সঞ্চয়পত্র (বাংলাদেশ)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

সঞ্চয়পত্র: বাংলাদেশ জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীনে জনগণকে সঞ্চয়ী হতে উদ্বুদ্ধ করা ও বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সঞ্চয় জাতীয় সঞ্চয় স্কীমের মাধ্যমে আহরণ করার উদ্দেশ্যে এবং সাধারণের নির্ঝঞ্ঝাট অর্থ বিনিয়োগের পথ প্রশস্থ করার অন্য নাম সঞ্চয়পত্র।
বৃহত্তর দৃষ্টিকোণে, সাধারণ মানুষের হাতে জমানো টাকা লম্বা সময়ের জন্যে ফেলে না রেখে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগে মুনাফা লাভ, দেশের বিশেষ বিশেষ জনগোষ্ঠী যেমন- মহিলা, অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী, বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক, প্রবাসী বাংলাদেশী এবং শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আসার সুযোগ এবং সরকারের সঞ্চয় স্কীমের মাধ্যমে আহরিত অর্থ দ্বারা জাতীয় বাজেট ঘাটতি পূরণ করার সুযোগ।
বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় ব্যুরো, বাণিজ্যিক ব্যাংক ও ডাকঘর থেকে সব সঞ্চয়পত্র কেনা ও নগদায়ন করা যায়। [১][২]

কেন সঞ্চয়পত্র[সম্পাদনা]

  • অর্থ বিনিয়োগের নির্ঝঞ্ঝাট ও ঝুঁকিমুক্ত।
  • মেয়াদ শেষে এগুলো থেকে ভালো অঙ্কের মুনাফা পাওয়া যায়।
  • মুনাফার হার এফডিআরের সুদ থেকেও বেশি।
  • জরুরি প্রয়োজনে মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেও ভাঙানো যায় (সে ক্ষেত্রে মুনাফার হার কিছুটা কম হয় তবে যেকোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে বেশি)।

সঞ্চয়পত্রসমূহ[সম্পাদনা]

বর্তমানে বাংলাদেশে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র প্রচলিত আছে।

  1. ৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র
  2. ৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র
  3. পরিবার সঞ্চয়পত্র, ও
  4. পেনশনার সঞ্চয়পত্র। [৩]

বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র (৫-বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র)[সম্পাদনা]

  • পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র; মুনাফার হার মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
  • এটি দেশের সবচেয়ে পুরোনো সঞ্চয়পত্র, চালু হয় ১৯৭৭ সালে। দেশের যে কোনো নাগরিক এটা কিনতে পারেন।
  • বাজারে ১০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকা; ১০০০, ৫০০০, ১০০০০, ২৫০০০ ও ৫০০০০ টাকা এবং ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়।
  • ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ ও যৌথ নামে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। তবে প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোনো সীমা নির্ধারিত নেই। [৪]

মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র (৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র)[সম্পাদনা]

  • তিন বছর মেয়াদি ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র। মুনাফার হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ।
  • চালু হয় ১৯৯৮ সালে। পাওয়া যায় ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানে। বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের মতো এটিও সবাই কিনতে পারেন।
  • এই সঞ্চয়পত্র একক নামে ৩০ লাখ টাকা ও যৌথ নামে সর্বোচ্চ ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়। [৪]

পরিবার সঞ্চয়পত্র[সম্পাদনা]

  • পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র; মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ মুনাফা পাওয়া যায়।
  • সঞ্চয়পত্রটি বিক্রি হয় ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানে।
  • ২০০৯ সালে চালু হওয়া এ সঞ্চয়পত্র থেকে মাসিক মুনাফা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
  • তবে সবাই এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। কেবল ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী যে কোনো বয়সী নারী-পুরুষ এবং ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নারী ও পুরুষরা এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। [৪]

পেনশনার সঞ্চয়পত্র[সম্পাদনা]

  • পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র, মেয়াদ শেষে মুনাফার হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
  • এই শ্রেণিতে ৫০ হাজার, ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্র রয়েছে।
  • ২০০৪ সালে চালু হওয়া এ সঞ্চয়পত্র থেকে তিন মাস পরপরও মুনাফা তোলা যায়।
  • অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরাই শুধু এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।

এছাড়া ডাকঘর সঞ্চয়পত্র নামে আরও একটি সঞ্চয়পত্র স্কীম রয়েছে যা শুধুমাত্র ডাকঘর থেকে লেনদেন করা হয়।

  • তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
  • ডাকঘর থেকে এ সঞ্চয়পত্র কেনা ও নগদায়ন করা যায়। যে কেউ এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। [৪]

কারা কিনতে পারেন[সম্পাদনা]

  • ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রঃ নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী যে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক একক বা যৌথ নামে সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন ।
  • পরিবার সঞ্চয়পত্রঃ কিনতে পারেন নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী (পুরুষ ও নারী), ৬৫ বছর ও তদুর্ধ্ব বয়সের যে কোনো নাগরিক একক নামে কিনতে পারেন।
  • পেনশনার সঞ্চয়পত্রঃ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা এলপিআরে থাকা অবস্থায় প্রাপ্ত প্রভিডেন্ট ফান্ড ও চূড়ান্ত অবসর নেওয়ার পর আনুতোষিকের টাকা দিয়ে পেনশনার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। পারিবারিক পেনশনের আওতায় তাদের স্বামী/স্ত্রী/সন্তান এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
  • কোনো প্রতিষ্ঠান সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে না। তবে কমকর্তা-কর্মচারীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ এবং কৃষিভিত্তিক শিল্পের আয়ের ১০ শতাংশ অর্থ দিয়ে শুধু ৫ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। যে কোনো সঞ্চয়পত্র নাবালকের পক্ষে কিংবা যুগ্ম নামে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক ব্যক্তি কিনতে পারেন। [৫]

কীভাবে কিনতে হয়[সম্পাদনা]

বাংলাদেশ ব্যাংকের সব শাখা অফিস, সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের অধীন সারাদেশে ৭১টি সঞ্চয় ব্যুরো অফিস এবং পোস্ট অফিসে সঞ্চয়পত্র কিনতে পাওয়া যায়। নগদ টাকা ও চেকের মাধ্যমে সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। ক্রেতা ও নমিনির দুই কপি পাসপোর্ট আকারের সত্যায়িত ছবি লাগে। জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট অথবা জন্মনিবন্ধন সনদের নম্বর অন্তর্ভুক্তির জন্য মূল কপি দেখাতে হয়। [৫]

অন্যান্য[সম্পাদনা]

সঞ্চয়পত্র চুরি হলে বা হারালে বা অন্য কোনোভাবে নষ্ট হলে গ্রাহকদের দুশ্চিন্তার কিছু নেই। যে অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কেনা, সেই অফিসে বিষয়টি অবগত করে 'ডুপ্লিকেট' সঞ্চয়পত্র পাওয়া যাবে। গ্রাহক চাইলে সঞ্চয়পত্র স্থানান্তর করে নিতে পারেন, অর্থাৎ কোনো গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে সঞ্চয়পত্র কিনে তা স্থানান্তর করে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য যে কোনো অফিসে নিতে পারেন এবং সেখান থেকে সুবিধা নিতে পারবেন। একইভাবে অন্যান্য ব্যাংকের বেলায়ও স্থানান্তর করা যায়। [৫]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "সঞ্চয়পত্রে মুনাফা বেশি"। প্রথম আলো। নভেম্বর ০১, ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ 25 জানুয়ারি 2017  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)
  2. "সঞ্চয়পত্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য"জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  3. "জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর"জাতীয় তথ্য বাতায়ন। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  4. "সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ: লক্ষ‌্যের ৬০% তিন মাসেই"। বিডি নিউজ ২৪ ডট কম। ২০১৬-১০-২৮। ২০১৬-১১-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৫ জানুয়ারি ২০১৭ 
  5. "সঞ্চয়পত্র কিনবেন: জেনে নিন দরকারি তথ্য"। সাম্প্রতিক দেশকাল। ০৩ এপ্রিল ২০১৬। ২৪ নভেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ 25 জানুয়ারি 2017  এখানে তারিখের মান পরীক্ষা করুন: |তারিখ= (সাহায্য)

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]