সিডনি রাইলি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সিডনি রাইলি
"এইস অভ স্পাই"
১৯১৮ সালে জর্জ বার্গমেন উপনামে ইস্যূকৃত সিডনি রাইলির জার্মান পাসপোর্ট
এজেন্সির তথ্য
সার্ভিসযুক্তরাজ্য সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স বুরারু
অপারেশনলকহার্ট প্লট
ডি’আর্চি এফ্যায়ার
জিনোভিয়েব লেটার
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মআনু. ১৮৭৩
মৃত্যুআনু. ১৯২৫
সিডনি রাইলি
আনুগত্যযুক্তরাজ্য যুক্তরাজ্য
সেবা/শাখারয়েল এয়ার ফোর্স
পদমর্যাদাসেকেন্ড লেফটেনেন্ট
ইউনিটরয়েল ফ্লায়িং কর্পস
পুরস্কারমিলিটারি ক্রস

সিডনি জর্জ রাইলি (আনু. ১৮৭৩আনু. ১৯২৫),[১] সাধারণভাভে ‘এইস অফ স্পাইজ,’ বা স্পাইদের ওস্তাদ নামে পরিচিত। গুপ্তচর জীবনে তিনি ছিলেন ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরোর একজন সিক্রেট এজেন্ট, যা কিনা বর্তমান এম আই সিক্সের পূর্বসুরী।[২] ধারণা করা হয়, অন্তত চারটি শক্তিশালী দেশের হয়ে গুপ্তচরগিরি করেছেন তিনি।[৩]

স্পাই হিসেবে রাইলির খ্যাতি প্রথম ছড়িয়ে পড়ে ১৯২০ সালের দিকে, যখন রাশিয়ার বলশেভিকদের উৎখাতে রাইলির ব্যর্থ অপারেশনের কাহিনী জনসমক্ষে প্রকাশিত হয়।[৪] পরবর্তীতে স্যর ইয়ান ফ্লেমিংও জেমস বন্ড চরিত্র তৈরির সময় সিডনি রাইলিকে অনুসরণ করেন।[৫] আজকের অনেক ঐতিহাসিকদের মতে তিনি বিশ শতকের প্রথম সুপার স্পাই।[২] তবে এখন তার সম্পর্কে যা জানা যায় তার কতটুকু সত্যি আর কতটুকু বানোয়াট তা নিয়ে সন্দেহের প্রচুর অবকাশ আছে, কারণ রাইলি ছিলেন রহস্যময় এক চরিত্র। মানুষের চোখে ধুলো দেয়া, তাদের মাঝে ভুল ধারণা তৈরি করা শুধু তার পেশা নয়, নেশাও ছিল বটে।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

২৪ মার্চ ১৮৭৩ বা ১৮৭৪ সালে রাইলি এর জন্ম হয়েছিল। এটা মোটামুটি নিশ্চিত যে রাশিয়ার কোন এক অঞ্চলে তার জন্ম হয়েছিল।[৬] ১৮৯২ সালে রুশ সিক্রেট পুলিশের হাতে বিপ্লবী দলের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হন রাইলি। ছাড়া পাওয়ার পর নিজের নাম বদলে ফেলেন তিনি, তারপর নিজের মৃত্যুর ভুয়া ঘটনা সাজিয়ে একটা ব্রিটিশ জাহাজে চড়ে রওনা দেন দক্ষিণ আমেরিকার উদ্দেশ্যে। ব্রাজিলে পৌছে পেদ্রো নাম ধারণ করেন তিনি, এবং ডক শ্রমিক, সড়ক মিস্ত্রী ইত্যাদি হিসেবে কাজ করতে শুরু করেন। ১৮৯৫ সালে এক ব্রিটিশ অভিযাত্রী দলের বাবুর্চি হিসেবে যোগ দেন তিনি। জঙ্গলের আদিবাসীরা এক পর্যায়ে তাদের উপর হামলা চালালে এক ব্রিটিশ অফিসারের পিস্তল তুলে নিয়ে দলের নেতা মেজর চার্লস ফদারগিলের জীবন বাচান রাইলি। কৃতজ্ঞতাস্বরূপ তাকে ১৫০০ পাউন্ড, একটি ব্রিটিশ পাসপোর্ট এবং বৃটেনে যাওয়ার অনুমতি দেন মেজর।

পেশা জীবন[সম্পাদনা]

বৃটেনে পৌছে ওষুধ আমদানীর ব্যবসা শুরু করেন সিডনি। অনেকগুলো ভাষা জানা ছিল তার, ফলে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সুপারিন্টেনডেন্ট উইলিয়াম মেলভিলের ইনফর্মার হিসেবেও কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ সিক্রেট সার্ভিস ব্যুরোর প্রধান হয়েছিলেন মেলভিল। মেলভিলের সহায়তায় এই সময় নতুন নাম নেন তিনিঃ সিডনি জর্জ রাইলি।

১৮৯৯ এর জুনে স্ত্রীকে নিয়ে জারশাসিত রাশিয়ায় এসে পৌছান রাইলি। সেখানে ককেশাস এলাকায় তেল পাওয়ার সম্ভাবনা সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বৃটেনে পাচার করেন তিনি। তারপর ১৯০১ সালে সস্ত্রীক রওনা দেন দূর প্রাচ্যের উদ্দেশ্যে। রুশ-জাপান যুদ্ধের ঠিক আগে আগে ব্রিটিশ এবং জাপানিজদের ডাবল এজেন্ট হিসেবে মাঞ্চুরিয়ার পোর্ট আর্থারে এসে পৌছান। সেখানে এক চাইনিজ ইঞ্জিনিয়ারের সহায়তায় পোর্ট আর্থারের ডিফেন্স প্ল্যান চুরি করে জাপানিজ নেভির হাতে তুলে দেন তিনি। ফলে ১৯০৪ এর ফেব্রুয়ারিতে রুশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে পোর্ট আর্থারে হামলা চালায় জাপান। এর পরেই সেখান থেকে জাপান হয়ে ফ্রান্সে চলে আসেন রাইলি। সেখানে আরও একটি সফলতা ধরা দেয় তার হাতে। ফরাসীদের বদলে ব্রিটিশদের হাতে যেন পেট্রোলিয়ামের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে তা নিশ্চিত করতে উইলিয়াম ডার্সি নামের এক ব্যক্তির সাথে ছদ্মবেশে দেখা করেন তিনি, এবং তাকে নিয়ে বৃটেনে ফিরে আসেন। ডার্সি যাচ্ছিলেন ফরাসীদের সাথে তেল বিক্রির চুক্তি করতে, কিন্তু রাইলি তার মন ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম হন।[৭]

১৯০৯ সালে জার্মান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে শুরু করেন তৎকালীন কাইজার বা জার্মান শাসক। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্সের তেমন কোন ধারণা না থাকায় তারা রাইলিকে ছদ্মবেশে জার্মানি পাঠায়। সেখানে এক অস্ত্র কারখানায় কাজ নেন তিনি, এবং এক অফিস থেকে উইপনস প্ল্যান চুরি করতে ঢোকেন। সেখানে এক ফোরম্যান তাকে দেখে ফেললে তাকে খুন করেন এবং পালিয়ে এক সেফ হাউসে গিয়ে ওঠেন। তারপর উইপনস প্ল্যান লেখা কাগজকে চার টুকরো করে আলাদা আলাদা করে পাঠিয়ে দেন বৃটেনে, যাতে একটা হারিয়ে গেলেও বাকিগুলো থেকে মোটামুটি ধারণা পাওয়া যায়।

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকায় ঘাটি গাড়েন রাইলি, এবং জার্মান ও রুশ-উভয় পক্ষের কাছেই অস্ত্রের ব্যবসা করে প্রচুর লাভ করেন। তবে আমেরিকা যুদ্ধে যোগ দেয়ার পর তার ব্যবসা অনেকটা থিতিয়ে আসে। ফলে ১৯১৮ সালে লন্ডনে ফিরে আসেন তিনি, এবং হিজ ম্যাজেস্টিস সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (এস আই এস) এ নিয়োগ পান।[৮]

গুপ্তচর হিসেবে রাইলির সবচেয়ে বড় অপারেশন ছিল ব্রিটিশদের হয়ে রাশিয়ার নবগঠিত বলশেভিক সরকারকে উৎখাতের চেষ্টা। যদিও তার চূড়ান্ত অপারেশন শুরু হওয়ার ঠিক আগে রুশ সিক্রেট পুলিশ "চেকা"র সন্দেহে পড়ে যান তিনি, এবং পালিয়ে ফিনল্যান্ড হয়ে বৃটেন ফিরে আসতে বাধ্য হন। এই ঘটনার পরেই রাশিয়ায় প্রবেশমাত্র তার উপর মৃত্যুপরোয়ানা জারি করে বলশেভিক সরকার।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৯২৫ সালের সেপ্টেম্বরে চেকা'র পরবর্তী সংগঠন ওজিপিইউ এর চালে একটি বলশেভিক বিরোধী সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আবার রাশিয়ায় ঢোকেন রাইলি। সীমান্ত পার হওয়ার সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

২০০০ সালে ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স ডকুমেন্টে জানা যায়, মস্কোর কাছাকাছি একটি জঙ্গলে ১৯২৫ সালের ৫ নভেম্বর সিডনি রাইলিকে গুলি করে হত্যা করা হয়।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Sidney Reilly"britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা। সংগ্রহের তারিখ 09 August 2013  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |সংগ্রহের-তারিখ= (সাহায্য)[স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Robin Bruce Lockhart, Reilly: Ace of Spies; 1986, Hippocrene Books, আইএসবিএন ০-৮৮০২৯-০৭২-২.
  3. Richard Deacon, Spyclopaedia, Macdonald 1987, আইএসবিএন ০-৩৫৬-১৪৬০০-৬, pp. 133–136.
  4. Richard B. Spence, Trust No One: The Secret World Of Sidney Reilly; 2002, Feral House, আইএসবিএন ০-৯২২৯১৫-৭৯-২.
  5. Andrew Lycett, Ian Fleming, The Man Behind James Bond, pp. 118, 132, 1996, Turner Publishing, আইএসবিএন ১-৫৭০৩৬-৩৪৩-৯.
  6. "Одесские шпионы: как Зяма Розенблюм стал "агентом 007", и как Яша Блюмкин грабил земляков вместе с Мишкой Япончиком"segodnya.ua (রুশ ভাষায়)। ১০ ডিসেম্বর ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  7. "The Rogue Spy Behind James Bond"factbehindfiction.com (ইংরেজি ভাষায়)। মে ১৩, ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ এপ্রিল ২৩, ২০১০ 
  8. "Sidney Reilly"spyculture.com (ইংরেজি ভাষায়)। মার্চ ১৯, ২০১৩। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]