মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড

স্থানাঙ্ক: ২১°০৩′৫১″ উত্তর ৯২°০৮′৪৯″ পূর্ব / ২১.০৬৪২° উত্তর ৯২.১৪৭° পূর্ব / 21.0642; 92.147
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ হত্যাকাণ্ড থেকে পুনর্নির্দেশিত)
মেজর সিনহা রাশেদ খান হত্যাকাণ্ড
তারিখ৩১ জুলাই ২০২০
অবস্থানমেরিন ড্রাইভ সড়ক, বাহারছড়া ইউনিয়ন, টেকনাফ, কক্সবাজার, বাংলাদেশ
স্থানাঙ্ক২১°০৩′৫১″ উত্তর ৯২°০৮′৪৯″ পূর্ব / ২১.০৬৪২° উত্তর ৯২.১৪৭° পূর্ব / 21.0642; 92.147
অন্য পরিচয়সিনহা হত্যাকাণ্ড
ফলাফল
  • ৩জনের মৃত্যুদণ্ড; ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলি সহ
  • ৬জন আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
মৃতসিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান
দোষী সাব্যস্তহত্যা, হামলা
দোষী প্রমাণিতওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলিসহ সর্বমোট ১৫ জনকে অভিযুক্ত করা হয়[১]

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে খুন বা মেজর সিনহাকে খুন হল বাংলাদেশের একটি আলোচিত হত্যাকাণ্ড। ২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টায় কক্সবাজারের টেকনাফে মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান, পিএসসি নিহত হন। এই হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি করে।[২][৩][৪]

জীবনী[সম্পাদনা]

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান
ডাকনাম“আদনান”
জন্ম১৯৮৪
চন্দ্রঘোনা, কর্নফুলী, চট্টগ্রাম
মৃত্যু৩১ জুলাই, ২০২০
আনুগত্যবাংলাদেশ
সেবা/শাখাবাংলাদেশ সেনাবাহিনী
কার্যকাল-২০১৮
পদমর্যাদামেজর

সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান সেনাবাহিনীর একজন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।[৩] ৫১তম বিএমএ লং কোর্সে যোগদান করেন। ২০১৮ সালে সেনাবাহিনী থেকে তিনি স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৮৪ সালে চট্টগ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে তিনি এসএসসি এবং রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাশ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারী কর্মকর্তা। তার পিতা সর্বশেষ অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব ছিলেন। ২০০৭ সালে তিনি মৃত্যূবরণ করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে সিনহা ছিলেন মেজো। তাদের গ্রামের বাড়ি চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জে। তার নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে একটি "জাস্ট গো" নামে প্রমাণ্যচিত্রের কাজেই তিনি কক্সবাজার অবস্থান করছিলেন।[৫][৬]

হত্যার ধরন[সম্পাদনা]

২০২০ সালের ৩১ জুলাই বাংলাদেশ সময় রাত ৯ টা ২৫ মিনিটে মেজর মোহাম্মদ রাশেদকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ লিয়াকত আলী ৪ টি গুলি করে তাকে হত্যা করেন। লিয়াকত আলী পুলিশের বিশেষ দল সোয়াটের সদস্য। তাকে গুলি করার আদেশ দেন টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাস্তায় পড়ে ছিলেন মেজর সিনহা। তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে পরবর্তীতে ওসি প্রদীপ কুমারও ২টি গুলি করেন।[৭][৮] প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর একটি ট্রাকে করে তাকে হাসপাতাল নেয়া হয়। কিন্তু তার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।[৯]

সমাধিস্থল[সম্পাদনা]

বিচার প্রক্রিয়া[সম্পাদনা]

হত্যাকাণ্ডের পর সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এটি লক্ষ্য করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। এরপর ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বোন টেকনাফ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ এবং উপ-পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ৯ জনকেই দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার করা হয়। এই মামলায় বর্তমানে ৭ জন আসামী কারাগারে রয়েছেন।[১০]

গত ২৭ আগস্ট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজীব ও মো. আব্দুল্লাহ। একই মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে র‍্যাব জিজ্ঞাসাবাদ করে। ৩০ আগস্ট মামলার প্রধান আসামি টেকনাফের বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির সাবেক ইনচার্জ লিয়াকত আলী সাবেক মেজর সিনহা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। [১১]

২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি আদালত ১৫ জন অভিযুক্তের রায় ঘোষণা করে।[১২] রায়ে প্রদীপ এবং লিয়াকতকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং সাতজনকে খালাস প্রদান করে।[১৩] এছাড়াও যাবজ্জীবন ছয়জন প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়।[১৩]

প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

এই ঘটনার পরপরই পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এবং তৎকালীন সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।[১৪] ৫ আগস্ট ২০২০ তারিখ এক সংবাদ সম্মেলনে অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের সংগঠন "রিটায়ার্ড আর্মড ফোর্সেস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন-রাওয়া" দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সিনহা হত্যা মামলার বিচার দাবি করে তা দ্রুত নিস্পত্তির আহ্বান জানায়।[১৫]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "মেজর সিনহা হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপসহ দুজনের ফাঁসি, ৬ জনের যাবজ্জীবন"BBC News বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০১-৩১ 
  2. "মেজর সিনহা রাশেদ হত্যা: ময়নাতদন্ত রিপোর্ট আদালতে, আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু সোমবার"। ৯ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০২০ 
  3. "সিনহা রাশেদ হত্যাকাণ্ড"। ৬ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০২০ 
  4. "সিনহা হত্যাকাণ্ড : পুলিশের বলিরপাঠা সিফাত!"। ৫ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০২০ 
  5. "নিহত অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা রাশেদকে নিয়ে 'জাস্ট গো' ইউটিউবে ভিডিও আপলোড কারা করছে - তা নিয়ে প্রশ্ন"। বিবিসি। ১৪ অগাস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ৩০ আগস্ট ২০২০ 
  6. "যেভাবে বেড়ে ওঠেন সিনহা"। মানবজমিন। ৮ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০২০ 
  7. "মেজর সিনহার মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করেন ওসি প্রদীপও!"বাংলাদেশ প্রতিদিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৪ 
  8. "মৃত্যু নিশ্চিত করতে গুলি করেন ওসি প্রদীপও!"কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৮-২৪ 
  9. "মেজর সিনহা কেন টার্গেট"। ১০ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০২০ 
  10. "মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলা: আরও তিন আসামি আটক"। ১১ আগস্ট ২০২০। ১৪ আগস্ট ২০২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ আগস্ট ২০২০ 
  11. "সিনহা হত্যার দোষ স্বীকার করলেন লিয়াকত"Bangladarpan। ৩০ আগস্ট ২০২০। ১৪ জানুয়ারি ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জানুয়ারি ২০২২ 
  12. "সিনহা হত্যাকাণ্ড পূর্বপরিকল্পিত: আদালত"যুগান্তর (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  13. ফিরোজ, গাজী। "সিনহা হত্যাকাণ্ড ছিল পরিকল্পিত"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ 
  14. "মেজর সিনহা রাশেদ: কক্সবাজারে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ এবং পুলিশ প্রধান বেনজির যা বললেন"। বিবিসি। ৫ আগস্ট ২০২০। সংগ্রহের তারিখ ১০ আগস্ট ২০২০ 
  15. "রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে সিনহা হত্যার বিচার চাইতে যাবে 'রাওয়া'"somoynews.tv। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০২০ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]