সফদরজঙ্গের সমাধি
সফদরজঙ্গের সমাধি, দিল্লি | |
---|---|
![]() সামনের দৃশ্য, সেপ্টেম্বর ২০১২ | |
লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 480 নং লাইনে: নির্দিষ্ট অবস্থান মানচিত্রের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়নি। "মডিউল:অবস্থান মানচিত্র/উপাত্ত/ভারত নয়া দিল্লি" বা "টেমপ্লেট:অবস্থান মানচিত্র ভারত নয়া দিল্লি" দুটির একটিও বিদ্যমান নয়। | |
সাধারণ তথ্যাবলী | |
ধরন | সমাধিসৌধ |
স্থাপত্যশৈলী | মুঘল স্থাপত্য, ইন্দো-ইসলামিক স্থাপত্য |
অবস্থান | নয়া দিল্লি, ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৮°৩৫′২১″ উত্তর ৭৭°১২′৩৮″ পূর্ব / ২৮.৫৮৯২৬৬° উত্তর ৭৭.২১০৫০৬° পূর্ব |
সম্পূর্ণ | ১৭৫৪ |
সফদরজঙ্গের সমাধি হল ভারতের দিল্লিতে অবস্থিত একটি বেলেপাথর ও মার্বেলে নির্মিত মুঘল স্থাপত্যের নিদর্শন। ১৭৫৪ সালে আওধের নবাব সফদরজঙ্গের জন্য এই সমাধিসৌধটি নির্মিত হয়। লাল, বাদামি ও সাদা রঙের গম্বুজ ও খিলানযুক্ত এই স্থাপনাটি প্রশস্ত ও রাজকীয় উপস্থিতির জন্য পরিচিত। সফদরজঙ্গ ১৭৪৮ সালে আহমদ শাহ বাহাদুরের সিংহাসন আরোহণের পর মুঘল সাম্রাজ্যের প্রধানমন্ত্রী (ওয়াজির-উল-মামালিক-ই-হিন্দুস্তান) নিযুক্ত হন।
এই সমাধিসৌধটি একটি বাগানের মাঝে অবস্থিত এবং মুঘল সম্রাটদের সমাধিসৌধের স্থাপত্যরীতি অনুসারে নির্মিত, বিশেষত তাজমহলের আদলে। ভেতরে গম্বুজের নিচে প্রধান কক্ষকে ঘিরে আটটি কক্ষ (হাশত বিহিশ্ত) এবং বাইরে চারভাগে বিভক্ত বাগান রয়েছে। এটি মুঘল রাজপরিবারের বাইরে কোনো ব্যক্তির দ্বারা নির্মিত প্রথম সমাধি ও বাগান কমপ্লেক্স, যা সেই সময়ে সম্রাটদের ক্ষমতা হ্রাসের প্রতিফলন।[১]
ভূগোল
[সম্পাদনা]সমাধিসৌধটি লোদি রোড ও অরবিন্দো মার্গ (পূর্বতন নাম মেহরাউলি রোড) এর টি-জাংশনের কাছে সফদরজঙ্গ বিমানবন্দরের নিকট নয়া দিল্লিতে অবস্থিত।[২]
পটভূমি
[সম্পাদনা]
এই স্থাপনাটি ১৭৫৪ সালে মুঘল স্থাপত্যের শেষ পর্যায়ের শৈলীতে নির্মিত হয়।
মির্জা মুকিম আবুল মনসুর খান নামে জন্মগ্রহণকারী সফদরজঙ্গ ছিলেন আওধের দ্বিতীয় নবাব এবং মুঘল সাম্রাজ্যের পতনকালীন সময়ের অন্যতম প্রভাবশালী অভিজাত ব্যক্তি। ১৭৪৮ সালে সম্রাট মুহাম্মদ শাহের মৃত্যুর পর তিনি দিল্লিতে চলে আসেন। নতুন মুঘল সম্রাট আহমদ শাহ বাহাদুরের শাসনামলে সফদরজঙ্গকে ভাজির-উল-মামালিক-ই-হিন্দুস্তান (হিন্দুস্তানের প্রধানমন্ত্রী) উপাধি সহ প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করা হয়, যখন মুঘল সাম্রাজ্যের প্রভাব উত্তর ভারতের কিছু অংশে সীমিত হয়ে পড়ে।[৩]
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সফদরজঙ্গ কার্যকরভাবে ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী হন এবং সম্রাটকে একটি প্রতীকী পদে পরিণত করেন। তবে তাঁর আধিপত্য ও কর্তৃত্ববাদী নীতির কারণে ইমাদ-উল-মুলক ও নজিব-উদ-দৌলার নেতৃত্বে বিরোধী গোষ্ঠীর তীব্র প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। সাধারণ ধারণার বিপরীতে, মারাঠারা সরাসরি তাঁর পতনে জড়িত ছিল না। একাধিক যুদ্ধের পর ১৭৫৩ সালে বিরোধীদের চাপে তিনি দিল্লি ত্যাগ করে আওধে ফিরে যান এবং ১৭৫৪ সালে মৃত্যুবরণ করেন।[৪]
তাঁর মৃত্যুর পর পুত্র শুজা-উদ-দৌলা মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে দিল্লিতে পিতার সমাধি নির্মাণের অনুমতি লাভ করেন। আবিসিনীয় স্থপতি বিলাল মুহাম্মদ খানের নকশায় প্রায় তিন লক্ষ রুপি ব্যয়ে নির্মিত এই সমাধিসৌধটি মুঘল স্থাপত্যের শেষযুগের একটি উল্লেখযোগ্য নিদর্শন।[৫]
এই সমাধিসৌধের দক্ষিণে অবস্থিত ঐতিহাসিক যুদ্ধক্ষেত্রটি ১৩৮৬ সালে মঙ্গোলের তৈমুর ও তুঘলুক রাজবংশের সুলতান মাহমুদ খানের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল, যেখানে পরবর্তীজন পরাজিত হন।
স্থাপত্য
[সম্পাদনা]

হুমায়ুনের সমাধি ও তাজমহলের অনুরূপ একটি বাগানবেষ্টিত সমাধিসৌধ হিসেবে সফদরজঙ্গের সমাধি পরিকল্পিত। এটি মুঘল সাম্রাজ্যের শেষ দিকের স্মৃতিসৌধগুলোর মধ্যে একটি।[৬] প্রধান প্রবেশদ্বারটি দ্বিতলবিশিষ্ট এবং প্লাস্টার করা পৃষ্ঠতলে জটিল নকশা রয়েছে। ভেতরে কেন্দ্রীয় কক্ষে সফদরজঙ্গ ও তাঁর স্ত্রীর সমাধি অবস্থিত।
স্থাপত্য বিশেষজ্ঞদের মতে, তাজমহলের সাথে সাদৃশ্য থাকলেও এখানে আনুপাতিক ভারসাম্যের অভাব ও নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের সমালোচনা করা হয়।এএসআই-এর মতে, মিনারগুলোর সজ্জায় ব্যবহৃত মার্বেল "বেশি অলংকৃত"।[৭]
বাগান
[সম্পাদনা]
প্রায় ২৮০ মিটার দীর্ঘ প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত এই বাগানটি মুঘল চারবাগ শৈলীতে তৈরি। বাগানের মাঝে সমাধিসৌধটি ৫০ মিটার বর্গাকার ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। উত্তর, পশ্চিম ও দক্ষিণে অবস্থিত প্রাসাদগুলোর নাম যথাক্রমে জঙ্গলী মহল, মোতি মহল ও বাদশাহ পসন্দ। বর্তমানে এই স্থাপনাগুলোতে এএসআই-এর অফিস ও গ্রন্থাগার রয়েছে।
সম্প্রতিক ঘটনাবলি
[সম্পাদনা]২০১২ সালে তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী গুলাম নবি আজাদ এখানে ঈদের নামাজ আদায় করলে এএসআই-এর নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠে। ২০১৩ সালে এখানকার ফোয়ারা পুনরায় চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ২০১৪ সালে এএসআই তাদের অফিস স্থানান্তর করে এবং নতুন তথ্যবোর্ড স্থাপন করা হয়। ২০১৩ সালের হলিউড চলচ্চিত্র জবস-এর কিছু দৃশ্য এখানে ধারণ করা হয়।
গ্যালারি
[সম্পাদনা]-
ত্রিভুজাকার দৃশ্য
-
প্রবেশপথ থেকে দৃশ্য
-
অষ্টভুজাকার সীমানা
-
মিনার
-
সিলিংয়ের শিল্পকর্ম
-
সফদরজঙ্গের সমাধি
-
প্রধান প্রবেশদ্বার
-
খিলান
-
বাগান
-
সিলিংয়ের বিস্তারিত নকশা
-
প্রধান গেট
-
প্রতিবিম্ব
-
মসজিদ
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Dadlani, Chanchal, in Histories of Ornament: From Global to Local, ed. Michele Bacci, p. 179-180, 2016, Princeton University Press, ISBN 9780691167282, গুগল বই
- ↑ Batra 2012, পৃ. 12।
- ↑ Siddiqi, Zameeruddin (১৯৬৭)। "The Wizarat of Safdar Jang"। Proceedings of the Indian History Congress। 29: 190–204। আইএসএসএন 2249-1937।
- ↑ Sarkar, Jadunath (১৯৬৪)। Fall Of The Mughal Empire Vol. 1।
- ↑ "Archnet > Site > Mausoleum of Safdar Jang"। www.archnet.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২৫-০২-০৯।
- ↑ Raezer ও Raezer 2011, পৃ. 44।
- ↑ Batra 2012, পৃ. 13।