সেকেন্দার বাদশা বুলবুল

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সেকেন্দার বাদশাহ বুলবুল থেকে পুনর্নির্দেশিত)
সেকেন্দার বাদশা বুলবুল
জন্মনামবাদশা বুলবুল
জন্ম (1964-02-20) ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪ (বয়স ৬০)
পাবনা জেলা[১]
পেশাসংগীত শিল্পী
ওয়েবসাইটbadshabulbul.com

বাদশা বুলবুল(ইংরেজি: Sekandar Badshah Bulbul) (জন্ম: (১৯৬৪-০২-২০)২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪) বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী। তিনি মূলত আধুনিক এবং ফোক গান গেয়ে থাকেন। ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে তিনি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা অর্জন করেছেন।[১] ২০০৫ সালে তিনি ৩৪ তম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার সংক্ষেপে (বাচসাস) সহ আরো বিভিন্ন পুরস্কার অর্জন করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত তার মোট ২২ টি একক অডিও এবং ১৫০ এর বেশি মিক্সড এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। ১৯৯৬ থেকে তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান করেছেন। ১৯৭৯ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ( ভারত,পাকিস্তান,শ্রীলঙ্কা,নেপাল,ওমান,দুবাই,কাতার,হংকং,জাপান,লন্ডন,ইটালি,ফ্রান্স,জার্মানি,গ্রীস,আমেরিকা,কানাডা) মঞ্চে,রেডিও,টিভিতে সংগীত পরিবেশন করেছন। বাদশা বুলবুল এর মা তিনি একজন কন্ঠশিল্পী হিসাবে ১৯৬২ সালে তার গাওয়া লালনের গান প্রথম রাজশাহী বেতার থেকে প্রচারিত হয়।[২]

প্রাথমিক ও কর্ম জীবন[সম্পাদনা]

বাদশা বুলবুল এর জন্ম ১৯৬৪ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পাবনা জেলায়। তার মা মনোয়ারা বেগম নিজেও একজন সঙ্গীতশিল্পী, তিনি ভাওয়াইয়া, মুর্শিদি, পল্লিগীতি এবং লোকগীতি গেয়ে থাকেন। ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে তিনি জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা অর্জন করেছেন।১৯৮১ সালে স্টেজ শো এর মাধ্যমে তার সংগীত জীবন শুরু হয়। ১৯৯১ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে তার প্রথম গানের ক্যাসেট বাজারে আসে। ২০০৫ সালে তিনি ৩৪ তম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার সংক্ষেপে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন। তিনি আরটিভির বেস্ট সিংগার পুরস্কার সহ নানা পদকে ভূষিত হয়েছেন।

আধুনিক বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী বাদশা বুলবুল। আধুনিক গানের পাশাপাশি তিনি ফোক গানে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। বেড়ে উঠেছেন সংস্কৃতিমনা পরিবার থেকে। তার মা ছিলেন প্রখ্যাত লালনগীতি, পল্লীগীতি, ভাওয়াইয়া ও মুর্শীদি গানের জন্য বিখ্যাত। মা থেকেই গানের হাতেখড়ি পেয়েছেন। গানের জন্য জাতীয় শিশু পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন বাদশা বুলবুল। সম্প্রতি এক বিকেলে পাক্ষিক প্রবাস মেলা অফিসে এসেছিলেন বাংলা সঙ্গীতের জনপ্রিয় এ সঙ্গীতশিল্পী। কথা বলেছেন কীভাবে গানে এসেছেন। বর্তমান সময়ের নানান বিষয় নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন প্রবাস মেলা’র নির্বাহী সম্পাদকের সাথে। আলাপচারিতার চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হল।

খুব ছোটবেলাতেই গান গাওয়া শুরু করেন বাদশা বুলবুল। কখন কীভাবে গান গাওয়া শুরু করলেন এমন প্রশ্নের জবাবে বাদশা বুলবুল বলেন, আমার মা মনোয়ারা বেগম গান গাইতেন। তিনি লোকসঙ্গীত করতেন। তিনি যখন গান গাইতেন তখন আমি শুনতাম এবং গুন গুন করে গাইতাম। তখন আমার বয়স ৫ কিংবা ৬ বছর হবে। একদিন আমার মা বলেলন বুলবুল তুমি দূর থেকে গুন গুন করে কেনো গাইছো- আসো, হারমোনিয়ামটা নিয়ে এসো। মা তখন আমাকে সা রে গা মা পা শুদ্ধ করে গাইতে শিখিয়ে দিলেন।

তিনি বলেন, সে সময় প্রতি বৃহস্পতিবারে আমাদের বাসায় গানের জলসা বসতো। রাজশাহী, কুষ্টিয়া পাবনার বিভিন্ন অঞ্চলের বাউলশিল্পী, লোকশিল্পীরা সে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতেন। তাঁর মা ওস্তাদ এম এ গফুর ও দেলোয়ার হোসেন কাছে গান শিখেছেন।

বাদশা বুলবুল বলেন, আমার মা ১৯৬২ সালে রাজশাহী বেতারে প্রথম নারী শিল্পী হিসেবে লালনসঙ্গীত পরিবেশন করেছিলেন। তিনি দীর্ঘদিন নিয়মিত বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনে লালনগীতি ও পল্লীগীতি পরিবেশন করেছেন। বাংলা গানের অন্যতম জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী ও পলি সায়ন্তনী বাদশা বুলবুলের বোন। এক প্রশ্নের জবাবে বাদশা বুলবুল বলেন, ১৯৭৩ সালে মায়ের সাথে পাবনার ইশ্বরদীতে প্রথম স্টেজ শোতে গান করেছিলাম। ১৯৭৭ সালে বিশ্ব শিশু দিবসে সান্তনা পুরস্কার পেয়েছিলাম গান গেয়ে। এরপর ১৯৭৯ এবং ১৯৮০ সালে শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় শিশু শিল্পী পুরস্কার অর্জন করেন বাদশা বুলবুল। পুরস্কার গ্রহণ করেন বঙ্গ ভবন থেকে ততকালিন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান কাছ থেকে এবং ১৯৭৯ এর জাতীয় পুরস্কার অর্জনের পর তিনি দিতি, সাবেরী আলম, মলি, জাদুশিল্পী আহসান হাবীব সহ প্রায় ১২ জন সরকারিভাবে ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং নেপাল ভ্রমণে যান। পাকিস্তান জনপ্রিয় সেরা নায়ক ও নাইকা মোহাম্মদ আলী ও জেবা এর সাথে সাক্ষাত হয় বলে জানান। বাংলাদেশ চলচিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার ২০০৫, সি,সি,আর,এ পুরস্কার ২০০৫, আর,টিভি, পুরস্কার ২০১৪ অন্যান্য অরো অনেক পুরস্কার পেয়েছন বাদশা বুলবুল।

প্রফেশনালী ১৯৮১ সালে স্টেজ শো এর মাধ্যমে বাদশা বুলবুলের সঙ্গীত জীবন শুরু হয়। ১৯৮৮ সালে তার প্রথম অ্যালবাম মিল্টন খন্দকারের গানে ‘বুকের কাছাকাছি’ প্রকাশিত হয়। যদিও সে সময়ে দেশব্যাপি ৮৮’র বন্যার কারণে অ্যালবামটি তেমন জনপ্রিয়তা পায়নি। এরপর ১৯৯৫ সালে মিল্টন খন্দকারের কথা ও সুরে ‘সে যেন চির সুখী হয়’ অ্যালবামটি প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। মূলত এই অ্যালবামের ‘সেই কৃষ্ণচূড়ার গাছ আজো মরেনি, মরেছে মনের যত আশা’ গানটির মাধ্যমেই তিনি লাইমলাইটে চলে আসেন।পরবর্তিতে প্রণব ঘোষ, মান্নান মোহাম্মদ, আলী আকবর রুপু, আইয়ুব বাচ্চু, বারী সিদ্দিকী, আজমীর বাবু, হাসান মতিউর রহমান, মোস্তাক আহাম্মেদ, ফরিদ আহাম্মদ, ইবরার টিপু, তাদের সুরে অসংখ্য গান করেছেন। ২০১৭ সালে বাদশা বুলবুলের মিউজিক ভিডিও ‘চাদমুখে চাঁদনী হাসি’ প্রকাশিত হয় এটিও তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।

তার প্রায় ১৮ টি একক অ্যালবাম, ১৫০ এর অধিক মিক্সড অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়াও তিনি অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান করেছেন। আলাউদ্দিন আলী, শওকত আলী ইমন, শুভ, আলম খান, মোস্তাক আহাম্মদ এর সাথে গানে কাজ করেছেন। ১০৮ টি ডিজিটাল মিডিয়ায় তার গান শুনা যায় বলে তিনি জানান। উল্লেখিত ইউটিউব, আমাজন,স্পটিফাই, আইটিউনস, রিভার্বনেশন, সাউন্ডক্লাউড, ডিজার এবং সিডি বেবী ইত্যাদি।

১৯৯১ সালে বিটিভিতে তিনি শিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর এ টি এন বাংলা, চ্যানেল আই, এশিয়ান টিভি, বাংলাভিশন, আর টিভি, দেশ টিভি, গাজী টিভি, ই টিভি, গান বাংলা, নিয়মিত বাদশা বুলবুল এককভাবে প্রোগ্রাম করছেন এবং লন্ডনে বাংলা টিভি এবং এস টিভিতে তিনি এককভাবে লাইভ গান করেছেন।

বাদশা বুলবুল অসংখ্য অ্যালবামে গান গেয়েছেন তার মধ্যে ‘সে ছিল আমার প্রিয়তমা’, ‘সে যেন চিরসুখী হয়’, ‘হৃদয়ের কবিতা’, ‘তবুও প্রেম আসে’, ‘ভাঙ্গা মন’, ‘যে আমায় দুঃখ দিল’, ‘অন্তরে’, ‘ভুলে যাবো আমি তোমাকে’, ‘মোহনা’, ‘ভুলতে চেয়েছিলাম’, ‘এক জনমে হইলোনা পিরীতি’, ‘একদিন সন্ধায়’, ‘পিরীতি আমার জন্য নয়’, ‘ব্যাথার শ্রাবণ’, ‘আমি আসবোই’ একাকী প্রভৃতি উল্লেখ্যযোগ্য।

বিভিন্ন দেশে স্টেজশো করা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে বাদশা বুলবুল বলেন, ‘আমি অনেক বছর ধরে বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের আয়োজনে অনেক শোতে অংশ নিয়েছি। বিশেষ করে ওমান, দুবাই, কাতার, হংকং, জাপান, লন্ডন, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, গ্রীস, উজবেকিস্তান, আমেরিকা, কানাডা সহ অনেক দেশে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সামনে গান করেছি। তাদের সামনে গান গাইতে আমার অনেক ভালোলাগে, অনেক আনন্দ লাগে। তাদের সামনে গান গাওয়ার সময় মনে হয় নিজের দেশের মাটির গন্ধ পাচ্ছি। সবাইকে অনেক আপন মনে হয়। তখন সবার যে ভালোবাসা ও আন্তরিকতা পাই তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।’

বর্তমানে প্রায় সব চ্যানেলেই গানের অনুষ্ঠান, মঞ্চ অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি রয়েছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই সঙ্গীতশিল্পী বলেন, বিগত দিনে তার মৌলিক গান গুলো রিমিক্সড করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া ভবিষ্যতে গান নিয়ে একটি বড় একাডেমি তৈরি করা তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন বলে জানান। সেজন্য কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলেও জানান বাদশা বুলবুল।

জীবনের সেরা অর্জন কি এমন প্রশ্নের জবাবে গুণী এই শিল্পী জানান, শ্রোতাদের ভালোবাসাই আমরা জীবনের সেরা অর্জন। তাদের সমর্থন ও ভালোবাসা না থাকলে আজ আমি এই পর্যায়ে আসতে পারতাম না। সকল দর্শক-শ্রোতাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

বাংলাদেশের কিংবদন্তি অভিনেতা রাজ্জাক, ঢালিউডের কিং খান খ্যাত শাকিব খান সহ অনেক জনপ্রিয় তারকাদের সাথে লন্ডন সহ বিভিন্ন দেশে স্টেজ শো করেছেন তিনি। কানাডা’র ফোবানা এবং আমেরিকা’র বিভিন্ন কমিউনিটির প্রোগ্রামে প্রায়ই বাদশা বুলবুল ‘শো’ করতে যান বলে জানান।

প্রবাস মেলা ২৭ নভেম্বর ২০১৯

ডিস্কোগ্রাফি[সম্পাদনা]

স্টুডিও অ্যালবাম[সম্পাদনা]

তিনি অসংখ্য অ্যালবামে গান গেয়েছেন।

  • সে ছিল আমার প্রিয়া
  • সে যেন চিরসুখী হয়
  • হৃদয়ের কবিতা
  • তবুও প্রেম আসে
  • ভাঙ্গা মন
  • যে আমায় দুঃখ দিল
  • অন্তরে [৩]
  • ভুলে যাবো আমি তোমাকে
  • মোহনা
  • ভুলতে চেয়ছিলাম
  • এক জনমে হইলোনা পিরীতি
  • একদিন সন্ধায়
  • পিরীতি আমার জন্য নয়
  • ব্যাথার শ্রাবণ
  • আমি আসবোই

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

জাতীয় শিশু পুরস্কার[সম্পাদনা]

সাল বিভাগ ফলাফল
১৯৮০ শ্রেষ্ঠ ফোক সংগীত শিল্পী (শিশু শিল্পী) বিজয়ী
১৯৭৯ শ্রেষ্ঠ ফোক সংগীত শিল্পী (শিশু শিল্পী)[১] বিজয়ী

বাচসাস পুরস্কার[সম্পাদনা]

  • ২০০৫ সালে তিনি ৩৪ তম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি পুরস্কার সংক্ষেপে বাচসাস পুরস্কার অর্জন করেন।[১]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "গান-গল্প: শিল্পী বাদশা বুলবুল - BBC News বাংলা - BBC.com"। https://www.bbc.com/bengali/news/2013/06/130614_mh_badsha_bulbul  |ওয়েবসাইট= এ বহিঃসংযোগ দেয়া (সাহায্য);
  2. "'প্রযুক্তিনির্ভর গান বেশি হচ্ছে' - Prothom Alo"Prothom Alo 
  3. "পুরোনো দিনের গান নিয়ে বাদশা বুলবুল - প্রথম আলো - Prothom Alo"। Prothom Alo। ২০১৯-১০-১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ অক্টোবর ২০১৮