সুলায়মানি মসজিদ
| সুলায়মানি মসজিদ | |
|---|---|
মসজিদের বাগান থেকে দৃশ্যমান মসজিদ | |
| ধর্ম | |
| অন্তর্ভুক্তি | ইসলাম |
| অবস্থান | |
| অবস্থান | |
| স্থানাঙ্ক | ৪১°০০′৫৮″ উত্তর ২৮°৫৭′৫০″ পূর্ব / ৪১.০১৬১১° উত্তর ২৮.৯৬৩৮৯° পূর্ব |
| স্থাপত্য | |
| স্থপতি | মিমার সিনান |
| ধরন | মসজিদ |
| স্থাপত্য শৈলী | উসমানীয় স্থাপত্যশৈলী |
| ভূমি খনন | ১৫৫০ |
| সম্পূর্ণ হয় | ১৫৫৮ |
| বিনির্দেশ | |
| উচ্চতা (সর্বোচ্চ) | ৫৩ মি (১৭৪ ফু) |
| গম্বুজের ব্যাস (ভেতরে) | ২৬ মি (৮৫ ফু) |
| মিনার | ৪ |
| মিনারের উচ্চতা | ৭২ মি (২৩৬ ফু) |
| স্থাপত্য |
|
তালিকা |
| স্থাপত্য শৈলী |
| মসজিদের তালিকা |
| অন্যান্য |
|
তালিকা |
সুলায়মানি মসজিদ (তুর্কি: Süleymaniye Camii) তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের বৃহত্তম মসজিদ। এটি ১৫৫০ থেকে ১৫৫৭ সালের মধ্যবর্তী সময়ে নির্মাণ করা হয়। এটি উসমানীয় স্থাপত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিদর্শন।[১][২]
সুলতান প্রথম সুলায়মান তার পূত্রের নামে শেহজাদে মসজিদ প্রতিষ্ঠার পর নিজের নামেও একটি মসজিদ স্থাপত্য নির্মাণের ইচ্ছাপোষণ করেন। এদিকে রাজকীয় প্রধান স্থপতি মিমার সিনান ইস্তাম্বুলের বাইজেন্টিয় স্থাপত্য আয়া সোফিয়ার সৌন্দর্যকে ম্লান করে এমন একটি স্থাপনা নির্মাণের উন্মাদনায় ছিলেন। ফলে সুলতান সুলায়মানের নামে নতুন মসজিদটি উসমানীয় সাম্রাজ্যের শৌর্য-বীর্যের প্রতীক হিসেবে নির্মিত হয়। ১৬শ শতকের প্রথমার্ধে সুলায়মানের অধীনে উসমানীয় সাম্রাজ্য উন্নতির শিখরে পৌঁছে।
উসমানীয়রা ছিল মধ্য এশিয়ার যাযাবর জাতির লোক। তারা ১৪৫৩ সালে খ্রিস্টান নগরী কনস্টান্টিনোপল বিজয় করে এবং এর নাম বদলে ইস্তাম্বুল রাখে। উসমানীয়রা শহরটিকে একটি ইসলামী শক্তির কেন্দ্রে পরিণত করে।
সুলায়মান তার সাম্রাজ্যের গৌরব প্রকাশার্থে শহরের কাছের পাহাড়ে একটি বিরাট মসজিদ নির্মাণের আদেশ দেন। মসজিদটির বিরাট গম্বুজ এবং দীর্ঘ মিনারগুলি ইস্তাম্বুল শহরের যেকোন প্রান্ত থেকে দৃশ্যমান। উসমানীয় সাম্রাজ্যের সমকালীন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ স্থপতি সিনান এই মসজিদটি নকশা করেন।
সুলায়মানি মসজিদকে কেন্দ্র করে একটি বিশালাকার কমপ্লেক্স গড়ে উঠেছিল। মুসলিম স্থাপত্যের ইতিহাসে মসজিদ ও সমাধিকে কেন্দ্র করে কমপ্লেক্স নির্মাণের রীতি প্রচলিত রয়েছে। তবে উসমানীয় আমলে কমপ্লেক্সের কেন্দ্রে থাকতো মসজিদ। সুলায়মানিয়া মসজিদ কমপ্লেক্সে মসজিদ ছাড়াও ছিলো একাধিক মাদ্রাসা, মক্তব, হাসপাতাল, লাইব্রেরি, সমাধি, এতিমখানা, ক্যারাভেন সারা বা সরাইখানা, দোকান বা মার্কেট ইত্যাদি। বর্তমানে কমপ্লেক্সের অন্যান্য ভবনগুলি আগের কাজে ব্যবহৃত না হলেও মসজিদটি এখনও নামাজ আদায়ের জন্য ব্যবহৃত হয়। আকাশচুম্বী মিনারের আজানের ধ্বনিতেএখনও মুসল্লীদের নামাজ পড়ার আহ্বান জানানো হয়।
প্রবেশদ্বার
[সম্পাদনা]একটি জমকালো প্রবেশদ্বার বহিরাগতকে অভ্যন্তরভাগের উঠানে প্রবেশের অভ্যর্থনা জানায়। বিশাল দ্বারটির নকশা মসজিদের অভ্যন্তরের মিহরাব বা প্রার্থনার স্থানটির আদলে তৈরি, এবং এটি মক্কার দিকে নির্দেশ করছে। দরজাটির আকার ও আকৃতি অভ্যন্তরের বিশালতাকে নির্দেশ করছে।
চত্বর
[সম্পাদনা]ঐতিহাসিকভাবে মসজিদে মাত্র একটি মিনার থাকত, যেখান থেকে মুয়াজ্জিনেরা আজান দিতেন। সুলায়মানি মসজিদে প্রথমবারের মত চারটি মিনার ব্যবহার করা হয়। চারটি মিনার নির্দেশ করে যে প্রথম সুলায়মান ছিলেন ইস্তানবুলের চতুর্থ সুলতান। আর দশটি ব্যালকনি নির্দেশ করে তিনি ছিলের রাজা প্রথম উসমান থেকে শুরু করে সমগ্র উসমানীয় রাজবংশের ১০ম সুলতান। মূল গম্বুজের কাছে অবস্থিত লম্বা মিনারগুলি ৭৬ মিটার উঁচু, আর ছোট মিনারগুলি ৫৬ মিটার উঁচু। সুলয়মানি মসজিদের উঠানটিতে নামাজের সময় অতিরিক্ত মানুষ ধারণের কাজে এবং কবর দেয়ার আগে মৃতের শেষকৃত্যের কাজে ব্যবহৃত হয়। উঠানটির মেঝে উৎকৃষ্ট শ্বেত মর্মর পাথরে নির্মিত এবং এর কেন্দ্রস্থলে একটি ঝর্ণা আছে।
অভ্যন্তরভাগ
[সম্পাদনা]মসজিদের অভ্যন্তর একটি বিরাট উন্মুক্ত জায়গা। এই উন্মুক্ত চত্বরে মুসল্লিরা একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। ইসলামের ইতিহাসের শুরুতেই মসজিদের স্থাপত্যের ধারণাগুলি গড়ে উঠেছিল। মদিনাতে মুহম্মদ (স)-এর সাদাসিধে বাড়িতে যেভাবে নামাজ পড়া হত, আধুনিক মসজিদগুলিতে সেই একই ধারণাগুলি অনুসরণ করার চেষ্টা করা হয়। সব মসজিদেই একটি সান বা উঠান থাকে, পাশে থাকে কিছু ছায়া-আচ্ছাদিত জায়গা এবং প্রার্থনার জন্য একটি দালান। সুলায়মানি মসজিদে মিশরের কায়রো এবং তুরস্কের উসাক শহর থেকে আনা বিশাল কার্পেট দিয়ে মেঝে ঢাকা হয়েছে। কার্পেটের নকশাগুলি মক্কার দিকে নির্দেশ করছে। সম্মানের প্রতীক হিসেবেই মসজিদের মেঝেগুলি কার্পেটে আবৃত করা হয়, এবং এ দ্বারা বোঝানো হয় যে কার্পেটের নিচের ভূমি আল্লাহর প্রতি উৎসর্গীকৃত। ছাদের কাছে বিশেষভাবে নির্মিত থালা ঝুলানো আছে যেগুলি মিম্বার থেকে ইমামদের কণ্ঠ সারা মসজিদে ছড়িয়ে দিতে সাহায্য করে। মসজিদের বহু জানালা দিয়ে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশ করে এবং উন্মুক্ততার অনুভূতি সৃষ্টি করে, যা ঐশ্বরিক চিন্তাভাবনায় সহায়ক।
গ্যালারি
[সম্পাদনা]- সুলায়মানি মসজিদের জমকালো প্রবেশদ্বার
- মসজিদের চত্বর
- মসজিদের অভ্যন্তরভাগ
- ভেতর থেকে দৃশ্যমান মূল গম্বুজ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Goodwin G., "A History of Ottoman Architecture"; Thames & Hudson Ltd., London, reprinted 2003; আইএসবিএন ০-৫০০-২৭৪২৯-০
- Dŏgan K., "Ottoman Architecture"; Antique Collectors' Club. আইএসবিএন ৯৭৮-১-৮৫১৪৯-৬০৪-৪