সাঈদ ইবনে জুবায়ের
সাইদ ইবনে জুবায়র سعيد بن جبير | |
|---|---|
| ব্যক্তিগত তথ্য | |
| জন্ম | খ্রিস্টাব্দ ৬৬৫ (প্রায়) |
| মৃত্যু | খ্রিস্টাব্দ ৭১৪ (প্রায়) |
| ধর্ম | ইসলাম |
| যুগ | উমাইয়া যুগ |
| অঞ্চল | উমাইয়া খিলাফত |
| মুসলিম নেতা | |
যার দ্বারা প্রভাবিত | |
সাঈদ ইবনে জুবায়ের (৬৬৫ – ৭১৪) ( আরবি: سعيد بن جبير ), বা আবু 'আবদুল্লাহ মূলত আধুনিক ইরাকের কুফার বাসিন্দা ছিলেন। তাকে তাবেঈনদের একজন নেতৃস্থানীয় সদস্য হিসেবে গণ্য করা হত (মৃত্যু প্রায় ৭১২)। শিয়া ও সুন্নি ইসলামী ঐতিহ্যের পণ্ডিতদের কাছে সাঈদকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া হয় এবং তৎকালীন নেতৃস্থানীয় আইনজ্ঞদের একজন হিসেবে বিবেচনা করা হত। তিনি ইবনে আব্বাস থেকেও বেশ কয়েকটি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
জীবন
[সম্পাদনা]সাঈদ ইবন জুবাইরের বংশগতি সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের মাঝে ভিন্নমত রয়েছে—কেউ বলেন তিনি আফ্রিকার আবিসিনিয়া (বর্তমান ইথিওপিয়া) থেকে এসেছিলেন। আবার কারও মতে তিনি কুফার বাসিন্দা ছিলেন।[১][২] তিনি পূর্বে একজন দাস ছিলেন। তিনি বনু আসাদ ইবনে খুজাইমাহ গোত্রের বনু ওয়ালিবার মুক্ত ব্যক্তি ছিলেন। ৮২ হিজরিতে (৬৯৯-৭০১) জামাজিমের যুদ্ধে, ইবনে আল-আশ'আত এবং তার অনুসারীরা (যার মধ্যে ১,০০,০০০ মাওলা ছিলেন) উমাইয়া খলিফা আব্দুল মালিকের রাজত্বকালে ইরাকি প্রদেশের গভর্নর আল-হাজ্জাজের (মৃত্যু ৭১৪) সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করেন। বিদ্রোহের নেতৃত্বে ছিল কুরআন তিলাওয়াতকারী একটি বাহিনী।এর নাম ছিল "দস্তায়ে কারি-ই-কুরআন"। এই বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কুমায়ল ইবন জিয়াদ আন-নাখাঈ এবং সাঈদ ইবন জুবাইর। বিদ্রোহটি নির্মমভাবে দমন করা হয় এবং সাঈদকে মক্কার উপকণ্ঠে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়। তিনি প্রতি বছরে দুবার হজ ও ওমরাহ পালনের করতেন এবং জনগণের ধর্মীয় সমস্যা সমাধানে সাহায্য করার জন্য গোপনে কুফায় প্রবেশ করতেন। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি চোখ বেঁধে দাবা খেলার সাথে যুক্ত ছিলেন।[১][২][৩][৪]
ইবনে জুবায়ের এবং আল-হাজ্জাজের মধ্যে সংলাপ
[সম্পাদনা]অবশেষে সাঈদকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং আল-হাজ্জাজের সামনে আনা হয়। তাদের কথোপকথনের একটি প্রতিলিপি থেকে উদ্ধৃতাংশ নিম্নরূপ: সাঈদ ইবনে জুবাইর আল হাজ্জাজের সামনে আসলেন। হাজ্জাজ তার নাম জিজ্ঞাসা করেন (যদিও তিনি তার নামটি ভালো করেই জানতেন):
- সাঈদ: সাঈদ ইবনে জুবাইর।
- আল-হাজ্জাজ: না, তুমি শাকী ইবনে কুসাইর। (আল-হাজ্জাজ এখানে শব্দ নিয়ে খেলছেন: সাঈদ মানে খুশি এবং শাকী মানে অসুখী; জুবাইর মানে ভাঙা হাড় ছিঁড়ে ফেলা এবং কুসাইর মানে ভাঙা।)
- সাঈদ: আমার মা যখন আমার নাম রেখেছিলেন তখন তিনি আরও ভালোভাবে জানতেন।
- আল-হাজ্জাজ: তুমি হতভাগ্য (শাকিতা) এবং তোমার মা হতভাগ্য" (শাকিয়াত)। তারপর তিনি তাকে বললেন: "আল্লাহর কসম, আমি তোমার দুনিয়া আগুনে পরিণত করব।"
- সাঈদ: যদি জানতাম তুমি এটা করতে পারো, তাহলে তোমাকে ঈশ্বর হিসেবে গ্রহণ করতাম।
- আল-হাজ্জাজ: আমার কাছে সোনা এবং সম্পদ আছে।
সাঈদ ইবনে জুবায়েরকে পরীক্ষা করার জন্য সামনে সোনা-রুপার থলে এনে ছড়িয়ে দেওয়া হলো।
- সাঈদ: হে হাজ্জাজ, তুমি যদি এগুলো জড়ো করো দেখানোর জন্য, শোনানোর জন্য, গর্ব করার জন্য, আর আল্লাহর পথ থেকে অন্যদের বিরত করার জন্য, তাহলে আল্লাহর কসম, এটা কোনোভাবেই তাঁর বিরুদ্ধে তোমাকে রক্ষা করতে পারবে না। এই কথা বলে তিনি কিবলার দিকে মুখ ফিরালেন।
- আল-হাজ্জাজ: তাকে ধরে কিবলা ব্যতীত অন্য দিকে ঘুরিয়ে দাও। হে সাঈদ ইবনে জুবাইর, আল্লাহর কসম, আমি তোমাকে এমনভাবে হত্যা করব, যেভাবে আমি আর কাউকে হত্যা করিনি।
- সাঈদ: হে হাজ্জাজ, তুমি যেভাবে ইচ্ছা, আমার মৃত্যু ঠিক সেভাবেই ঠিক করো। আল্লাহর কসম, তুমি আমাকে যেভাবেই হত্যা করো না কেন, আল্লাহ তোমাকেও ঠিক সেভাবেই শাস্তি দেবেন। সুতরাং, নিজের জন্য যা ইচ্ছা, তাই বেছে নাও।
- আল-হাজ্জাজ: তাকে কিবলা ব্যতীত অন্য দিকে ঘুরিয়ে দাও।
- সাঈদ: তুমি যেদিকেই মুখ ফেরাও, সেখানেই আল্লাহর মুখ ।[৫]
- আল-হাজ্জাজ: তাকে মাটির নিচে ফেলে দাও।
- সাঈদ: এ (পৃথিবী) থেকেই আমরা তোমাদের সৃষ্টি করেছি, এবং এতেই তোমাদের ফিরিয়ে দেবো, এবং আবার তা থেকে তোমাদের বের করব ।[৬]
আল-হাজ্জাজ পরাজিত হয়ে সাঈদ ইবনে জুবাইরের শিরশ্ছেদের নির্দেশ দেন। সাঈদ ৪৯ বছর বয়সে ৯৫ হিজরির শা'বান মাসে (প্রায় মে ৭১৪) শহীদ হন। জানা গেছে যে আল-হাজ্জাজ শীঘ্রই তার জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন এবং এক মাসের মধ্যেই মারা যান।
উত্তরাধিকার
[সম্পাদনা]সুন্নি দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]পঞ্চদশ শতাব্দীর শাফিঈ ইসলামী পণ্ডিত ইবনে হাজার আল-আসকালানি লিখেছেন:[৭]
| “ | ...তিনি ইবনে আব্বাস, ইবনে আল-জুবায়র, ইবনে উমর, ইবনে মাকাল, উদায় ইবনে হাতিম, আবু মাসউদ আল-আনসারি, আবু সাঈদ আল-খুদরি, আবু হুরায়রা, আবু মুসা আল-আশআরি, আল-দাহহাক ইবনে কায়স আল-ফিহরি, আনাস, আমর ইবনে মায়মুন, আবু আব্দুর রহমান আল-সুলামি এবং আয়েশা (রা.) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। ইবনে আবি মুগিরা বলেছেন, কুফার লোকেরা যখন ইবনে আব্বাসের কাছে ফতোয়ার জন্য যেত, তিনি বলতেন, “তোমাদের মধ্যে কি সাঈদ ইবনে জুবায়র নেই?”... আমর ইবনে মায়মুন বলেছেন, সাঈদ ইবনে জুবায়র মারা যাওয়ার সময় তার বাবা বলেছিলেন পৃথিবীর প্রত্যেকে তার জ্ঞান থেকে কিছু না কিছু পেয়েছে... আবু আল-কাসিম আল-তাবারি বলেছেন, “তিনি একজন নির্ভরযোগ্য ইমাম এবং মুসলিমদের জন্য হুজ্জাহ।”... ইবনে হিব্বান বলেছেন, “তিনি ছিলেন ফকিহ, ইবাদতগোজার, ধার্মিক এবং পুণ্যবান।” | ” |
তার থেকে ইমাম বুখারী, মুসলিম, আল-তিরমিযী, আল-নাসায়ী, আবু দাউদ, ইবনে মাজা, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল এবং ইমাম মালিক ইবনে আনাস লিপিবদ্ধ করেছেন। সাঈদ সহীহ বুখারীতে ১৪৭টি এবং সহীহ মুসলিমে ৭৮টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। [৮]
শিয়া দৃষ্টিভঙ্গি
[সম্পাদনা]আল-হিল্লির খুলাসাত আল-আকওয়াল এবং মুহাম্মদ ইবনে উমর্রের লেখা আল-কাশশির রিজাল আল -কাশশি অনুসারে তিনি একজন শিয়া মুসলিম ছিলেন। তারা অনেকের মধ্যে উল্লেখ করেছেন যে, সাঈদ ইবনে জুবাইর আলী ইবনে হুসাইন জয়ন আল-আবেদীনের একজন অনুসারী এবং সঙ্গী ছিলেন। উমাইয়াদের বিরুদ্ধে আলীয় বিদ্রোহকে সমর্থন করেছিলেন। এজন্য উমাইয়া গর্ভনর আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ তাকে হত্যা করেন।
আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান সাঈদকে কুরআনের তাফসির সম্পর্কিত একটি বই লিখতে বলেছিলেন। ইবনে আল-নাদিম তার তার “আল-ফিহরিস্ত”-এ শিয়া তাফসিরের অধীনে সাঈদের তাফসিরের উল্লেখ করেছেন। এর আগে অন্য কোনও ব্যাখ্যা উল্লেখ করেননি।
তার সমাধিস্থল ইরাকের ওয়াসিত প্রদেশের আল-হাই শহরে অবস্থিত। ইরাকে, প্রতি বছরের ২৫ রবিউল আউয়াল সাঈদ ইবনে জুবায়েরের শাহাদাত বার্ষিকী হিসেবে স্বীকৃত। এই দিনে লোকেরা তাঁর সমাধিতে সমবেত হয় এবং দিনটিকে সম্মান করে। তাঁর সমাধিস্থল শিয়া মুসলমানদের জন্য একটি তীর্থস্থান।
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 Murray, Harold James Ruthven (1913). A History of Chess. Oxford: Clarendon Press
- 1 2 "A History of Chess"।
- ↑ Eliot Hearst, John Knott Blindfold Chess: History, Psychology, Techniques, Champions, World Records, and Important Games, McFarland, 2008
- ↑ "Blindfold Chess: History, Psychology, Techniques, Champions, World Records, and Important Games"। McFarland & Company। ২০০৯।
- ↑ Qur'an, 2:115
- ↑ Qur'an, 20:55
- ↑ Tahdhib al-Tahdhib Volume 4 No. 14
- ↑ "Sahih Bukhari Volume 007, Book 063, Hadith Number 231."। ২৩ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
গ্রন্থপঞ্জি
[সম্পাদনা]- আল-মুফিদ, কিতাব আল-ইরশাদ, আনসারিয়ান পাবলিকেশন্স।
- আল-কারাশি, বিএস, দ্য লাইফ অফ ইমাম জয়ন এল-আবিদিন, আনসারিয়ান পাবলিকেশন্স, 2000।
- আল-সায়্যিদ, কে., সাইদ বিন জুবায়ের, আনসারিয়ান পাবলিকেশন্স, 1996।
- জাফরি, এসএইচএম, শিয়া ইসলামের উৎপত্তি এবং প্রাথমিক বিকাশ, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ২০০১।
- ম্যাডেলুং, ডব্লিউ., মুহাম্মদের উত্তরাধিকার (প্রাথমিক খিলাফতের একটি অধ্যয়ন), কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, ১৯৯৭।
- ওয়েস্টস্টেইন। JK & de Voogt, AJ, "Dreams in Tabari: Husayn, Jubayr, and those in God's favour in the Umayyad period", Le Muséon: Revue d'études orientales 120:225–29, 2007।
- ওয়েস্টস্টিজন, জোহান, এবং অ্যালেক্স ডি ভোগট, "সাঈদ বি. গুবায়ের: ধর্মপ্রাণ, দাবা এবং বিদ্রোহ", আরবিকা, 49/3 (2002): 383–6।