বিষয়বস্তুতে চলুন

স্টেটেইরা (মহান আলেকজান্ডারের স্ত্রী)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
স্টেটেইরার সাথে আলেকজান্ডারের বিবাহ।

স্টেটেইরা( গ্রিক: Στάτειρα  ; মৃত্যু ৩২৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যিনি সম্ভবত বারসিন নামেও পরিচিত ছিলেন, তিনি পারস্যের রাজা দারিয়াস তৃতীয়র কন্যা। ইসাসের যুদ্ধে তার পিতার পরাজয়ের পর, স্টেটেইরা এবং তার বোনেরা ম্যাসিডোনের রাজা আলেকজান্ডারের হাতে বন্দী হন। খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪ সালে বিবাহের মাধ্যমে তিনি আলেকজান্ডারের দ্বিতীয় স্ত্রীর মর্যাদা প্রাপ্ত হন। খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩২৩ সালে আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর আলেকজান্ডারের প্রথম স্ত্রী রোক্সানা স্টেটেইরাকে হত্যা করেন। []

জীবনের প্রথমার্ধ

[সম্পাদনা]

স্টেটেইরা ছিলেন পারস্যের রাজা তৃতীয় দারিয়াস এবং তার স্ত্রী (যার নামও স্টেটেইরা) -এর জ্যেষ্ঠ কন্যা। [] তার জন্ম তারিখ অজানা। জানা যায় যে খ্রিস্টপূর্বাব্দ ৩৩৩ সালে তার বিবাহযোগ্য বয়স হয়েছিল। আলেকজান্ডার পারস্য আক্রমণ করার পর, স্টেটেইরা এবং তার পরিবার দারিয়াসের সেনাবাহিনীর সাথে পলায়ন করেন। খ্রীস্টপূর্ব ৩৩৩ সালের নভেম্বর মাসে আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনী ইসাসের যুদ্ধে পারস্য সেনাকে পরাজিত করে। দারিয়াস পলায়ন করেন এবং ম্যাসেডোনীয় সেনাবাহিনী শীঘ্রই তার পরিবারকে বন্দী করে। আলেকজান্ডারের আদেশে স্টেটেইরা, তার মা, তার বোন ড্রাইপেটিস, তার ছোট ভাই এবং তাদের পিতামহী সিসিগাম্বিসের সাথে যথোপযুক্ত মর্যাদাপূর্ণ আচরণ করা হয়েছিল এবং তাদের সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। [][]

মহান আলেকজান্ডারের সাথে বিবাহ

[সম্পাদনা]

পরবর্তী দুই বছরের সময়কালে স্টেটেইরা এবং তার পরিবার আলেকজান্ডারের সেনাবাহিনীর সাথেই ছিলেন। খ্রীস্টপূর্ব ৩৩২ সালের প্রথম দিকে স্টেটেইরার মাতা মারা যান। এরপর তার পিতামহী সিসিগাম্বিস স্টেটেইরার অভিভাবক হিসাবে নিযুক্ত হন। যদিও দারিয়াস পরবর্তীকালে তার পরিবারকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু আলেকজান্ডার তার পরিবারের মহিলাদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর দারিয়াস আলেকজান্ডারের সাথে স্টেটেইরার বিবাহের প্রস্তাব দেন এবং তার বিনিময়ে দারিয়াস যুদ্ধের সামাপ্তি ঘোষণা করার প্রস্তাব দেন। এর সাথেই দারিয়াস আলেকজান্ডার কর্তৃক দখলীকৃত ভূমির কিছু অংশ তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। আলেকজান্ডার প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। [] আলেকজান্ডার দারিয়াসকে স্মরন করিয়ে দেন যে জমি এবং স্টেটেইরা উভয়ই তার হেফাজতে রয়েছে এবং যদি তিনি স্টেটেইরাকে বিয়ে করতে চান, তাহলে দারিয়াসের অনুমতির প্রয়োজন হবে না। []

খ্রীস্টপূর্ব ৩৩০ সালে, আলেকজান্ডার স্টেটেইরা এবং তার পরিবারকে গ্রীক ভাষা শেখানোর নির্দেশ দিয়ে সুসা ছেড়ে চলে যান। ইতিহাসবিদ এলিজাবেথ ডোনেলি কার্নি অনুমান করেন যে আলেকজান্ডার ইতিমধ্যেই স্টেটেইরাকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। [] খ্রিস্টপূর্ব ৩২৪ সালে স্টেটেইরা ও আলেকজান্ডারের বিবাহ হয় এবং স্টেটেইরা আলেকজান্ডারের দ্বিতীয় স্ত্রী হন। তার বন্দীদশার প্রায় দশ বছর পর এই বিবাহ সম্পন্ন হয়। আলেকজান্ডার ও স্টেটেইরার বিবাহ অনুষ্ঠান দ্য সুসা ওয়েডিংস নামে বিখ্যাত। [] এই গণ অনুষ্ঠান পাঁচ দিন ব্যাপী স্থায়ী হয়েছিল। সেই একই অনুষ্ঠানে আলেকজান্ডার পূর্ববর্তী পারস্য শাসক তৃতীয় আর্টাক্সারেক্সেসের কন্যা প্যারিসাতিসকেও বিবাহ করেছিলেন। [] উভয় মহিলাকে বিবাহের মাধ্যমে আলেকজান্ডার আখামেনিড সাম্রাজ্যের রাজপরিবারের উভয় শাখার সাথে তার সম্পর্ক দৃঢ় করেন। [][]

খ্রীস্টপূর্ব ৩২৩ সালে আলেকজান্ডারের মৃত্যু হয়। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর তার প্রথম স্ত্রী রোক্সানা স্টেটেইরাকে হত্যা করার জন্য তার সহযোগী পেরডিকাসের সাথে যোগসাজশ করে। রোক্সানা তার পুত্র চতুর্থ আলেকজান্ডারের ভবিষ্য সুদৃঢ় করতে চেয়েছিলেন এবং তাই তিনি স্টেটেইরাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। প্লুটার্কের বর্ণনা অনুসারে, স্টেটেইরার বোন ড্রাইপেটিসকেও একই সময়ে হত্যা করা হয়েছিল। তবে কার্নির মত অনুসারে ড্রাইপেটিস নয়, আসলে প্যারিসাতিসই স্টেটেইরার সাথে মারা গিয়েছিলেন। []

পম্পেইতে খননের সময় পাওয়া একটি দেওয়াল অংকনে স্টেটেইরার চিত্র পাওয়া গেছে। চিত্রে বেগুনি ম্যাসেডোনিয়ান পোশাক পরিহিত একজন যোদ্ধাকে চিত্রিত করা হয়েছে যিনি সম্ভবত আলেকজান্ডার। তার বাম দিকে একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছেন যার মাথায় মুকুট এবং হাতে রাজদণ্ড। এই মহিলা রোক্সানা নাকি স্টেটেইরা এই নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। []

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Anson, Edward M. (২০১৪-০৭-১৪)। Alexander's Heirs: The Age of the Successors (ইংরেজি ভাষায়)। John Wiley & Sons। পৃষ্ঠা 11–12। আইএসবিএন 978-1-4443-3962-8 
  2. Carney (2000), p. 108.
  3. "Plutarch, Alexander, chapter 21, section 4"www.perseus.tufts.edu 
  4. Carney (2000), p. 109.
  5. Tarn (2002), p. 336.
  6. Carney (2000), p. 110.
  7. O'Brien (2005), p. 197.
  8. Stewart (1993), p. 186.