সৈয়দ আকরম হোসেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সৈয়দ আকরম হোসেন
সৈয়দ আকরম হোসেন (ঢাকা, ২০১৭)
জন্ম৮ ডিসেম্বর ১৯৪৪
যশোর (বর্তমান ঝিনাইদহ), ঢাকা, বাংলাদেশ
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ববাংলাদেশ
শিক্ষাঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
পেশাশিক্ষকতা, গবেষণা,[১] সাহিত্য চর্চা
উল্লেখযোগ্য কর্ম
১. 'রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস: চেতনালোক ও শিল্পরূপ'

২. 'রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস: দেশকাল ও শিল্পরূপ'

৩. 'বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ'
আন্দোলনষাটের দশকের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ।
সন্তানসৈয়দ আজফর হোসেন ও সৈয়দ আরমান হোসেন
পুরস্কার"বাংলা একাডেমি পুরস্কার ১৯৮৯ , "বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-পুরস্কার" ২০১৬, "একুশে পদক পুরস্কার"২০১৭

অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেন বাংলাদেশের একজন অধ্যাপক ও শিক্ষাবিদ, যিনি রবীন্দ্র-গবেষণার জন্য প্রসিদ্ধ।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ আকরম হোসেন ৮ ডিসেম্বর ১৯৪৪ সালে বৃহত্তর যশোর জেলার (বর্তমান ঝিনাইদহ) কালীগঞ্জ থানার গোপালপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পিতা-মাতার তৃতীয় ও সর্বকনিষ্ঠ সন্তান। পিতার নাম সৈয়দ আবুল কাশেম (১৯০১-১৯৯৭)। বাবা চাকরিজীবী ছিলেন। মায়ের নাম মোসাম্মাৎ হাসিনা খাতুন (১৯০৮-১৯৮১)। মাতা গৃহিণী ছিলেন। বড়ভাই সৈয়দ আফজল হোসেন (১৯২৯-১৯৯৫)। একমাত্র বোন ফাতেমা খাতুন রুবী (জ.১৯৩৩)। ভাই-বোন স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। পিতার চাকরির সুবাদে তার শৈশব ও কৈশোরের একটা বড় সময়ই কেটেছে যশোর শহরে।

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ আকরম হোসেন যশোরের সম্মিলনী বিদ্যালয় থেকে ১৯৬০ সালে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৬২ সালে যশোরের মাইকেল মধুসূদন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। এবং একই শিক্ষায়তন থেকে ১৯৬৫ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর উচ্চতর ডিগ্রির জন্য ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে। এই বিভাগ থেকেই ১৯৬৭ সালে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শিক্ষাজীবনে পেয়েছেন অসামান্য সব শিক্ষক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছেন ড.মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, অধ্যাপক মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক নীলিমা ইব্রাহীম, অধ্যাপক আহমদ শরীফ, অধ্যাপক মুহম্মদ আবদুল হাই, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা,অধ্যাপক মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রমুখ শিক্ষকদের। যা তার চেতনালোককে পূর্ণরূপে উদ্ভাসিত করেছে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৬৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। ক্রমান্বয়ে ১৯৭২ সালে সহকারী অধ্যাপক, ১৯৭৮ সালে সহযোগী অধ্যাপক, ১৯৮৪ সালে অধ্যাপক হন। ২০১১ সাল পর্যন্ত তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন। এবং বর্তমানে একই বিভাগে সুপারনিউমারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।

বাংলা বিভাগে যোগদানের পর তিনি এটাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করার চেয়ে দায়িত্বটাকে বিশেষভাবে গ্রহণ করেছিলেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বাংলা বিভাগ শিক্ষক সংকট সহ নানা সমস্যায় পতিত হলে তিনি তা সমাধানের জন্য নিরলস কাজ করে গেছেন। তিনি ছাত্র-বান্ধব শিক্ষক হিসেবে পরিগণিত হন। শুধু ক্লাসে পাঠদানে তিনি সীমাবদ্ধ ছিলেন না, একইসাথে ক্লাসের পর বিকেলে বা নানাসময়ে তার নিজ বাসাতে সাহিত্য বিষয়ক নানা আড্ডা চলত।

বিশেষ অবদান[সম্পাদনা]

১৯৯১-১৯৯৩ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৯-২০০১ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলা একাডেমির কার্যকরী সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

রচনা[সম্পাদনা]

গবেষণা গ্রন্থ:

১. 'রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস: দেশকাল ও শিল্পরূপ', বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৯৬৯

২. 'রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস: চেতনালোক ও শিল্পরূপ', ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৯৮১

৩. 'বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ', বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৫

৪.'এস ওয়াজেদ আলী', বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৬

৫.'সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্', বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৮

৬. 'আবদুর রাজ্জাক', বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৯০

৭. 'প্রসঙ্গ: বাংলা কথাসাহিত্য', মাওলা ব্রাদার্স, ঢাকা,১৯৯৭

সংগ্রহ ও সম্পাদনা:

১.'মুনীর চৌধুরী মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী আনোয়ার পাশা', বাংলা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা, ১৯৭২

২.'এস ওয়াজেদ আলী রচনাবলী' [প্রথম খণ্ড ], বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৫

৩.'এস ওয়াজেদ আলী রচনাবলী' [দ্বিতীয় খণ্ড], বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৫

৪.'সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচনাবলী [প্রথম খণ্ড], বাংলা একাডেমি, ঢাকা,১৯৮৬

৫.'সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্ রচনাবলী [দ্বিতীয় খণ্ড], বাংলা একাডেমি, ঢাকা, ১৯৮৭

৬. 'রবীন্দ্র-রচনাবলী, [১-৩০ খণ্ড], ঐতিহ্য, ঢাকা, ২০১৬

দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থ: সংগ্রহ ও সম্পাদনা:

১.'আহৃতি' [প্রবন্ধ], নরেশ সেনগুপ্ত, ধ্রুবপদ, ঢাকা, ডিসেম্বর ২০১০

২.'অগ্নি-সংস্কার' [উপন্যাস], নরেশ সেনগুপ্ত, ধ্রুবপদ, ঢাকা, ফেব্রুয়ারি ২০১১

সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা:

১.মোট ১৩ বছর (১৯৭৮-১৯৯১) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ত্রৈমাসিক সাহিত্য পত্রিকার সহযোগী সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন।

২. সৃষ্টিশীল সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক পত্রিকা 'উলুখাগড়া'-র সম্পাদনা।

পারিবারিক জীবন[সম্পাদনা]

সৈয়দ আকরম হোসেন ১৯৬৮ সালে মোসাম্মাৎ উম্মে কুলসুমকে বিবাহ করেন। তাদের দুই ছেলে: সৈয়দ আজফর হোসেন ও সৈয়দ আরমান হোসেন। বড় ছেলে শিক্ষকতায় আছেন। ছোট ছেলেও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে। ছোট ছেলে সৈয়দ আরমান হোসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক।

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

গবেষণার জন্য ১৯৮৯ সালে "বাংলা একাডেমি" পুরস্কার লাভ করেন। এবং বাংলা একাডেমির 'ফেলো' নির্বাচিত হন। রবীন্দ্র সাহিত্যের-চর্চা ও গবেষণার জন্য ২০১৬ সালে পেয়েছেন " বাংলা একাডেমি রবীন্দ্র-পুরস্কার ২০১৬"। গবেষণা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে "একুশে পদক" লাভ করেন। কলকাতার টেগোর রিসার্চ ইন্সটিটিউট ২০১৮ সালে অধ্যাপক সৈয়দ আকরম হোসেনকে 'রবীন্দ্রতত্ত্বাচার্য' উপাধিতে ভূষিত করেছে। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠন থেকে রবীন্দ্র-গবেষণা ও সাহিত্য-গবেষণার জন্য নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. বাসস (২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৭)। "একুশে পদক প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী"। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাংলাদেশের জাতীয় সংবাদ সংস্থা)। ২০১৭-০২-২৮ তারিখে মূল (HTML) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৭ 

'জ্যোতির্ময়: সৈয়দ আকরম হোসেন সংবর্ধনাগ্রন্থ', সম্পাদক : অনু হোসেন ও সরকার আমিন, ঐতিহ্য, ঢাকা, বাংলাদেশ,২০১৬