সাবিত্রী হেইসনাম
সাবিত্রী হেইসনাম | |
---|---|
জন্ম | মায়াং ইম্ফল, মণিপুর, ভারত | ৫ জানুয়ারি ১৯৪৬
পেশা | মঞ্চ অভিনেত্রী |
কর্মজীবন | ১৯৫০এর দশক থেকে |
পরিচিতির কারণ | মণিপুরী থিয়েটার |
দাম্পত্য সঙ্গী | হেইসনাম কানাইলাল |
পুরস্কার | পদ্মশ্রী সংগীত নাটক অকাদেমি পুরস্কার মণিপুর রাজ্য কলা আকাদেমি পুরস্কার নান্দীকার পুরস্কার নাট্যরত্ন |
সাবিত্রী হেইসনাম (জন্ম:৫ জানুয়ারি ১৯৪৬) একজন ভারতীয় মঞ্চ অভিনেত্রী এবং মণিপুরী থিয়েটারের অন্যতম উল্লেখযোগ্য নাট্য ব্যক্তিত্ব।[১] তিনি মধুশ্রী দত্ত পরিচালিত সমালোচক-প্রশংসিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র স্ক্রিবল্স অন আক্কা (২০০০)য়[২] অভিনয় করেছিলেন যা আইডিপিএ পুরস্কার, সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা পাণ্ডুলিপি পুরস্কার এবং সেরা নৃতাত্ত্বিক চলচ্চিত্র বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেছিল।[৩] তিনি ১৯৯১ সালে সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কারও পেয়েছিলেন।[৪] মণিপুরী থিয়েটারে অবদানের জন্য ২০০৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পদকে ভূষিত করেছে।[৫]
জীবনী
[সম্পাদনা]সাবিত্ৰী হেইসনাম ১৯৪৬ সালের ৫ই জানুয়ারি ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য মণিপুরের মায়াং ইম্ফল অঞ্চলের একটি মণিপুরী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।[১] তাঁর খালা এবং একজন প্রখ্যাত অভিনেত্রী গৌরমণি দেবী তাঁকে অল্প বয়স থেকেই প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন এবং শিশুশিল্পী হিসাবে তাঁকে থিয়েটারের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। নিমাই সন্যাস নাটকে প্রধান চরিত্র 'নিমাই' ভূমিকায় এবং শ্রী বস্ত-চিন্তামণির 'রানী চিন্তামণি' চরিত্র ছিল তাঁর জীবনের প্রথমদিককার উল্লেখযোগ্য অভিনয়।[৬] ১৯৬১ সালে হেইসনাম' কানাইলাল পরিচালিত লেইং অহন্বা (প্রথম চিকিৎসা) চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে তাঁর কর্মজীবন পুনরায় শুরু করেছিলেন এবং পরের বছর তিনি কানাইলালকে বিয়ে করেছিলেন। তিনি কানাইলালের নেতৃত্বাধীন ও ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত কলাক্ষেত্র মণিপুর নামে একটি দলেরও অংশ ছিলেন।[৭]
সাবিত্রী হেইসনাম জাপান ও মিশর সহ ভারত ও বিদেশে বিভিন্ন মঞ্চে অনেক উল্লেখযোগ্য অভিনয় করেছেন।[৮] কলাক্ষেত্রের অধীনে তাঁর কয়েকটি বড় প্রযোজনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল-[৬]
- এখৌলংবির 'এখৌলংবি' (১৯৭০)
- তম্নলাইয়ের 'বিধবা মা' (১৯৭২)
- কাবুই কেওইবার 'বৃদ্ধা মহিলা' (১৯৭৩)
- পেবেটের 'মাদার পেবেট' (১৯৭৫)
- লাইগি মাচাসিংগার 'উপজাতীয় মহিলা' (১৯৭৮)
- মেমোরিস আব আফ্রিকা বা আফ্রিকার স্মৃতিচারণে 'মী' (১৯৮৫)
- মিগি শরঙ (১৯৯০) এর 'থম্বম'
- কর্ণের 'রাধা'
মহাশ্বেতা দেবীর দ্রৌপদী ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত একই নামের চিত্রনাট্যে, নাটকের চূড়ান্ত মুহুর্তে একে একে নিজের সব পোশাক খুলে ফেলে মঞ্চে নগ্ন হয়ে যাওয়ায় তিনি আলোচিত হয়েছিলেন এবং খবরের শিরোনাম হয়ে উঠেছিলেন।[৯]
২০০০ সালে ১৪ এপ্রিল এবং ২০ এপ্রিল এর প্রথম দুটি মঞ্চায়নের পরে এই অভিনয়টি অশ্লীল হিসাবে গণবিক্ষোভের উত্থান ঘটিয়েছিল।[১০] তবে এটি ২০০৪ সালে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সামনে নগ্নভাবে উত্তেজিত হয়ে বারোজন মহিলার একটি দলকে প্রতিবাদ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল বলে জানা যায়। ওই সেনাসদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল যে তারা একজন মহিলাকে ধর্ষণ করেছে এবং হত্যা করেছে।[১১]
ষাটের দশকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছোটগল্প ডাকঘর অবলম্বনে নির্মিত নাটকে একটি অল্প বয়স্ক ছেলের ভূমিকায় তাঁর অসাধারণ অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা অর্জন করেছিল।[১২]
পুরস্কার এবং সম্মাননা
[সম্পাদনা]মণিপুর রাজ্য কলা আকাদেমি ১৯৮৮ সালে সাবিত্রীকে অভিনয়ের জন্য তাদের বার্ষিক পুরস্কার প্রদান করে।[৬] ১৯৯১ সালে তিনি সংগীত নাটক আকাদেমি পুরস্কার অর্জন করেছিলেন।[৪] একই বছর, তিনি মিগি শারঙে (মানব খাঁচা) অভিনয়ের জন্য তৃতীয় কায়রো আন্তর্জাতিক উৎসবে সমসাময়িক এবং পরীক্ষামূলক থিয়েটারে সেরা অভিনয়শিল্পী হিসাবে সমালোচক পুরস্কার পেয়েছিলেন।[১৩] ২০০১ সালে "ডেথ অফ টু উইমেন" প্রযোজনায় তাঁর অভিনয় তাঁকে আন্তঃশৃঙ্খলা শিল্পকলার জন্য পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি মঞ্চ মুম্বইয়ের মজলিস কালচারের ফেলোশিপ এনে দিয়েছিল। মজলিস সাবিত্ৰীর শ্বাসক্রিয়ার কৌশল এবং কর্মক্ষমতায় এর প্রভাব সম্পর্কে মন্তব্য করেছিল।[১৪] ২০০২ সালে তিনি নান্দীকার নামে একটি কলকাতাভিত্তিক নাট্যদল থেকে নান্দীকার পুরস্কার এবং ২০০৬ সালে ভারত সরকারের শিশু ও মহিলা উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে নাট্য রত্ন উপাধি পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী নাগরিক সম্মাননা প্রদান করে।[৫]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Ananda Lal (২০১১)। The Oxford Companion to Indian Theatre। Oxford University Press। আইএসবিএন 9780195644463।
- ↑ "Profile on IMDB"। IMDB। ২০১৬। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Scribbles on Akka [2000]"। Majlis। ২০১৬। ২১ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ "Sangeet Natak Akademi Puraskar (Akademi Awards)"। Sangeet Natak Akademi। ২০১৬। ৩১ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৬। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ ক খ গ "Heisnam Sabitri (Padmashree Awardee in 2007)"। E Pao। ১১ আগস্ট ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Heisnam Kanhailal (PADMASHREE AWARDEE IN 2003)"। E Pao। ২৭ জুলাই ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Pure art form in garb of modern theatre"। The Telegraph। ৬ নভেম্বর ২০০৩। ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Trina Nileena Banerjee (ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Written on the body"। Infochange। ১১ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Shame and honour at play in violent realities"। The Sunday Guardian। ২২ মার্চ ২০১৪। ২৯ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ Trina Nileena Banerjee (ডিসেম্বর ২০১৩)। "The Loss of Wor(l)ds: Theatre in Manipur and Heisnam Kanhailal"। Humanities Underground।
- ↑ "Politics Of Indigenous Theatre"। NE Live। ১ জুলাই ২০১৫। ১৬ জুন ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Heisnam Sabitri"। Kalakshetra। ২০১৬। ৩১ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।
- ↑ "Fellowship"। Majlis Culture। ২০১৬। ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৩ জানুয়ারি ২০১৬।