বিষয়বস্তুতে চলুন

সাহল আল-তুস্তারি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
সাহল আল-তুস্তারি
ব্যক্তিগত তথ্য
জন্মআনুমানিক ৮১৮ খ্রিষ্টাব্দ (২০৩ হিজরি) শুশতার, ইরান
মৃত্যুআনুমানিক ৮৯৬ খ্রিষ্টাব্দ (২৮৩ হিজরি) বসরা, ইরাক
ধর্মইসলাম
জাতিসত্তাপারস্য
যুগইসলামের স্বর্ণযুগ
অঞ্চলআহওয়াজ
প্রধান আগ্রহসূফিবাদ, ইসলামি ধর্মতত্ত্ব
উল্লেখযোগ্য কাজতাফসির

সাহল আল-তুস্তারি ( আরবি: سهل التستري ) বা সাহল শুশতারি ( ফার্সি: سهل شوشتری ) যার পুরো নাম আবু মুহাম্মদ সাহল ইবন আবদুল্লাহ। তিনি একজন ফার্সি সুন্নি মুসলিম পণ্ডিত এবং প্রাথমিক ধ্রুপদী সুফি মরমী ছিলেন।[] তিনি ৮১৮ সালে (২০৩ হিজরি) জন্মগ্রহণ করেন এবং ৮৯৬ সালে (২৮৩ হিজরি) মারা যান। তিনি সালিমিয়া নামে একটি ইসলামি ধর্মতাত্ত্বিক দল প্রতিষ্ঠা করেন। দলটির নাম তার শিষ্য মুহাম্মদ ইবন সালিমের নামে রাখা হয়।[]

তুস্তারি তার বিতর্কিত দাবির জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত যে তিনি বলতেন, “আমি সৃষ্টির জন্য আল্লাহর প্রমাণ এবং আমার সময়ের সাধুদের (আউলিয়া) জন্য একটি প্রমাণ।” তিনি কুরয়ানেরে তাফসির লিখেছেন।

জীবনী ও রচনা

[সম্পাদনা]

সাহল আল-তুস্তারি আব্বাসীয় খিলাফতের স্বর্ণযুগে বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানের খুজেস্তান প্রদেশে অবস্থিত দুর্গ নগরী তুস্তার (আরবি) বা শুশতার (ফারসি) তে জন্মগ্রহণ করেন।

ছোটবেলা থেকেই তিনি কঠোর জীবনযাপন করতেন। তিনি প্রায়ই রোজা রাখতেন। তিনি কুরআন ও হাদিস পড়তেন। তিনি তওবা (অনুতাপ) করতেন। সবচেয়ে বেশি তিনি আল্লাহর জিকির (স্মরণ) করতেন। এর ফলে তিনি আল্লাহর সঙ্গে গভীর সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তিনি নিজেকে আল্লাহর বিশেষ বন্ধু এবং মনোনীত ব্যক্তি মনে করতেন।

তুস্তারি কিছু সময়ের জন্য সুফি সাধক যুননুন মিসরি নির্দেশনায় ছিলেন। পরে তিনি সুফি সাধক মনসুর আল-হাল্লাজের প্রথম শিক্ষকদের একজন হন।[]

তুস্তারি যখন হাদিসের ইসলামী পণ্ডিতদের ( আবু দাউদ ) সাথে দেখা করেন, তখন তিনি বলেন, "হে আবু দাউদ, আমি আপনার কাছ থেকে কিছু চাই।" তিনি বলেন, "এটা কী?" সাহল বলেন, "একটি শর্তে যে আপনি বলবেন যে সম্ভব হলে আপনি তা পূরণ করবেন।" আবু দাউদ হ্যাঁ উত্তর দেন। সাহল বলেন, “তোমার জিভ বের করো, যা দিয়ে তুমি নবীর হাদিস বলেছ। আমি তা চুমু দিতে চাই।” আবু দাউদ রাজি হন এবং সাহল তার জিভ চুমু দেন।[] এটি দেখায় প্রথম দিকের হাদিস পণ্ডিত ও সুফিদের কাছাকাছি সম্পর্ক ভালো ছিল।

এই প্রাথমিক যুগে সুফিরা যখন বাগদাদে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছিলেন তখন তুসতারী দক্ষিণ-পশ্চিম ইরানে ছিলেন। আল-তিরমিধি মধ্য এশিয়ায় ছিলেন। আর মালামাতিয়ারা অন্য জায়গায় অবস্থান করছিল। হানাবিলার প্রধান নেতা আল-বারবাহারি তুসতারীর শিষ্য ছিলেন।[]

তাফসিরবিদ ও ইসলামি পণ্ডিত তুস্তারি বিশ্বাস করতেন যে কুরআনে বহুমাত্রিক অর্থ রয়েছে। এর মধ্যে বাইরের (জাহির) এবং ভেতরের (বাতিন) অর্থ রয়েছে। তিনি নবীর একটি কথার অর্থ ব্যাখ্যা করেন: “আমি তিনি এবং তিনি আমি, তবে আমি আমি এবং তিনি তিনি।” তিনি বলেন, এটি সাধকের হৃদয়ে মিলন ও উপলব্ধির রহস্য জাগায়। এটিকে ‘সির’ বা ‘হৃদয়’ বলা হয়। তিনি জিকিরকে তাত্ত্বিক ভিত্তি দেন।[] তিনি বলতেন, শেষ পর্যন্ত বোঝা যায় যে জিকিরের আসল কারিগর মুমিন নয়, বরং আল্লাহ নিজে। আল্লাহ মুমিনের হৃদয়ে নিজেকে স্মরণ করেন। এই বোধ মুমিনকে আল্লাহর উপর পূর্ণ ভরসার দিকে নিয়ে যায়।

  • আল-তুস্তারি, সাহল ইবনে আব্দুল্লাহ (ডিসেম্বর ২০০৯)। তাফসির আল-তুস্তারি: পবিত্র কোরআনের মহান তাফসীর। Fons Vitae। আইএসবিএন 978-1-891785-19-1 

উক্তি

[সম্পাদনা]
  • "আমি সৃষ্টির জন্য ঈশ্বরের প্রমাণ এবং আমার সময়ের ওলী (আউলিয়া)দের জন্য আমি একটি প্রমাণ"
  • "খাদ্য কী?" জিজ্ঞাসা করা হলে তুস্তারি উত্তর দেন: "খাদ্য হল জীবন্ত সত্তার চিন্তা।"[]
  • "যে ঘুম থেকে উঠে কী খাবে এই চিন্তায়, তাকে এড়িয়ে চল!"[]
  • "যদি কেউ এক মুহূর্তের জন্যও ঈশ্বরের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে নেয়, তাহলে সে সারা জীবন কখনও সঠিক পথ পাবে না।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Karamustafa, Ahmet T. (Professor) (২০০৭)। Sufism: The Formative Period। University of California Press। পৃষ্ঠা 38–43। আইএসবিএন 978-0-520-25269-1 Co-publisher: Edinburgh University Press.
  2. Staff। "Salimiyah (Muslim theological school)"। Encyclopædia Britannica (online)। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৬-২০ 
  3. Mason, Herbert W. (১৯৯৫)। Al-HallajRoutledgeCurzon। পৃষ্ঠা 83আইএসবিএন 978-0-7007-0311-1 
  4. Okasha, Mohamed (৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪)। "Abu Dawud: The Faqih and Scholar of Hadith"The-faith.com। E-Da`wah Committee (EDC)। ৫ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ এপ্রিল ২০১৮ 
  5. JSTOR: The Ḥanābila and the Early Sufis. Page 353
  6. Hovannisian, Richard G.; Sabagh, Georges (১৯৯৮)। The Persian presence in the Islamic world। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 187আইএসবিএন 978-0-521-59185-0 
  7. Shah, Idries (১৯৮৩)। Learning How to Learn: Psychology and Spirituality in the Sufi WayOctagon Press। পৃষ্ঠা 149। আইএসবিএন 978-0-900860-59-1  First published 1978. According to Idries Shah this refers to the fact that "Sufi learning comes through nutrition."
  8. Jami, Al-Ghazzali and Hakim Sanai (১৯৮০)। Four Sufi Classics: "Salaman and Absal", "Niche for Lights", "Way of the Seeker" and "Abode of Spring"Octagon Press। পৃষ্ঠা 191। আইএসবিএন 978-0-900860-69-0 
  9. Nicholson, Reynold A. (২০০২)। The Mystics of IslamWorld Wisdom। পৃষ্ঠা 41। আইএসবিএন 978-0-941532-48-8 

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]