শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
শের মোহাম্মদ স্তানিকজাই
شیر محمد عباس ستانکزئی
২০২০ সালে স্তানিকজাই
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী
দায়িত্বাধীন
অধিকৃত কার্যালয়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
সুপ্রিম লিডারহাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা
প্রধানমন্ত্রীমোহাম্মদ হাসান আখুন্দজাদা
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম১৯৬৩
বারাকি বারাক, লোগার, আফগানিস্তান
জাতীয়তাআফগানিস্তান
প্রাক্তন শিক্ষার্থীকাবুল বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতীয় সামরিক অ্যাকাডেমি
সামরিক পরিষেবা
আনুগত্য ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক অব আফগানিস্তান
শাখা আফগান ন্যাশনাল আর্মি
পদলেফটেনেন্ট
যুদ্ধসোভিয়েত-আফগান যুদ্ধ, আফগানিস্তান যুদ্ধ (২০০১–২০২১)

শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই (পশতু: شیر محمد عباس ستانکزئی আধ্বব: [ʃɪr mʊˈhamad aˈbɑs stɑnɪkˈzai]; জন্ম ১৯৬৩) আফগান তালেবানের একজন সিনিয়র সদস্য এবং ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ সাল থেকে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী।

তিনি ভারতের একটি সেনা একাডেমিতে প্রশিক্ষণের পর আফগান ন্যাশনাল আর্মির একজন অফিসার ছিলেন। তিনি সেনাবাহিনী থেকে সরে এসে আফগানিস্তানে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য ইসলামী আন্দোলনে যোগ দেন। তিনি প্রথম তালেবান সরকারের একজন ডেপুটি ক্যাবিনেট মন্ত্রী ছিলেন। ২০১২ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে তিনি দোহাতে তালেবানের রাজনৈতিক অফিসের একজন সিনিয়র সদস্য এবং ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এর প্রধান ছিলেন। তিনি ইংরেজি, উর্দু, পশতু এবং দারি ভাষায় কথা বলেন এবং তালেবানের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে অন্যান্য দেশে ব্যাপকভাবে ভ্রমণ করেছেন। ৭ সেপ্টেম্বর, তালেবান মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ আফগানিস্তানের ইসলামিক আমিরাতের ভবিষ্যত মন্ত্রিসভা ঘোষণা করেন; শের আব্বাস পররাষ্ট্র উপমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন[১]

জীবনী এবং প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

তিনি ১৯৬৩ সালে আফগানিস্তানের লোগার প্রদেশের বারাকি বারাক জেলার আব্বাস কালা এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন।[২] তিনি পাশা খানের পুত্র[২] এবং স্তানিকজাই উপজাতির একজন জাতিগত পশতুন। তিনি আফগানিস্তানে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অধ্যয়ন করেন[৩] এবং স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ইংরেজি, উর্দু, পশতু এবং দারি বলতে পারেন।[২]

তিনি ভারত-আফগান সহযোগিতা কর্মসূচির অধীনে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত তিন বছর ভারতের নওগাঁওয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর আর্মি ক্যাডেট কলেজে একজন সৈনিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন।[৩] তিনি দেরাদুনের ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমিতে ভগত ব্যাটালিয়নের কেরেন কোম্পানিতে[৪] একজন অফিসার ক্যাডেটও ছিলেন, কেরেন কোম্পানির ৪৫ জন বিদেশী ক্যাডেটের মধ্যে একজন ছিলেন। ইন্ডিয়ান মিলিটারি একাডেমি এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য দেশের ক্যাডেটদের প্রশিক্ষণ দেয়। তার সহকর্মী ক্যাডেটরা তাকে "শেরু" ডাকনাম দিয়েছিল।[৩] স্নাতক হওয়ার পর তিনি আফগান ন্যাশনাল আর্মিতে লেফটেন্যান্ট ছিলেন।[৫]

তিনি সোভিয়েত-আফগান যুদ্ধে সোভিয়েতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেনাবাহিনী থেকে সরে এসেছিলেন,[৬][৭] প্রথমে তিনি মোহাম্মদ নবী মোহাম্মদীর আফগানিস্তানের ইসলামিক এবং জাতীয় বিপ্লব আন্দোলনের সাথে, তারপর আফগানিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রন্টের কমান্ডার হিসেবে আব্দুল রসুল সায়াফের ইসলামিক ইউনিয়ন ফর দ্য লিবারেশনের সাথে ছিলেন।[৮] পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দাদের সাথে সায়াফের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা ছিল। তিনি বেশিরভাগ আফগান মুজাহিদিনের চেয়ে বেশি শহুরে ছিলেন এবং ১৯৮০-এর দশকে পাকিস্তানের কোয়েটায় তিনি প্রায়শই তার স্ত্রীর সাথে রেস্টুরেন্টে খেতেন। অন্যান্য মুজাহিদগণ এ নিয়ে গল্প করেছেন; বিনিময়ে স্তানিকজাই মহিলাদেরকে তাদের ঘরে নির্জনে রাখার জন্য পুরানো দিনের ধারণার জন্য নিজেদেএ সমালোচনা করেছিলেন।[৯]

তালেবান শাসন (১৯৯৬-২০০১)[সম্পাদনা]

স্তানিকজাই ১৯৯৯ -এর দশকে তালেবানে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াকিল আহমেদ মুত্তাওয়াকিলের অধীনে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। যদিও তাকে মুত্তাওয়াকিল বিশ্বাস করতেন না বলে জানা গেছে, তিনি প্রায়শই বিদেশী মিডিয়াকে সাক্ষাৎকার দিতেন, কারণ তিনি ভাল ইংরেজি বলতে পারেন। তিনি ১৯৯৬ সালে ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ওয়াশিংটন ডিসিতে ভ্রমণ করেন ক্লিনটন প্রশাসনের কাছ থেকে তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে কূটনৈতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্য।[১০] ১৯৯৮ সালে তার প্রতি তালেবান নেতা মোহাম্মদ ওমর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন, সম্ভবত ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অ্যালকোহলের প্রতি শিথিল মনোভাবের বিষয়গুলির সাথে এটা সম্পর্কিত, এবং তাকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল এবং গৃহবন্দী করা হয়েছিল। যাইহোক, পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সাথে তার সংযোগ তালেবান নেতৃত্বের উপর প্রভাব ফেলেছিল এবং তার পক্ষে কাজ করেছিল এবং কয়েক মাস পরে তাকে স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছিল, যদিও তিনি বৈদেশিক বিষয়ের তুলনায় কম গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। স্তানিকজাই অসদাচরণ অস্বীকার করেছেন এবং তার ভূমিকার পরিবর্তনকে মন্ত্রী পদের রুটিন পরিবর্তন বলে উল্লেখ করেছেন।[৯]

তালেবান রাজনৈতিক প্রতিনিধি, ২০০১-২০২১[সম্পাদনা]

শের মোহাম্মদ আব্বাস স্তানিকজাই (ডান থেকে তৃতীয়) মার্কিন প্রতিনিধি জালমে খলিলজাদ (বাম) এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও (অস্পষ্ট), দোহা, কাতারের সাথে 21 নভেম্বর 2020-এ সাক্ষাৎ করছেন

স্তানিকজাই ২০১২ সালের জানুয়ারিতে তৈয়ব আগা এবং অন্যান্যদের সাথে কাতারে পৌঁছান যাতে সে দেশে তালেবানের রাজনৈতিক অফিস খোলার সুবিধা হয়।[১১] ৬ আগস্ট ২০১৫-এ তিনি পদত্যাগ করা আগার স্থলাভিষিক্ত হয়ে রাজনৈতিক কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নিযুক্ত হন। তার নিয়োগের পর, স্তানিকজাই আখতার মনসুরের প্রতি আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, "আমি এবং ইসলামী আমিরাতের রাজনৈতিক অফিসের অন্যান্য সদস্যরা মাননীয় মোল্লা আখতার মনসুরের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করছি।" তিনি নভেম্বর ২০১৫ সালে রাজনৈতিক কার্যালয়ের প্রধান হিসাবে তার পদে নিশ্চিত হন।[১২][১৩]

১৮–২২ জুলাই, ২০১৬ থেকে, তিনি চীনা কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য চীন ভ্রমণ করেছিলেন।[১৪] ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, স্তানিকজাইকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রবেশ করতে নিষেধ করা হয়েছিল।[১৫]

৭ থেকে ১০ আগস্ট ২০১৮ পর্যন্ত, স্তানিকজাই তালেবান কর্মকর্তাদের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন উজবেকিস্তানে। প্রতিনিধি দলটি উজবেকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল আজিজ কামিলভ এবং আফগানিস্তানে উজবেকিস্তানের বিশেষ প্রতিনিধি ইসমাতিল্লা ইরগাশেভের সঙ্গে দেখা করেন।[১৬] ১২-১৫ আগস্ট পর্যন্ত, তিনি কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনার জন্য ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণ করেন, ইন্দোনেশিয়ার প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ জুসুফ কাল্লা, ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি এবং আফগানিস্তানের জন্য ইন্দোনেশিয়ার বিশেষ প্রতিনিধি হামিদ আওয়ালউদ্দিনের সাথে দেখা করেন।[১৭] তিনি ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অফিসের উপপ্রধান হন এবং আবদুল হাকিম ইসহাকজাই এর স্থলাভিষিক্ত হন।

তালেবান শাসন (২০২১-বর্তমান)[সম্পাদনা]

স্তানিকজাই ৩৯ আগস্ট, ২০২১-এ আফগানিস্তানের জাতীয় টেলিভিশন এবং রেডিওতে ভাষণ দিয়েছিলেন যেখানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের জন্য তালেবানের আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছিলেন, আরও বলেছিলেন যে তিনি ভারতের সাথে ঠান্ডা সংঘর্ষে পাকিস্তানকে আফগান ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেবেন না। স্তানিকজাই দেশের শিখ ও হিন্দুদের কথাও বলেছেন, তারা শান্তিতে বসবাস করতে পারবেন এবং আশা করেন যে যারা চলে গেছে তারা ফিরে আসবে।[১৮][১৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Mullah Akhund to head 'caretaker' Taliban government in Afghanistan with Baradar, Hanafi as deputies"India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সেপ্টেম্বর ৭, ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৯-০৮ 
  2. Ahmad Shah Erfanyar (১০ সেপ্টেম্বর ২০২০)। "Biographies of intra-Afghan peace talks negotiators"Pajhwok Afghan News। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  3. "Sher Mohammad Abbas Stanikzai: Top Taliban leader trained with Indian Army"CNBC TV18। ১ সেপ্টেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১ 
  4. "Army veterans remember top Taliban leader Stanikzai as 'Sheru' from 1982 IMA batch"India Today (English ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২১ 
  5. Ghosh, Poulomi (২১ আগস্ট ২০২১)। "Who is Taliban leader 'Sheru', once trained at Dehradun's military academy?" (English ভাষায়)। Hindustan Times। সংগ্রহের তারিখ ২৮ আগস্ট ২০২১ 
  6. "Ashraf Ghani slams Pakistan for waging 'undeclared war'"The Indian Express (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৫-০৬-০২। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫ 
  7. "'IMA Talib' a key figure in Doha talks with US"Hindustan Times (ইংরেজি ভাষায়)। ২০১৩-০৬-২৮। ২০১৯-১০-২৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১০-২৫ 
  8. "Database"afghan-bios.info 
  9. Mashal, Mujib (১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯)। "The president, the envoy and the talib: 3 lives shaped by war and study abroad"। New York Times 
  10. Burns, John F. (২৪ সেপ্টেম্বর ১৯৯৭)। "Islamic Rule Weighs Heavily for Afghans"New York Times 
  11. Farmer, Ben (২৬ জানুয়ারি ২০১২)। "Taliban diplomats arrive in Qatar"The Telegraph। সংগ্রহের তারিখ ২৭ আগস্ট ২০২১ 
  12. "Taliban appoint top official to Qatar political office"Reuters। ২৪ নভেম্বর ২০১৫। 
  13. "Sher Mohammad Abbas Stanekzai Padshah Khan"। ২৬ জুন ২০১৭। 
  14. "Afghan Taliban delegation visits China to discuss unrest: sources"Reuters। ৩০ জুলাই ২০১৬। 
  15. "Taliban Envoys Barred From Entering UAE - TOLOnews" 
  16. "Afghan Taliban delegation visits Uzbekistan to talk security, power..."Reuters। ১২ আগস্ট ২০১৮। 
  17. "Taliban, Indonesian Officials Hold Talks On Afghan Peace - TOLOnews" 
  18. "Taliban leader hopes Afghan Hindus, Sikhs who left for India return" 
  19. "Want good relations with all neighbours, top Taliban leader tells News18"। ৩০ আগস্ট ২০২১।