শাজিয়া খালিদ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সাজিয়া খালিদ থেকে পুনর্নির্দেশিত)
শাজিয়া খালিদ
জন্ম১৯৭৩
জাতীয়তাপাকিস্তানি
পেশাডক্টর

শাজিয়া খালিদ (সিন্ধি: شازيه خالد, উর্দু: شازیہ خالد ‎‎; জন্ম ১৯৭৩) একজন ডাক্তার এবং পাকিস্তানের নারী মানবাধিকার কর্মী।

পটভূমি[সম্পাদনা]

ডা. শাজিয়া খালিদ পাইপলাইন প্রকৌশলী খালিদ জাফরকে বিয়ে করেন। ২০০৫ সালে ডা. শাজিয়া পাকিস্তান পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের (পিপিএল) কর্মচারী ছিলেন এবং গত ১৮ মাস ধরে কোম্পানির সুই হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন। পিপিএল কর্তৃক প্রদত্ত আবাসনে ডা. শাজিয়া একা থাকতেন। সমগ্র সুবিধা সমুহ এবং নিরাপত্তা সেবা প্রদান করত ডিফেন্স সার্ভিসেস গ্রুপ (ডিএসজি)।[১] পিপিএল প্রতিশ্রুতি দেয় যে তার স্বামীর জন্য চাকরির ব্যবস্থা করে দিবে এবং এই কারনেই তিনি চাকরিটি গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কথা অনুযায়ী কাজটি কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি।[২]

ধর্ষণ[সম্পাদনা]

ডা. শাজিয়াকে কেউ তার চুল টেনে জাগিয়ে তুলে। সরকারী মালিকানাধীন প্রাকৃতিক গ্যাস প্ল্যান্টের সুই, ডেরা বুগতিতে একজন মুখোশধারীর অনুপ্রবেশ ঘটে এরপর ডা. শাজিয়াকে চুল টেনে জাগিয়ে তুলা হয়, দড়ির সাহায্যে শ্বাসরোধ করে হুমকি দেওয়া হয়, চোখ বেঁধে রেখে পিস্তল দিয়ে আঘাত করা হয়, মারধর করে বার বার ধর্ষণ করা হয়। ঘটনাটি ঘটে ২০০৫ সালের ২ জানুয়ারি রাতে এবং ৩ জানুয়ারি ভোরের দিকে। এই হামলায় তিনি গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন। ডা. শাজিয়া নিকটবর্তী নার্সিং হোস্টেলে থাকা সাকিনা নামের একজন নার্সের কাছে সাহায্য চান। সাকিনা তখন পিপিএল এবং ডিসিএমও প্রশাসনকে অবহিত করেন; কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ আলী, ডা. ইরশাদ, ডা. সায়মা সিদ্দিকী, নার্স ফেরদৌস এবং সলিমুল্লাহ ডা. শাজিয়াকে দেখতে যান। ডা. শাজিয়া তার স্বামীর সাথে (যিনি তখন লিবিয়ায় কর্মরত ছিলেন) এবং তার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য আবেদন করেন কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছিল।[৩] তার চিকিৎসা দেয়ার পরিবর্তে তাকে চুপ করানোর চেষ্টা করা হয়, তাই কর্মকর্তারা তাকে তিন দিনের জন্য চেতনানাশক ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলেছিলেন এবং তারপর তাকে করাচির একটি মানসিক হাসপাতালে স্থানান্তরিত করেছিলেন। মানসিক হাসপাতালটির নাম আসগর সাইকিয়াট্রিক হাসপাতাল, যেটি করাচীতে অবস্থিত।[৪]

গৃহ বন্দী[সম্পাদনা]

ডা. শাজিয়ার স্বামী খালিদ সেই সময় লিবিয়ায় ছিলেন, তার স্ত্রীর সাথে পুনরায় মিলিত হওয়ার জন্য তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান। খালিদের সমর্থন পেয়ে শাজিয়া অপরাধের কথা জানায়।[৫]

প্রতিবেদনের পর, ২ মাসের জন্য তাকে পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং মোশাররফ কর্মকর্তাদের "অনানুষ্ঠানিক সুরক্ষার" অধীনে করাচীর একটি বাড়িতে গৃহবন্দী করা হয়েছিল এবং তাকে ডাক্তার, আইনজীবী বা তার পছন্দের অতিথির সাথে দেখা করা থেকে দূরে রাখা হয়ে ছিল।[৬] উপরন্তু, অপরাধের দৃশ্য এবং ড. শাজিয়ার কাপড়সহ যা কিছু প্রমাণ হিসাবে বিবেচিত হয়েছে, তা ছিঁড়ে ফেলা হয় বা ধ্বংস করা হয়। কিছু দিন পর যখন তার পরিবারকে অবহিত করা হয়, ড. শাজিয়া এবং তার পরিবারকে ধর্ষণের মামলা নথিভুক্ত করতে বা গণমাধ্যমের সাথে কথা না বলার জন্য পিপিএল কোম্পানির প্রতিনিধি চুপ করে থাকতে বলে।[৩][৭]

ডা. শাজিয়ার স্বামী খালিদ বলেছিলেন, তার দাদা শাজিয়াকে তালাক দিতে বলে, কারণ ধর্ষণ তার পারিবারিক সম্মানে দাগ দিয়েছে। খালিদ তালাকে অস্বীকার করলে তার দাদা শাজিয়াকে হত্যা করার জন্য একটি ভিড় জড়ো করে।[৫][৮]

ডা. শাজিয়ার মামলা বেলুচিস্তানের বুগতি উপজাতির দ্বারা একটি সহিংস বিদ্রোহে পরিনত হয় যা দেশে বেশ কিছু সপ্তাহ গ্যাস সরবরাহকে ব্যাহত করে। বিদ্রোহ দমন করার জন্য ১০,০০০ সৈন্য এবং পুলিশ আনা হয়েছিল।[৯]]

একটি অস্বাভাবিক উন্নয়ন ঘটে, যখন পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট পারভেজ মুশাররফ জাতীয় টেলিভিশনে ঘটনাটি উল্লেখ করে বিতর্কে প্রবেশ করেন এবং বলেন, ক্যাপ্টেন হাম্মাদ নামে অভিযুক্ত অফিসার "দোষী নন"।[১০] উভয় রাজনীতিবিদ এবং পাকিস্তানির মানবাধিকার আইনজীবী আসমা জাহাঙ্গীর এই বক্তব্যের পর তাদের সমালোচনা ও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। [১১]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Pakistan: The Dr. Shazia Rape Case - Press Statement Joint Action Committee for People's Rights"www.sacw.net [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. Kristof, Nicholas D. (৩১ জুলাই ২০০৫)। "Opinion - Another Face of Terror" – NYTimes.com-এর মাধ্যমে। 
  3. "Rape victim under pressure to keep mum"DAWN.COM। ৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫। 
  4. "kristof.html Another Face of Terror" 
  5. "OCASI - Ontario Council of Agencies Serving Immigrants"ocasi.org 
  6. "Musharraf's Rape Cover-Up"। ৭ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  7. "Shazia Khalid and the fight for justice in Pakistan" 
  8. "I am not expecting justice: Dr Shazia"। ১৪ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  9. "Musharraf's Rape Cover-Up"। ৭ জুলাই ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  10. "Sherry points out loopholes in Dr Shazia's rape probe" 
  11. Land, Gold and Women Part 2: The case of Shazia Khalid

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]