দ্বীপ (পৌরাণিক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(সপ্তদ্বীপ থেকে পুনর্নির্দেশিত)

দ্বীপ (সংস্কৃত: द्वीप, দ্বীপ)[১][২] হিন্দু সৃষ্টিতত্ত্বে একটি শব্দ। পুরাণ পৃথিবী সাতটি দ্বীপে বিভক্ত বলে বর্ণনা করে।[৩] এই দ্বীপসমূহ পৃথিবীতে বিদ্যমান, প্রতিটি দ্বীপ একটি সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত৷[৪][৫] দ্বীপ পরিভাষাটি মহাজগতের সাতটি স্থানকে বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়।[৬]

হিন্দুধর্মের ভূ-কেন্দ্রিক নকশায় , সাতটি দ্বীপ মেরু পর্বত এর চারদিক ঘিরে বিদ্যমান। মেরু পর্বত জম্বুদ্বীপ এর কেন্দ্রে অবস্থিত।[৭] দ্বীপ শব্দটি কখনও কখনও দেবতাদের আবাস বোঝাতেও ব্যবহৃত হয়, যেমন মণিদ্বীপ[৮]

বুৎপত্তি[সম্পাদনা]

দ্বীপ শব্দটি সংস্কৃত শব্দ দ্বি (দুই) এবং অপ্ (জল) দ্বারা গঠিত হয়েছে। যার অর্থ [৯] অর্থ "দুই দিকে জল দ্বারা পরিবেষ্টিত কোনো স্থান"।[১০][১১]

বিবরণ[সম্পাদনা]

মৎস্য পুরাণ এবং ভাগবত পুরাণ অনুসারে, পৃথিবী সাতটি দ্বীপে বিভক্ত, যাকে সপ্ত-দ্বিপ (সাতটি দ্বীপ) বলা হয়। [১২] মহাভারত অনুসারে দ্বীপগুলির নাম হলো :[১৩]

দ্বীপগুলির নাম সমুদ্র দ্বীপগুলির নামের অর্থ
জম্বু লবণোদ জাম
প্লক্ষ আখের রস/ইক্ষুরস অশ্বত্থ
শাল্মলী সুরোদ শিমুল
কুশ ঘৃত কুশ
ক্রৌঞ্চ ক্ষীরোদ ক্রৌঞ্চ পর্বত
শাক দধি সেগুন
পুষ্কর জল পদ্ম

ব্রিটিশ পণ্ডিত বেঞ্জামিন ওয়াকার সপ্তদ্বীপের নিম্নোক্ত বিবরণ প্রদান করেছেন: [১৪] মহাকাশীয় অঞ্চলগুলির নীচে, এই সাতটি কেন্দ্রীভূত বলয়াকার দ্বীপ দ্বারা পৃথিবী সাজানো হয়েছে।

  • জম্বুদ্বীপ এই দ্বীপ মহাদেশগুলির মধ্যে সবচেয়ে অভ্যন্তরীণ কেন্দ্র, যা একটি চাকতির মতো আকৃতির। পৃথিবী শেষনাগ নামক মহাজাগতিক সর্পের(কখনো কখনো কূর্মও বলা হয়) উপর রয়েছে। অষ্টদিগজগণ এই ব্রহ্মাণ্ডের আবরণে স্থাপিত হয়েছেন।
  • প্লক্ষ হল বলয়াকৃতি দ্বিতীয় দ্বীপ, যা আখের রসের সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।
  • শাল্মল হল বলয়-আকৃতি তৃতীয় দ্বীপ, যা মদের সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।
  • কুশ হল বলউ-আকৃতির চতুর্থ দ্বীপ। এটি পরিষ্কার মাখনের (ঘি) সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।
  • ক্রৌঞ্চ হল বলয়-আকৃতির পঞ্চম দ্বীপ বা মহাদেশ, যা দইয়ের সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।
  • শাক বা শ্বেত হল বলয়াকৃতির মহাদেশগুলির মধ্যে ষষ্ঠতম, যার তীরগুলি দুধের সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।
  • পুষ্কর হল বলয়-আকৃতির সপ্তম মহাদেশ, যা মিঠা পানির বিশাল বৃত্তাকার সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত।

সবচেয়ে বাইরের সমুদ্রের সীমানায় লোকালোক নামে একটি ভূমি আছে, যা অন্ধকারের জগত থেকে পরিচিত পৃথিবীকে আলাদা করে। এই রাজ্যে দশ হাজার যোজন উঁচু পর্বতমালা রয়েছে। ব্রহ্মাণ্ড নামে পরিচিত মহাজাগতিক অণ্ড এই অন্ধকারের ওপারে, সমস্ত সৃষ্টিকে জড়িয়ে ধরেছে।

সাহিত্য[সম্পাদনা]

ব্রহ্ম পুরাণ[সম্পাদনা]

ব্রহ্মপুরাণ সপ্ত-দ্বিপকে নিম্নোক্তভাবে বর্ণনা করে:[১৫]

হে ব্রাহ্মণগণ, এই পৃথিবীতে সাতটি দ্বীপ আছে। যেগুলি হলো- জম্বু, প্লক্ষ, শাল্মলী, কুশ, ক্রৌঞ্চ, শাক এবং পুষ্কর। এগুলো সপ্ত সমুদ্র যথা লোনা সাগর, আখের রসের সমুদ্র, সুরা, ঘি, দই, দুধ ও মিষ্টি জল দ্বারা বেষ্টিত। জম্বুদ্বীপ মাঝখানে অবস্থিত। হে নেতৃস্থানীয় ব্রাহ্মণগণ,এর কেন্দ্রে সুবর্ণময় মেরু পর্বত অবস্থিত।

— অধ্যায় ১৬

চৈতন্য চরিতামৃত[সম্পাদনা]

বাংলা পাঠ্য চৈতন্য চরিতামৃত দ্বীপ শব্দটিকে নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে বর্ণনা করে:[১৬]

"গ্রহগুলি" কে বলা হয় দ্বীপ
বাইরের মহাকাশ বাতাসের সমুদ্রের মতো।
জলাবদ্ধ সাগরে যেমন দ্বীপ আছে,
মহাকাশরূপ মহাসাগরের এই গ্রহগুলিকে বলা হয় দ্বীপ বা মহাকাশের দ্বীপ।
— চৈতন্য চরিতামৃত মধ্য ২০/২১৮, তাৎপর্য

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sears, M.; Merriman, D. (২০১২-১২-০৬)। Oceanography: The Past: Proceedings of the Third International Congress on the History of Oceanography, held September 22-26, 1980 at the Woods Hole Oceanographic Institution, Woods Hole, Massachusetts, USA on the occasion of the Fiftieth Anniversary of the founding of the Institution (ইংরেজি ভাষায়)। Springer Science & Business Media। পৃষ্ঠা 782। আইএসবিএন 978-1-4613-8090-0 
  2. Hazra, Rajendra Chandra (১৯৭৫)। Studies in the Purāṇic Records on Hindu Rites and Customs (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishe। পৃষ্ঠা 81। আইএসবিএন 978-81-208-0422-7 
  3. Shastri, J. L. (২০১৪-০১-০১)। The Siva Purana Part 3: Ancient Indian Tradition and Mythology Volume 3 (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass। পৃষ্ঠা 1151। আইএসবিএন 978-81-208-3870-3 
  4. Warrier, Shrikala (ডিসেম্বর ২০১৪)। Kamandalu: The Seven Sacred Rivers of Hinduism (ইংরেজি ভাষায়)। MAYUR University। পৃষ্ঠা 18। আইএসবিএন 978-0-9535679-7-3 
  5. Schnepel, Burkhard; Alpers, Edward A. (২০১৭-১০-৩০)। Connectivity in Motion: Island Hubs in the Indian Ocean World (ইংরেজি ভাষায়)। Springer। পৃষ্ঠা 352। আইএসবিএন 978-3-319-59725-6 
  6. Taylor, W. Munro (১৮৭০)। A Hand-book of Hindu Mythology and Philosophy: With Some Biographical Notices (ইংরেজি ভাষায়)। Higginbotham and Company। পৃষ্ঠা 76। 
  7. Ray, Himanshu Prabha (২০২০-১১-১৮)। The Archaeology of Knowledge Traditions of the Indian Ocean World (ইংরেজি ভাষায়)। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 53। আইএসবিএন 978-1-000-22067-4 
  8. Campbell, Joseph (২০২০-১১-০৬)। The Hero with a Thousand Faces (ইংরেজি ভাষায়)। Joseph Campbell Foundation। পৃষ্ঠা 145। আইএসবিএন 978-1-61178-032-1 
  9. Suarez, Thomas (২০১২-০৮-০৭)। Early Mapping of Southeast Asia: The Epic Story of Seafarers, Adventurers, and Cartographers Who First Mapped the Regions Between China and India (ইংরেজি ভাষায়)। Tuttle Publishing। পৃষ্ঠা 33। আইএসবিএন 978-1-4629-0696-3 
  10. Thompson, Richard L. (২০০৭)। The Cosmology of the Bhāgavata Purāṇa: Mysteries of the Sacred Universe (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publishe। পৃষ্ঠা 20। আইএসবিএন 978-81-208-1919-1 
  11. Vaan, Michiel de. 2008. Etymological dictionary of Latin and the other Italic languages. Leiden: Brill. p.19.
  12. Klostermaier, Klaus K. (১৯৯৪-০৮-৩০)। A Survey of Hinduism: Second Edition (ইংরেজি ভাষায়)। State University of New York Press। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 978-1-4384-0933-7 
  13. Mahabharata 6.604
  14. Walker, Benjamin (২০১৯-০৪-০৯)। Hindu World: An Encyclopedic Survey of Hinduism. In Two Volumes. Volume I A-L (ইংরেজি ভাষায়)। Routledge। পৃষ্ঠা 254। আইএসবিএন 978-0-429-62465-0 
  15. www.wisdomlib.org (২০১৮-০৩-১৭)। "Seven Continents (sapta-dvīpa) [Chapter 16]"www.wisdomlib.org (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-১০-১৮ 
  16. Thompson, Richard L. (২০০৪)। Vedic Cosmography and Astronomy (ইংরেজি ভাষায়)। Motilal Banarsidass Publ.। পৃষ্ঠা 72। আইএসবিএন 978-81-208-1954-2