সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল
সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল سنی اتحاد کونسل | |
|---|---|
| সংক্ষেপে | এসআইসি |
| চেয়ারপার্সন | সাহেবজাদা হামিদ রাজা |
| প্রতিষ্ঠাতা | মুহাম্মদ ফজল করিম |
| প্রতিষ্ঠা | ২০০৯ |
| ভাবাদর্শ | |
| রাজনৈতিক অবস্থান | ডানপন্থী[১] |
| ধর্ম | সুন্নি ইসলাম (বরেলভী) |
| জাতীয় অধিভুক্তি | ডিপিসি[২] টিটিএপি |
| নির্বাচনী প্রতীক | |
| ঘোড়া | |
| দলীয় পতাকা | |
| ওয়েবসাইট | |
| https://twitter.com/_SICPak | |
| পাকিস্তানের রাজনীতি | |
সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (উর্দুতে *ইত্তেহাদ* অর্থ ‘ঐক্য’, আরবি *আল-ইত্তিহাদ* থেকে যার অর্থ ‘একত্র’ বা ‘একতাবদ্ধ’) হলো পাকিস্তানের একটি রাজনৈতিক জোট, যেখানে ইসলামপন্থি রাজনৈতিক দল ও বেরলভি ধর্মীয় দলগুলো অন্তর্ভুক্ত। এই জোট মূলত সুন্নি ইসলামের অনুসারীদের প্রতিনিধিত্ব করে।[৩]
সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এসআইসি) ২০০৯ সালে ফয়সালাবাদের মালিক রোডে তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে এর সদস্য দলের মধ্যে রয়েছে পীর আফজল কাদরি (গুজরাত)-এর নেতৃত্বাধীন আলমি তানজিম আহলে সুন্নাত এবং জামিয়াত উলেমা-ই-পাকিস্তান (জেইউপি)। জামিয়াত উলেমা-ই-পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মোহাম্মদ আব্দুল গফুর হাজারভি। পরে দলটি একাধিক উপদলে বিভক্ত হয়।[৪]
জামিয়াত উলেমা-ই-পাকিস্তানের একটি ‘এফ’ উপদল গঠন করেন মোহাম্মদ ফজল করীম ও হাজি হানিফ তায়্যব। বর্তমানে এই উপদলটি সাহিবজাদা হামিদ রাজার নেতৃত্বে পরিচালিত হচ্ছে।[৫]
অন্যদিকে, জামিয়াত উলেমা-ই-পাকিস্তানের ‘এম’ উপদলটি পরিচালিত হয় সায়্যিদ মাহফুজ শাহ সাহেব মাশাহদির নেতৃত্বে (ভিখি শরিফ, মান্ডি বাহাউদ্দিন)। পরবর্তীতে এই উপদলও সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের অংশ হয়।
২০২৪ সালের নির্বাচনের পর পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই)-সমর্থিত স্বতন্ত্র বিজয়ী প্রার্থীরা ইমরান খানের আহ্বানে এই দলে যোগ দেন।[৬]
কার্যক্রম
[সম্পাদনা]ডিসেম্বর ২০১১ সালে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল সমগ্র পাকিস্তানজুড়ে "দিফা-এ-পাকিস্তান ক্যাম্পেইন" চালু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল ন্যাটোর হামলায় নিহত পাকিস্তানি সেনাদের ঘটনায় জনসচেতনতা তৈরি করা। একই সঙ্গে ২৩ ডিসেম্বর "আমেরিকা নিন্দা দিবস" পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই ন্যাটো হামলায় দুই ডজনেরও বেশি পাকিস্তানি সেনা নিহত হন।[৭]
সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের তৎকালীন চেয়ারম্যান সাহিবজাদা ফজল করীমের সভাপতিত্বে আহলে সুন্নাত মতাদর্শের বিভিন্ন দলের সর্বদলীয় সম্মেলনে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।[৭]
মার্কিন সরকারের ওয়েবসাইট *Usaspending.gov* অনুসারে, ২০০৯ সালে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল ওয়াশিংটনের কাছ থেকে ৩৬,৬০৭ ডলার পেয়েছিল। অতীতে দলটি পাকিস্তানে তালেবানবিরোধী সমাবেশ করেছে, কিন্তু পরবর্তীতে দলটি সলমান তাসির হত্যাকারী মুমতাজ কাদরিকে সমর্থন করে।[৮] হাডসন ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, “হত্যার কয়েক দিনের মধ্যে, শীর্ষ ধর্মীয় সংগঠনগুলোর নেতৃত্বে করাচিতে পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি মানুষের সমাবেশ হয়, যেখানে কাদরিকে মুসলিম নায়ক হিসেবে সম্মানিত করা হয় এবং বক্তারা সতর্ক করে দেন যেন কেউ তাসিরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ না করে।”[৯]
সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারে এমন গুজবের প্রেক্ষিতে দলটি একটি ফতোয়া জারি করে জানায়, যদি যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের ভেতরে প্রবেশ করে তবে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদ বাধ্যতামূলক হবে এবং পাকিস্তানি সরকারকে পবিত্র যুদ্ধের জন্য জাতিকে প্রস্তুত করতে হবে।[১০]
১২ অক্টোবর ২০১২ সালে পাকিস্তানের ৫০ জন ইসলামি আলেম তালেবান বন্দুকধারীদের বিরুদ্ধে ফতোয়া দেন, যারা মালালা ইউসুফজাইকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের আলেমরা প্রকাশ্যে পাকিস্তানি তালেবানদের সমালোচনা করেন এবং এ ধরনের ধর্মীয় যুক্তি খণ্ডন করেন।[১১]
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে পিটিআই নেতা গোহর আলী খান ঘোষণা করেন, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সংসদীয় কৌশলের অংশ হিসেবে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দেবেন।[১১]
২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ সালে পাকিস্তানের নির্বাচন কমিশনে (ইসিপি) সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগদানের সনদ জমা দেয় পিটিআই। এর মাধ্যমে জাতীয় পরিষদের জন্য মোট ৮৬ জন স্বতন্ত্র সদস্য আনুগত্য প্রকাশ করেন। একইসাথে পাঞ্জাব পরিষদের ১০৫ জন, খাইবার পাখতুনখোয়া পরিষদের ৮৫ জন এবং সিন্ধু পরিষদের ৯ জন সদস্যের সনদও জমা দেওয়া হয়।[১১]
বিভক্তি
[সম্পাদনা]রাজনৈতিক মতপার্থক্যের কারণে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল দুটি অংশে বিভক্ত হয়। ভিখি শরীফের সায়্যিদ মোহাম্মদ মাহফুজ শাহ সাহেবের নেতৃত্বাধীন এক পক্ষ ঘোষণা করে যে সাহিবজাদা ফজল করীম ও হাজি হানিফ তায়্যবকে তাদের পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে, কারণ তারা দলের অনুমতি ছাড়া পিএমএল (কিউ)-এর সঙ্গে জোট করার চেষ্টা করেছিলেন।[১২]
এরপর সাহিবজাদা ফজল করীম ‘সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এফ)’ গঠন করেন এবং মাহফুজ শাহ সাহেব ‘সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এম)’ নামে আরেকটি উপদল গঠন করেন। ফজল করীমের মৃত্যুর পর ‘সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল (এফ)’-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন সাহিবজাদা হামিদ রাজা।[৫]
মতাদর্শ
[সম্পাদনা]সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল যেহেতু একাধিক ধর্মীয় দলের জোট, তাই এটি দক্ষিণপন্থী রাজনীতি অনুসরণ করে এবং রাজনীতিতে ধর্মের সম্পৃক্ততার পক্ষে অবস্থান নেয়। এই দল সুন্নি ইসলামের ধারাকে অনুসরণ করে এবং বিশেষ করে বেরলভি মতাদর্শ প্রচার করে। তবে দলটি অন্যান্য ধারার সঙ্গেও জোট বেঁধেছে। সম্প্রতি তারা শিয়া ইসলামী দল মজলিস ওয়াহদাতে মুসলিমীন (এমডব্লিউএম)-এর সঙ্গে পিটিআই-এর মধ্যস্থতায় একজোট হয়েছে। দলটি একদিকে তালেবান ও পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করেছে, আবার অন্যদিকে সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডেও সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। ২০২২–২০২৪ সালের পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিল ইমরান খান ও পিটিআইকে সমর্থন জানায় এবং ২০২৪ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে ইমরান খানের পক্ষে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নেয়।[১৩]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dawn.com (১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। "PTI-backed independents to join Sunni Ittehad Council: Barrister Gohar" (ইংরেজি ভাষায়)। Dawn (newspaper)। ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "Sunni Ittehad Council to launch Difa-e-Pakistan drive"। The News International (newspaper)। ১৫ ডিসেম্বর ২০১১। ৬ অক্টোবর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ US aided Pakistan group which supported extremists Dawn (newspaper), Published 11 January 2012, Retrieved 11 December 2018
- ↑ Khan, Aarish Ullah (২০১১)। Sunni Ittehad Council: The Strengths and Limitations of Barelvi Activism Against Terrorism (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০২৩।
- 1 2 Sunni Ittehad Council accepts Taliban challenge of debate Dunya TV News website, Updated 13 November 2013, Retrieved 12 December 2018
- ↑ "Sunni Ittehad Council moves ECP for allocation of reserved seats"। Pakistan today। ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। ১৫ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- 1 2 "The News International: Latest News Breaking, World, Entertainment, Royal News"। www.thenews.com.pk। সংগ্রহের তারিখ ২০ আগস্ট ২০২৫।
- ↑ Muhammad Ismail Khan। "The Assertion of Barelvi Extremism"। Hudson Institute। ৬ ডিসেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ Jon Boone (১২ অক্টোবর ২০১২)। "Malala Yousafzai: 'fatwa' issued against gunmen"। The Guardian (newspaper)। ৬ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "PTI strikes deal as successful independents to join Sunni Ittehad Council"। Samaa TV। SAMAA WEB DESK। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- 1 2 3 Zahid, Muhammad (২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪)। "Sunni Ittehad Council not allotted reserved seats in Punjab, Sindh"। BOL News (মার্কিন ইংরেজি ভাষায়)। ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪।
- ↑ Khalid Hasnain and Muhammad Saleem (২৮ নভেম্বর ২০১২)। "Alliance with PML-Q triggers rift in Sunni Ittehad"। Dawn (newspaper)। ১১ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১৮।
- ↑ "Pakistan: Imran Khan's PTI-backed candidates to join Sunni Ittehad Council, vows to form govt"। www.indiatvnews.com (ইংরেজি ভাষায়)। India TV News। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪। ৪ মার্চ ২০২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৪ মার্চ ২০২৪।
