সোহ্রাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা
হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর মন্ত্রিসভা | |
|---|---|
বঙ্গ প্রদেশের ৪র্থ মন্ত্রিসভা | |
| ১৯৪৬–১৯৪৭ | |
| গঠনের তারিখ | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ |
| বিলুপ্তির তারিখ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ |
| ব্যক্তি ও সংস্থা | |
| গভর্নর | ফ্রেডেরিক বারোজ |
| মুখ্যমন্ত্রী | হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী |
| মন্ত্রী সংখ্যা | ১১ |
| মন্ত্রী অপসারণ | ১ |
| মোট সংখ্যা | ১২ |
| সদস্য দল | |
| আইনসভায় অবস্থা | সংখ্যালঘু ১১৩ / ২৫০ (৪৫%) |
| বিরোধী মন্ত্রিসভা | প্রথম ঘোষ মন্ত্রিসভা |
| বিরোধী দল | ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস |
| বিরোধী নেতা | কিরণশঙ্কর রায় |
| ইতিহাস | |
| নির্বাচন | ১৯৪৬ |
| সর্বশেষ নির্বাচন | ১৯৩৭ |
| আইনসভার মেয়াদ | দ্বিতীয় বঙ্গীয় আইনসভা |
| পূর্ববর্তী | প্রথম নাজিমুদ্দিন মন্ত্রিসভা |
| পরবর্তী |
|
সোহ্রাওয়ার্দী মন্ত্রিসভা ব্রিটিশ শাসিত ভারতের বঙ্গ প্রদেশে গঠিত ভারত বিভাজনের প্রাক্কালে চতুর্থ ও সর্বশেষ মন্ত্রিসভা। এটি ১৯৪৬ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের নেতা ও বঙ্গ প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে গঠিত হয়ে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত স্থায়ী ছিল,[১] যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বঙ্গভঙ্গের ফলে খণ্ডিত পশ্চিমাংশে প্রথম ঘোষ মন্ত্রিসভা এবং পূর্বাংশে দ্বিতীয় নাজিমুদ্দিন মন্ত্রিসভার পূর্বসুরিতে পরিণত হয়।
পটভূমি
[সম্পাদনা]১৯৪৩ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের শাখা বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সংসদীয় নেতা খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে ব্রিটিশ ভারতের বঙ্গ প্রদেশে একটি প্রাদেশিক মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ঠিক একই সময় নিখিল ভারত মুসলিম লীগের পাকিস্তান প্রস্তাব প্রদেশটির মুসলিমদের মাঝে জনপ্রিয়তা পেতে থাকে এবং রাজনৈতিক দলটির জনপ্রিয়তাও ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একইসাথে খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভা প্রশাসনে দুর্নীতি ও পঞ্চাশের মন্বন্তর মোকাবেলায় ব্যর্থতার জন্য বিরোধীদলের পক্ষ থেকে সমালোচিত হতে থাকে। ফলে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগে খাজা নাজিমুদ্দিনের প্রভাব কমতে থাকে এবং হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর প্রভাব বাড়তে থাকে। নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভার প্রতি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সমর্থন ছিল। কিন্তু ১৯৪৫ সালে ২১ জন আইনসভা সদস্য হারানোর পর দলটি অনাস্থা প্রস্তাবে হেরে যাওয়ায় বঙ্গীয় আইনসভার অধ্যক্ষ সৈয়দ নওশের আলী সংসদীয় রায়ের মাধ্যমে মন্ত্রিসভার বিলুপ্তি ঘোষণা করেন। যদিও ১৯৪৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে দলটি আবার জয়লাভ করে, কিন্তু তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয়। বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ অপর দল ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের শাখা বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের সাথে কোয়ালিশন মন্ত্রিসভা গঠন করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়েছিল। অবশেষে হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ৭ জন মন্ত্রী নিয়ে ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ সালে মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়[২] এবং ২১ নভেম্বর ১৯৪৬ সালে একজনকে বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভার সদস্য আরও ৪ জন বৃদ্ধি করে দায়িত্ব পুনর্বণ্টন করা হয়।[৩]
বিলুপ্তি
[সম্পাদনা]১৯৪৭ সালে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও নিখিল ভারত মুসলিম লীগ ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারত বিভাজন করে আধুনিক ভারত ও পাকিস্তান রাষ্ট্র গঠনে রাজি হয়। একই বছরের ২০ জুনে দ্বিতীয় বঙ্গ বিভাজনের প্রশ্নে নির্বাচনের আয়োজন করা হলে বঙ্গীয় আইনসভার অধিকাংশ ভোট বিভাজনের পক্ষে যায়। তবে তৎকালীন সময়ে সোহ্রাওয়ার্দীর মন্ত্রিসভা বঙ্গ প্রদেশের রাজধানী কলকাতায় রয়ে যায়। ২৭ জুনে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি সভায় ঢাকায় প্রস্তাবিত পাকিস্তানি বঙ্গের রাজধানী স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[৪] ৩ জুলাইয়ে ভারতীয় বঙ্গের জন্য বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসের নেতা প্রফুল্ল চন্দ্র ঘোষের নেতৃত্বে ভবিষ্যৎ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের জন্য একটি ছায়া মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।[৫] ১৮ জুলাইয়ে যুক্তরাজ্যের সংসদে উত্থাপিত ভারতীয় স্বাধীনতা আইন রাজকীয় সম্মতি পায় যা বঙ্গ প্রদেশকে বিভক্ত করে ভারতীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ ও পাকিস্তানি প্রদেশ পূর্ববঙ্গ বাস্তবায়ন করার পথ সুগম করে।[৪] ৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগের সংসদীয় নেতা নির্বাচনে ৩৬ ভোটে সোহ্রাওয়ার্দী হেরে যাওয়ায় খাজা নাজিমুদ্দিন নতুন নেতা নির্বাচিত হন।[৬] পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পরের দিন তথা ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে নবগঠিত প্রদেশ পূর্ববঙ্গের রাজধানী ঢাকায় খাজা নাজিমুদ্দিনের নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠিত হয়।[৭] অন্যদিকে ১৫ আগস্ট ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার পর পশ্চিমবঙ্গের ছায়া মন্ত্রিসভা রাজ্যটির প্রথম ও প্রকৃত মন্ত্রিসভায় পরিণত হয়।[৫]
সদস্য
[সম্পাদনা]মন্ত্রিসভা নিম্নলিখিত মন্ত্রীদের নিয়ে গঠিত ছিল:[৮][৩]
| কার্যভার | মন্ত্রী | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব ত্যাগ |
|---|---|---|---|
| প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| অর্থ, জনস্বাস্থ্য ও স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| শিক্ষা দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| কৃষি, বন ও মৎস দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| অসামরিক সরবরাহ দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| সমবায়, ঋণ ও সাহায্য দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| বাণিজ্য, শ্রম ও শিল্প দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| সেচ ও জলপথ দপ্তর | ২১ নভেম্বর ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| বিচার ও আইনসভা দপ্তর | ২১ নভেম্বর ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| ভূমি, ভূমি রাজস্ব ও কারা দপ্তর | ২১ নভেম্বর ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ | |
| পূর্ত ও গৃহনির্মাণ দপ্তর | ২১ নভেম্বর ১৯৪৬ | ১৩ আগস্ট ১৯৪৭ |
প্রাক্তন সদস্য
[সম্পাদনা]মন্ত্রিসভার প্রাক্তন সদস্যদের তালিকা নিম্নে দেওয়া হলো:[৯][৩]
| কার্যভার | মন্ত্রী | দায়িত্ব গ্রহণ | দায়িত্ব ত্যাগ |
|---|---|---|---|
| বিচার ও আইনসভা এবং পূর্ত ও গৃহনির্মাণ দপ্তর | ২৪ এপ্রিল ১৯৪৬ | ২১ নভেম্বর ১৯৪৬ |
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ভট্টাচার্য, সব্যসাচী (২০১৪)। "6 The Politics of Exclusion: 1936–46"। The Defining Moments in Bengal: 1920–1947 (ইংরেজি ভাষায়)। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃ. ২২৬। ডিওআই:10.1093/acprof:oso/9780198098942.003.0006। আইএসবিএন ৯৭৮০১৯৯০৮৩০৩৯।
- ↑ দত্ত, সত্যব্রত (২০০২)। "মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভা ও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি (১৯৪৩-১৯৪৭) : ১৩৫০-এর দুর্ভিক্ষ, ১৯৪৬-এর দাঙ্গা"। বাংলার বিধানসভার একশো বছর রাজানুগত্য থেকে গণতন্ত্র। কলকাতা: প্রগ্রেসিভ পাবলিশার্স। পৃ. ১৬১–১৭৩।
- 1 2 3 ভট্টাচার্য, ধনঞ্জয় (২০১৭)। A.K. FAZLUL HUQ AND BENGAL POLITICS BETWEEN THE TWO PARTITIONS (1905-1947): CURRENTS AND CROSS-CURRENTS (অভিসন্দর্ভ) (ইংরেজি ভাষায়)। শিলিগুড়ি: উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়। পৃ. ২৭৭। ১ জুন ২০২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- 1 2 মামুন, মুনতাসীর; রহমান, মো. মাহবুবর (২০১৫) [২০১৩]। "অখণ্ড বাংলা গঠনের প্রয়াস ও উপমহাদেশের বিভক্তি, ১৯৪৭"। স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস। সুবর্ণা। পৃ. ৪৯–৫০। আইএসবিএন ৯৭৮৯৮৪৯০৬৯৪৪৭।
- 1 2 বালা, বাবুলাল। "Role of Dr. Prafulla Chandra Ghosh as Head of the Shadow Ministry and First Ministry of West Bengal (3rd July 1947 - 22nd January 1948) - An Analytical Review." (পিডিএফ)। জার্নাল অফ পিপলস হিস্টোরি অ্যান্ড কালচার (ইংরেজি ভাষায়)। ১০ (৩)। কলকাতা: গড়িয়া সোসাইটি ফর স্টাডিস অফ মার্জিনাল পিপল।
- ↑ "পূর্ব্ব-বঙ্গ রাষ্ট্রের লীগ দলপতি বহু ভোটে মিঃ সুরাবর্দ্দীকে পরাজিত করিয়া মিঃ নাজিমুদ্দিন নির্ব্বাচিত"। যুগান্তর পত্রিকা। ৬ আগস্ট ২০২৫। পৃ. ১।
- ↑ "হিন্দু-মুশ্লিম সহযোগিতায় ঢাকায় স্বাধীনতা দিবসের উৎসব"। যুগান্তর পত্রিকা। ১৭ আগস্ট ১৯৪৭। পৃ. ৮।
- ↑ "Bengal Legislative Assembly Proceedings on Partition of Bengal (The 20th June 1947)" [বঙ্গভঙ্গের উপর বঙ্গীয় আইনসভার কার্যবিবরণী (২০শে জুন ১৯৪৭)] (ইংরেজি ভাষায়)। LXXII (IV)। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। ২০০২ [১৯৪৭]: VII।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য) - ↑ "Assembly Proceedings Official Report Bengal Legislative Assembly Second Session, 1946" (ইংরেজি ভাষায়)। ৭১। বেঙ্গল গভর্মেন্ট প্রেস: i।
{{সাময়িকী উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি journal এর জন্য|journal=প্রয়োজন (সাহায্য)