বিষয়বস্তুতে চলুন

সাকালিবা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রুশ ও খাজারদের দাস বাণিজ্য: সের্গেই ইভানোভের (১৯১৩) লেখা পূর্ব স্লাভীয় শিবিরে বাণিজ্য। বহু সাকালিবা দাস ইউরোপ থেকে ভলগা বাণিজ্য পথের মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ থেকে খাজার ও কাস্পিয়ান সাগরের পথ ধরে আব্বাসীয় খিলাফতে আসত।
স্লাভীয় ধর্মের দেবী জোরিয়া। প্রায় সকল স্লাভীয় পৌত্তলিক ছিল এই সত্যটি খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয়ের দৃষ্টিতে দাসত্বের লক্ষ্যবস্তু হিসাবে তাদের বৈধতা দেয়।
ক্যান্টিগাস দি সান্তা মারিয়ায় চিত্রিত কর্ডোবার স্লাভীয় ও কালো দাসরা।
নিউ নিকোহর থেকে প্রাপ্ত ১১শ বা ১২শ শতাব্দীর একটি লোহার বন্ধন।
আঙ্কলাম ২ থেকে প্রাপ্ত কর।
একজন স্লাভীয় দাস; প্রায় ৮০০ খ্রিস্টাব্দ, ক্রাকাউ।
চেরভেন দুর্গ বা শহরগুলির পথ

সাকালিবা ( আরবি: صقالبة; রোমানীকৃত: ṣaqāliba; আরবি একবচন: صقلبي; রোমানীকৃত: ṣaqlabī) [মন্তব্য ১] হলো মধ্যযুগীয় আরবিতে ব্যবহৃত একটি শব্দ, যা মূলত স্লাভ জাতি ও মধ্য, দক্ষিণপূর্ব ইউরোপের অন্যান্য জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে ব্যবহার করা হতো। এই শব্দটির উৎপত্তি মধ্যযুগীয় গ্রীক ভাষার স্লাভোস/স্ক্লেভেনোস (slavos/sklavenos) শব্দ থেকে, যা আন্দালুসি আরবি ভাষায় বিশেষভাবে স্লাভ দাসদের নির্দেশ করত।

আরবরা নিজেদের প্রতিবেশী নয়, এমন জনসংখ্যার জাতিগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে খুব অস্পষ্ট ধারণা রাখত। সম্ভবত সাকালিবা শব্দটি বিভিন্ন বলকান, ককেশীয়, তুর্কি ও স্লাভিক জনগোষ্ঠীকে বোঝাত, যারা বাল্টিক সাগর থেকে কৃষ্ণকাস্পিয়ান সাগরের মাঝামাঝি অঞ্চলে বসবাস করত। উদাহরণস্বরূপ আহমদ ইবন ফাদলান ভলগা বুলগারদের শাসক আলমিসকে সাকালিবার রাজা বলে উল্লেখ করেছেন এবং মুহাম্মদ আল-বিরুনি বাল্টিক সাগরকে "সাকালিবার সাগর" বলে অভিহিত করেছেন।

এই শব্দটি প্রায়শ নির্দিষ্টভাবে স্লাভীয় দাসদের বুঝাতে ব্যবহৃত হতো। তবে এই শব্দটি আরো বিস্তৃতভাবে পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ক্ষেত্রেও ব্যবহৃত হতো, যাদের আরব ব্যবসায়ীরা দাস বানিয়ে বিক্রি করত। স্পেনপর্তুগালের মুসলিম শাসিত অঞ্চলে এটি সমস্ত ইউরোপীয় দাসদের বোঝাত; বিশেষ করে খ্রিস্টান রাজ্যগুলোর ওপর চালানো অভিযানে বন্দি করা লোকদের। সুদার ও বি. সাবোর মতে, সাকালিবা শব্দটির অর্থ ছিল 'বনবাসী', যা জাতিগোষ্ঠী নির্বিশেষে সবার জন্য ব্যবহৃত হত এবং এটি জাতিগত পরিচয়ের চেয়ে ভূগোলভিত্তিক ধারণা অধিক বহন করত। [][][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

৮ম শতকের শেষের দিকে দাস হিসেবে সাকালিবাদের মুসলিম বিশ্বে বিক্রি শুরু হয়েছিল বলে জানা যায়।[] সাকালিবা দাসদের—বিশেষ করে তরুণ ছেলেদের—আরবি ভাষা শেখানো হত এবং তাদের ইসলাম গ্রহণে উৎসাহিত করা হত। ফলে এদের প্রায় সবাই ইসলাম গ্রহণ করত এবং এরা ইসলামী সাম্রাজ্যের সামরিক ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখত; বিশেষ করে আল-আন্দালুসে ( বর্তমান স্পেনপর্তুগালের মুসলিম শাসিত অংশ)। সেখানে ১০ম ও ১১শ শতকে সাকালিবারা একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক গোষ্ঠীতে পরিণত হয়েছিল এবং তারা অনেক তাইফা শাসনও করেছিল।

স্লাভীয় দাসদের আরব বিশ্বে আনার জন্য কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পথ ছিল। পূর্বাঞ্চলের স্লাভদের (যেমন রুশ ও অন্যান্য পূর্ব ইউরোপীয় জাতিগোষ্ঠী ) আরব বিশ্বে দাস হিসেবে বিক্রি করা হতো মধ্য এশিয়ার মাধ্যমে, যেখানে মঙ্গোল, তাতার ও খাজাররা এ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিল। দক্ষিণাঞ্চলের স্লাভদের ( যেমন: বলকান অঞ্চলের জনগণ) দাস বানিয়ে বলকান অঞ্চল হয়ে আরব বিশ্বে পাঠানো হতো। পশ্চিমা স্লাভদের (যেমন পোল, চেক ও অন্যান্য পশ্চিম ইউরোপীয় স্লাভ) মধ্য ও পশ্চিম ইউরোপের পথ ধরে আরবে এবং কিছু ক্ষেত্রে আল-আন্দালুস ( মুসলিম শাসিত স্পেন) পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হতো।[] দশম শতাব্দীর মুসলিম ভূগোলবিদ ইব্রাহিম ইবন ইয়াকুবের মতে, ভলগা নদীর বাণিজ্য পথ ও অন্য ইউরোপীয় দাসবাণিজ্য পথগুলো প্রধানত রাদানাইট ইহুদি ব্যবসায়ীদের দ্বারা পরিচালিত হতো। বাইজান্টাইন ইতিহাসবিদ থিওফানেস উল্লেখ করেন যে, প্রথম উমাইয়া খলিফা প্রথম মুয়াবিয়া (খিলাফত: ৬৬১-৬৮০ ) বাইজান্টাইন সাম্রাজ্যের ৫,০০০ স্লাভীয় ভাড়াটে সৈন্যকে সিরিয়ায় বসতি স্থাপনের অনুমতি দেন, যখন তারা বাইজান্টাইনদের পক্ষ ত্যাগ করে। []

৬৯২ সালের সেবাস্তপলিস যুদ্ধে পরাজিত হওয়ার পর বাইজান্টাইন সেনাবাহিনীর স্লাভীয় বাহিনীর প্রধান (আর্চন) নেবুলোস ও তার ৩০,০০০ সৈন্য আত্মসমর্পণ করলে উমাইয়ারা তাদের সিরিয়ায় স্থায়ীভাবে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেয়। [][]

আবদুর রহমান দাখিল তার শাসনামলে সাকালিবার (দাস) সংখ্যা বৃদ্ধি করা এবং তাদেরকে চাকর ও সৈন্য হিসেবে ব্যবহার করার নীতি গ্রহণ করেছিলেন, যেন আরব গোত্রীয় নেতা ও তাদের আধিপত্য প্রতিরোধ করা যায়। কারণ আরব গোত্রের নেতারা সাধারণত কেন্দ্রীয় শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রবণতা রাখতেন। এই উদ্দেশ্য ছাড়াও সাকালিবাদের সাথে গৃহস্থালি কাজ ও বাণিজ্যের বিষয়টি যুক্ত ছিল। [১০][১১]

সাকালিবারা আব্দুর রহমান নাসেরের শাসনামলে শীর্ষে পৌঁছেছিল। তখন তারা মন্ত্রীসভা, আমলা এবং সেনাপতিত্বে গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। তখন তাদের মধ্যে ছিল বনি মুগিস, বনি আবি আবদা, বনি জাহুর ও বনি বাসিল গোত্রগুলি উল্লেখযোগ্য ক্ষমতা ও প্রভাবের অধিকারী ছিল। হুকুম বিন হিশাম তাদের ব্যবহার আরও বাড়িয়েছিলেন এমনকি তার প্রাসাদে সাকালিবাদের সংখ্যা ছিল পাঁচ হাজার। [১০]

হুকুম আল-মুস্তানসির বিল্লাহর আমলে সাকালিবাদের ভূমিকা রাজপ্রাসাদে আরো বৃদ্ধি। তাদের প্রভাব এতটা বৃদ্ধি পেয়েছিল যে হুকুমের মৃত্যুর পর তারা তাদের পছন্দের প্রার্থী মুগিরা বিন আবদুর রহমান নাসেরকে শাসক হিসেবে বসানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এটি জাফর বিন উসমান মাসফাহী এবং মুহাম্মদ বিন আবি আমিরের বিরোধিতার কারণে ব্যর্থ হয়। তারা হিশাম মুআইয়েদ বিল্লাহকে শাসক হিসেবে মনোনীত করেন। তাদের শক্তি শেষ হয়েছিল মঞ্জুর বিন আবি আমিরের হাতে, যিনি অস্ত্রের মাধ্যমে তাদের ক্ষমতা হ্রাস করেন। [১২]

আরব বিশ্বে সাকালিবা দাসদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হত। তাদের কেউ ছিল চাকর; কেউ হারেমের উপপত্নী বা খোজা; কেউ কারিগর এবং কেউ ভাড়াটে সৈন্য বা দাস-সৈনিক ছিল। এমনকি তাদের অনেকে খলিফার ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী হিসেবেও নিযুক্ত হয়েছিল। আল-আন্দালুস, মরক্কো, দামেস্কসিসিলির মতো অঞ্চলে তাদের সামরিক ভূমিকা উসমানীয় সাম্রাজ্যের মামলুকদের সঙ্গে তুলনীয় ছিল।

আল-আন্দালুসে স্লাভ খোজারা এতটাই জনপ্রিয় হয়ে ওঠে যে, "সাকালিবা" শব্দটি খোজাদের সমার্থক হয়ে যায়; যদিও বা সব সাকালিবা খোজা ছিল না। ১০৩১ সালে কর্দোবা খিলাফতের পতন হলে কিছু সাকালিবা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন তাইফা (রাজ্য) প্রতিষ্ঠা করেছিল। উদাহরণস্বরূপ, মুজাহিদ আল-আমিরি দেনিয়ার সমস্ত সাকালিবাকে সংগঠিত করে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং শহরটি দখল করে সেখানে "দেনিয়ার তাইফা" নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন, যা মায়োর্কা দ্বীপ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। [১৩][১৪]

সাকালিবা দাস ব্যবসা

[সম্পাদনা]

ভলগা বাণিজ্য পথটি ভারাঙ্গীয়রা (ভাইকিংরা) প্রতিষ্ঠা করেছিল, যারা নবম শতাব্দীর শুরুতে উত্তর-পশ্চিম রাশিয়ায় বসতি স্থাপন করেছিল। ভলখভ নদীর লাডোগা হ্রদে প্রবেশের প্রায় ১০ কিলোমিটার দক্ষিণে তারা একটি বসতি স্থাপন করেছিল, যার নাম ছিল লাডোগা (প্রাচীন নর্স: আলদেইগ্যুবোর্গ)। এই পথটি উত্তর ইউরোপ এবং উত্তর-পশ্চিম রাশিয়াকে ভলগা নদীর মাধ্যমে কাস্পিয়ান সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল। রুশরা এই পথ ব্যবহার করে কাস্পিয়ান সাগরের দক্ষিণ উপকূলে অবস্থিত মুসলিম দেশগুলির সাথে বাণিজ্য করত এবং কখনো কখনো বাগদাদ পর্যন্ত পৌঁছে যেত। এই পথটি ডনিয়েপার বাণিজ্য পথের সাথে সমান্তরালে চলত, যা "ভারঙ্গিয়া থেকে গ্রিসমুখী বাণিজ্য পথ" নামে বেশি পরিচিত ছিল। তবে ১১শ শতাব্দীতে এসে এর গুরুত্ব কমে যায়। [১৫]

সাকালিবা শব্দটি মূলত স্লাভ জনগোষ্ঠীকে বোঝাতে ব্যবহৃত হত। তবে পরবর্তীতে শব্দটি মুসলিম অঞ্চলের ( যেমন স্পেন) সকল ইউরোপীয় দাসকে বোঝানোর জন্য ব্যবহৃত হতে শুরু করে; বিশেষ করে স্পেনের খ্রিস্টান রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে বন্দি করা ব্যক্তিদের জন্য। ফ্রাঙ্করা স্লাভিয়া ও আভার খাগানাত থেকে দাস ক্রয় করা শুরু করেছিল; অন্যদিকে মুসলিমরা এই দাসদের সম্পর্কে জানতে পারে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের ভাড়াটে সেনা সদস্য ও খাজারদের মাধ্যমে। অধিকাংশ স্লাভীয় দাস সরাসরি বাণিজ্য পথের বিপরীতে খ্রিস্টান ও মুসলিম রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চলের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্বে প্রবেশ করত এবং সেখানে খোজাকরণ কেন্দ্রও ছিল। সেখান থেকে দাসদের ইসলামি স্পেন; বিশেষ করে উত্তর আফ্রিকায় পাঠানো হতো। সাকালিবারা যোদ্ধা হিসেবে উমাইয়া স্পেনে জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল এবং উমাইয়াদের পতনের পর তারা অনেক তাইফা ( ছোট মুসলিম রাজ্য) শাসন করত। পূর্ব ইউরোপে ইসলামের প্রসার ঘটার পর এই দাস বাণিজ্য হ্রাস পায় এবং একাদশ শতাব্দীর পর সাকালিবা সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তথ্য আর পাওয়া যায় না। [১৬]

মধ্য এশিয়াসুদান অঞ্চলের পাশাপাশি পূর্ব ইউরোপ ছিল দাস আমদানির জন্য সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্য। যদিও দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ থেকে আসা বলকান এবং তুর্কি দাসদেরও উন্নত বাজার মূল্য দেওয়া হত। এই দাস ব্যবসা বেশিরভাগই ইউরোপীয় দাস ব্যবসায়ীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল। মুসলিম ভূখণ্ডে স্লাভীয় দাসদের পাঠানোর জন্য ফ্রান্স এবং ভেনিস ছিল প্রধান বাণিজ্য পথ এবং এটি প্রাগ স্লাভীয় বন্দীদের খোজাকরণেরও একটি প্রধান কেন্দ্র হিসেবে কাজ করত। [১৭][১৮] বারি আমিরাত এই বাণিজ্যের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হিসেবে কাজ করত। [১৯] বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং ভেনিস প্রজাতন্ত্র আরব বণিকদের ইউরোপীয় বন্দর থেকে দাস ক্রয়ে বাধা সৃষ্টি করার কারণে পরবর্তীতে তারা ককেশাস এবং ক্যাস্পিয়ান সাগর থেকে দাস আমদানি শুরু করে। [২০]

সাকালিবাদের মুসলিম রাজ্যগুলিতে নপুংসক এবং উপপত্নী হিসেবেও আমদানি করা হত। [২১] মুসলিম বিশ্বে খোজাদের দাসত্ব ব্যয়বহুল ছিল এবং তাই শাসকরা তাদেরকে উপহার হিসেবে দিত। সাকালিবা খোজারা আগলাবিদের দরবারে জনপ্রিয় ছিল এবং পরবর্তীতে ফাতেমীয়রাও স্পেন ও পর্তুগাল থেকে তাদের আমদানি করেছিলেন। ফাতেমীয়রা সামরিক উদ্দেশ্যে অন্যান্য সাকালিবা দাসদেরও ব্যবহার করত। [২২]

মধ্য এশীয় পথ

[সম্পাদনা]

মুসলিম বিশ্বে দাস ব্যবসার একটি বড় বাজার ছিল, যেখানে ইউরোপ থেকে ধরে আনা দাসদের বিক্রি করা হতো। ইসলামী আইন অনুযায়ী মুসলিমদের জন্যে কোন স্বাধীন মুসলিম বা কাফেরকে (যুদ্ধ ব্যতীত) দাস বানানো নিষিদ্ধ ছিল এবং মুসলিম বিশ্বে দাসত্বমুক্তির প্রথা প্রচলনের কারণে মুসলমানদের দাসের চাহিদা মেটাতে অমুসলিম দাস-দাসীদের আমদানি করা হত। ইউরোপ থেকে আনা এই দাসদের সাকালিবা বলা হত এবং এরা মূলত স্লাভীয়, ফিনীয়বাল্টিক অঞ্চলের অবিশ্বাসী জনগোষ্ঠী ছিল। তবে অনেক ইউরোপীয় খ্রিস্টানও এই দাস ব্যবসার শিকার হতো। সাধারণত এই দাসদের কৃষ্ণ সাগর দাস বাণিজ্য পথ ব্যবহার করে ইসলামী বিশ্বে নিয়ে আসা হতো। [২৩][২৪][২৫]

ভাইকিংরা যখন ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে হামলা চালাত, তখন তারা প্রচুর মানুষকে বন্দি করত। এই বন্দিদের বিক্রির জন্য বিভিন্ন বাণিজ্য রুট ব্যবহার করা হত। ভাইকিংরা ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও ফ্রান্সে হামলা চালিয়ে বন্দি করা মানুষদের ডাবলিনের দাস বাজারে বিক্রি করত। এখান থেকে তাদের মুরি স্পেনে (বর্তমান আন্দালুসিয়া) বিক্রির জন্যে পাঠানো হতো। [২৬] কিছু দাসকে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার হেদেবাই ও ব্রান্নো বন্দর দিয়ে বর্তমান রাশিয়ায় আনা হতো।[২৭] স্ক্যান্ডিনেভিয়া থেকে রাশিয়ার নদীপথ ব্যবহার করে দাসদের নিয়ে যাওয়া হত ভলগা বুলগেরিয়ায়, যেখানে মুসলিম ব্যবসায়ীদের কাছে দাস ও পশম আরবি স্বর্ণের দিরহাম ও রেশমের বিনিময়ে বিক্রি করা হতো। প্রথমদিকে ইউরোপ থেকে আব্বাসীয় খিলাফতের বাজারে দাস পাঠানোর প্রধান পথ ছিল খাজার খানাত [২৮] হয়ে যাওয়া। তবে দশম শতকের শুরু থেকে এই পথটি ভলগা বুলগেরিয়ার মাধ্যমে অতিক্রম করত এবং সেখান থেকে ক্যারাভান বা কাফেলার মাধ্যমে খাওয়ারেজমে পৌঁছাত। এরপর দাসদের তৎকালীন মধ্য এশিয়ার সামানীয় সাম্রাজ্যের দাস বাজারে বিক্রি করা হত এবং শেষ পর্যন্ত ইরানের মাধ্যমে তাদের আব্বাসীয় খিলাফতে পাঠানো হতো। [২৯] কৃষ্ণ সাগরীয় অঞ্চল দিয়ে চলা দাস বাণিজ্যের পাশাপাশি এটি ভাইকিংদের জন্য অন্যতম প্রধান দাস বাণিজ্যের পথ ছিল। [৩০]

মধ্য এশিয়ায় ভাইকিং এবং মুসলমানদের মধ্যে দাস ব্যবসা কমপক্ষে ৭৮৬ থেকে ১০০৯ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত চলেছিল বলে জানা যায়। কারণ এই সালগুলির মধ্যে স্ক্যান্ডিনেভিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে সামানীয় সাম্রাজ্যের প্রচুর রৌপ্যমুদ্রা (দিরহাম) পাওয়া গেছে। ভাইকিংদের দাস ব্যবসা এতটাই লাভজনক ছিল যে, এটি ইউরোপজুড়ে তাদের হামলা চালানোর অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে উঠেছিল। মুসলিম বিশ্বের বাজারের জন্য ইউরোপ থেকে প্রচুর মানুষকে দাস বানিয়ে মধ্য এশিয়া ও আব্বাসীয় খিলাফতে পাঠানো হতো। ভাইকিংদের দাস বাণিজ্য ইউরোপ, রাশিয়া, স্ক্যান্ডিনেভিয়া এবং মধ্য এশিয়ার মুসলিম সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সংযোগ স্থাপন করেছিল। এটি শুধুমাত্র ইসলামী বিশ্বের শ্রমশক্তি সরবরাহ করত না, বরং ভাইকিংদের জন্যও প্রচুর সম্পদ ও ধনসম্পত্তির উৎস ছিল। [২৪]

বলকান দাস ব্যবসা

[সম্পাদনা]

বলকান অঞ্চলের দাস বাণিজ্যের পথ ছিল বালকান থেকে ভেনিশীয় দাস ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এড্রিয়াটিকএজিয়ান সাগর অতিক্রম করে ইসলামী মধ্যপ্রাচ্যে পৌঁছানো। এই বাণিজ্য সপ্তম শতক থেকে শুরু হয়ে ১৫শ শতকে উসমানীয়দের বলকান বিজয়ের আগ পর্যন্ত চলতে থাকে।

৬ষ্ঠ ও ৭ম শতকের আগ পর্যন্ত বলকান বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের অংশ ছিল। তবে এরপর আভার, স্লাভীয় জাতিগোষ্ঠী ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর আক্রমণের ফলে অঞ্চলটি বিভক্ত হয়ে পড়ে। বলকানে বসবাসকারী নতুন জাতিগোষ্ঠীগুলি শুরুতে কোনো কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্র গঠন করতে পারেনি, ফলে সেখানে স্থায়ী রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে এবং যুদ্ধে বন্দি হওয়া মানুষদের মুক্তিপণের বিনিময়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার মত কোনো কেন্দ্রীয় শাসন ব্যবস্থা না থাকায় বন্দিদের দাস হিসেবে বিক্রি করার একটি রীতি গড়ে ওঠে এবং এই বন্দিদের সাধারণত এড্রিয়াটিক উপকূলে অবস্থিত ভেনিস প্রজাতন্ত্রের বণিকদের কাছে বিক্রি করা হতো। পরবর্তীতে এটি একটি বৃহৎ দাস বাণিজ্যে পরিণত হয়, যেখানে ভেনিশীয়রা বলকান অঞ্চল থেকে যুদ্ধবন্দিদের ক্রয় করে বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং ইসলামী মধ্যপ্রাচ্যে বিক্রি করত। এর ফলে ১১শ শতকের মধ্যে ভেনিস একটি প্রধান বাণিজ্যিক সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। [৩১]

ভেনিশীয়রা এড্রিয়াটিক উপকূল থেকে কেনা দাসদের এজিয়ান দ্বীপপুঞ্জের দাস বাজারে নিয়ে যেত। সেখান থেকে তাদের বেশিরভাগকেই মিশরে পাঠানো হতো। [৩১]

প্রাগ দাস ব্যবসা

[সম্পাদনা]

পশ্চিম ইউরোপে একসময় একটি গুরুত্বপূর্ণ দাস ব্যবসার পথ ছিল, যা মধ্য ইউরোপের প্রাগ থেকে ফ্রান্স হয়ে মুসলিম শাসিত স্পেন (আন্দালুস) পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। আন্দালুস শুধু দাসদের গন্তব্যস্থলই ছিল না; বরং এটি সমগ্র মুসলিম বিশ্বের জন্য( বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য) একটি প্রধান দাস বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। নবম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যে বোহেমিয়ার ডাচির রাজধানী প্রাগ ইউরোপীয় দাস ব্যবসার অন্যতম প্রধান কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এই দাস ব্যবসা থেকে প্রাপ্ত আয় বোহেমীয় রাষ্ট্রের অর্থনীতির অন্যতম ভিত্তি হয়ে ওঠে, যা তাদের সেনাবাহিনী গঠনে সহায়তা করেছিল এবং এটি তৎকালীন পূর্ব ইউরোপে নবগঠিত খ্রিস্টান রাষ্ট্রগুলোর জন্য স্বাভাবিক ঘটনা ছিল। [৩২] বোহেমিয়া ছিল একটি ধর্মীয় সীমান্তবর্তী অঞ্চল, যার চারপাশে তখনো খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ না করা স্লাভীয় জনগোষ্ঠী বসবাস করত। বলা হয় যে, মধ্যযুগে ধর্মই নির্ধারণ করত যে, কে দাস হওয়ার যোগ্য; আর কে যোগ্য নয়। খ্রিস্টানরা খ্রিস্টানদের দাস বানানো নিষিদ্ধ করেছিল; অপরদিকে মুসলিমরাও মুসলিমদের দাস বানানো নিষিদ্ধ করেছিল; কিন্তু উভয় ধর্ম পেগান (অখ্যাত ধর্মবিশ্বাসী) ও অমুসলিমদের দাস বানানো বৈধ মনে করত। [৩৩]

নবম ও দশম শতাব্দী জুড়ে পূর্ব ইউরোপের স্লাভীয় জনগোষ্ঠীর অনেকেই তখনো তাদের প্রাচীন ধর্মে বিশ্বাসী ছিল, যারা খ্রিস্টানদের দৃষ্টিতে তাদের "পেগান" ও মুসলমানদের দৃষ্টিতে "কাফির" হিসেবে চিহ্নিত হয়ছিল। ফলে এই জনগোষ্ঠী দাস বানানোর জন্য বৈধ লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছিল এবং বোহেমিয়া যেহেতু পৌত্তলিক অঞ্চলের সীমানা অবস্থিত ছিল, তাই এটি দাস ব্যবসার জন্য সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা উত্তরের পেগান অধ্যুষিত স্লাভীয় ভূমিগুলিতে দাস শিকার অভিযান চালিয়ে দাস সংগ্রহ করত এবং তাদের মুসলিমখ্রিস্টান বাজারে বিক্রি করত।

মধ্যপূর্ব ইউরোপের পেগান স্লাভীয় উপজাতিদের ভূমি বরাবর ঘন ঘন সামরিক অভিযান এবং হামলার মাধ্যমে বেশ কয়েকটি জাতি ও রাজ্য তাদের দাসত্বের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিল। ৯ম শতকে শার্লেমেন ও তার উত্তরসূরীর সামরিক অভিযানের সময় ফ্রাঙ্ক খ্রিস্টানরা দানিউব নদীর ধারে বসবাসকারী পৌত্তলিক স্লাভীয়দের ধরে নিয়ে বিক্রি করে দিয়েছিল এবং দশম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে প্রাগ ফ্রান্স হয়ে আন্দালুসে স্লাভীয় পৌত্তলিকদের দাস ব্যবসার একটি বড় কেন্দ্রে পরিণত হয়। [৩২]

প্রাগ সমগ্র ইউরোপে একটি প্রধান দাস ব্যবসার কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছিল। [৩২] বোহেমিয়ার ডিউকদের সেনাবাহিনী দাস বাজার সরবরাহের জন্য পরবর্তীতে পোল্যান্ড নামে পরিচিত ভূমিতে অভিযান চালিয়ে পূর্ব থেকে পৌত্তলিক স্লাভীয়দের ধরে নিয়ে যায় এবং তারা ডিউকদের জন্য যথেষ্ট লাভ বয়ে আনে। [৩২] দশম শতাব্দীর বেশ কয়েকটি সূত্র উল্লেখ করে যে, ডিউকরা কীভাবে প্রাগের দাস বাজারে সরবরাহে জড়িত ছিল এবং দাসরা সাধারণত দক্ষিণ পোল্যান্ড এবং পশ্চিম ইউক্রেনের সাথে সম্পর্কিত এলাকা থেকে আসত। [৩৪]

পূর্ব রুট দিয়ে ভাইকিংদের হাতে বিক্রিত দাসরা পশ্চিম ইউরোপীয় খ্রিস্টান হতে পারে; কিন্তু প্রাগ-ম্যাগডেবার্গ-ভার্দঁ দাস পথে ভাইকিংদের বিক্রিত দাসরা পৌত্তলিক স্লাভীয় ছিল। খ্রিস্টানদের দাস বানানো নিষিদ্ধ হলেও পেগান স্লাভীয়দের খ্রিস্টানদের জন্য দাস হিসেবে বন্দি করা ও বিক্রি করা আইনত বৈধ ছিল। ক্রেমোনার লিউটপ্র্যান্ডের মতে, এই দাসদের ভার্দেঁর মাধ্যমে আন্দালুসে দাসত্বের জন্য পাচার করা হত। সেখানে তাদের মধ্যে কিছু নির্বাচিত ব্যক্তিকে মুসলিম দাস বাজারে খোজা (নপুংসক) হিসেবে বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে খোজা করা হত। [৩৫]

ঐতিহ্যগতভাবে প্রাগ থেকে দাস ব্যবসায়ীরা দাসদের সংগ্রহ করে আল-আন্দালুসের দাস বাজারে পরিবহন করত বলে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এতে রাধানাইট ইহুদি বণিকদের ব্যাপক আধিপত্য ছিল। [৩৬] যদিও খ্রিস্টানদের অন্য খ্রিস্টানকে দাস করার অনুমতি ছিল না এবং মুসলমানদেরও অন্য মুসলমানকে দাস করার অনুমতি ছিল না, তবে ইহুদি দাস ব্যবসায়ীদের ধর্মীয় সীমানা পেরিয়ে অবাধে চলাফেরা করার এবং খ্রিস্টান বিশ্বে মুসলিম দাস ও মুসলিম বিশ্বে খ্রিস্টান দাস-দাসী সরবরাহ করার সুবিধা ছিল। এছাড়াও তাদের উভয়ের জন্য ইহুদিরা পৌত্তলিক দাসও সরবরাহ করত। [৩৬] খ্রিস্টান ও মুসলিম উভয়েরই খোজাকরণ নিষিদ্ধ ছিল; কিন্তু ইহুদিদের জন্য এমন কোনও নিষেধাজ্ঞা ছিল না এবং এর ফলে তারা মুসলিম বিশ্বে খোজাদের বিশাল চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয়েছিল। [৩৭]

দাসদের প্রাগ থেকে আল-আন্দালুসে ফ্রান্সের মাধ্যমে পরিবহন করা হতো। যদিও গির্জা খ্রিস্টান দাসদের মুসলমানদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে নিরুৎসাহিত করত, তবে পৌত্তলিক (অমুসলিম এবং অখ্রিস্টান) দাসদের মুসলিমদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে তেমন কোন আপত্তি জানানো হতো না। মহান লুইস ইহুদি ব্যবসায়ীদের তার রাজ্যের মধ্য দিয়ে দাস ব্যবসা পরিচালনার অনুমতি দিয়েছিলেন। তবে তার শর্ত ছিল যে বিক্রিত দাসদের অবশ্যই অখ্রিস্টান (অপ্সুদীক্ষা) পৌত্তলিক হতে হবে। [৩৬]

সবচেয়ে লাভজনক দাসবাজার ছিল আন্দালুসের মুসলিম দাসপ্রথা। কর্দোবার আরব খিলাফত মধ্য ও পূর্ব ইউরোপের অরণ্যগুলোকে–যা দাস সরবরাহের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হতো–বিলাদ আস-সাকালিবা বা দাসদের আবাসভূমি নামে অভিহিত করত। [৩৮] প্রাগের দাসবাজার ইউরোপীয় সাকালিবা দাসদের মুসলিম বিশ্বের কাছে বিক্রি করার একটি বিশাল বাণিজ্য নেটওয়ার্কের অংশ ছিল। ইবনে হাওকাল দশম শতাব্দীতে লিখেছিলেন:

[সাকালিবাদের] দেশ দীর্ঘ ও প্রশস্ত... তাদের দেশের অর্ধেক অংশ খোরাসানিদের (খাওয়ারিজম) দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়, যারা সেখান থেকে বন্দি নিয়ে যায় এবং এর উত্তরাংশ আন্দালুসীয়দের দ্বারা আক্রান্ত হয়। তারা গ্যালিসিয়া, ফ্রান্স, লম্বার্ডি এবং ক্যালাব্রিয়া থেকে তাদের কিনে এনে খোজা বানায়। এরপর তারা তাদের মিশরআফ্রিকায় নিয়ে যায়। পৃথিবীর সব সাকালিবা খোজার উৎস আন্দালুসিয়া ... তাদের দেশ সংলগ্ন অঞ্চলে এই খোজাকরণের কাজ সম্পন্ন হয়। এই কাজটি ইহুদি ব্যবসায়ীরা করে। [৩৯]

তৎকালীন মুসলিম রাজ্যগুলিতে দাস বাজারের নির্দিষ্ট প্রয়োজনীয়তা ছিল। নারী দাসীদের উপপত্নী হিসেবে গৃহকর্মী বা যৌন দাসত্বের জন্য ব্যবহার করা হতো। পুরুষ দাসদের দুই কাজের যে কোন একটিতে ব্যবহার করা হত: হয় সামরিক দাসত্বের জন্য অথবা নপুংসক হিসেবে কায়িক পরিশ্রমের জন্য। দ্বিতীয় শ্রেণীর পুরুষ দাসদের বিক্রি করার পূর্বে খোজা করা হতো। ভার্দুনে নপুংসক হিসেবে বিক্রির জন্য নির্বাচিত অনেক পুরুষ দাসকে খোজা করা হত। [৪০] সাকালিবা দাসদের বাজারের প্রকৃতি চিত্র এমন ছিল যে, দাসত্বের সময় বেশিরভাগ সাকালিবা দাসই অপ্রাপ্তবয়স্ক শিশু ছিল। [৪১]

মুর অধ্যুষিত আল-আন্দালুসে ইউরোপীয় সাকালিবা দাসদের তাদের হালকা চুল, ত্বক এবং চোখের রঙের কারণে বিদেশী প্রদর্শনী বস্তু হিসেবে বিবেচনা করা হত। আল-আন্দালুসে শ্বেতাঙ্গ ইউরোপীয় দাসদের বিলাসবহুল পণ্য হিসেবে দেখা হত। সেখানে তাদের ১,০০০ দিনার পর্যন্ত বিক্রি করা যেত, যা ছিল যথেষ্ট বিলাসবহুল মূল্য। [৪১]

দাসদের সবসময় আন্দালুসের বাজারে পাঠানো হত না। ইউরোপের বোহেমিয়ার মতো আন্দালুস মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি ধর্মীয় সীমান্ত রাজ্য ছিল এবং সাকালিবা দাসদের সেখান থেকে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম বিশ্বে রপ্তানি করা হত। [৪২]

দাস ব্যবসার ক্ষেত্রে বোহেমিয়ার ডাচি এবং কর্ডোবার খিলাফত উভয় একে অপরের উপর নির্ভরশীল ছিল। কর্ডোবা খিলাফত তার কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রগঠন এবং তা পরিচালনার জন্য দাস আমলা ও দাস সৈন্যদের উপর নির্ভরশীল ছিল, অন্যদিকে বোহেমিয়ার ডাচির নতুন রাষ্ট্র কর্ডোবা খিলাফতে বন্দীদের দাস হিসেবে বিক্রি করে অর্জিত মুনাফার উপর নিজেদের অর্থনৈতিক ভিত্তি গড়ে তুলেছিল। [৩৪]

দশম শতাব্দীর শেষের দিকে যখন উত্তরের পৌত্তলিক স্লাভীয়রা ধীরে ধীরে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করতে শুরু করে, তখন প্রাগ থেকে ফ্রান্স হয়ে আন্দালুসে সাকালিবা দাস ব্যবসা তার ধর্মীয় বৈধতা হারায় এবং খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণের ফলে তাদের খ্রিস্টীয় বোহেমিয়ার জন্য দাস বানানো এবং মুসলিম শাসিত আন্দালুসে বিক্রি করা নিষিদ্ধ হয়ে যায়। [৩২]

খ্রিস্টীয় ইউরোপ খ্রিস্টান দাসদের বিক্রির অনুমোদন করত না এবং একাদশ শতাব্দীর মধ্যে ইউরোপ প্রায় সম্পূর্ণরূপে খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করলে দ্বাদশ এবং ত্রয়োদশ শতাব্দীতে আল্পসের উত্তরে পশ্চিম ইউরোপে দাসপ্রথা প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।

একাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে কর্দোবা খিলাফত ধীরে ধীরে ভেঙে পড়তে শুরু করে এবং ১০৩১ সালে এটি সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত হয়। এই ঘটনাটি এমন এক সময়ে ঘটে, যখন বোহেমিয়ার ডাচিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলছিল। পাশাপাশি এই অস্থিরতার ফলে বোহেমিয়া ও কর্দোবা খিলাফতের মধ্যে চলমান দাস ব্যবসাও বন্ধ হয়ে যায়। [৩৪]

অন্যান্য দাস বাণিজ্য পথ

[সম্পাদনা]

মধ্যযুগে সারাসেন জলদস্যুরা ফ্রান্স, দক্ষিণ ইতালি, বলিয়ারেস ও সিসিলিতে ঘাঁটি স্থাপন করেছিল, যেখান থেকে তারা খ্রিস্টান অধ্যুষিত ভূমধ্যসাগরের উপকূলে অভিযান চালাত এবং তাদের বন্দীদের দাস হিসেবে মুসলিম মধ্যপ্রাচ্যের দাস বাজারগুলিতে পাঠাত। [৪৩]

ইফ্রিকিয়ার আগলাবিরা নবম শতকের গোড়া থেকে স্পেনের পূর্ব উপকূল এবং দক্ষিণ ইতালির বিরুদ্ধে সারাসেন জলদস্যুদের আক্রমণের একটি প্রধান কেন্দ্র ছিল। তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ শহর ও স্থানে আক্রমণ করেছিল; যেমন: ৮৪৫ সালে রোম, ৮৭৫-৮৭৬ সালে কোমাচিও এবং ৮৮২-৮৩ সালে মন্টে ক্যাসিনো আক্রমণ করেছিল। তারা বারি আমিরাত (৮৪৭-৮৭১), সিসিলি আমিরাত (৮৩১–১০৯১) ও গ্যারিগ্লিয়ানোতে (৮৮২–৯০৬) একটি ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করে, যা পরবর্তীতে দাস ব্যবসার ঘাঁটিতে পরিণত হয়। নবম শতাব্দীতে দক্ষিণ ইতালিতে রোমানবাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের মধ্যে যুদ্ধের সময় সারাসেনরা ৯ম শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে মাগরেবে দাস ব্যবসার জন্য দক্ষিণ ইতালিকে একটি সরবরাহ কেন্দ্রে পরিণত করে। পশ্চিমা সম্রাট দ্বিতীয় লুই বাইজেন্টাইন সম্রাটের কাছে একটি চিঠিতে অভিযোগ করেছিলেন যে, নাপোলির বাইজেন্টাইনরা দক্ষিণ ইতালির দিকে অভিযানে সারাসেনদের নেতৃত্ব দিয়েছিল এবং উত্তর আফ্রিকায় ইতালীয়দের সাথে মিলে তাদের দাস ব্যবসাতে সহায়তা করেছিল, এই অভিযোগ লম্বার্ড ক্রনিকলার এরচেম্পার্টও উল্লেখ করেছেন। [৪৪][৪৫]

আল-আন্দালুসের মুর সারাসেন জলদস্যুরা মার্সেই ও আর্লেস আক্রমণ করে এবং ক্যামার্গ, ফ্রাক্সিনেটাম বা লা গার্দে-ফ্রেইনেত-লেস মাউতেসে (৮৮৮-৯৭২) একটি ঘাঁটি স্থাপন করে এবং সেখান থেকে তারা ফ্রান্সে দাস অভিযান চালাত। তাদের দাস অভিযানের ভয়ে স্থানীয় জনগণ পালিয়ে যায় এবং এর ফলে ফ্রাঙ্কীয়দের পক্ষে তাদের দক্ষিণ উপকূল সুরক্ষিত করা কঠিন হয়ে পড়ে। [৪৪] ফ্রাঙ্কিশের সারাসেনরা দাস হিসেবে বন্দী ফ্রাঙ্কীয় বন্দীদের মুসলিম মধ্যপ্রাচ্যের দাস বাজারে রপ্তানি করে। [৪৬]

৯০৩ সালে সারাসেনরা বালিয়ারেস দখল করে এবং এই ঘাঁটি থেকে খ্রিস্টীয় ভূমধ্যসাগর এবং সিসিলির উপকূলে দাস অভিযান চালায়। [৪৪]

৯৭২ সালে ফ্রান্সে ও ১০৯১ সালে ইতালিতে সারাসেন ঘাঁটি ধ্বংস করা হলেও ভূমধ্যসাগরে কখনো সারাসেন জলদস্যুতা রোধ করা যায়নি। মুরাবিতুন রাজবংশ (১০৪০–১১৪৭) ও মুওয়াহহিদিন রাজবংশ (১১২১–১২৬৯) উভয়ই দাস অভিযানের উদ্দেশ্যে জিব্রাল্টার ও ভূমধ্যসাগরে অমুসলিম জাহাজের উপর সারাসেন জলদস্যুদের দাস অভিযানকে অনুমোদন করেছিল। [৪৭]

সাকলাবীয় রাজবংশ

[সম্পাদনা]
১০১৮ সালে সাকালাবীয় জোটের বিস্তৃতি দেখানো একটি মানচিত্র।

ভ্যালেন্সিয়া

[সম্পাদনা]

নিম্নলিখিত তালিকাটি বোসওয়ার্থ ১৯৯৬, পৃ. ১৯ থেকে নেওয়া হয়েছে।

  • মুহারক ও মুযাফফার: ১০১০/১১–১০১৭/১৮ [৪৮]
    তর্তোসা শাসন: ১০১৭/১৮-১০২০/২১
  • আবদুল আজিজ ইবনে আব্দুর রহমান ইবনে আবি আমির আল-মানসুর, সানচুয়েলোর ছেলে: ১০২০/২১-১০৬০
  • আব্দুল মালিক ইবনে আব্দুল আজিজ নিয়ামুল দাওলা আল-মুযাফফার, পূর্ববর্তীর পুত্র: ১০৬০–১০৬৫
    যুল-নুনীয় রাজবংশের অধীনে: ১০৬৫–১০৭৫
  • আবু বকর ইবনে আব্দুল আজিজ আল-মানসুর, পূর্বসূরীর ভাই: ১০৭৫–১০৮৫
  • উসমান ইবনে আবি বকর আল-কাদী, পূর্বসূরীর পুত্র: ১০৮৫
    যুল-নুনীয় রাজবংশের অধীনে

দেনিয়া

[সম্পাদনা]

নিম্নলিখিত তালিকাটি বোসওয়ার্থ ১৯৯৬, পৃ. ১৭ থেকে নেওয়া হয়েছে, যেখানে তিনি তাদেরকে বনু মুজাহিদ (মুজাহিদের বংশধর) বলেছেন। মুজাহিদ ছিলেন মুহাম্মদ ইবনে আবি আমিরের পরিবারের একজন সদস্য। [৪৮]

  • মুজাহিদ ইবনে আব্দুল্লাহ আল-আমীরি আল-মুওয়াফ্ফাক: ১০১২-১০৪৫ খ্রিস্টাব্দ।
  • আলী ইবনে মুজাহিদ ইকবালুল দাওলা: ১০৪৫-১০৭৬
    হুদীয় রাজবংশের অধীনে

তর্তোসা

[সম্পাদনা]
  • লাবিব আল-ফাতা আল-সাকালাবি (ভ্যালেন্সিয়া, ১০১৭–১০১৯): আনু. ১০০৯–১০৩৯/৪০-এর পূর্বে
  • মুকাতিল সাইফ আল-মিল্লা: ১০৩৯/৪০-এর পূর্বে– ১০৫৩/৪
  • ইয়া'লা: ১০৫৩/৪–১০৫৭/৮
  • নাবিল: ১০৫৭/৮–১০৬০
    • সারাগোসার অধীনে: ১০৬০–১০৮১ অথবা ১০৮২/৩

আলমেরিয়া

[সম্পাদনা]
  • ১০১২ আফলাহ।
  • ১০১৪ খায়রান। কর্ডোবার রাজপ্রাসাদের স্লাভীয় দাস, যিনি আলমেরিয়ার উন্নয়নে তার শাসন উৎসর্গ করেছিলেন।
  • ১০২৮ জুহায়ের; কর্ডোবার একজন প্রাক্তন স্লাভীয় দাস।
  • ১০৩৮ আবু বকর আল-রামিমি।
  • ১০৩৮ আব্দুল আজিজ আল-মনসুর, তিনি ভ্যালেন্সিয়ার রাজা আল-মনসুরের নাতি।

১০৩৮ থেকে ১০৪১ সাল পর্যন্ত আলমেরিয়া ভ্যালেন্সিয়ার তাইফার অন্তর্গত ছিল।

ব্যবহার

[সম্পাদনা]
  • ভূগোলবিদ ইবন খোরদাদবেহ (৮৪০–৮৮০) দাবি করেছিলেন যে, সপ্তম শতকের মাঝামাঝি সময়ের আগে বুলগার শাসকের উপাধি ছিল "সকালিবার রাজা", যার অর্থ হলো শাসক ছিলেন "দাসদের একটি ভাণ্ডারের অধিপতি"। [৪৯]
  • পরিব্রাজক ইবনে ফাদলান (৯২১-২২ খ্রিষ্টাব্দ) ভলগা বুলগেরিয়ার শাসককে "সাকালিবার রাজা" বলে অভিহিত করেছিলেন। [৫০]
  • ভূগোলবিদ আবু জায়েদ আল-বালখি (৮৫০-৯৩৪) সাকালিবার তিনটি প্রধান কেন্দ্র বর্ণনা করেছেন: কুয়াবা, স্লাভিয়া এবং আর্তানিয়া ।
  • ভ্রমণকারী ইব্রাহিম ইবন ইয়াকুব (৯৬১–৯৬২ খ্রি.) সাকালিবা বা স্লাভদের বুলগেরিয়ার পশ্চিমে এবং অন্যান্য স্লাভদের পূর্বে একটি পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী বলে উল্লেখ করেন এবং তাদের সহিংস ও আক্রমণাত্মক হিসেবে বর্ণনা করেন। ধারণা করা হয় যে, এই অঞ্চলটি পশ্চিম বলকানে অবস্থিত ছিল। [৫১]

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. A. P. Vlasto; Vlasto (২ অক্টোবর ১৯৭০)। The Entry of the Slavs Into Christendom: An Introduction to the Medieval History of the Slavs। CUP Archive। পৃষ্ঠা 320। আইএসবিএন 978-0-521-07459-9 
  2. Mishin 1998
  3. Historical Encyclopedia of World Slavery saqaliba&f=false The Historical Encyclopedia of World Slavery: A-K; Vol. II, L-Z, by Junius P. Rodriguez
  4. Sudár Balázs, B. Szabó János. Dentumoger II. - Tanulmányok a korai magyar történelemből – Gyula népe - Madzsgarok a 10. századi muszlim földrajzi irodalomban (2022). ISBN 9789634163039 pp. 136
  5. Al Baladhuri; Futuh Al buldan 
  6. World History Encyclopedia [21 volumes]: [21 volumes] Alfred J. Andrea Ph.D. p. 199
  7. Мишин, Д. Е (২০০২)। Сакалиба (славяне) в исламском мире в раннем средневековье। Институт Востоковедения РАН। আইএসবিএন 5-89282-191-9 
  8. Treadgold, Warren T. (অক্টোবর ১৯৯৭)। A History of the Byzantine State and Society। Stanford University Press। আইএসবিএন 978-0-8047-2630-6 
  9. Lilie, Ralph-Johannes। Prosopographie der mittelbyzantinischen Zeit: 1. Abteilung (641–867), Band 3: Leon (# 4271) – Placentius (# 6265)। Berlin and Boston: De Gruyter.। আইএসবিএন 978-3-11-016673-6 
  10. "دويدار، حسن يوسف. "عناصر السكان في الأندلس". المجتمع الأندلسي في العصر الأموي" (পিডিএফ)web.archive.org। Archived from the original on ২০১৮-০৭-০৫। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২৬ 
  11. "مكونات المجتمع الأندلسي ومكانة أهل الذمة فيه"web.archive.org। ২০১৬-০৩-২৪। ২০১৬-০৩-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-২৬ 
  12. أوليفيا؛ كونستبل (٢٠٠٢). فيصل عبدالله (المحرر) التجارة والتجار في الاندلس. الرياض: مطبعة العبيكان. 
  13. The Historical Encyclopedia of World Slavery: A-K; Vol. II, L-Z, by Junius P. Rodriguez
  14. Lev, Yaacov (১৯৯১)। State and Society in Fatimid Egypt (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। পৃষ্ঠা 74, 77–78। আইএসবিএন 978-90-04-09344-7 
  15. Brøndsted (1965), pp. 64–65
  16. Historical Encyclopedia of World Slavery saqaliba&f=false The Historical Encyclopedia of World Slavery: A-K; Vol.
  17. Charlemagne, Muhammad, and the Arab Roots of Capitalism by Gene W. Heck। Walter de Gruyter। ২০০৯। পৃষ্ঠা 316। আইএসবিএন 978-3-406-58450-3 
  18. Atlas of the Year 1000। Harvard University Press। ২০০৯। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 978-3-406-58450-3 
  19. Packard, Sidney Raymond (১৯৭৩)। 12th century Europe: an interpretive essay। পৃষ্ঠা 62। 
  20. Pargas, Damian Alan; Roşu, Felicia (৭ ডিসেম্বর ২০১৭)। Critical Readings on Global Slavery (4 vols.)। BRILL। পৃষ্ঠা 653, 654। আইএসবিএন 978-90-04-34661-1 
  21. Pulcini, Theodore; Laderman, Gary (১৯৯৮)। Exegesis as Polemical Discourse: Ibn Ḥazm on Jewish and Christian Scriptures (ইংরেজি ভাষায়)। Scholars Press। আইএসবিএন 978-0-7885-0395-5 
  22. Lev, Yaacov (১৯৯১)। State and Society in Fatimid Egypt (ইংরেজি ভাষায়)। BRILL। আইএসবিএন 978-90-04-09344-7 
  23. Korpela, J. (2018). Slaves from the North: Finns and Karelians in the East European Slave Trade, 900–1600. Nederländerna: Brill. p. 33-35 
  24. The slave trade of European women to the Middle East and Asia from antiquity to the ninth century. by Kathryn Ann Hain. Department of History The University of Utah. December 2016. Copyright © Kathryn Ann Hain 2016. All Rights Reserved. 
  25. Slavery in the Black Sea Region, C.900–1900: Forms of Unfreedom at the Intersection Between Christianity and Islam. (2021). Nederländerna: Brill. 3 
  26. "The Slave Market of Dublin"। ২৩ এপ্রিল ২০১৩। 
  27. The New Cambridge Medieval History: Volume 3, C.900-c.1024. (1995). Storbritannien: Cambridge University Press. p. 91 
  28. The World of the Khazars: New Perspectives. Selected Papers from the Jerusalem 1999 International Khazar Colloquium. (2007). Nederländerna: Brill. p. 232 
  29. The New Cambridge Medieval History: Volume 3, C.900-c.1024. (1995). Storbritannien: Cambridge University Press. p. 504 
  30. Pargas & Schiel, Damian A.; Juliane (2023). The Palgrave Handbook of Global Slavery Throughout History. Tyskland: Springer International Publishing. p. 126 
  31. The Cambridge World History of Slavery: Volume 2, AD 500–AD 1420. (2021). (n.p.): Cambridge University Press. 117-120 
  32. World History Encyclopedia [21 volumes]: [21 volumes] Alfred J. Andrea Ph.D. p. 199 
  33. Korpela, J. (2018). Slaves from the North: Finns and Karelians in the East European Slave Trade, 900–1600. Nederländerna: Brill. p. 242 
  34. The Archaeology of Slavery in Early Medieval Northern Europe: The Invisible Commodity. (2021). Schweiz: Springer International Publishing. p. 165 
  35. Herman, A. (2021). The Viking Heart: How Scandinavians Conquered the World. USA: Houghton Mifflin Harcourt. p. 49 
  36. Abrahams, Jewish Life in the Middle Ages, pp. 99-101. 
  37. Korpela, J. (2018). Slaves from the North: Finns and Karelians in the East European Slave Trade, 900–1600. Nederländerna: Brill. p. 92 
  38. Rollason, D. (2018). Early Medieval Europe 300–1050: A Guide for Studying and Teaching. Storbritannien: Taylor & Francis. 
  39. Jankowiak, Marek, Dirhams for Slaves: Investigating the Slavic Slave Trade in the Tenth Century. Oxford University, 2012, 
  40. Korpela, J. (2018). Slaves from the North: Finns and Karelians in the East European Slave Trade, 900–1600. Nederländerna: Brill. p. 36 
  41. The Archaeology of Slavery in Early Medieval Northern Europe: The Invisible Commodity. (2021). Schweiz: Springer International Publishing. p. 166 
  42. Korpela, J. (2018). Slaves from the North: Finns and Karelians in the East European Slave Trade, 900–1600. Nederländerna: Brill. p. 37 
  43. The Cambridge World History of Slavery: Volume 2, AD 500–AD 1420. (2021). (n.p.): Cambridge University Press. p. 34 
  44. The Cambridge Illustrated History of the Middle Ages. (1986). Storbritannien: Cambridge University Press. p. 408 
  45. The Heirs of the Roman West. (2009). Tyskland: De Gruyter. p. 113 
  46. Phillips, W. D. (1985). Slavery from Roman Times to the Early Transatlantic Trade. Storbritannien: Manchester University Press. 
  47. The Cambridge World History of Slavery: Volume 2, AD 500–AD 1420. (2021). (n.p.): Cambridge University Press. p. 37 
  48. Seybold 1960: "the descendants (and clients) of al-Manṣūr ibn Abi ʿĀmir, in the first place his sons ... To the former clients of the house belong Muhārak and Muẓaffar ... and Mudjāhid al-ʿĀmiri"
  49. Abraham Ascher; Tibor Halasi-Kun (১৯৭৯)। The mutual effects of the Islamic and Judeo-Christian worlds: the East European pattern। Brooklyn College Press। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 978-0-930888-00-8 
  50. Michael Friederich (১৯৯৪)। Bamberger Zentralasienstudien। Schwarz। পৃষ্ঠা 236। আইএসবিএন 978-3-87997-235-7 
  51. H. T. Norris (১৯৯৩)। Islam in the Balkans: Religion and Society Between Europe and the Arab World। C. Hurst & Co. Publishers। পৃষ্ঠা 12। আইএসবিএন 978-1-85065-167-3 

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]


উদ্ধৃতি ত্রুটি: "মন্তব্য" নামক গ্রুপের জন্য <ref> ট্যাগ রয়েছে, কিন্তু এর জন্য কোন সঙ্গতিপূর্ণ <references group="মন্তব্য"/> ট্যাগ পাওয়া যায়নি