শেহলা মাসুদ
শেহলা মাসুদ | |
|---|---|
| জন্ম | ১৯৭৩ ভোপাল, মধ্যপ্রদেশ, ভারত |
| মৃত্যু | ২০১১ (বয়স ৩৮) ভোপাল, মধ্যপ্রদেশ, ভারত |
| জাতীয়তা | ভারতীয় |
| পেশা | পরিবেশবিদ, তথ্য অধিকার কর্মী |
শেহলা মাসুদ (১৯৭৩ - ২০১১) ছিলেন একজন ভারতীয় পরিবেশবিদ, বন্যপ্রাণী এবং তথ্য অধিকার কর্মী। ২০১১ সালের ১৬ই আগস্ট ভোপালে তাঁর বাড়ির সামনে, যখন তিনি নিজের গাড়িতে বসে ছিলেন, সেই সময় তিনজন ব্যক্তি তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তারা স্থানীয় একজন মহিলা ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের ভাড়া করা গুণ্ডা ছিল।
কর্মজীবন
[সম্পাদনা]শেহলা মাসুদ উদাই নামে একটি এনজিওর সচিব ছিলেন এবং 'মিরাকলস' নামে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চালাতেন। তিনি ২০০৯ সালে এনজিওটি শুরু করেন। এর মাধ্যমে তিনি তথ্য অধিকার আইন এবং বাঘ ও বন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন।[১][২] তিনি মূলত বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের উপর কাজ করতেন এবং সুশাসন, তথ্য অধিকার আইন, পুলিশ সংস্কার, পরিবেশ, নারী অধিকার ও বিষয় এবং স্বচ্ছতার মতো অন্যান্য বিষয়গুলিকেও সমর্থন করেছিলেন।[৩] তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্না হাজারের ভারত অভিযানের সমর্থনে অনশনে বসেছিলেন। তিনি মধ্যপ্রদেশের বিভিন্ন অভয়ারণ্যে বাঘের মৃত্যুর বিষয়গুলি উত্থাপনে সক্রিয় ছিলেন। শেহলা শ্যামা প্রসাদ মুখার্জি ট্রাস্টের হয়ে কাজ করতেন, শ্রীনগর থেকে কলকাতা, দিল্লি পর্যন্ত তাঁদের জন্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করতেন।[৪] তিনি বিজেপি রাজ্যসভার সাংসদ সমর্থিত একটি এনজিও নর্মদা সমাগ্রহ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চেয়েছিলেন। জনলোকপাল বিল আনার জন্য সরকার বিরোধী বিক্ষোভে যোগ দিতে তিনি ভোপালের বোট ক্লাবে যাওয়ার পথে তাঁকে হত্যা করা হয়।[৫] তিনি তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েকদিন আগে তাঁর বন্ধুদের সাথে আরটিআই অ্যানোনিমাস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,[৬] এই সংস্থার উদ্দেশ্য ছিল তথ্য গোপনকারী সংস্থাগুলির তথ্য জানার জন্য অজ্ঞাতনামা হিসেবে ভারত সরকারের বিভিন্ন বিভাগে তথ্য অধিকার (আরটিআই) আবেদনপত্র জমা দেওয়া, যার ফলে আবেদনকারীর যেন কোনওরকম ক্ষতি না হয়।
হত্যাকাণ্ড
[সম্পাদনা]গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে এক সাক্ষাৎকারে শেহলা প্রকাশ করেছিলেন যে তিনি ক্রমাগত হুমকির মধ্যে বাস করছেন।
২০১১ সালের ১৬ই আগস্ট সকাল ১১:১৯ মিনিটে, এক অজ্ঞাত আততায়ী তাঁকে একেবারে কাছ থেকে গুলি করে। তাঁর নিজের গাড়িতে চালকের আসনে বসা অবস্থায় তাঁকে গুলি করা হয়।
পুলিশের মতে, হত্যার উদ্দেশ্য অজানা। তবে, গণমাধ্যমের মতে, সম্ভাব্য কারণ অনেকগুলি উঠে এসেছিল। প্রথমত তথ্য অধিকার আইনের আওতায় তাঁর কাজ করা। এছাড়া রিও টিন্টোর সরকারি কর্মকর্তাদের সাহায্যে অবৈধ হীরা খননের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা এবং বাঘ, চিতাবাঘ ও বন রক্ষার জন্য লড়াই করা। বন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজশ করে চামড়ার জন্য পশুদের হত্যা করা হচ্ছিল।[৭]
এই জনমত আকর্ষণকারী হত্যাকাণ্ডের গুরুত্ব বোঝাতে মধ্যপ্রদেশ সরকার মামলাটি কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোতে স্থানান্তর করে।[৮] ২০১২ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি, কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো মামলাটি সমাধান করার দাবি করে এবং ভোপাল-ভিত্তিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনার জাহিদা পারভেজ ও তা ৬র তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করে, শেহলাকে হত্যার জন্য তাদের ভাড়া করা হয়েছিল। ইন্টেরিয়র ডিজাইনারের কর্মচারী এবং বন্ধু, যার কাছে সম্ভবত হত্যার পরিকল্পনা সম্পর্কে তথ্য ছিল, তাকে ২০১২ সালের ২রা মার্চ গ্রেপ্তার করা হয়। জাহিদা পারভেজ ভোপাল-ভিত্তিক অপরাধী সাকিব 'ডেঞ্জার' কে চুক্তিটি দিয়েছিলেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় ব্যবহৃত গাড়িটি পাওয়া গিয়েছিল।[৯][১০] গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের মধ্যে ইরফান নামে একজন বলেছিল যে সে শেহলাকে গুলি করেনি, বরং তার সহকর্মী শানু গুলি করেছে। তবে, আরও তদন্তে জানা যায় যে শানু মাসুদকে গুলি করেনি, বরং ইরফানই গুলি করেছে। সিবিআই খুনের পেছনের যে কারণ উল্লেখ করে তা হল, জাহিদা ভোপালের বিজেপি বিধায়ক ধ্রুব নারায়ণ সিংয়ের প্রতি আকৃষ্ট এবং খুব ঘনিষ্ঠ ছিলেন। ওদিকে শেহলার সাথেও ধ্রুব নারায়ণ সিংয়ের ঘনিষ্ঠতা ছিল। সেই কারণে জাহিদা তাঁকে শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। জাহিদার অফিস থেকে সিবিআই কর্তৃক উদ্ধার করা কিছু ডায়েরি থেকে এই উদ্দেশ্যটি প্রকাশ পেয়েছে। ধ্রুব নারায়ণ সিং-এর বিরুদ্ধে প্রমাণের অভাবে সিবিআই তাঁকে নির্দোষ ঘোষণা করে।[১১]
বিচার
[সম্পাদনা]২০১৭ সালের ২৮শে জানুয়ারি ভোপালের সিবিআই আদালত শেহলা হত্যায় খুন এবং অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের জন্য চারজনকে দোষী সাব্যস্ত করে। অন্য একজন আসামিকে ক্ষমা করা হয়েছিল কারণ সে রাজসাক্ষী হয়ে গিয়েছিল।[১২]
পুরস্কার
[সম্পাদনা]শেহলাকে মরণোত্তরভাবে এসআর জিন্দাল "দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্রুসেড" পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।[২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ভারতে তথ্য অধিকার কর্মীর উপর আক্রমণ
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Courageous Shehla met crusader's fate"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২৫।
- 1 2 Talwar, Sushant (২৮ জানুয়ারি ২০১৭)। "Politics or Love? Decoding Activist Shehla Masood's Murder Mystery"। The Quint (ইংরেজি ভাষায়)। ৫ জুলাই ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২০ এপ্রিল ২০২৪।
- ↑ "IMPORTANCE OF RIGHT TO INFORMATION FOR GOOD GOVERNANCE IN INDIA" (পিডিএফ)। Manupatra। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২৫।
{{ওয়েব উদ্ধৃতি}}:|শিরোনাম=এর 44 নং অবস্থানে line feed character রয়েছে (সাহায্য) - ↑ "Shehla sought RTI on BJP MPs, RSS backed trust – India News"। IBNLive। ৩ সেপ্টেম্বর ২০১১। ১৭ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "Shehlamasood"। Twitter। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "RTI Anonymous | File Anonymous Right to Information Applications in India"। Getup4change.org। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ Bali, Kamayani। "Shehla Masood: Fighter till the end | Changemaker | Right to information | Governance"। Infochangeindia.org। ৭ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "Shehla murder case: AIIMS forensic team to visit Bhopal"। The Indian Express। ১০ জানুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১ মার্চ ২০১৩।
- ↑ "Shehla Masood murder case: Car used on the day of murder found – India News – IBNLive"। Ibnlive.in.com। ৬ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "Shehla Masood murder: CBI suspects role of BJP MLA"। NDTV.com। ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২।
- ↑ "MP: CBI gives clean chit to Dhruv Narayan in Shehla murder case"। hindustantimes.com। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মার্চ ২০২৫।
- ↑ "Zahida Pervez, three others convicted in Shehla Masood murder case"। The Hindu (ভারতীয় ইংরেজি ভাষায়)। ২৮ জানুয়ারি ২০১৭।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- মধ্যপ্রদেশের সমাজকর্মী
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় অ-কল্পকাহিনী লেখক
- ভারতীয় নারী সক্রিয়কর্মী
- মধ্যপ্রদেশের সক্রিয়কর্মী
- ভারতীয় নারী পরিবেশবাদী
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় নারী শিক্ষাবিদ
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় শিক্ষাবিদ
- ২০শ শতাব্দীর ভারতীয় লেখিকা
- মধ্যপ্রদেশের লেখিকা
- ১৯৭৩-এ জন্ম
- ভারতীয় পরিবেশবিদ
- ভারতে আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা মৃত্যু
- ২০১১-এ মৃত্যু
- ভারতে খুন হওয়া ব্যক্তি
- গুপ্তহত্যার শিকার ভারতীয় ব্যক্তি