সুক্মা জেলা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সুক্মা জেলা
ছত্তিশগঢ়ের জেলা
ছত্তিশগঢ়ে সুক্মার অবস্থান
ছত্তিশগঢ়ে সুক্মার অবস্থান
দেশভারত
রাজ্যছত্তিশগঢ়
প্রশাসনিক বিভাগবস্তার ডিভিশন
সদরদপ্তরসুকমা
আয়তন
 • মোট৪,৯৪,১১১ বর্গকিমি (১,৯০,৭৭৭ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)
 • মোট২,৪৯,৮৪১
 • জনঘনত্ব০.৫১/বর্গকিমি (১.৩/বর্গমাইল)
জনতাত্ত্বিক
 • সাক্ষরতা৩১
ওয়েবসাইটদাপ্তরিক ওয়েবসাইট
মালকান গিরি সুকমা

সুক্মা জেলা ভারতের মধ্যভাগে অবস্থিত ছত্তিশগড় রাজ্যের নবীনতম জেলাগুলির মধ্যে অন্যতম। রাজ্যটির দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত, জেলা সুকমা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের প্রতীক। জেলাটি ভারতের সর্বাধিক অনুন্নত জেলাগুলির অন্যতম। জেলাটি সবচেয়ে অশিক্ষিত জেলার মধ্যে অন্যতম; স্বাক্ষরতার হার ৩১% যা জাতীয় গড় ৫৯.৫% এর চেয়ে অনেক কম। জেলাটি নক্সালবাদ বা মাওবাদ দ্বারা মারাত্মকভাবে প্রভাবিত এবং বর্তমানে রেড করিডোর-এর অংশ। সুকমা, এই জেলার সদর শহর। জেলাটি পূর্বে দান্তেওয়াড়া জেলার অংশ ছিল, ২০১২ সালের ১৬ই জানুয়ারি সুক্মা একটি পৃথক জেলারূপে আত্মপ্রকাশ করে।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

রামায়ণে বর্ণিত দন্ডকারণ্য-র বর্তমান রূপ এই বস্তার অঞ্চল বলে ধারণা করা হয়। মনে করা হয়, ভগবান রামচন্দ্রের বনবাস কালে এই অঞ্চলেই তিনি এক বৃদ্ধা শবরীর হাত থেকে অর্ধ ভুক্ত ফল গ্রহণ করেছিলেন। আধুনিক ইতিহাস মতে, প্রায় ১৩০০ খ্রিষ্টাব্দে 'সুকমা' প্রতিষ্ঠিত হয় বলে ধারণা করা হয়। সুকমার জমিদারদের পূর্বসূরি, যারা বস্তারের মহারাজার রাজত্বের অধীনে এই অঞ্চলে রাজত্ব করতেন, তারা মূলত রাজস্থানের অধিবাসী ছিলেন। রাজস্থানের মুগলদের অত্যাচারের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তারা রাজস্থান থেকে অন্ধ্র প্রদেশের ওয়ারঙ্গলের রাজ্যে পালিয়ে যান। এই অঞ্চলে এসে, নিজেদের পুনপ্রতিষ্ঠা করেন কিন্তু তাদের জীবনের খারাপ সময়গুলির অভিশাপ তখনো তাদের বয়ে বেড়াতে হত; কারণ তথাকথিত শান্তিপূর্ণ এই অঞ্চলে মাঝে মাঝেই মারাঠা রাজারা এবং পেশোয়ারের দ্বারা আক্বিরান্ভিত হত এবং নানাবিধ কর ও শাস্তি প্রয়োগ করা হত। এই অত্যাচার থেকে বাঁচতে জমিদারদের পূর্বসূরিরা স্থির করেন তারা শবরী নদী পার হয়ে বিপরীত দিকে গিয়ে বসবাস করবেন। এই দলের মধ্যে পিতা, মাতা এবং তাদের ছেলে নিয়ে গঠিত এক পরিবার ছিল। নদী পার হওয়ার সময় নদীটির মাঝখানে এক ভূমিতে এসে ব্যাহত হয় তাদের যাত্রা। ঐ ভূমি ছিল এক দেবদূতের। দেবদূত প্রস্তাব দেন তাদের মধ্যে একজন কেউ আত্মবলিদান দিলে অবশিষ্ট দুইজনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবেন তিনি।এই কথা শুনে, পিতা নিজেকে উৎসর্গ দিতে প্রস্তুত হলে, তাকে বাধা দিয়ে পুত্র বলে যে সে আত্মবলিদান দিতে প্রস্তুত এবং তার মৃত্যুর পরে তার পিতামাতা পুনরায় সন্তান প্রার্থনা করতে পারবেন। যে স্থানে এই ঘটনা ঘটেছিল, সেই স্থানটি মুনিতপুট নামে পরিচিত, যা তিলওয়ারতি গ্রামে নদীর মাঝখানে একটি দ্বীপের মত দেখতে পাওয়া যায়। শিবরাত্রি ও মকরসংক্রান্তি তে আজও ভক্তরা এই স্থানে নদীতে অবগাহন ও পূজা পালন করে। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এই দ্বীপটি যদি নদীতে ডুবে যায় তবে সেখানে একটি বড় ক্ষয়ক্ষতি হবে। পরে এই দম্পতি সুকমা এলাকার রাজওয়াড়া এলাকায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করে, তারা এই স্থানে অত্যন্ত শান্তি অনুভব করেন। যদিও তারা প্রয়োজনীয় সুবিধা যেমন উপজাতিদের মধ্যে শিক্ষা এবং সুবিধার অনুপস্থিতিতে বসবাস করত, কিন্তু তারা মুগল ও মারাঠাদের অত্যাচার থেকে এই এলাকাটি খুব আরামদায়ক অনুভূতি অনুভব করায় এইভাবে তারা এই স্থানটিকে সুকমা নামে অভিহিত করে। সময়ের সাথে সাথে সুকমার মধ্যে একাধিক পরিবর্তন ও রূপান্তর হয়েছে।

ভৌগোলিক অবস্থান[সম্পাদনা]

জেরাম ঘাট শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এই নতুন জেলাটি টঙ্গপালের ৫ কিলোমিটার পূর্বে শুরু হয়। যদিও জেলাটির কোন বড় পর্বত নেই তবে জেলাটির পশ্চিমাঞ্চলে ছোট ছোট পাহাড় দেখতে পাওয়া যায়। এই পাহাড়গুলি ধীরে ধীরে তাদের আকার বৃদ্ধি করে, দান্তেওয়াড়া জেলার বিখ্যাত বাইলাডিলা পাহাড়ের সাথে মিলিত হয়। ছিন্দগড় ব্লকের পূর্বাঞ্চলীয় বেশিরভাগ এলাকা সমভূমি। তবে ব্লকের পশ্চিমাঞ্চলগুলি ছোট ছোট পাহাড়ের শাখা রয়েছে যা সুকমা পর্যন্ত চলতে থাকে। অন্যদিকে কান্তা ব্লকের পশ্চিমাঞ্চলটি বনভূমি দ্বারা বেষ্টিত, কিছু পাহাড়ী নদী, ঝোরা ও পাহাড় এই এলাকাকে অত্যন্ত দুর্গম করে তুলেছে।

নদনদী[সম্পাদনা]

শবরী নদী জেলাটির প্রধান নদী, যা তিনটি উন্নয়ন ব্লক ছিন্দগড়, সুকমা ও কোন্টার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, পূর্ব অংশে উড়িষ্যা রাজ্যের সাথে সীমানা গঠন করে। নদীটি একটি জীবন্ত নদী এবং সারা বছর ধরে নদী প্রবাহিত হয়, অন্ধ্রপ্রদেশের খাম্মাম ের কাছে কুন্নুভাম-এ গোদাবরী নদীর সাথে মিলিত হয়। ছিদ্দগড়ের ফুলনদী এবং সুকমা ব্লকের মালাঙ্গার নদী, শবরীর উপনদীদের মধ্যে অন্যতম এবং সুকমার প্রধান নদী।

বনভূমি[সম্পাদনা]

সুকমা জেলার বনভূমি ২২৩৮৭২ হেক্টর, সর্বাধিক বনভূমি অধ্যুষিত জেলাগুলির মধ্যে সুকমা অন্যতম। এখানকার বনভূমিতে মূলত শাল, সেগুন ইত্যাদি বড় গাছ এবং তেন্দুপাতা, ইম্লি, মহুয়া ইত্যাদি ছোট ছোট গাছ পাওয়া যায়।

প্রশাসনিক বিভাগ[সম্পাদনা]

জেলাটিতে তিনটি তেহশিল, ৬২টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং ১৩২টি গ্রাম পঞ্চায়েত রয়েছে। তেহশিল গুলি যথাক্রমেঃ সুকমা, ছিন্দগড় এবং কোন্তা।

লোকসভা ও বিধানসভা কেন্দ্র[সম্পাদনা]

তিনটি বিধানসভা কেন্দ্রঃ সুকমা, কোন্তা এবং ছিন্দগড়; ১টি লোকসভা কেন্দ্র বস্তারের সাথে সংযুক্ত।

জনসংখ্যার উপাত্ত[সম্পাদনা]

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুজায়ী সুকমা জেলার জনসংখ্যাঃ ২৪৯,৮৪১ জন যার মধ্যে ১২২৪৪৭ জন পুরুষ এবং ১২৭৩৯৩ জন মহিলা।

ভাষা[সম্পাদনা]

এখানে প্রচলিত কথ্যা= ভাষাগুলি হল হিন্দি, হাল্বি, গোন্দি ইত্যাদি।

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

সুকমার অর্থনীতি মূলত কৃষি ভিত্তিক। চাষবাসের পাশাপাশি বনভুমিতে বনজ উৎপাদন সংগ্রহের মাধ্যমেই জেলার বেশিরভাগ লোকজন জীবিকানিরবাহ করে।

কৃষি[সম্পাদনা]

জেলার প্রধান ফসল হল ধান,এছাড়াও বিভিন্ন অংশে ভুট্টা ও জোয়ার উৎপাদিত হয়।

সংস্কৃতি[সম্পাদনা]

পর্যটক আকর্ষণ[সম্পাদনা]

মুনিপুত্ত, দোংরি, রামরাম মন্দির এখানকার প্রধান পর্যটনস্থান।

পরিবহণ[সম্পাদনা]

রেল[সম্পাদনা]

জেলাটিতে কোন রেল লাইন নেই।

সড়ক[সম্পাদনা]

জাতীয় সড়ক ৩০, সুক্মা জেলার উপর দিয়ে গেছে, যা জেলাকে ওড়িশা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের সাথে সরাসরি যুক্ত করে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]