceflight Now"। ৫ ডিসেম্বর ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০২২ 
  17. Patel, Neel। "SpaceX now operates the world's biggest commercial satellite network"। MIT Technology Review। ২২ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২০ 
  18. "SpaceX Launches"The New York Times। ৩০ মে ২০২০। ৩০ মে ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ মে ২০২০ 
  19. "SpaceX's 1st Crew Dragon with astronauts docks at space station in historic rendezvous"। Space.com। ৩১ মে ২০২০। ৩ জুন ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ জুন ২০২০ 
  20. Hennessy, Paul (২৫ জানুয়ারি ২০২১)। "SpaceX launches record number of spacecraft in cosmic rideshare program"। NBC News। ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ জানুয়ারি ২০২১ 
  21. "SpaceX launches its third astronaut crew, the first on a used Crew Dragon capsule"The Verge। ২৩ এপ্রিল ২০২১। ২৩ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০২১ 
  22. Dent, Steve (১৫ জুন ২০২১)। "SpaceX cleared to launch reused rockets for 'national security' missions"। ১৭ জুন ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৭ জুন ২০২১ 
  23. "SpaceX makes history with first all-civilian spaceflight"NBC। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  24. Gorman, Steve (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১)। "SpaceX capsule with world's first all-civilian orbital crew returns safely"। Reuters। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  25. "Most consecutive successful orbital launches by a rocket model"Guinness World Records (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ এপ্রিল ২০২২ 
  26. "First all-civilian crew launches on mission to International Space Station" (ইংরেজি ভাষায়)। NBC News। ৫ মে ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৬ মে ২০২২ 
  27. "Soyuz-U: Holding Multiple World Records!"The Space Techie (ইংরেজি ভাষায়)। ৪ জুলাই ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]