সুরিনামের ইতিহাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
মানচিত্রে সুরিনাম

ইউরোপীয়দের আগমনের আগে বর্তমান সুরিনাম এলাকাটিতে আরাওয়াক, কারিবওয়ার্‌রাউ নামের আদিবাসী আমেরিকান গোত্রগুলি বাস করত। বেশির ভাগ আদিবাসী আমেরিকান ছোট ছোট স্বাধীন গ্রামে বাস করত, যেখানে আত্মীয়তার বন্ধনে গঠিত হত সম্প্রদায়। এরা শিকার করে ও ক্ষেতখামার করে জীবন চালাত। মূলত কন্দ জাতীয় ফসলের আবাদ হত, যেমন কাসাভা। উপকূলের লোকেরা আরাওয়াক ভাষায় এবং অভ্যন্তরভাগের লোকেরা কারিবীয় ভাষায় কথা বলত।

ইউরোপীয়দের বসতি স্থাপন[সম্পাদনা]

১৬শ শতকের শেষভাগে এসে ওলন্দাজ, ফরাসি ও ইংরেজ বণিকেরা সুরিনামের উপকূলে বাণিজ্যকেন্দ্র স্থাপন করে। ১৭শ শতকের প্রথমার্ধে ইংরেজ বণিকেরা দেশটিতে বসতি স্থাপন শুরু করে। ১৬৫০ সালে সুরিনাম নদীর তীরে একটি ব্রিটিশ দল প্রথম স্থায়ী ইউরোপীয় বসতি স্থাপন করে। পরবর্তীতে ওলন্দাজ পশ্চিম ভারতীয় কোম্পানির একটি নৌবহর এই বসতিটি দখল করে। ১৬৬৭ সালে ব্রেডার চুক্তির মাধ্যমে ইংরেজরা উত্তর আমেরিকায় নিউ অ্যামস্টার্ডাম (বর্তমান নিউ ইয়র্ক শহর)-এর বিনিময়ে এই উপনিবেশটির একাংশ ওলন্দাজদের দিয়ে দেয়। ফলে সুরিনাম সরকারীভাবে ওলন্দাজ নিয়ন্ত্রণে আসে। তখন থেকে ওলন্দাজরা সুরিনামকে একটি উপনিবেশ হিসেবে শাসন করতে থাকে। তবে ১৭৯৫-১৮০২ এবং ১৮০৪-১৮১৬ যুদ্ধচলাকালে ব্রিটিশরা সাময়িকভাবে সুরিনামের দখল নিয়েছিল।

ঔপনিবেশিক প্ল্যান্টেশন ব্যবস্থা[সম্পাদনা]

সুরিনামে ওলন্দাজ উপনিবেশের অর্থনীতির প্রাথমিক ভিত্তি ছিল প্ল্যান্টেশন কৃষি। ওলন্দাজেরা সুরিনামে অনেক প্ল্যান্টেশন স্থাপন করে এবং আফ্রিকা থেকে বিরাট সংখ্যক ক্রীতদাসকে এগুলিতে কাজ করাতে নিয়ে আসে। প্ল্যান্টেশনে চাষ করা শস্যের মধ্যে প্রধান ছিল আখ। তবে কিছু কিছু প্ল্যান্টেশনে কফি, কাকাও, নীল, তুলা, খাদ্যশস্য ও কাঠ উৎপাদনী বৃক্ষও উৎপাদন করা হত। ১৭৮৫ সাল পর্যন্ত প্ল্যান্টেশন অর্থনীতি প্রসার লাভ করে। সেসময় এখানে ৫৯১টি প্ল্যান্টেশন ছিল, যাদের মধ্যে ৪৫২টি চিনি ও অন্যান্য বাণিজ্যিক শস্য উৎপাদন করত এবং এবং ১৩৯টি খাদ্যশস্য ও কাঠ উৎপাদন করত। ১৭৮৫ সালের পর কৃষি উৎপাদন হ্রাস পেতে থাকে। প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা অন্যত্র আরও বেশি আয় করা শুরু করে, এবং দাসদের মুক্তিলাভের ফলে প্ল্যান্টেশনের খরচ বেড়ে যায়। ১৮৬০ সাল নাগাদ মাত্র ৮৭টি চিনির খামার অবশিষ্ট ছিল এবং ১৯৪০ সালে এসে এই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪।

চিনি উৎপাদনকারী অন্যান্য দাসভিত্তিক উপনিবেশগুলির মত সুরিনামেও সমাজব্যবস্থা তিনটি স্তরে বিভক্ত ছিল। সবচেয়ে উপরের স্তরে ছিল একটি ক্ষুদ্র অভিজাত ইউরোপীয় শ্রেণী। এরা ছিল মূলত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, প্ল্যান্টেশনের মালিকেরা, যারা তাদের প্ল্যান্টেশনে বসবাস করত এবং প্ল্যান্টেশনের প্রশাসকেরা, যারা মালিকের অনুপস্থিতিতে সেগুলির দেখাশোনা করত। ইউরোপীয়দের সিংহভাগই ছিল ওলন্দাজ, তবে কেউ কেউ জার্মান, ফরাসি, বা ইংরেজও ছিলেন। অভিজাত শ্রেণীর ঠিক নিচের স্তরটিতে ছিল মুক্ত নাগরিকদের নিয়ে গঠিত মধ্যস্তর। জাতিগতভাবে বিচিত্র এই দলটির সদস্য ছিল সুরিনামে জন্ম নেওয়া ইউরোপীয় বংশদ্ভূত লোক, দাসী মহিলদের গর্ভে ইউরোপীয়দের ঔরসজাত সন্তানাদি, এবং যেসমস্ত দাসকে মুক্তি দেয়া হয়েছিল বা যারা মুক্তি কিনে নিয়েছিল। সমাজের একেবারে নিম্নস্তরে ছিল দাসেরা, এবং এরাই ছিল সমাজের বৃহদংশ।

সুরিনামের দাসপ্রথা ছিল অত্যন্ত নিষ্ঠুর প্রকৃতির। দাসদেরকে সম্পত্তির মত ব্যবহার করা হত, এবং তাদের কোন আইনি অধিকার ছিল না। ঔপনিবেশিক আইন অনুসারে দাসদের মালিকদের ছিল সর্বময় একচ্ছত্র ক্ষমতা। কোন কোন দাস নদীপথে পালিয়ে দেশের অভ্যন্তরভাগের অতিবৃষ্টি অরণ্যে স্বাধীন গ্রাম স্থাপন করে বিছিন্নভাবে বসবাস করত। উপনিবেশের সেনাদল দিয়ে এদের ধরে আনার অনেক চেষ্টা করা হলেও তারা তাদের স্বাধীনতা বজায় রাখে। এদের বংশধরেরা আজও সেসব এলাকায় বসবাস করে।

১৯শ শতকের শুরুর দিকে ইউরোপীয় মনোভাব দাসপ্রথা অবসানের প্রতি অনুকূল হয়। ১৯শ শতকের মধ্যভাগে ইংরেজ ও ফরাসিরা আইন করে তাদের দাসদের মুক্তির ব্যবস্থা করে। তখন ওলন্দাজেরাও তাদের উপনিবেশগুলিতে দাসদের মুক্তির ব্যাপারে প্রস্তুতি নিতে থাকে। সুরিনামের প্ল্যান্টেশন মালিকেরা ভয় করছিল যে মুক্তিপ্রাপ্ত দাসেরা আর প্ল্যান্টেশনে কাজ করতে চাইবে না। তাই আইন করে মুক্তির পরেও ১০ বছর ন্যূনতম ভাড়ায় সরকারী নির্দেশনায় দাসদের প্ল্যান্টেশনে কাজ করা বাধ্যতামূলক করা হয়। ১৮৬৩ সালে পূর্ণ মুক্তির পর প্রাক্তন দাসেরা ভাল বেতনের চাকরি ও উন্নত শিক্ষার আশায় পারামারিবো শহরে ভিড় জমাতে থাকে।

এই স্থানান্তরের ফলে সুরিনামের প্ল্যান্টেশনগুলিতে কর্মীর যে অভাব দেখা দেয়, তা পূরণ করতে এশিয়া থেকে শ্রমিক আমদানি করে নিয়ে আসা হয়। ১৮৫৩ ও ১৮৭৩ সালের মধ্যে ২৫০২ জন চীনা শ্রমিক এবং ১৮৭৩ থেকে ১৯২২ সালের ভেতর ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে আরও প্রায় ৩৪ হাজার, এবং ১৮৯১ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ৩২,৯৬৫ জন শ্রমিক নিয়ে আসা হয়। এই শ্রমিকেরা নির্দিষ্ট সংখ্যক বছরের জন্য প্ল্যান্টেশনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি সংবলিত চুক্তি স্বাক্ষর করে এখানে কাজ করতে আসে। এদের অধিকাংশই কৃষিকাজে নিয়োজিত ছিল। বর্তমানে এই এশীয় শ্রমিকদের বংশোদ্ভূতরা সুরিনামের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি অংশ গঠন করেছে।

ঔপনিবেশিক সরকার[সম্পাদনা]

সুরিনাম নদীর তীরে মেরুন গ্রাম, ১৯৫৫

ঔপনিবেশিক পর্বের অধিকাংশ সময় জুড়ে একজন ওলন্দাজ-নিযুক্ত গভর্নর সুরিনাম শাসন করতেন এবং তাকে এই কাজে দুইটি কোর্ট সাহায্য করত। এই কোর্টগুলির উপনিবেশের ভোটারদের দ্বারা নির্বাচিত প্রার্থীদের মধ্যে থেকে ওলন্দাজরা কর্মচারী বেছে নিত। ১৮৬৬ সালে কোর্টগুলি বিলুপ্ত করে একটি আইনসভা গঠন করা হয়, যদিও গভর্নরের আইনসভার নির্দেশের বিরুদ্ধে ভেটো প্রদানের ক্ষমতা ছিল। সম্পত্তি ও শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পর্কে কঠোর নিয়মের কারণে প্ল্যান্টেশনের মালিকেরাই সুরিনামের আইনসভায় প্রথমদিকে আধিপত্য বিস্তার করতেন। ওলন্দাজ সরকার যোগ্যতার নিয়ম শিথিল করার সাথে সাথে উচ্চ- ও নিম্ন-শ্রেণীর ক্রেওলেরা ১৯০০ সালের পর থেকে আইনসভায় আধিপত্য বিস্তার করতে শুরু করে। তবে ১৯৪৯ সাল পর্যন্তও যোগ্য ভোটারের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২%-এর বেশি ছিল না। ১৯৪৯ সালে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ককে ভোটপ্রদানের ক্ষমতা দেয়া হয়।

১৯২২ সালে সুরিনাম নেদারল্যান্ডের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়। ১৯৫৪ সালে একটি নতুন সংবিধান করে এটিকে ওলন্দাজ রাজ্যের অন্যান্য সদস্যদের সমমানের একটি সদস্যের মর্যাদা দেয়া হয়। অন্য সদস্যগুলি ছিল নেদারল্যান্ড্‌স নিজে এবং ক্যারিবীয় সাগরে অবস্থিত নেদারল্যান্ড্‌স অ্যান্টিল দ্বীপপুঞ্জ। এই নতুন সংবিধান মোতাবেক ওলন্দাজ সরকার সুরিনামের প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক সম্পর্কের দেখাশোনা করত এবং সুরিনামের গভর্নর নিয়োগ করত, আর সুরিনামবাসীরা একটি আইনসভা নির্বাচন করত, যা সুরিনামের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারগুলি দেখাশোনা করত।

স্বাধীনতা[সম্পাদনা]

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে নেদারল্যান্ড্‌স থেকে পূর্ণ স্বাধীনতা সমর্থনকারী একটি কোয়ালিশন জয়লাভ করে এবং প্রধানমন্ত্রী হেন্‌ক আরনের নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। এই সরকার ওলন্দাজ সরকারের সাথে স্বাধীনতার বিষয়ে কথাবার্তা বলা শুরু করে। ১৯৭৫ সালের ২৫শে নভেম্বর ওলন্দাজ সরকার সুরিনামকে স্বাধীনতা প্রদান করে। তবে প্রায় ৪০,০০০ লোক ওলন্দাজ নাগরিকত্বেই থেকে যান এবং সুরিনাম থেকে নেদারল্যান্ড্‌সে ফেরত চলে যান। ১৯৭৭ সালে নতুন স্বাধীন সুরিনাম প্রজাতন্ত্রের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং সেখানে হেন্‌ক আরন তাঁর সংখ্যাগরিষ্ঠতা বজায় রাখেন।

সামরিক শাসন[সম্পাদনা]

১৯৮০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি সামরিক অভ্যুত্থানে আরন ক্ষমতাচ্যুত হন। লেফটেন্যান্ট কর্নেল দেজিরে বুতের্সে-র নেতৃত্বে একদল সেনা অফিসার জাতীয় সেনা কাউন্সিল গঠন করেন। ১৯৮২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে এই কাউন্সিল আইনসভা বিলোপ করে এবং সংবিধান স্থগিত করে। কাউন্সিল রাষ্ট্রপতি হেঙ্ক চিন সেনকেও ক্ষমতাচ্যুত করে। সেন ও আরও হাজার হাজার লোক নেদারল্যান্ড্‌সে পালিয়ে যান। বুতের্সে সুরিনামের জাতীয় নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন এবং সেনাপ্রধান হিসেবে দেশ চালাতে থাকেন। ১৯৮০ ও ১৯৮১ সালে পাল্টা সামরিক অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা এবং ১৯৮২ সালে একটি গণতান্ত্রিক বিরোধী জোট গঠনের প্রচেষ্টাকে নিষ্ঠুর হাতে দমন করা হয়। ১৯৮৫ সালে সেনাবাহিনী ১৫ জন নাগরিকের উপর অত্যাচার চালায় ও তাদের হত্যা করে। এ ঘটনার পর নেদারল্যান্ড্‌স সুরিনামকে সাহায্য দেয়া বন্ধ করে দেয়। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সেনাবাহিনী একটি নতুন আইনসভা গঠনে সায় দেয়। রাজনৈতিক দলগুলির উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নেয়া হয় এবং আরন আবার জাতীয় কাউন্সিলে যোগ দেন।

১৯৮৬ সালে দেশটিতে গেরিলা যুদ্ধ আরম্ভ হয় এবং অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ে। সুরিনামীয় মুক্তিবাহিনী নামের এই বিদ্রোহীরা সাংবিধানিক অবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার প্রয়াস চালায়। কয়েক মাসের মধ্যে তারা প্রধান প্রধান বক্সাইট খনি ও শোধনকারী শিল্পগুলি বন্ধ করে দিতে সক্ষম হয়। এই সময় একটি নতুন সংবিধান রচনা করা হয় এবং ১৯৮৭ সালের গণভোটে ৯৩% ভোট পেয়ে এটি পাশ হয়।

বেসামরিক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

১৯৮৭ সালের সংবিধান নাগরিক সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে। নভেম্বরের নির্বাচনে বুতের্সের দল ৫১টি আসনের মধ্যে মাত্র ২টিতে জয়লাভ করে, অন্যদিকে ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের বহুজাতিক দল ৪০টি আসন জেতে। ১৯৮৮ সালের জানুয়ারিতে জাতীয় আইনসভা প্রাক্তন কৃষিমন্ত্রী রামসেওয়াক শংকরকে রাষ্ট্রপতি এবং আরনকে উপ-রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করে। ১৯৮৮ সালে ওলন্দাজেরা আবার সুরিনামকে সাহায্য পাঠাতে শুরু করে এবং পরবর্তী সাত থেকে আট বছর ধরে ৭২১ মিলিয়ন ডলার সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেয়। বক্সাইট খনিগুলিতে আবার কাজ শুরু হয়।

সাংবিধানিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলেও বুতের্সে সামরিক বাহিনীর মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখেন। তিনি ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে শংকরের সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। ১৯৯১ সালে নতুন করে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং নিউ ফ্রন্ট ফর ডেমোক্রেসি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামের একটি কোয়ালিশন সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়লাভ করে। ১৯৯১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী ও নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশনের নেতা রোনাল্ড ভেনেতিয়ান রাষ্ট্রপতি পদ লাভ করেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচিনে ভেনেতিয়ানের কোয়ালিশন স্বল্প ব্যবধানে পরাজিত হয়। ন্যাশনাল ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টির জুল উইডেনবশ নতুন রাষ্ট্রপতি হন।

১৯৯৮ ও ১৯৯৯ সালে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি, সরকারী চাকুরেদের বেতন প্রদানে ব্যর্থতা, এবং ক্রমবর্ধমান বৈদেশিক ঋণের মত অর্থনৈতিক সমস্যা সৃষ্টি হয় এবং দলে উইডেনবশের সরকারের উপর অনাস্থার সৃষ্টি হয়। ১৯৯৯ সালের মে মাসে দেশব্যাপী এক ধর্মঘট হয় ও মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। উইডেনবশ এক বছর আগেই ২০০০ সালের মে-তে নির্বাচন দেন। এই নির্বাচনে ভেনেতিয়ানের নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশন বিজয়ী হয় এবং ২০০০ সালের আগস্টে ভেনেতিয়ান আবার রাষ্ট্রপতি পদলাভ করেন। জাতীয় সংসদে ভেনেতিয়ানের মূল বিরোধী দল ছিল মিলেনিয়াম কম্বিনেশন, যার নেতৃত্বে ছিলেন বুতের্সে।

১৯৯৭ সালে ওলন্দাজ সরকার বুতের্সের বিরুদ্ধে একটি আন্তর্জাতিক গ্রেফতার ওয়ারেন্ট জারি করে। তার বিরুদ্ধে নেদারল্যান্ডসে বিপুল পরিমাণে কোকেন পাচারের অভিযোগ আনা হয়। সুরিনাম বুতের্সেকে নেদারল্যান্ডসের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানায় এবং এই অভিযোগকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে। ২০০০ সালের জুনে নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগের এক আদালতে বুতের্সেকে তার অনুপস্থিতিতেই বিচার ও শাস্তি প্রদান করা হয়। ২০০৪ সালে ওলন্দাজ ও সুরিনাম সরকার মাদক চোরাচালানি বন্ধের ব্যাপারে পরস্পরকে সহযোগিতার ব্যাপারে একমত হয়।

২০০৫ সালে সুরিনামের সর্বশেষ আইনসভা নির্বাচনে ভেনেতিয়ানের নিউ ফ্রন্ট কোয়ালিশন দশটি আসন হারায় এবং এর ফলে সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ক্ষুণ্ণ হয়। জুলাই মাসে ৫১-সদস্যবিশিষ্ট আইনসভা দুই দফা ভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্ণয়ের চেষ্টা করে, কিন্তু ভেনেতিয়ান কিংবা বিরোধী প্রার্থী রাবিন পারমেসার কেউই দরকারি দুই-তৃতীয়াংশ ভোট অর্জনে ব্যর্থ হন। শেষ পর্যন্ত ২০০৫ সালের আগস্ট মাসে ৮৯১ সদস্যবিশিষ্ট প্রাদেশিক কাউন্সিলের সভায় এক বিশেষ ভোটে ভেনেতিয়ান রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।


তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]