সময়ের প্রসারণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ভিন্ন ভিন্ন ত্বরণে ঘড়ি কেন ভিন্ন ভিন্ন সময় পরিমাপ করে তা সময়ের প্রসারণ ব্যাখ্যা করে। যেমন, প্রতিবছর আইএসএস এর সময় পৃথিবী থেকে ০.০১৪ সেকেন্ড কমে যায়। পৃথিবীর ব্যাবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে কাজ করতে, জিপিএস স্যাটেলাইটগুলিকে অবশ্যই স্থান-কাল স্থান-কালের বক্রতার জন্য সমন্বয় করতে হয়।[১]

সময়ের প্রসারণ বা টাইম ডাইলেশন হলো দুইটি ঘড়ি, যারা একে অপরের সাথে আপেক্ষিক বেগ সম্পন্ন বা মহাকর্ষীয় বিভব পার্থক্য সম্পন্ন অবস্থানে অবস্থান করছে, তাদের পরিমাপকৃত অতিক্রান্ত সময়ের পার্থক্য। কোনো পর্যবেক্ষক তার নিজের প্রসঙ্গ কাঠামোয় অবস্থিত কোনো ঘড়ির চেয়ে গতিশীল কোনো ঘড়িকে ধীরে চলতে দেখবে। আবার, কোনো বিশাল বস্তুর কাছাকাছি (এবং এর ফলে নিম্ন মহাকর্ষীয় বিভবে অবস্থিত) অবস্থিত কোনো ঘড়ি বস্তুটি থেকে দূরে (এবং এর ফলে উচ্চ মহাকর্ষীয় বিভবে অবস্থিত) অবস্থিত কোনো ঘড়ির চেয়ে ধীরে সময় পরিমাপ করবে।

আপেক্ষিকতা তত্ত্বের এই প্রস্তাবনাকে বহুবার পরীক্ষণের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়েছে। জিপিএস বা গ্যালিলিওর মত স্যাটেলাইট ন্যাভিগেশনের ক্ষেত্রে এই সময় প্রসারণ একটি সমস্যাও বটে।[১][২] সময়ের প্রসারণ বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনিরও বিষয় যেহেতু এটি টেকনিক্যালি সম্মুখমূখি সময় ভ্রমণ সময় ভ্রমণের প্রমাণ দেয়।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

২০ শতকের কাছাকাছি সময়ে বেশ কিছু প্রণেতা লেরেন্টজ গুণক দ্বারা সময় প্রসারণের প্রস্তাবনা করেন।[৪][৫] জোসেফ লারমার (১৮৯৭), অন্তত নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ঘূর্ণয়মান ইলেক্ট্রনের জন্য লেখেন, "...(অবশিষ্ট) ব্যাবস্থার জন্য কম সময়ে স্বতন্ত্র ইলেক্ট্রন সমূহ অনুপাতে তাদের কক্ষপথের অনুরূপ অংশের বর্ণনা দেয়"।[৬] এমিল কোন (১৯০৪) এই সূত্রকে ঘড়ির হারের সাথে বিশেষভাবে সম্পর্কীত করেন।[৭] বিশেষ আপেক্ষিকতার ক্ষেত্রে আলবার্ট আইন্সটাইন (১৯০৫) দেখান যে এই প্রভাব সময়ের প্রকৃতির সাথে সংস্রব রাখে, এবং তিনিই প্রথম এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া বা প্রতিসাম্য দেখান।[৮] পরবর্তীকালে, হারম্যান মিনকৌসকি (১৯০৭) প্রকৃত সময়ের ধারণা সামনে আনেন যা সময়ের প্রসারণের অর্থকে আরো পরিষ্কার করে।[৯]

কাল দীর্ঘায়ন সূত্র প্রতিপাদন[সম্পাদনা]

কাল দীর্ঘায়নের চিত্র
বাম পাশে: আয়নার সাপেক্ষে স্থির দর্শক আলোকে t সময়ে 2L দূরত্ব অতিক্রম করতে দেখবেন। ডান পাশেঃ আয়নার সাপেক্ষে গতিশীল দর্শক আলোকে t' সময়ে 2D দূরত্ব অতিক্রম করতে দেখবেন।

ধরি,

একটি স্থির আয়না থেকে আলো যাত্রা শুরু করে L দূরত্ব অতিক্রম করে আরেকটি আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে আবার প্রথম আয়নায় ফিরে আসে। আয়নাটি যদি অন্য কোন এক দর্শকের সাপেক্ষে v সুষম বেগে গতিশীল হয় তবে আয়নাটি যার সাপেক্ষে গতিশীল তিনি দেখবেন আলো t'/2 সময়ে তীর্যকভাবে D দূরত্ব অতিক্রম করে আবার একই সময়ে প্রথম আয়নায় ফিরে যায়। কারণ আয়নাটি তার সাপেক্ষে গতিশীিল।

এখানে, পিথাগোরাসের উপপাদ্য অনুযায়ী,

আইনস্টাইনের বিশেষ আপেক্ষিকতার প্রথম স্বীকার্য অনুযায়ী যেকোন জড় প্রসঙ্গ কাঠামোতে আলোর বেগ = c


তাই প্রথম দর্শকের সাপেক্ষে, ..............................(1)

আবার দ্বিতীয় দর্শকের সাপেক্ষে, ....................(2)


(1)ও(2)হতে পাই,

বা,

বা,

বা, ( কারণ, )

বা,

বা,

বা,

বা,

বা,


এটিই বিশেষ আপেক্ষিকতার ২য় স্বীকার্য হতে কাল দীর্ঘায়নের সূত্রের প্রতিপাদন।


এখানে,

t = কোন কিছু (আয়না) যার সাপেক্ষে স্থির তার সাপেক্ষে তার সময়

t' = উক্ত বস্তু যার সাপেক্ষে গতিশীল তার সাপেক্ষে সময়

c = শূন্য মাধ্যমে আলোর বেগ

v = বস্তুর গতিবেগ

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ashby, Neil (২০০৩)। "Relativity in the Global Positioning System" (পিডিএফ)Living Reviews in Relativity6 (1): 16। ডিওআই:10.12942/lrr-2003-1পিএমআইডি 28163638পিএমসি 5253894অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:2003LRR.....6....1A 
  2. Lu, Ed। "Expedition 7: Relativity"Ed's Musing from SpaceNASA। ২০১৬-০১-১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৪-০৮ 
  3. "Is time travel possible?"NASA Space Place। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০৮-০৩ 
  4. Miller, Arthur I. (১৯৮১)। Albert Einstein's Special Theory of Relativity: Emergence (1905) and Early Interpretation (1905–1911)বিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Reading, Massachusetts: Addison–Wesley। আইএসবিএন 978-0-201-04679-3 .
  5. Darrigol, Olivier (২০০৫)। The Genesis of the Theory of Relativity (পিডিএফ)Séminaire Poincaré1। পৃষ্ঠা 1–22। আইএসবিএন 978-3-7643-7435-8ডিওআই:10.1007/3-7643-7436-5_1 
  6. Larmor, Joseph (১৮৯৭)। "On a Dynamical Theory of the Electric and Luminiferous Medium, Part 3, Relations with Material Media"। Philosophical Transactions of the Royal Society190: 205–300। ডিওআই:10.1098/rsta.1897.0020অবাধে প্রবেশযোগ্যবিবকোড:1897RSPTA.190..205L 
  7. Cohn, Emil (১৯০৪), "Zur Elektrodynamik bewegter Systeme II" [On the Electrodynamics of Moving Systems II], Sitzungsberichte der Königlich Preussischen Akademie der Wissenschaften, 1904/2 (43): 1404–1416 
  8. Einstein, Albert (১৯০৫)। "Zur Elektrodynamik bewegter Körper"Annalen der Physik322 (10): 891–921। ডিওআই:10.1002/andp.19053221004বিবকোড:1905AnP...322..891E . See also: English translation.
  9. Minkowski, Hermann (১৯০৮) [1907], "Die Grundgleichungen für die elektromagnetischen Vorgänge in bewegten Körpern" [The Fundamental Equations for Electromagnetic Processes in Moving Bodies], Nachrichten von der Gesellschaft der Wissenschaften zu Göttingen, Mathematisch-Physikalische Klasse: 53–111 

আরো পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]