সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন
সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন | |
---|---|
জন্ম | ১৪ জানুয়ারি ১৯২০ |
মৃত্যু | ১২ জানুয়ারি ১৯৯৫ |
পেশা | অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
নিয়োগকারী | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় |
উপাধি | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য |
অধ্যাপক সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন (জন্ম: জানুয়ারি ১৪, ১৯২০ - মৃত্যু: জানুয়ারি ১২, ১৯৯৫) বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ, সাহিত্যে পণ্ডিত এবং লেখক। বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন বাংলাদেশের মাগুরা জেলার আলোকদিয়া গ্রামের একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ই জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। নিজস্ব মেধার কারণেই সেই সময়কালের পশ্চাৎপদ মুসলমান সমাজের একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবেই স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পর্যায়ের লেখাপড়া কৃতিত্বের সাথে সম্পন্ন করেন। যখন তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.এ. ক্লাসের ছাত্র তখনই ঢাকায় গঠিত পূর্ব পাকিস্তান সাহিত্য সংসদ গঠিত হয় এবং তিনি এর চেয়্যারম্যান-এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সাথে এম.এ. ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন[সম্পাদনা]
সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েন কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে প্রভাষক পদে যোগ দিয়ে কর্মজীবনে পদার্পণ করেন। এ সময় তিনি কলকাতার ইংরেজি কমরেড পত্রিকায় সম্পাদকীয় লিখতেন। কমরেড ছিল মুসলিম লীগ ও পাকিস্তান আন্দোলনের ইংরেজি ভাষার মুখপত্রস্বরূপ। এ সময় পূর্ব পাকিস্তান রেনেসাঁ সোসাইটি গঠিত হয় এবং সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করা হয়। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ আগস্ট পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর তিনি সিলেটের এম.সি. কলেজে বদলি হন এবং এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এর ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদে যোগদান করেন। তিনি ১৯৫২ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র দু’বছরের গবেষণাকাজ শেষ করে বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সর্বপ্রথম ইংরেজি সাহিত্যে পিএইচডি ডিগ্রি কৃতিত্বের সাথে লাভ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি বিশ বছর ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক পদ থেকে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান পর্যন্ত সকল পদে দায়িত্ব পালন করার পর ১৯৬৯ খ্রিষ্টাব্দে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদে নিযুক্ত হয়েছিলেন। ১৯৭১-এর জুলাই মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একই পদে বদলি হন।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]
একাত্তরের মার্চ মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য বিচারপতি আবু সাঈদ চৌধুরী জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অধিবেশনে যোগদানের জন্য জেনেভা যান। সেখানে জেনেভার একটি পত্রিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন ছাত্রের মৃত্যুর সংবাদ দেখে বিচলিত হয়ে ২৫ মার্চ পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক শিক্ষা সচিবকে পাকিস্তান দূতাবাসের মাধ্যমে প্রেরিত এক পত্রে লেখেন, “আমার নিরস্ত্র ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর পর আমার ভাইস চ্যান্সেলর থাকার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। তাই আমি পদত্যাগ করলাম”।[১] ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উপাচার্যবিহীন। পাকিস্তান সরকার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য ড. সৈয়দ সাজ্জাদ হোসায়েনকে তাদের কনভয়ে করে ঢাকায় নিয়ে এসে ১৯ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদে বসায়। তাকে সহায়তা করেন ড. হাসান জামান, ড. মেহের আলি। স্বাধীনতার পর তিনজনই গ্রেফতার হন[২]। এরপর সামাজিক পরিস্থিতি প্রতিকূলতা সহ্য করতে না পেরে তিনি দেশ ত্যাগ করেন এবং সৌদি আরবে শিক্ষকতা শুরু করেন। । মক্কার উম্মুল কুরা ইউনিভার্সিটিতে ইংরেজির অধ্যাপকের চাকরি করতেন। ১৯৮৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি শারীরিক অসুস্থতার জন্য মক্কা থেকে পূর্ণ অবসর নিয়ে ঢাকায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দের ১২ই জানুয়ারি তিনি আকস্মাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ৭৫ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন।
কাজ[৩][সম্পাদনা]
ইংরেজি[সম্পাদনা]
- ডেসক্রিপটিভ ক্যাটালগ অব বেঙ্গল মুসলিম (ঢাকা: এশিয়াটিক সোসাইটি ১৯৬০)
- ইস্ট পাকিস্তান: এ প্রোফাইল (ওরিয়েন্ট লংম্যান্স, ১৯৬২)
- নিক্সড গ্রিল: এ কালেকশন অব এসেজস অন রিলিজিওন অ্যান্ড কালচার (ওরিয়েন্ট লংম্যান্স, ১৯৬৩)
- কিপলিং অ্যান্ড ইন্ডিয়া: এন ইনকরি ইনটু দ্যা ন্যাচার অ্যান্ড এক্সটেন্ড অফ কিপলিঙকস নলেজ অব দি ইন্ডিয়ান সাব-কন্টিনেন্ট (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৫)
- হোমেজ টু শেক্সপিয়ার (ডিপার্টমেন্ট অব ইংলিশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬৫)
- সিভিলাইজেশন অ্যান্ড সোসাইটি (বাংলাদেশ ইন্টিটিউট অব ইসলামিক থট, ১৯৯৪);
- দি ওয়াস্ট অব টাইম: রিফ্লেকশন অন দ্যা ডিক্লাইন অ্যান্ড ফল অব ইস্ট পাকিস্তান (লাহোর: ইন্সিটিটিউট অব ইসলামিক কালচার, ১৯৯৬)
- এ ইয়াং মুসলিমস গাইড টু রিলিজিয়নস ইন দি ওয়ার্ল্ড (বিআইআইটি, ১৯৯২)
- এন এসে অন পাকিস্তানি রাইটিং ইন ইংলিশ (কর্নেল ইউনিভার্সিটি প্রেস, ইউএসএ ১৯৬১)
- ড্রামা ইন ডেভেলপিং সোসাইটি (১৯৬৯)
- বুকস অন দি কায়েদে আযম: এ বিবলিওগ্রাফি (ঢাকা সোসাইট ফর পাকিস্তান স্টাডিজ, ১৯৬৯)
বাংলা[সম্পাদনা]
- নির্ঘণ্ট অভিধান (১৯৭০);
- ইংরেজি সাহিত্যের ইতিহাস ২ খন্ড (১৯৮৪ ও ১৯৮৯);
- একাত্তরের স্মৃতি (১৯৯৩)
- আরবি সাহিত্যের ইতিহাস
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর- রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ২০০
- ↑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশি বছর- রফিকুল ইসলাম; পৃষ্টা: ২০২-২০৩
- ↑ মো. মাহমুদুল হাসান (২০১২)। "হোসেন, সৈয়দ সাজ্জাদ"। ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি। আইএসবিএন 9843205901। ওএল 30677644M। ওসিএলসি 883871743।