সী মিদার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শান্ত সমুদ্র
ওকেডিয়ান সাগরে সী মিদার রাজত্বের সময়ে শান্ত হয়।

সী মিদার বা সমুদ্রের মিদার হল ওকেডিয়ান লোকসাহিত্যের একটি পৌরাণিক চরিত্র। সী মিদার গ্রীষ্মকালে সমুদ্রের গভীরতায় নাকএলাভি দৈত্যকে (ঘোড়ার মত দৈত্য) সীমানার বাইরে রাখতে সাগরে গিয়ে বসবাস করে। প্রতিটি বসন্তে সে তার ঘোর শত্রু তেরানের সাথে যুদ্ধ করে, ওকেডিয়ান লোককাহিনীর অন্য আত্মা সাগর এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করার জন্য তীব্র শীতে ঝড় উঠাতে সক্ষম। অবশেষে সী মিদার তেরানকে পরাজিত করে এবং সমুদ্রের গভীরতায় তাকে পাঠিয়ে দেয়। কিন্তু গ্রীষ্মকালে তার অন্যান্য হিতৈষী শ্রমের পাশাপাশি তেরানকে সীমানার বাইরে রাখার প্রচেষ্টা তাকে পরিশ্রান্ত করে তোলে ফলে, শরৎকালে তেরান সী মিদারের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তার কাছ থেকে আবার নিয়ন্ত্রণ কেড়ে নেয়।

সী মিদার এবং তেরানের গল্প ওকেডিয়ানের প্রাচীনতম লোকসাহিত্যের মধ্যে একটি। সম্ভবত আবহাওয়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক ঘটনার অদ্ভুত ব্যাখ্যা করার জন্য সাধারণ আইল্যান্ডার দ্বারা উদ্ভাবিত করা হয়েছে। শেটল্যান্ডের জেলেরা সী মিদারের কাছে প্রার্থনা করে যাতে তাদেরকে শয়তান থেকে সুরক্ষা করে।

ব্যুৎপত্তি[সম্পাদনা]

পুরোনো স্কটস জিহ্বার অভিধানে মিদার হল "মাতা"[১] এর স্কটস বৈকল্পিক হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যা বিশেষ মৌখিক ওকেডিয়ান ব্যবহারের চিন্তা-ভাবনা করে।[২] তার প্রতিদ্বন্দ্বীর নাম তেরান, স্থানীয় ওকেডিয়ান উপভাষায় যার অর্থ "ক্ষিপ্ত রাগ"[৩] এবং তেররেনের একটি ব্যুৎপন্ন, "রাগ" জন্য নর্স হতে পারে।[২]

লোক বিশ্বাস[সম্পাদনা]

সী মিদার হল গ্রীষ্ম দিনসমূহের একটি আত্মা যা স্কটল্যান্ডের উত্তর দ্বীপপুঞ্জ কাছাকাছি উত্তাল সাগর জলের বিদ্রোহ দমন করে।[৪] শেটল্যান্ড আইল্যান্ডের, বিশেষ করে জেলেরা, শয়তান থেকে সী মিদার আশ্রয় প্রার্থনা করে।[৫] সাগরের নিয়ন্ত্রণ শীতকালীন আত্মা তেরান দ্বারা পরিচালিত হয়, যতক্ষণ না সী মিদার মার্চের মধ্যবর্তী বসন্তকালীন মহাবিষুবে আসে।[৩] উভয় আত্মারা মানুষের কাছে অদৃশ্য।[৬] তেরান তার ঘোর শত্রু এবং দুইজন ভীষণভাবে যুদ্ধ করে। নিয়ন্ত্রণ লাভ করার চেষ্টায় প্রায়ই তারা সপ্তাহসমূহ ভরে যুদ্ধ করে। তাদের ঝগড়া প্রবল বেগে বাতাসের কারণ এবং সে তেরান কাছ থেকে সাগরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রচেষ্টায় সময় সাগরে বড় অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়।[৩] দুই আত্মা একে অপরের উচ্ছেদ করার প্রচেষ্টায়, তেরানের কর্কশ আর্তনাদ ঝড়ের বাতাসের ভেসে আসে।[৪] দুইজনের মধ্যে বসন্তকালে যুদ্ধের সময়কে "ভরে তুল্লি" বা "বসন্তের সংগ্রাম" বলে আখ্যায়িত করা হয়।[৩] অবশেষে সী মিদার তেরানকে পরাজিত করে সমুদ্রের গভীরতায় তাকে নির্বাসিত করে। তেরানের পালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টার কারণ হচ্ছে দুর্যোগপূর্ণ গ্রীষ্মকালীন আবহাওয়া।[৭]

এছাড়াও গ্রীষ্ম মাসের সময় সী মিদার নাকএলাভি দৈত্যকে সীমানার বাইরে রাখা,[৮] সদাশয় শ্রমিকদের দায়িত্ব গ্রহণ: সে প্রজনন ক্ষমতার মাধ্যমে জলজ প্রাণীদের ক্ষমতাবান করে,[৬] উষ্ণ ও শান্ত সমুদ্র,[৪] এবং একটি নমনীয় গানের মত গ্রীষ্মকালে মৃদু হাওয়া সঞ্চারিত করে।[৬] লোকাঁচারবেত্তা এবং ওকেনী বাসিন্দা ওয়াল্টার ট্রাইল ডেনিসেন বলে, গ্রীষ্মে সী মিদার শাসনকাল চলাকালে আইল্যান্ডের অবস্থার "বিশ্বাস করতে হয় যে, ওকেনী দ্বীপমালা স্বর্গবাসীর দ্বীপপুঞ্জ হয়ে উঠেছে"। কিন্তু সী মিদার অনবরত কাজের মাধ্যমে সবকিছু শান্ত এবং তেরানের উপর টানা নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ধীরে ধীরে পরিশ্রান্ত হয়ে ওঠে।[৬]

শরত্কালে সময় এগিয়ে আসলে, সী মিদারের ক্লান্ত হয়ে পড়ে, এই সুযোগে তেরান মুক্ত হয়ে যায় এবং দু'জন মধ্যে দ্বন্দ্ব আবার আরম্ভ হয়।[৬] তাদের ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে অন্ধকার আকাশ এবং ঝোড়ো বাতাসের আর্তনাদ সাথে আবহাওয়া পরিবর্তন হয়।[৭] এই সময়, সংঘাতে তেরান বিজয়কে "গোর ভ্যালি" বলে আখ্যায়িত করা হয়।[৬][ক] সমুদ্র এবং আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ তেরানের কাছে ফিরিয়ে দিয়ে সী মিদার চলে যেতে বাধ্য হয়।[৭] শীতকালে কোথায় গিয়ে তিনি থাকেন তার কোন বিস্তারিত জানা যায়নি কিন্তু তেরান দ্বারা সৃষ্ট ঝড়ের সময় জেলেদের একটি সান্ত্বনা থাকে যে, সী মিদার বসন্তে সতেজ এবং শক্তিশালী হয়ে ফিরে আসবে এবং আবার সমুদ্রের ওপরে তার বিদ্বেষপরায়ণ কবজা করবে তেরানকে উচ্ছেদ করে।[৯]

উদ্ভব[সম্পাদনা]

একটি ঐতিহ্যবাহী সেল্টিক কাহিনী মিশ্রিত স্ক্যান্ডিনইভিয়ান পুরাণ দ্বারা ওকেডিয়ান উপকথা প্রভাবিত হয়েছিল। লোকাঁচারবেত্তা এবং লেখক আর্নেস্ট মারউইক সী মিদার ও তেরানকে "প্রকৃতির বিশুদ্ধ ব্যক্তিরূপে প্রকাশ" হিসেবে বর্ণনা করেন।[৪] ওকেনীকে ঘিরে সর্বদা পরিবর্তনশীল সমুদ্র এবং উত্তাল প্রাকৃতিক উপাদানের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন প্রাচীন পৌরাণিকসমূহ,[১০] কিন্তু দ্বীপপুঞ্জসমূহের প্রাচীনতম পৌরাণিক কাহিনী মধ্যে হল দুই আত্মার কাহিনী।[৪] আদিম আইল্যান্ডারা বিজ্ঞানের সুবিধা ছাড়াই আবহাওয়া এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক জীবন চক্রের অদ্ভুত ব্যাখ্যা করতে পারতো। ট্রাইল ডেনিসেন অনুমান করে যে, এই কারণে পৌরাণিক ভিত্তিক "কিছু অর্ধ আদিম কল্পনা" উৎপত্তি লাভ করেছে।[৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

টীকা

  1. এই জন্য দেওয়া অনুবাদের তারতম্য ঘটে; ট্রাইল ডেনিসেন বলেন "ফসল ধ্বংসাত্মক কাজ",[৬] পক্ষান্তরে মারউইক বলেন "শরত্কালে শোরগোল"।[৭]

উদ্ধৃতিসমূহ

  1. "mither, n", Dictionary of the Scots Language (online সংস্করণ), সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  2. "The Mither o' the Sea", Orkneyjar.com, ৫ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 
  3. Traill Dennison (1890), p. 70
  4. Marwick (2000), p. 19
  5. Marwick (2000), p. 23
  6. Traill Dennison (1890), p. 71
  7. Marwick (2000), p. 20
  8. Traill Dennison (1891), p. 131
  9. Marwick (2000), p. 71
  10. "The Sea in Orkney Folklore", ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা, সংগ্রহের তারিখ ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ 

গ্রন্থপঞ্জি

  • Marwick, Ernest W. (২০০০) [1975], The Folklore of Orkney and Shetland, Birlinn, আইএসবিএন 978-1-84158-048-7 
  • Muir, Tom (২০১৪), Orkney Folk Tales, History Press, আইএসবিএন 978-0-7509-5533-1 
  • Traill Dennison, Walter (১৮৯০), "Orkney Folklore, Sea Myths", The Scottish Antiquary, or, Northern Notes and Queries, Edinburgh University Press, 5 (18), জেস্টোর 25516326, (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য)) 
  • Traill Dennison, Walter (১৮৯১), "Orkney Folklore, Sea Myths", The Scottish Antiquary, or, Northern Notes and Queries, Edinburgh University Press, 5 (19), জেস্টোর 25516359, (সদস্যতা নেয়া প্রয়োজন (সাহায্য))